somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেকনোম্যান (দ্যা আলটিমেট সুপার হিরো অফ দ্যা ওয়ার্লড)

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোটবেলা থেকেই সুপার হিরোদের প্রতি আমার রাজ্যের আগ্রহ। ব্যাটম্যান, সুপারম্যান, কিংবা স্পাইডারম্যান থেকে শুরু করে হালের শাহরুখজির রা-ওয়ান মারা জি-ওয়ান পর্যন্ত যেনো পুরো দুনিয়াটাই সুপার হিরোদের জয় জয়কার। আহ ! সুপার হিরোরা কতোই না সুপার ! চাম্মাক চালো গতিতে বধ করে ফেলে দুষ্ট শক্তিকে । উড়তে পারে আকাশে, আবার অনেক উচু থেকেই লাফিয়েও পরতে পারে, আর গুলি করলে ? ওরে বাবা মেট্রিক্স দেখেননি ? হাত দিয়ে গুলি আটকে দেয় যে! পারবেন আপনি ? বুঝতে পারছি লজ্জা পেয়েছেন, শুনুন আপনাকে একটু খুশি করি দেই আমিও পারিনা । সুপার হিরো বলে কথা তাদের কাজ কি আর আমার মতো ম্যাংগো জনতা পারবে ? তাদের কাজ হবে সব সুপার ডুপার। যাই হোক এবার মুল প্রসঙ্গে আসি এতো সব সুপার হিরোদের সাথে পাল্লা দিয়ে পৃথিবীতে যে আরেকজন সুপার হিরোর আগমন যে ঘটেছে সেই খবর দেখি রাখলেনই না ! বলছি শুনুনু , পৃথিবীর সমস্ত সুপারম্যান এর সাথে নামে মিল রেখে এই ম্যানটার নাম দিলাম টেকনোম্যান । কি নতুন কিছু শুনে বিরক্তিতে ভ্রু কুচকালেও এ সুপার হিরো কোত্থেকে এলো , এ কি করে, কি ই বা তার সুপার পাওয়ার , বিষয় আশয় শুনলে বিস্বয়ে মুখে মাছি ঢুকবে বিশটা ! আসুন একটু পরিচিত হই ....দ্যা আলটিমেট হিরো আব দ্যা ওয়র্লড “ দ্যা টেকনোম্যান ”

শুনে অবাক হবেন সুপার হিরো টেকনোম্যান এর আবির্ভাব কিন্তু একে বারে নতুন নয় বরং সে অনেক আগে থেকেই আমাদের মাঝে একটু একটু করে আসা শুরু করে দিয়েছে এবং নিজের অবস্থানটা সে ইতিমধ্যে যথেষ্ঠ পোক্ত করে ফেলেছে । দেশে বিদেশে, অফিসে, আদালত থেকে শুরু করে একেবারে টোনা-টুনির সংসার পর্যন্ত সে এখন বিরাজ করছে সগৌরবে । ওত্তর মেরুর ঠান্ডা হাওয়ার দেশ খেকে শুরু করে আমাদের প্রিয় বর্ষার বাংলা মুলুক পর্যন্ত নিজের সুপার পাওয়ার এর কারিশমা দেখিয়ে চলছে । এ যেনো মহা কারিশমাটিক সুপার হিরো।

টেকনোম্যান এর সবচেয়ে সুপার পাওয়ার হলো তার কোনো আবেগ নেই বা মনে কোনো ভাব নেই । একজন টেকনোম্যান নির্দিষ্ট পরিমান আবেগ নিয়ে তার যাত্রা শুরু করে এবং যতোই সে টেকনোম্যান হিসেবে আবির্ভুত হতে থাকে ততোই সে আবেগ আর ভাব শুন্য হতে থাকে । সে তখোনি পরিপূর্ন সুপার হিরো পর্যায়ে যাবে যখন তার অন্তরে কোনো আবেগ থাকবেনা । একটু কেমন কেমন যেনো লাগছে মনে হয়। কে এই টেকনোম্যান !যার কোনো আবেগ নেই । কে হতে পারে এই নতুন সুপার হিরো ? আসলে টেকনোম্যান হিসেবে আপনি যাকে আলাদা করে ভাবছেন সে আর কেও না সেটা আপনি নিজে জনাব । আপনি আমি আমরা সবাই যারা ধিরে ধিরে নিজেদের আবেগপূর্ন হৃদয়কে সময়ের সাথে সাথে বিসর্জন দিয়ে ফেলছি ।আবেগ, ভালবাসায় ভরপুর আমাদের হৃদয়কে এখন শুধু মাত্র টেকনিক্যাল কোনো যন্ত্রের মতো চালাচ্ছি। অন্তর নামক ঘরখানায় তো আর অন্তর বলে কিছু নেই আছে, হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ড, আর মাইক্রোচিপ এ ভরা আমাদের অন্তর ।নির্দিষ্ট সিগন্যাল এর মতো চলছে আমাদের অন্তর । প্যাসক্যাল, টারবো, আর সি পোগ্রাম দ্বারা তৈরি আমাদের মনে আবেগের কোনো যায়গা নেই । কিংবা আমাদের অন্তর এ আবেগ, ভালবাসা নামক প্রোগ্রামটি ডিলেট হয়ে গেছে। ।নির্দিস্ট কিছূ লজিকে ভরা কতোগুলি কোড এর মাধ্যমে চলছে আমাদের মন । আমরাই নতুন দিনের নতুন সুপার হিরো বা টেকনোম্যান ।
আমার আমাদের হৃদয়কে বন্ধ করে দিয়েছি, কিংবা কোনো এক সাইবানি ঝরে তা থেমে গেছে। আমাদের মনে এখন আর ভাব হয়না ।বা ভাব হলেও তাকে থামিয়ে দিতে শিখে গেছি। মনের আবেগ কে এখন আমাদের নিজেদের দুর্বলতা মনে হয় । আমারা এখন কতো কিছু থেকে দুরে চলে গেছি । নদী দেখিনা, দেখলেও মনে ভাব হয়না । পাখিদের সভায় যাইনা , পাখি আকাশেও দেখিনা, আর দেখব কি করে আমাদের কি সে সময় হবে ? আমরা যে এখন লোহা আর মর্ডান টেকনোলজি দিয়ে গরা টেকনোম্যান । আমারা কতো কিছু করিনা....। মনে পড়ে সেই কবে আকাশ দেখেছেন ? সারাদিন যে আকাশ কতোবার কতো বিচিত্র ভাবে তার শারির রঙ বদলায় তা যোনো আমাদের চোথেই পড়েনা ।শ্রাবন ঘন মেঘলা আকাশের রুপ দেখে আমাদের মন আর আনন্দে কেপে উঠেনা । আমরা বোধ হয় এখন আর মাকে দেখিনা, দেখিনা তার আবেগ জরানো টলটলা চোখের নদী, অনুভব করিনা তার শিতল পাটির কোমল হৃদয়। আর আমাদের সে সময়টাই বা কোথায় ? আমরা হয়ে উঠছি একেকজন নতুন দিনের নতুন সুপার হিরো ।
ফুল দেখিনা, জন্মদিন, গায়ে হলুদ কিংবা কোনো সামাজিক অনুষ্টানে নিতান্ত বাধ্য হয়েই কিছু ফুল কিনি, লাল চাদরে মোরানো গোলাপের এক একটি পাপরী এখন আমাদের মনকে আন্দোলিত করেনা, হাসনা হেনার গন্ধ আমাদের নাকে আসার আগে বেশি দামি পারফিউমের গন্ধে সম্মোহিত হয়ে পরি। নদীর পারে যাই নদী পার হতে নদীর শোভা দেখতে নয়, কি আছে নদীতে, সূর্যের আলোয় নদী চিকচিক করে দিনের বেলায় তারার মেলা বসিয়ে দেয় তা আমাদের চোখেই পরেনা ! আমারা সুপার হিরো না তো কি ? আমাদের অন্তর এখন ভাব বোঝেনা , ইন্টারনেট, ফেসবুক টুইটারের যুগে প্রেম করতে ভাব লাগেনা দরকার এতো এতো ফেক আইডি, ফেক পরিচয়, ফেক ভালোবাসা । সাগরের জলে বড় বড় ঢেউ ভাঙলেও ভাঙেনা আমাদের টেকনো মন । রাতের গুটগুট অন্ধকারে প্রকৃতীর নিরবতার মাঝের নির্মল আনন্দ এখন আর আমরা নেই না । রাতের আকাশে তারারা যখন একটি মাত্র চাদকে প্রজার মতো চারিদিকে ছরিয়ে ছিটিয়ে থাকে তাতে চাদ রাজা না হয়ে যায় কই । জীবনান্দ দাশের এক লক্ষী পেচা কেবল কবিতার পাতায়ই রয়ে গেছে, আমাদের সেই লক্ষী পেচা খুজে কাজ নেই !নক্ষ্যত্রের রাত্রী এখোনো আছে, এখোনো কুটনা তারারা এদিক সেদিক ছুটাছিটু করে বেরায় । কিন্তু এসব দেখার মানুষ নেই । পাহাড়, নদী, ঝর্না, সমুদ্র, আকাশ এসব আর আমাদের মনের খোরাক জোগায় না । গুগল, ফেসবুক, টুইটার এর যুগে আমরা রিয়েল ওয়ার্লড এর চেয়ে ভার্চুয়াল ওয়ার্লড এই বেশি থাকি। হাজার খানেক ফেক বন্ধুর ভিরে রিয়েল লাইফের রিয়েল ফ্রেন্ডদের কথা মনেই থাকেনা আমাদের। আজকাল দেশের প্রতিও যে ভাব কমে গেছে তাও বুঝতে পারি । মুক্তিযুদ্ধের ছবি হলে চোথের পানি ধরে রাখতে পারতামনা । আজকাল মনে হয় এখানেও আবেগে ভাটা পড়ে গেছে । দেশটার প্রতি আমাদের খুব একটা ভালবাসা আছে তা মনে হয় বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো দলের ক্রিকেট খেলা না পরলে টের পাওয়া যায়না । সস্তা আবেগ থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো ।

মনে পরে বাব মারা যাবার পর কবর স্থানে যেয়ে তাকে যে ছোট্ট ঘরটায় রেখে এলাম সেখানে গেলেই চোখে পানি চলে আসত, আর এখন পানি তো দুরের কথা আন্তরে ভাব ই হয় না । সুপার হিরোর এই যুগে কবে যে ম্যান থেকে টেকনোম্যান বনে গেলাম ....নিজেও জানিনা ।প্রকৃতির বিশাল সৌন্দর্য্যকে অগ্রাহ্য করে বসে আছি। এতো বড় ক্ষমতা আমাদের ! আমরা আমরা সুপার হিরো না হয়ে যাই কি করে ! তাই কথাটা শুনতে ভালো না লাগলেও বলতে হয় রাইজিং অফ টেকনোলজি.....কলাপসিং অফ আবেগোলজি....
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×