somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি জ্ঞানগর্ভ রূপকথা

৩১ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক দেশে ছিল এক ভিক্ষুক। সে ছিল খুবই সৎ। একদিন সে এক অভিজাত বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ল। বাড়ির চাকর দরজা খুলে জিজ্ঞেস করল, ‘কী ব্যাপার। কী চান আপনি?’
ভিক্ষুক জবাব দিল, ‘ঈশ্বরের নামে একটু ভিক্ষা চাই।’
‘আচ্ছা দাঁড়ান, বাড়ির কর্ত্রীকে আগে জিজ্ঞেস করে দেখি।’ বাড়ির কর্ত্রীকে ভিক্ষুকের কথা বলতেই তিনি ভ্রূ কুঁচকে বিরক্ত মুখে চাকরকে বললেন, ‘জেরেমি, লোকটাকে একটা রুটি দিয়ে এসো। গতকালের বাসি রুটি থাকলে সেটাই দিয়ো।’
জেরেমি কখনোই মালিকের কথার অবাধ্য হয় না। তাই সে বেছে বেছে পাথরের মতো শক্ত একটা বাসি রুটি এনে দিয়ে বলল, ‘এই যে নাও।’
ভিক্ষুক বিড়বিড় করে বলল, ‘ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন।’
জেরেমি ভারী ওক কাঠের দরজা বন্ধ করে দিল। রুটিটা হাতে নিয়ে ভিক্ষুক একটা ফাঁকা জায়গায় চলে এল। এখানেই সে রাত কাটায়। একটা গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসে সে রুটি ছিঁড়ে খেতে শুরু করল। এমন সময় শক্ত কিছুতে তার কামড় পড়ল। মনে হলো যেন দাঁত ভেঙে গেল। মুখ থেকে জিনিসটা বের করে ভিক্ষুক তো অবাক। তার ভাঙা দাঁতের টুকরোর সঙ্গে মুক্তো ও হীরা বসানো একটা সোনার আংটি দেখতে পেয়ে উত্তেজনায় সে বিড়বিড় করে উঠল, ‘কী সৌভাগ্য! এটা বেচে অনেক টাকা পাওয়া যাবে।’
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তার বোধ জেগে উঠল। ‘না, এটা আসল মালিককে ফেরত দিতে হবে।’
ভালোমতো খেয়াল করে সে দেখল, আংটির ওপর দুটি অক্ষর লেখা আছে-জে এবং এক্স। ভিক্ষুক তাড়াতাড়ি পাশের একটা দোকানে গিয়ে টেলিফোন ডিরেক্টরি চাইল। টেলিফোন বই ঘেঁটে এক্স অক্ষরে শুরু হওয়া নাম খুঁজতে লাগল। সে দেখল পুরো শহরে এ রকম একটা মাত্র পরিবারই বাস করে। সেটা হলো জোফেইনা পরিবার।
এই আবিষ্কারে ভীষণ খুশি হলো ভিক্ষুক। সে দোকান থেকে ঠিকানা মোতাবেক জোফেইনা পরিবারের খোঁজে বের হলো। একটু পরেই সে অবাক হয়ে দেখল, এই বাড়ি থেকেই সে কিছুক্ষণ আগে রুটি ভিক্ষা করেছিল। আবারও বাড়ির দরজা ঠক ঠক করল। চাকর জেরেমি দরজা খুলে জিজ্ঞেস করল, ‘আবার কী চাও?’
ভিক্ষুক জবাব দিল, ‘কিছুক্ষণ আগে আপনি আমাকে যে রুটি দিয়েছিলেন, তার ভেতর আমি এই আংটিটা পেয়েছি।’
জেরেমি আংটিখানা হাতে নিয়ে বলল, ‘আচ্ছা দাঁড়াও, আংটিটা আমার মালিককে দেখাই।’
গৃহকর্ত্রী আংটি পেয়েই বললেন, ‘কী সৌভাগ্য! আরে এই আংটিই তো আমি গত সপ্তাহে রুটি বানাতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছিলাম! এই জে এক্স হচ্ছে আমার নামের আদ্যক্ষর-মানে জোসারমিনা জোফেইনা।’
একটু থেমে তিনি বললেন, ‘জেরেমি, লোকটি যা চায় তা-ই দিয়ে দাও। অবশ্য এটা খুব একটা দামি আংটি নয়।’
জেরেমি দরজায় ফিরে এসে ভিক্ষুককে বলল, ‘তুমি খুব ভালো একটা কাজ করেছ। বলো, এর জন্য তুমি কী চাও?’
ভিক্ষুক জবাব দিল, ‘শুধু এক টুকরো রুটি। একটু পেট ভরে খেতে চাই আমি।’
জেরেমি এবারও তার মালিকের কথামতো কাজ করল। তাই এবারও সে পাথরের মতো শক্ত বাসি রুটি এনে ভিক্ষুকের হাতে তুলে দিল। ‘এই যে নাও।’
‘ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন।’
জেরেমি ভারী ওক কাঠের দরজা বন্ধ করে দিল। ভিক্ষুক হাতে রুটি নিয়ে আগের খোলা জায়গায় চলে এল। যেখানে সে রাত কাটায়। সে একটা গাছের গায়ে হেলান দিয়ে রুটি ছিঁড়ে খেতে শুরু করল। হঠাৎ শক্ত কিছুতে কামড় লেগে তার আরেকটি দাঁত ভেঙে গেল। জিনিসটা বের করতেই ভাঙা দাঁতের সঙ্গে একটা শক্ত কিছু বের হয়ে এল। জিনিসটা আর কিছুই নয়, মুক্তা আর হীরা বসানো একটা সোনার আংটি। ভিক্ষুক অবাক হয়ে ভাঙা দাঁতের পাশে সোনার আংটির দিকে তাকিয়ে রইল।
এই আংটির গায়েও দুটো অক্ষর লেখা-জে এক্স। সে আবার উঠে দাঁড়াল। তারপর আংটিটা জোসারমিনা জোফেইনাকে ফেরত দিয়ে পুরস্কার হিসেবে তৃতীয় আরেকটি রুটি নিয়ে এল। তৃতীয় রুটির মধ্যেও সে আরেকটি আংটি খুঁজে পেল। সেটা আবারও আসল মালিককে ফিরিয়ে দিয়ে সে পুরস্কার হিসেবে চতুর্থ রুটি নিয়ে গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসল। চতুর্থ রুটিটা ছিঁড়ে খেতে গিয়ে দাঁতে শক্ত কিছুর সঙ্গে কামড় লেগে আরেকটা দাঁত ভেঙে গেল। মুখ থেকে জিনিসটা বের করে সে ভাঙা দাঁতের টুকরোর সঙ্গে একটা···
সেই সৌভাগ্যের দিন থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সে বেশ সুখেই বেঁচে ছিল। তার জীবনে আর কোনো খাদ্যসমস্যা হয়নি। তাকে শুধু রুটির ভেতর থেকে আংটি বের করে আসল মালিককে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে হতো।

(ফার্নান্দো সোরেনতিনো)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালি নারীর কাছে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

পরনে আজানুলম্বিত চিকন সুতোর শাড়ি, সবুজ জমিনের পরতে পরতে কবিতারা জড়িয়ে আছে বিশুদ্ধ মাদকতা নিয়ে, গোধূলির আলোয় হেঁটে যায় নিজ্‌ঝুম শস্যক্ষেতের ঘাসপাঁপড়ির আল ধরে, অতিধীর সুরের লয়ে, সুনিপুণ ছন্দে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন ইক্টু ঘুরাঘুরি করি.... :-B

লিখেছেন সোহানী, ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩

এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব ভাগছে ওইগুলা নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×