somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষের পাতা - ৫

০৭ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি আব্বার বিয়ের কিছুদিনের মাথায় আমার ঘর থেকে বিতারিত হয়ে আশ্রয় নিলাম আব্বাদের ঘরটায় । কথাটার মধ্যে যত না নাটকীয়তা, ঘটনা আসলে তেমন কিছুই না । বরং বলা যায় দখিনা বাতাসে প্লাবিত হওয়া্য় আমার ঘরটা আব্বার সদ্য বিবাহিত বধুর নিকট যেমন লোভনীয় হয়ে উঠেছিল তেমন আব্বার ঘরটা থেকে বাড়ির সম্মুখে আড্ডাস্থানটি স্পষ্টভাবে দেখা যাওয়ার কারনে সেটাও আমার কাছে ততোধিক আকর্ষণীয় ছিল । অবশ্য সুবিধাটা পেয়ে খুব বেশিদিনের জন্য লাভ হয়নি, কারন আমাদের প্রতিদিনের আড্ডাটা বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিদিন থেকে সপ্তাহে দুই একবারে এসে ঠেকল । শুধু তা নয় মেয়েদের বাইরে যাওয়াতেও যার যার বাসা থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে গেল । দোষটা অবশ্য আমাদের নয়, দোষ হচ্ছে মাথা চাড়া দিয়ে উঠা পাড়ার কিছু উঠতি বয়সের বখাটে ছেলে । তারা ভুল বানানে ভরা চিঠি দিয়ে আমদের প্রতি তাদের মনের গভীর প্রেম ব্যক্ত করায় এবং আমাদের আড্ডার সময় গেটের অপর পাশে আনাগোনা করার কারনে আমাদের এই অবরোধ বাসিনী দশা । আমাদের কাঁঠাল তলা থেকে আড্ডাটা চলে এলো আমার ঘরে , তাও সব দিন সবাই আসতো না । এস এস সি-র পর ছুটিটাকে কাজে লাগিয়ে ঢ্যাঙা ব্যালকনি টু ব্যালকনি প্রেমে নিজেকে শপে দিল । সে এক মারাত্মক প্রেম , শিরি ফরহাদকেও হার মানায় । কারন ঢ্যাঙা বলে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে পাশের বাসার শাহানার সাথে যোগাযোগ করতে পারতো । বল্টু গেল খেলাধুলায় মজে । ক্রিকেট আর ফুটবল খেলতে খেলতে নিজের চার ফুট দশ ইঞ্চি বল্টু মার্কা শরীরটাকে পাচ ফুট তিন ইঞ্চির বুলডোজার বানিয়ে ফেলল । বিবিসির থুতনি থেকে ঝুলতে লাগলো কয়েকটি ফিনফিনে মাসুম দাড়ি , কাধে ঝুলল চটের ব্যাগ, পড়নে সুতির পাঞ্জাবি । যখনি দেখা হত চটের ব্যাগ থেকে কবিতার খাতাটি বের করে কবিতা শুনাতো , চোখে উদাসীন দৃষ্টি । আটিসের তখন এইচ এস সি চলছে কিন্তু তার মধ্যেও দেখতাম রোজ বিকালে ওর ঘরের জানালার ধারে বসে কি সব আঁকাবুকি করছে । মাঝে মাঝে আমার সাথে চোখাচোখি হলে খুব খুশি হয়ে হাত নাড়ত । টর্চ সুন্দরী হওয়ার যন্ত্রণাটা হাড়ে হাড়ে টের পেল । শুধু যে পাড়ার বখাটেরা তা নয়, স্কুলের বখাটে , মার্কেটের বখাটে সবাই ওর জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলল । ওর সাথে সাথে শান্তা অ্যান্টিদেরও চোখে ঘুম নাই । হাতে উনাদের অগুনতি বিয়ের প্রস্তাব । মাঝে মাঝেই শুনতাম পাত্র দেখতে গেছে অ্যান্টিরা । এমনই করে একদিন টর্চ মানে ফাইজার বিয়ে হয়ে গেল এক ক্যানাডা প্রবাসি পাত্রের সাথে । বাল্যবিবাহ তার উপর আবার বয়সের অনেক পার্থক্য , সবাই বেশ চিন্তিত ছিল মানিয়ে নিতে পারে কিনা । কিন্তু সবার চিন্তা অমুলক প্রমান করে টর্চ ওর বরের সাথে বিদেশ বিভুয়ে বেশ ভালভাবেই ঘর করতে লাগলো । মাষ্টারনী ঘর থেকে তেমন বের হতে পারতো না বলে আরো বেশি করে মোটা মোটা বইয়ের মাঝে নাক ডুবিয়ে পরে থাকতো । হাই পাওয়ারের মোটা কালো ফ্রেমের চশমার নিচে ওর চোখ দুটো দেখলে মাঝে মাঝে উদ্ভ্রান্তের মত লাগতো ।
সে বছরই আমার আব্বার ঘর আলো করে এলো আরেকটি কন্যা সন্তান । উনার নতুন বউ কথা দিয়েছিলেন যে উনি আব্বাকে পুত্র সন্তান উপহার দিবেন, নিশ্চিত । তার বদলে এই তৃতীয় নাম্বার অপ্রত্যাশিত বোঝাটা কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার জন্য মুখটা আষাঢ়ের মেঘ করে ঘুরে বেড়াতো আব্বা । প্রতারনার অভিযোগে নববধুর সাথে প্রায় রাতেই চলতো প্রচণ্ড বাকবিতণ্ড । এই নিত্য গৃহযুদ্ধে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন আপু আব্বাকে ভালভাবে কাগজ কলমে বুঝিয়ে দিল যে, ছেলে বা মেয়ে হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিটি আব্বা । আব্বারই শখে আপু ডাক্তারিতে ঢুকে আজ থার্ড ইয়ারে । সুতরাং আপুর ঐ বৈঠকের পর বাসাটায় কিছুটা শান্তি ফিরে এলো । কিছুটা বলছি এই কারনে যে , রাতের বেলায় আমার ছোটো বোনটা কেঁদে উঠলেই এক বিশাল ধমক দিয়ে আব্বা ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের ঘরের সোফায় গিয়ে ঘুমাতেন । এত কিছুর মাঝে ছোট বোনটা হয়ে উঠলো আমার চোখের মনি । কি যে সুন্দর ছোট্ট ছোট্ট হাত পা নাড়িয়ে খেলা করে । আমাকে দেখলেই কোলে উঠতে চায় ।
দিনগুলো ভাল মন্দের মাঝে এভাবে মোটামুটি কেটে যাচ্ছিল , কিন্তু বিধি বাম । আপুর মেডিকালেই ভর্তি হল আটিস । আর ভর্তি হয়েই প্রথম কথাটা সে যা জানালো তা হল , আপুর অ্যাফেয়ার !!! যাকে বলে মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়া । যদিও আটিসের মতে সোয়েব ভাই দেবতুল্য মানুষ , আমি জানি আব্বা এতে কখনই রাজি হবেন না । বয়স বাড়ার সাথে সাথে সব বিষয়ে আব্বার গোঁয়ার্তুমিটাও চরমে উঠেছে । আপু বলল সোয়েব ভাইয়ের বাসায় সবাই জানে , ওরা আপুকে খুব পছন্দও করে , সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকেই বলে দুজনের জানাশুনা ।
যাই হোক বেশ ভালয় ভালয় আপু ফাইনালের আগ পর্যন্ত এই সম্পর্কটা গোপন করে আসতে পেরেছিল । কিন্তু ফাইনালের ঠিক আগে থেকেই শুরু হল বিপত্তি । কোথাকার পানি যে কোথায় গিয়ে গড়াল আর তার জের ধরে আমার জীবনে নেমে এলো সবচেয়ে বড় অভিশাপ ।
............চলবে

১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩২

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব কমই জানা গেছে। এবার এ ঘটনার আরও কিছু তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের কিছু উল্টা পালটা চিন্তা !

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১০

১।
কলকাতা গিয়ে টুকরা টুকরা হল আমাদের এক সন্ত্রাসী এমপি, কলকাতা বলা চলে তার ২য় বাড়ি, জীবনে কতবার গিয়েছেন তার হিসাব কেহ বের করতে পারবে বলে মনে করি না, কলকাতার অলিগলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×