somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যগল্পঃ পিপীলিকার মৃত্যু ও হরতাল

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা যে এতদূর গড়াবে তা আমি চিন্তাও করিনি। হ্যাঁ মানলাম এটা একটা মৃত্যু, কিন্তু এ রকম তো হর হামেশাই হচ্ছে। প্রতি মিনিটে সারা পৃথিবীতে অন্তত কয়েক লাখ পিঁপড়ে মারা যাচ্ছে। কতজনের পায়ের তলায় পড়ে কত পিঁপড়ের মৃত্যু হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই।

এ রকম একটা ঘটনা নিয়ে আমাদের প্রধান বিরোধী দল হরতাল ডেকে বসবে তা কে জানতো। চায়ের কাপে পিঁপড়ে পরেছে, তা দেখে যে কারও মেজাজ গরম হবে। আমারও হয়েছিল, আমি পিঁপড়াটাকে চামচ দিয়ে ঘুটে চায়ের সাথে মিশিয়ে ফেললাম। তারপর মনের আনন্দে সেই চা খেলাম। ব্যাটা পিঁপড়ে তার উচিত শিক্ষা হয়েছে। শিক্ষা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা সবারই বুঝা উচিত। সেটা মানুষ হোক আর পিঁপড়েই হোক। মূর্খ হলে নেতা হওয়া গেলেও চায়ের কাপ যে সুইমিংপুল না এটা তার বুঝা উচিত ছিল।

যাই হোক আমি গণি মিয়াকে চায়ের দাম মিটিয়ে দিয়ে আসার সময় একটা জিনিস খেয়াল করলাম। আমি একটু দূরে দাড়িয়ে বিষয়টা লক্ষ্য করছি। গণি মিয়া কৌটা থেকে একটা পিঁপড়া নিয়ে চায়ের কাপে ছেড়ে দিচ্ছে। প্রতিটা কাপেই সে দিচ্ছে। সে পিঁপড়ে ধরে একটা কৌটায় রেখেছে।
আমি গণি মিয়ার কাছে গিয়ে আবার একটা চায়ের কথা বললাম। আমি তার কাছ থেকে কাপ নেয়ার সময় বললাম,
"গণি মিয়া আরও পাঁচটা পিঁপড়ে দাও।"
গণি মিয়া আমার দিকে তাকিয়ে দাত বের করে হাসল।

পাশে বসা লোকজন না বুঝে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।
আমি তাদের ঘটনা খুলে বললাম। জনতা উত্তেজিত হয়ে গেল। এমনিতেই জনতা আজ উত্তেজিত হয়ে যায়। অতি মাত্রায় হরতালের প্রভাব পড়েছে তাদের উপর। আজকাল নিরীহ লোকজনও সুযোগ পেলেই গাড়ি ভাংচুর করছে। গাড়ির উপর তাদের রাগ বেশী। যাই হোক সবাই গণি মিয়াকে মার দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি তাদের বললাম যে গণি মিয়াকে শাস্তি হিসেবে অতি মাত্রায় পিঁপড়া যুক্ত চা পান করাতে। আমার প্রস্তাবে সবাই রাজী হয়ে গেল।
সবগুলো পিঁপড়ে দিয়ে চা বানিয়ে গণি মিয়াকে খাওয়ানো হচ্ছে। গণি মিয়া শব্দ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। মনে হচ্ছে পিঁপড়া দেয়া চা খেয়ে সে আনন্দ পাচ্ছে। আমি চলে এলাম।

বিরোধী দল আবার হরতাল দিয়েছে শুনে আমি টিভির দিকে মনযোগ দিলাম। সংবাদ পাঠক পড়ে যাচ্ছে গম্ভীর মুখে,
"নির্মম ভাবে পিঁপড়ে হত্যার প্রতিবাদে আগামীকাল হরতাল দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আমাদের প্রতিনিধি তাপসী আলেয়া ।"

টিভিতে গণি মিয়ার মুখ দেখা যাচ্ছে। গণি মিয়ার চেহারা চকচক করছে। মনে হচ্ছে তার মেকআপ করা হয়েছে। সে শুদ্ধ ভাষায় ঘটনার বিবরণ দিচ্ছে। প্রতিনিধি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে এ বিষয়ে মন্তব্য নিচ্ছেন। গণি মিয়া তার বিবরণে আমার নাম বলেছে।
আমি চোখে অন্ধকার দেখছি। আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবদের ফোন আসা শুরু হয়েছে। আমি মোবাইলটা বন্ধ করে দিলাম। যেভাবেই হোক এখান থাকে পালাতে হবে। আমি দরজায় তালা মেরে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। শেষ ট্রেনের এখনও এক ঘণ্টা বাকী। আমি গ্রামের উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিলাম।

পরের দিন ধুমধামের সহিত হরতাল পালন হল। ককটেল ফুটল শতাধিক। গণি মিয়া মোটামুটি তারকা হয়ে গেছে। নতুন জামা কাপড় গায়ে দিয়ে সে প্রতিটা চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিতে লাগলো। বিরোধী দলীয় নেত্রী এর সাথে সরকারের প্রত্যক্ষ সংযোগ আছে বলে দাবী করলেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী এই হরতাল উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবী করে বলেন যে জনগণ এই হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি নিহত পিঁপড়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

রাতে টক শো তে আমাদের টকাররা নানা বিশ্লেষণ তুলে ধরলেন । এটার সাথে তারা ১৯৭১ কে টেনে আনলেন।
হরতাল শেষ হল। ভাগ্যভালো কেউ মারা যায়নি। আমি স্তব্দ হয়ে বসে আছি টিভির সামনে। আমার হাতে একটা পিঁপড়ে হাঁটাহাঁটি করছে। আমি আলতো করে ধরে পিঁপড়েটাকে নামিয়ে দিলাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×