somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর ফিরিস্তি।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




৩ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। গত রোববার রাত ৮টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। বাংলাদেশে এটা জাতিসংঘ মহাসচিবের দ্বিতীয় সফর ছিল। বাংলাদেশ সফরের পর থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া সফর করবেন তিনি। বান কি মুনের এ সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২০১০ সালে তার নেয়া "এভরি ওমেন এভরি চাইল্ড" উদ্যোগের ফলে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে দেশগুলোর নেতৃত্ব ও উন্নতি প্রত্যক্ষ করা। বাংলাদেশে সফরকালে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সমাবেশে বান কি মুন ভাষণ দিয়েছেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সোমবার জেলা তথ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিআইপিএসওটি) সফর করে জাতিসংঘের পিসকিপিং প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি শান্তিরক্ষী বাহিনীতে দায়িত্বরত অবস্থায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সভায় ভাষণ দেন। সেখানে তাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একই দিনে জাতিসংঘ মহাসচিব দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজারে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছেন। তিনি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা র্ব্যাকের একটি যৌথ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। সেখানে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ফলে স্বাস্থ্য ও তাদের কমিউনিটির ওপর কিভাবে প্রভাব পড়েছে তা তুলে ধরা হয়। এছাড়া তিনি দেশের অন্যতম গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়া ডিজিজ রিসার্চ (আইসিডিডিআরবি) পরিদর্শ করেন। বাংলাদেশে অবস্থানকালে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মণি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করেন। নারী ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। এছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিবের স্ত্রী বান সুন টেক সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন (সিএনএসি) পরিদর্শন করেন। বুধবার বান কি মুন থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। এই ধারাবাহীক সফরের শেষ পর্যায়ে ইন্দোনেশিয়া যাবেন তিনি।সোমবার বিকেলে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে বান কি মুনের সাথে সাক্ষাত করেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে রয়েছে বলে সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের কাছে অভিযোগ করেন বেগম জিয়া। এছাড়া একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন ত্র“টি তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। বৈঠক শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। এছাড়াও খালেদা জিয়া আরো বেশ কিছু অভিযোগ করেন জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে দেশের গণতন্ত্র এখন হুমকির মুখে পড়েছে। সংবিধানের এই সংশোধনী ভোটারদের ভোটধাকির প্রয়োগের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একতরফা সংবিধান সংশোধনের ফলে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। জবাবে বান কি মুন বলেছেন, বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় জাতিসংঘ। এ সময় খালেদা জিয়ার আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সুষ্ঠু বিচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের জবাবে বান কি মুন জানান, জাতিসংঘ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চায়। কিন্তু জাতিসংঘ চায় এই বিচার আর্ন্তজাতিক মানের হোক। এদিকে বান কি মুন এবং খালেদার এই বৈঠক স¤পর্কে সরকার পক্ষ বলছেন, সোমবার দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বা খালেদা জিয়া জাতি সংঘের মহাসচিব বান কি মুনের কাছে যে নালিশ করেছেন তা যুক্তি সঙ্গত হয়নি। দেশের বিপক্ষের একদল রাজাকার মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের ভুমিকা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই তিনি যদি তাদের পক্ষে সাফাই গান তাহলে আমরা কি ভাবব? এতদিন তিনি দেশে প্রকাশ্যে জনসভায় বলেছেন , এখন তিনি আন্তর্জাতিক মহলে বলছেন । মুদ্দাকথা হল, নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান না করে , ভিনদেশীর কাছে অভিযোগ করা কতটা যৌক্তিক সেটা তাদের বোধগম্য নয়। একই দিনে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ক্লাইমেট ভালনার্যাবল ফোরামের তৃতীয় অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বক্তৃতা করেছিলেন। বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বড় ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে মুন বলেন, জলবায়ু তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য অর্থছাড়ের বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবেন তিনি। তিনি বলেন, মানুষকে বাঁচানোর জন্যই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে হবে। মানুষ ও দেশ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু মানবতা ও মানুষের সমস্যা একই। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ধনী-দরিদ্র, উন্নত-অনুন্নত সব দেশের নেতাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, গত বছর পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ হয়েছে। এজন্য উন্নত দেশগুলোই দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের অনেক দেশই ক্ষতির স্বীকার। এর প্রভাব থেকে কোনো দেশই হুমকির বাইরে নয়। বান কি মুন বলেন, কানকুন সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল। এখন ডারবান সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এখনও সেই অর্থের সবটা বণ্টন হয়নি। বাংলাদেশের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এখানে আমি তিন বছর আগে এসেছিলাম। এছাড়া ১৯৭৩ সালেও কয়েকবার এসেছি। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের অনেক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ১৯৯১ ও ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এদেশের অনেক মানুষের মৃত্যু ও ক্ষতি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে দুর্যোগ হয় তা প্রতিরোধ করতে পারলে হাজারও জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গত মাসে ৭০০ কোটি জনসংখ্যা অতিক্রম করা এ বিশ্বকে নিরাপদ ও উন্নত হিসেবে গড়তে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। এজন্য রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত দেশগুলোর উদাসীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। তাদের উদাসীনতা বিশ্ব জলবায়ুকে তছনছ করে দিচ্ছে। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমাদের আলাদাভাবে জলবায়ু সহায়তা দিতে হবে। উন্নত অনেক দেশই তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছে। বাধ্যতামূলক ও স্বতঃপ্রণোদিত প্রতিকারের ব্যবস্থা না নেয়ায় কিয়োটো চুক্তির আশানুরূপ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ উদাসীনতা বিশ্ব জলবায়ুকে তছনছ করে দিতে পারে। প্রতিটি দেশকে আরো সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। এ নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। জলবায়ু সম্মেলন শেষে ১৩ দফা ঢাকা ঘোষণা গৃহীত হয়। চলতি মাসের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত বিশ্বের দেশ থেকে ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ আদায় করাই ছিল সিভিএফ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক বিশেষ সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. জিল্লুর রহমান জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের হাতে সম্মানসূচক 'ডক্টর অব লজ' ডিগ্রির সনদ তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বান কি মুন বলেন, আমি বাংলাদেশকে নিজের ঘরের মতো মনে করি। আমাদের দুই দেশেরই রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। আমরাও গরিব ছিলাম, আমরা দু-দেশই যুদ্ধের ক্ষত বহন করছি। গত শতকের '৭০ এর দশকে ঢাকায় আসার কথাও জানান বান কি মুন। তখন নয়া দিল্লিতে কোরিয়ার দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন তিনি। স্মৃতি হাতড়ে বান কি মুন বলেন, তখন এত যানজট ছিলো না। এয়ারপোর্টে নেমে একটি রিকশায় উঠে পড়েছিলাম। বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম এখন বিশ্বব্যাপী দরিদ্র জনগণের ভাগ্য ফেরাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণরত বাংলাদেশি সৈন্যদের প্রশংসাও আসে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখে। তিনি বলেন, শান্তিরক্ষায় তারা অনবদ্য নেতৃত্ববোধের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ভোটার লিস্ট তৈরিতে সহায়তার বিষয়টি তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছিলো। আগামী নির্বাচনও যাতে সে রকম হয়, সে আশা করছেন তিনি। এ জন্য সরকার ও বিরোধী দলকে এগিয়ে আসার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে বান কি মুন বলেন, এটি একটি কঠিন বিষয়, তবে একটি জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে হাঁটতে তার অতীতের কালিমাগুলো মুছে ফেলা খুবই জরুরি। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেন, বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী ও পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন, আইনের শাষন প্রতিষ্ঠা, দারির্দ্য দূরীকরণ, জলবায়ুর প্রভাব মোকবেলায় বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে বাংলাদেশের কাজ করে যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবকে ডক্টরেট ডিগ্রি দিতে পেরে ঢাকা বশ্ববিদ্যালয়ও গর্ববোধ করছে।
বাংলাদেশে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যহীনতা বরাবরের জন্যই উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার বিষয়। স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) পরিচালিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শিশু ও মাতৃত্বকালীন পুষ্টিহীনতার হার ভয়াবহ রকমের বেশি। বিদ্যালয়ে যাওয়ার বয়স হয়নি এমন বয়সের প্রায় ৭০ শতাংশ শিশুই পুষ্টিহীনতাজনিত রক্তস্বল্পতার শিকার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য মতে, বাংলাদেশে পুষ্টিহীনতার কারণে ৫৪ শতাংশ স্কুল-পূর্ব শিশুর বৃদ্ধি থেমে আছে। এছাড়া ৫৬ শতাংশ শিশুর ওজন কম। নারীদের ক্ষেত্রে পুষ্টিহীনতার সমস্যা আরও বেশি উদ্বেগের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে শীর্ষে। ৫০ শতাংশের বেশি নারী পুষ্টিহীনতার শিকার। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) তথ্যেও বাংলাদেশের নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের একই চিত্র। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুর পুষ্টিহীনতার শিকার হওয়ার বড় কারণ অবশ্যই দারির্দ্য। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগও নারী ও শিশুদের অপুষ্টিতে ভোগার ব্যাপকতা বাড়িয়ে দেয়। যাদের পরিমাণ মতো দৈনন্দিন খাদ্যের নিশ্চয়তা থাকে না অপুষ্টি তাদের পেছন ছাড়বে কেন? অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত মায়েরা যখন সন্তান ধারণ করে তখন তাদের নানাবিধ স্বাস্থ্য জটিলতার মুখে পড়তে হয়। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে নারীর পুষ্টিহীনতা, রক্তস্বল্পতার প্রতিকার না হলে প্রসূতির জন্য ভয়াবহতা অপেক্ষা করতেই থাকবে। নারীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি যতটা উন্নত প্রসূতির স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ততটাই বাড়বে। শিশু ও নারীর পুষ্টিহীনতা স¤পর্কে বাংলাদেশ অবশ্যই উদাসীন নয়। গুরুত্বের সঙ্গে, আন্তরিকতা নিয়ে, সর্বাÍকভাবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পুষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলছে, সাফল্যও দেখা দিচ্ছে। আয়োডিনের অভাব মিটানোর জন্য আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাতকানা রোগ দূর করতে সরবরাহ করা হচ্ছে ভিটামিন-এ বড়ি। ইপিআই বা স¤প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কার্যকর করা হচ্ছে। ১৯৯০ সাল থেকে সরকারিভাবে সমন্বিত পুষ্টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচি (এনএনপি) দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ এলাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দারির্দ্য বিমোচনে নানা প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পুষ্টি পূরণ করছে। শিশু ও নারীর পুষ্টি স¤পর্কিত নানামুখী প্রচারণা সমাজে সচেতনতা বাড়াচ্ছে। এখন একজন অশিক্ষিত মাও তার নিজের ও সন্তানের স্বাস্থ্য স¤পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছে এবং যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে। স্বীকার করতেই হবে, সমস্যা অনেক বড় ও ব্যাপক। এর সমাধান একবারে, এক-দুই বছরে সম্ভব নয়। শিশু ও নারীর স্বাস্থ্য, কিশোরী-গর্ভবর্তী মায়ের সেবার মান হয়তবা এখনও দুর্ভাবনার সীমা পার হতে পারেনি। কিন্তু সার্বিক সাফল্য, অগ্রগতি, সচেতনতা অনেক বেড়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর দেশে শিশু, নারী প্রসূতির স্বাস্থ্যমান বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি নানা কর্মসূচি-প্রকল্প গ্রহণকে অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত করবে সন্দেহ নেই। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের উদ্যোগে শুরু হওয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে এভরি উইমেন এভরি চাইল্ড কর্মসূচির প্রেক্ষিতে এসব দেশে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যে সেবার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ বান কি মুনের এ সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। সরকারি, বেসরকারি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজের যৌথ অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারী ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এ কর্মসূচির লক্ষ্য। বাংলাদেশ সফরে বান কি মুন মৌলভীবাজারের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেন। এখন সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, জাতিসংঘ মহাসচিবের এত আহবান কোনটা কি রাখতে পারবেন আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো? বিশেষত আগামি নির্বাচনকে ঘিরে যে উত্তপ্ত রাজনিতির দিকে আমরা ধিরে ধিরে এগিয়ে চলেছি তার থেকে উত্তরনের জন্য বান কি মুন যে আহবান জানিয়েছেন সেটা কি একটু ভেবে দেখবেন আমাদের রাজনৈতিক কর্তারা?

[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×