somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই কোন নেশায় মজিলাম

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল বিকালে ফেনীর ফলেশ্বহরে বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। তাহার বাসায় আড্ডা দিয়ে ফিরলাম রাত ৯ টায়। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসিয়া দেখিতে ফাইলাম ভাবি আমার কিছু প্রিয় খাবার রান্না করিয়াছেন। দেখিয়া মুখে জল আসিয়া পড়িল। রসনা বিলাস সারিয়া খাবার টেবিলে বসিয়া ভাবির সাথে কথা বলিতেছিলাম। এমন সময়ে মা আসিয়া আমার সামনে সাদা রঙের খাম রাখিয়া পাশে দাঁড়াইলেন। মাকে কি জিজ্ঞেস করাতে ভাবি অগ্রবর্তিনী হইয়া বলিলেন খুলিয়া দেখ।

ধীরে সুস্থে খাম খানা খুলিয়া দেখিলাম কোন এক শ্রীমতির বায়োডাটাসহ ছবি। ছবি খানা বেশ! অধ্যাপিকা হইলেও পরিপাটি করিয়া চুল বাধিঁয়াছেন। বলে রাখা ভাল, কলেজের শিক্ষক মাত্রই অধ্যাপক/অধ্যাপিকা। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। প্রভাষক। তথাপি আমার মা ছেলেকে প্রফেসর বলিতে ভালবাসেন। মাকে বলিলাম, প্রভাষক হইয়া কলেজের অধ্যাপিকাকে বিবাহ করিবার দৃষ্টতা দেখাইতে পারিনা। অতএব না। মা মুখখানা ভারী করিয়া ছোট বোনের পড়ার রুমে চলিয়া গেলেন। ছোট বোন তাহার কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য ক্লাসনোট তৈরী করিতেছিল। সে তাহার আপন কর্মে বিরতি দিয়া মায়ের সাথে দ্বি-দলীয় জোট গঠন করিয়া ড্রয়িং রুমে আসিয়া দেখিল আমি ল্যাপটপ খানা ওপেন করিয়া ফেইসবুক এ চ্যাট করিতেছি।

যত দোষ নন্দ ঘোষ। মা আমার ল্যাপটপ খানা চারতলা থেকে ফেলে দেয়ার পাঁয়তারা করিতেছেন। ভাবি সুশীল সমাজ সাঁজিয়া মাকে মাঝে মাঝে উস্কানী দিতেছেন।আমি ছোট্ট ভাতিজিটাকে নিয়ে দ্বি-দলীয় জোট গঠন করিবার চেষ্টা করিলাম। সুশীল সমাজের প্রতি তাহার আনুগত্যের কারণে ব্যর্থ হইলাম। বাসায় আর কেহ নাই। আমার অবস্থা ত্রাহি মধুসূদন।

মায়ের নেতৃত্বে দুই সদ্যসের জুরি বোর্ডে আমার ল্যাপটপ খানার বিচার চলিতেছে। সুশীল সমাজকে অনুরোধ করিলাম ল্যাপটপ খানার হয়ে ওকালতি করিতে। রাজি হলেন না। অগত্যা আমি নিজে ওকালতি শুরু করিলাম। জুরি বোর্ডের প্রধানের কাছে জানতে চাইলাম আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ কি? মা রাগত স্বরে গুরুতর অভিযোগ উথ্থাপণ করলেন। আমি নাকি অতিমাত্রায় ল্যাপটপ ও নোটবুকে আসক্ত হইয়া পড়িয়াছি। তজ্জন্য বিবাহ কার্য-সম্পাদন করিবার মনঃযোগ হারাইয়াছি। জুরি বোর্ডের জুনিয়র সদস্য আমার ছোট বোনটা মায়ের সাথে সুর মিলাল। সুশীল সমাজের চামচা আমার ভাতিজিটি মিট মিট করে হাসিতেছিল। রাগে, ক্ষোভে, অপমানে জর্জরিত; লজ্জায় মুখখানা আরক্তিম আমি আর কিছু বলিতে পারিলাম না।

রায়ের অপেক্ষায় কাউন্ট-ডাউন করিতেছি। এমন সময় জুরি বোর্ডের প্রধান রায় ঘোষণা করিলেন। আমার ল্যাপটপ খানার দুই দিনের জেল হইয়াছে। দিবসের আলো ফুটিবার পর ল্যাপটপ খানা ছোট বোনের বুকশেলফ-এ রাখিয়া ছাবি খানা মায়ের কোমরে গ্রন্থিত থাকিবে। সুশীল সমাজও এই বিষয়ে সহমত পোষণ করিয়াছে। আমার ল্যাপটপ খানা গাহিতে লাগিল-
ভেঙ্গে মোর ঘরের ছাবি নিয়ে যাবি কে আমারে।
ও ও বন্ধু আমার।
তোমায় ছাড়া একা একা দিন যে আমার কাটে নারে।
ও ও বন্ধু আমার।

মায়ের কাছে আপিল করিলাম, সকাল ১০ টা পর্যন্ত ল্যাপটপ খানাকে প্যারলে মুক্তি দিতে। সুশীল সমাজের অ্যাডভোকেসিতে, আপিল মঞ্জুর হইল। এই লেখাটা লিখিতে বসিলাম। সুশীল সমাজের চামচাটা আসিয়া জিজ্ঞেসিল, চাচ্চু আবার বসেছ? ইচ্ছে করছিল তাকে একটা চড় মারি। কিন্তু সুন্দর মুখ খানার দিকে চাহিয়া পারিলাম না।

আগামী দুইদিন আমার কোন কাজ নাই। মায়ের হোটেলে খাইব। শ্রীমতি আপনি যেখানেই থাকুন, আমার সহিত আগামী দুইদিন। ফেনী শহরের অলিত-গলিতে ঘুরিয়া বেড়াইবার আমণ্ত্রণ রহিল। তবে শর্ত থাকে যে, দুইদিন পরে মুক্তি দিতে হইবেক।

এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে। জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত একেবারে খারাপ হয় নাই। তাহাদের সন্দেহও অমূলক নয়। ল্যাপটপ তোমায় দিলাম ছুটি। আমিও ছুটি নিলাম, শীতকালীন ছুটি।

আমার মত যাহারা অতিমাত্রায় ল্যাপটপ, নোটবুক, মোবাইল, ফেইসবুক, গুগুল, ইয়াহু, স্কাইপ, টুইট্যার, লিন্কডিএলএন.........ইত্যাদি-ইত্যাদিতে আসক্ত হইয়াছেন, তাহাদেরকে বলিবো-সাধু সাবধান। তবে কোন শ্রীমান/শ্রীমতিতে আসক্ত হইবার ইয়েস কার্ড থাকিলে অসুবিধা নাই। মা, ল্যাপটপের ছুটি হইয়াছে, আমি ঘুরিতে যাইতেছি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×