somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নে...

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোনো গল্প নেই কোথাও। আমি গল্পগুলোকে মুড়ির মত দাঁতের তলায় ফেলে দিয়েছিলাম সেদিন। তারপর ধার পরীক্ষা করেছি চাবিয়ে চাবিয়ে।
আমাকে প্রতিদিন কত কি করতে হয়। তবু গল্পের মত কিছু করা হয়ে ওঠেনা। আর প্রতিরাতে! কোনো কোনো রাত অগল্পের মত সুস্থির। স্বপ্ন নেই! আমার স্বপ্ন ভাল লাগে। আমি সারাদিন সেই ঘোর টাকে খুঁজি। সারারাতে দেখা স্বপ্নটাকে!

তিতির বাঁশের ভারার দুপাশে ফুলের মত ভাপ ওঠা মোমো নিয়ে চলে যাচ্ছিল। কুয়াশার মত তাকে সেই ভাপ ঘিরে ধরেছিল। আমি যত চোখ কচলে দেখছিলাম তত বেশি সে অস্পষ্ট ধোঁয়াটে। সে আড়ালের খোঁজে।
ওখানে আমরা ছেলেবেলায় নাটক করতাম। আমাদের ক্যাপ্টেন হত সেই অত্যাচারী মোড়ল। যে তার ইচ্ছেমত বৌদের আত্যাচার করে। আমি এক অত্যাচারী বৌ। তিতির নদীর ঘাটে এসে নামত তার বজরা নিয়ে। বাঁশের শুকনো পাতা বিছিয়ে আমরা এক পথ করতাম। ওটা নদী। তারপর একদিন ঘাটে জল আনতে গেলাম। বসে বসে দুঃখের গীত করলাম। তিতির ছুটে এসে আমার হাত ধরল। বলল চল আমার সাথে।
তখন কার নাটক মানেই নাটকীয়তা।

আচ্ছা এটা কি কেউ জানে? জীবনের নাটক অনেক বেশি বৈচিত্রময়! এত বৈচিত্র নাটকে আনলে অবিশ্বাস্য লাগে। ঘটনার আকস্মিকতায় অস্থির লাগে বলেই কি মেনে নিতে কষ্ট হয়!
তখন আমরা ক্লাস নাইনে। মাঠপাড়ার ওদিকে জেসমিন আত্মহত্যা করল। আম্মা তার বান্ধবীদের নিয়ে দল বেঁধে গেল সই ঘটনার সাক্ষী হতে। আমি কত করে বললাম আমিও যাই। এমনিতে বাড়িতে আমাকে রেখে কোথাও যেতে চাইতনা আম্মা। আর সেদিন মুখের উপর না বলে দিল।
আমি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললাম কেন গেলে কি হয়?
আম্মা বলল ওসব দেখতে হয়না। কে জানে! ও বয়সটায় হয়ত এমন। কেউ মরে গেল দেখলে যদি মরে যেতে ইচ্ছে হয়! আমার মা কি আমার মরার ভয় করেছিল? আমি কিন্তু দিব্যি এখনো চোখ বন্ধ করলেই সেই জেসমিন কে দেখি। গাছের ডালে আলতো বসে থাকা। তার আসলে বসে থাকার কথা ছিলনা। আত্মহত্যা হলে ঝুলে থাকার কথা। সবাই বলে বাড়ির লোকেরাই জেসমিন কে মেরে গাছের ডালে রেখে এসেছিল। জেসমিনের পেটে যে অবৈধ বাচ্চা এসে গিয়েছিল।
আমি কেন যেন কান বন্ধ করলেও জেসমিনের প্রেমিকের কান্না শুনতে পাই।
একদিন গল্পটা লিখে ফেললাম। পাঠিয়ে দিলাম যুগান্তরে। তারপর কতদিন কেটে গেল। একদিন হঠাৎ এক বড় ভাইয়া ফোন দিয়ে আমাকে বলল গল্পটা ভাল লিখেছো। আমি যুগান্তর কিনে আনলাম। দেখে চোখ ভরে গেল।
আম্মাকে গর্ব নিয়ে দেখালাম। বললাম এই দেখো। সেদিন যে আমাকে দেখতে নিয়ে যাওনি আমি কি তোমার চেয়ে কম দেখেছি ঘটনাটা? আমি তো সেই মাঠ টাকে দেখি। নির্জন। সেই গাছ। জেসমিনের কপালের বাম পাশটাতে কাঁসার বাটিতে লেগে কেটে যাওয়া দাগটা। আমিতো বড্ড দেখতে পাই। জেসমিনের মা রাগে থরথর করে কাঁপছিল। তলপেটে লাত্থি দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল বল মাগী কে করছে এই আকাম?

বিকেলের ভাত ঘুমে আমি জেসমিন কে দেখলাম। এত কথা মনে পড়ে গেল। অগল্পের মত গল্প গুলোকে আমার খুব ভালবাসতে ইচ্ছে করে।
সেই নাটকের অত্যাচারী মাতব্বর কে সিনেমার খলনায়কের মত ভাবি। তারপর তিতির! শুকনো বাঁশের পাতার নদী পেরিয়ে আসা মানুষটাকে বড় আপন লাগে। নতুন একটা গল্পের কথা ভাবলেই কেমন শিহরন খেলে যায়। আশে পাশে কত চরিত্ররা থাকে। দুরুল মামা অনেক টাকা কামিয়েছিল। জেসমিনের প্রেমিকের বাড়ির লোকদের ফাঁসিয়ে দিয়ে। ছেলেটি মাঝে মাঝে এখনো গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আমার এসব ভাবতে ভাল লাগে। গল্পটা গল্পের মত মিস্টি হোক। আমার গল্পেরাও গল্পের মত হোক। একটা তুলতুলে কোমল বালিশের মত। মাথা রাখলেই তলিয়ে যেতে ভাল লাগবে আমার।

আজ রাতে আর একটা অস্থির স্বপ্ন আসুক। তিতির আসুক!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৯
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×