somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ বিমানের সেবা ভাল

০৭ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ বিমানের নাম শুনতেই প্রথমেই মুখে একটা তেতো স্বাদ হয়। বাংলাদেশ বিমান হল দুর্নীতিতে আক্রান্ত, দেনায় জর্জরিত, যখন তখন দেউলিয়া হয় এমন ধুঁকতে থাকা একটি পিছিয়ে পড়া প্রতিষ্ঠান যার সব কাজ বিলম্বিত। আর এর ভেতরে কিলবিল করছে শত শত পোকা, যারা দায়িত্বে কর্মচারী-কর্মকর্তা হয়েও ভয়ংকর ঘুণের মত, প্রতিষ্ঠানটিকে নিষ্ঠুরভাবে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

তা স্বত্বেও এখন পর্যন্ত আমার দেখা সবচেয়ে বয়স্ক, সপ্রতিভ এবং সবচাইতে ধৈর্যশীল কেবিন ক্রু বা এয়ার হোস্টেস’রা হচ্ছে বাংলাদেশ বিমানের। সাজপোশাক, বয়সে যা’ই হোক, আমি তাদের ধৈর্যে মুগ্ধ এবং অভিভূত।
স্বাভাবিকভাবেই, বাংলাদেশ বিমান সরকারী সার্ভিস; তাই তাদের মধ্যে একটা গা ছাড়া ভাব আছে, থাকাটা স্বাভাবিক যদিও দোষের কিছু। কিন্তু তবু আমি মনে করি তাদের নিয়ে যত সমালোচনা, নিন্দা আমরা শুনতে পাই, তার পুরোটার দাবীদার তারা নন।
তাদের নিয়ে থাকা সমালোচনা গুলো বিবেচনায় আনার আগে ভেবে দেখা দরকার তাদের কাজ কতটা কঠিন!
তাদের কাজ হচ্ছে অদ্ভুত আচরণের কিম্ভূত বাঙালিদের, সেবার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করা। সহজ কাজ নয়।
একবার মনে পড়ে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছি বাংলাদেশ বিমানে। ভাগ্যক্রমে একটা ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট পড়ে গেছে। যাদুঘরে রাখার সময় হয়ে গেছে যে ডিসি-টেন গুলোর, তাদের একটা নয়। একেবারে লিজ নেওয়া আধুনিক (অত্যাধুনিক নয়) এয়ার বাস!
এইবারের মত বেঁচে যাওয়া আমার খুশি দেখে কে?
তো, খুশি খুশি দাঁত গুলোকে কোনরকমে মুখের ভেতর ঠোট চেপে বন্দি করে রেখে, জাহাজে উঠার লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কি ব্যাপার? পাঁচ মিনিট যায়, পনের মিনিট যায়, কিন্তু লাইন তো আর এগোয় না! বেশ কিছুটা সময় পার করে যখন বিমানের ১৪ গুষ্টি শেষ করে, ভবিষ্যতের গুষ্টির উদ্ধারের জন্য মুখ খুলব (মনের মুখ), ঠিক এইসময় দেখলাম লাইনটা চলতে শুরু করেছে।
আমার খুশি খুশি দাঁত গুলো ঠোটের অসতর্কতায় এইবার বেড়িয়েই পড়ল।

কিন্তু বেশিক্ষণের জন্য নয়। প্লেনে উঠে দেখি হুলস্থূল কাণ্ড! মধ্য বয়স্ক না-অতি-সুন্দর চেহারার কেবিন ক্রু'রা সমানে “হাজি সাহেব”, “হাজি সাহেবা” বলে চেঁচাচ্ছেন। আর শুভ্র পোশাকের মূলত প্রৌঢ় হজ্ব যাত্রীরা যে যেখানে বসে আছেন সেখান থেকে কেবিন ক্রুদের কাকুতিমিনতি নির্বিকার চিত্তে উপভোগ করছেন!

ঘটনা হল, বোর্ডিংপাস’এ নির্দিষ্ট সিট নম্বর থাকলেও, হাজার কাকুতিমিনতি করেও হাজি সাহেবদের তাদের জন্য নির্দিষ্ট সিটে বসানো যাচ্ছে না। এই কারণেই আসলে দেড়ি হচ্ছিল বোর্ডিং করাতে।

বিরক্তি হীন কিন্তু করুণ কণ্ঠে রীতিমত করজোড়ে কেবিন ক্রুরা হাজি সাহেবদের অনুরোধ কর চলেছেন তাদের জন্য নির্দিষ্ট করা সিটে গিয়ে বসতে। কিন্তু কে শুনে কার কথা?

আমি আমার সিটের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে সেই সিটে বসে থাকা প্রবীণ হজ্জ-যাত্রী আমাকে বললেন, “আগে আইতে পার নাই?”

তাই শুনে শূন্য চোখে আমি ঘুরে তাকালাম কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা একজন এয়ারহোস্টেসের দিকে। দেখি তার মুখ আমার চেয়েও করুণ। কাঁচুমাচু হওয়ার ভান করে বললেন, "স্যার যেখানে খালি পান বসে পড়ুন। ওনারা বুঝতে চাচ্ছেন না।"

তা আমি আর উচ্চবাচ্য না করে জানালার পাশের বিকেলের সোনালী রোদ এসে উজ্জ্বল, চমৎকার সিট'টা আর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেসে বেড়ানো দেখার মায়া ত্যাগ করে ভেতরের দিকের একটা আঁটসাঁট সিটে গিয়ে বসলাম। আমার দুইপাশে এখন সাদা মেঘের বদলে সাদা হাজি সাহেবেরা।

তো এই পর্যায়ে শুরু হল কেবিন ক্রুদের সত্যিকারের পরীক্ষা। আমি বিস্ময় ভরা মুগ্ধ চোখে দেখলাম কি পরিশ্রমটা করেই না তারা হাজি সাহেবদের সেবা করে চললেন!

তারা হাজি সাহেবদের অনেকের সিট-বেল্ট বেঁধে দিলেন।
যখন তখন পানি চাইছেন তো, পানি দিয়ে গেলেন।
তাদের ভারী আর আকার-বিহীন বোচকাগুলো উপরে বক্সে তুলে দিলেন।
বোঁচকা খুলে যেন ভোমরার পেটের ভেতরে লুকিয়ে রাখা জীবন-সম পানের ডিব্বাটা খুঁজে এনে হাজি সাহেবের হাতে দিলেন।
টেক-অফের সময় এক হাজি সাহেবের বেল্ট খুলে দাঁড়িয়ে মালপত্র রাখার বক্স খুলে কি যেন খোজার কথা মনে পড়েছে। “হাজি সাহেব”, “হাজি সাহেব” বসে পড়ুন, বসে পড়ুন বলে চিৎকার করেও লাভ না হলে, দৌড়ে এসে হাজি সাহেবকে সিটে বসিয়ে, বেল্ট দিয়ে বেঁধে পুনরায় সিটে ফিরে গেলেন!

এবং এই সমস্ত কাজ তারা করলেন হাসি মুখে, বিরক্তিহীন, ক্লান্তিহীন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মাত্র ৪৫ মিনিটের পথ। আর এই কেবিন ক্রুরা না জানে কতক্ষণ ধরে সার্ভিস দিয়ে থাকেন হাজি সাহেবদের, অবিরত, হজ্জ চলাকালীন সময়ে প্রতিটি ফ্লাইটে!

আর তাদের নিয়ে সমালোচনা? আল্লায় সহ্য করব না। আল্লায় সহ্য করব না। :)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×