somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প

৩১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিকেল বেলায় শামসুন্নার হলের ঝুপড়ি ও তার আশেপাশের হতাশার মোড়, ভিসি হিল, রিসার্চ সেন্টার জায়গাগুলো প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য বরাদ্দ থাকে । কিছু বিশেষ প্রজাতির আঁতেলও
বসে আড্ডা মারে এসব জায়গায় । অনেকটা অনুরোধে রাইসমিল
গেলার অবস্থা নিয়ে হাসান
গিয়ে বসলো ঝুপড়ির এক কোনে ।

সুমি দেখা করবে বলো গোঁ ধরেছে । বাধ্য প্রেমিক হাসান বেশ আয়েশ করেই সিগারেট ধরালো । এখানে একা একা বসে সিগারেট
টানলে পাবলিক ভিন্ন চিন্তা করতে পারে । এই ঝুপড়িতে কেউ সাধারনত একা আসে না ।

মিনিট দশেক অপেক্ষার পর হাসান আবার সিগারেট ধরালো । "রুম
থেকে নেমে আসতে এতক্ষন লাগে । ধুর, বিরক্তিকর ।"

এর ফাঁকেই সুমি এলো । আজ সুমিকে অন্যরকম
লাগছে । শাড়ি পড়েছে ।
ঠোটে গাঢ় করে লিপস্টিক মেখেছে । কপালে লাল টিপ । আজ কি তবে বিশেষ কোন দিন ? জন্মদিন ! না, সেটাতো ১২ই সেপ্টেম্বর । তবে আজ কি ?

সুমি হাসানকে এভাবে সিগারেট হাতে দেখবে বলে আশা করেনি । ছেলেটার চেহারায় একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে । তার হাতে সিগারেট একদমই মানায় না । তার ওপর সুমি এত যত্ন নিয়ে সাজগোজ করলো আর
হাসান অবাক নয়নে তাকে দ্বিতীয়বার দেখলো না । সুমি কিছুটা আশাহত । তবু আজ সে এমন কিছু
বলবে না যাতে ঝগড়া হতে পারে ।

খানিক চুপ থেকে স্মিত
হেসে সুমি বললো, এই তোমার প্রিয় রং কি ?
- কোন বিশেষ রং নাই । এটা তো সময় সময় বদলায় ।
- মানে কি ? একটা বিশেষ
রং থাকে না ? যেমন ধরো,
আকাশ যখন নীল হয়, তখন দেখতে কতো না ভালো লাগে ।

হাসান খেয়াল করলো সুমি আজ নীল রংয়ের শাড়ি পড়েছে । সুন্দরি মেয়েরা যখন কাওকে উদ্দেশ্য করে সাজগোজ করে তখন তাদের প্রসংশা করা সেই বিশেষ ব্যক্তিদের অবশ্যই কর্তব্যের পর্যায়ে পড়ে । হাসান খুব ভালো প্রশংসা করতে পারে না ।
হাসান বললো, এই ধরো তোমাকে গোলাপ দেব ভাবতেছি। তখন প্রিয়
রং লাল । আর যখন রাস্তায় সিগনালে পড়ি তখন কি লাল পছন্দ হবে ?
- ফাজলামো কর ?

মাথা নেড়ে হ্যাঁ সুচক জবাব দেয় হাসান ।এরপর দুজনেরই হাসি ।

সুমি বেশ আহ্লাদ করেই
কথা বলে । প্রেমে পড়লে মেয়েরা একটু বেশীই
আহ্লাদী হয়ে যায় । এই
কথা সেই কথা, কথা বলেই চলছে সুমি ।
হাসানের অস্বস্তি বেড়েই
চলছে । আজ কি তবে কোন বিশেষ দিন ?

বেচারী সুমি ! কত শখ
করে শাড়ি পড়েছে, সেজেছে এত যত্ন নিয়ে ।
সুমির কথা ভেবে বেশ কষ্ট হচ্ছে হাসানের । ধুর, কিছুই মনে থাকেনা ।

সুমি হয়তো ভেবেছে লাল
গোলাপ কিংবা কোন গিফট নিয়ে আসবো ?
আচ্ছা, রিকশায় ঘুরলে কেমন হয় । "সুমি, চল আজ রিকশায়ঘুরি" ।
বলার সাথে সাথে রাজী হয়ে গেল সুমি । এখন যেমন প্রেমিক প্রেমিকারা
পার্ক কিংবা ফুচকা চটপটির দোকানে ভিড়
করেনা, তেমনি তারা এখন
রিকশায়ও চড়েনা । সুমির
গানের গলা ভালো । রিকশায় বসে তাকে গান
করতে বললে কেমন হয় ?

আজ তার মুড ভালো ।
বললে হয়তো রাজী হয়ে যাবে । "সুমি, একটা গান শোনাবে ?"

হাসানের অস্বস্তির ব্যাপারটা সুমিও খেয়াল
করেছে । খানিক বোকা বোকা লাগছে হাসানকে ।
ছেলেটার মধ্যে তেমন কোন হিরোইজম নাই । চেহারাটাও বোকা বোকা । এখন ওর দিকে তাকিয়ে থাকতেই বেশ মায়া হচ্ছে সুমির । মনে হচ্ছে, ইস এমন করে যদি দুজন
পাশাপাশি বসে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারতাম !

সুমি গান ধরল-
"কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে,
তোমারে দেখিতে দেয় না...
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাইনা ?"

রিকশায় চড়ে দোলা স্মরনী হয়ে ল ফ্যাকাল্টির
সামনে দিয়ে ঘুরে আবার
হলের সামনে ফিরলো তারা । ঝুপড়ির কোনে একটা বেঞ্চিতে বসে সুমি বললো, গাধু ভুলে গেছ আজকের দিনের কথা ?

সাতপাঁচ না ভেবে হাসান
আলতো করে হাত রাখলো সুমির হাতে ।
অনেকটা শান্ত স্বরে বললো, দ্যাখো আমি অত কিছু জানিনা । অত
দিনক্ষন, অত আয়োজন । তুমি শুধু পাশে থেকো ।
তবে প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহুর্ত আমার কাছে বিশেষ দিন, বিশেষ
মুহুর্ত হয়ে থাকবে ।

হাসান তাকালো সুমির দিকে । সুমির চোখ ছলছল করছে । দুফোটা জল নিমেষেই গড়িয়ে পড়লো । শেষ বিকেলে কারো চোখে জল দেখতে ভালো লাগেনা । তবে এ
জল অন্য কিছু । ভালোবাসার পবিত্র আবেগ থেকে নিঃসৃত অশ্রুকনা পৃথিবীর পবিত্রতম জল।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×