somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জাপান যাওয়া....৫

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিনের মতোন ভোরে বের হলাম হোটেল গিনজা দা ইছি থেকে। শিডিউলটা রাতেই চেক করা ছিল। আমাদের নিয়ে যাওয়া হবে জাপানের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এবং জনপ্রিয় স্থান ডিজনিল্যান্ডে। নামটা আগে কখনও শুনিনি। তবে সবাই বলাবলি করছিল, এখানে না গেলে নাকি জাপান আসাই বৃথা। জাপানি বন্ধু ইটো এগিয়ে এসে বললো, জানো কাজি, এই গিনজা শহরের ৬০ কিলোমিটারে কত লোকের বাস? আমি বললাম, কেমনে বলবো। বলল, ৩ কোটি! বললাম যাক্, বদনাম শুধু বাংলাদেশের। এখানেও তার ব্যাতিক্রম নই।
ইটোর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে উঠলাম। পাকিস্তানী বন্ধু হুমায়রার পাশের সিটে বসলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ডিজনিল্যান্ড এর আগে দেখেছে কিনা। সে বললো, দেখেছি। তবে জাপানের না, আমেরিকায়। আমি বললাম, বাহ্ তাহলে তো তোমার কাছ থেকে আইডিয়া নেয়া যাবে। গাড়ীতে বসে বসে আইডিয়া শেয়ার করবো। সে বলল, না কাজী তাহলে তুমি কোন মজা পাবা না। যাক একথা সেকথা বলার পর পৌছে গেলাম ডিজনিল্যান্ডে!
ডিজনিল্যান্ডের বিশাল প্রবেশ পথ। আমাদের প্রবেশ পত্র দেয়া হলো। বাংলাদেশী ১২শ টাকা দাম।জাপানের সবকিছুতে আবার কিউ, মানে লাইন ধরে এগিয়ে যাওয়া। লাইন ধরলাম। এক এক করে ঢুকছে। ভেতরে ঢুকে রীতিমতো বোকা বনে গেলাম। মনে হলো কোন এক স্বপ্নপুরি উড়ে এসে এখানে বসে গেছে।চারদিকে বিস্ময় সৃষ্টি করার মতো আনন্দের সমাহার। জাপানীদের নির্মানশৈলী ও প্রযুক্তি এতই দর্শনিয় যে যা বলা বাহুল্য। চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি, আর সৌর্ন্দয উপভোগ করছি। এমন সময় পেছন থেকে কে একজন জাপটে ধরলো। ভয় পেয়ে গেলাম। ভুল ভাঙ্গল যখন তখন দেখলাম, বাচ্চা শিশু-কিশোরদের পান্ডা বানিয়ে চর্তুদিকে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। পান্ডার সাথে করমর্দন করে এগুলাম।
পুরো ডিজনিল্যান্ডটি চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। টুমরো ল্যান্ড, ফ্যান্টাসি ল্যান্ড, ওয়েস্টার্নল্যান্ড আর এডভেঞ্চার ল্যান্ড। ঠিক করলাম, প্রথমে টুমরো ল্যান্ডের স্পেস মাউন্টেনে চড়বো। আমার সাথে আসা জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লিটন, নেপালের সুধির ও তারেক। বাক্সবন্দি একটি খোপের দু'সিটে ৪ জন। সিটে বসার পর যাত্রা শুরুর আগে সংকেত এলো, এখানে চড়তে হলে রক্তচাপ ঠিক থাকতে হবে, সাহস ও মনোবল থাকতে হবে। এগুলো পড়ে তো মনের মধ্যে তোলপাড়। শরীরে ভেতরে ধপাস শব্দটি কানে লাগতে লাগল। কাউকে বুঝতে দিচ্ছি না, এমনভাবে অভিনয় করছি যে, যাতে সবাই বুঝে আমার অনেক সাহস। রেল লাইনের মতোন আকাবাকা রাস্তা। বাইরে থেকে দেখে বুঝলাম বিশাল একটি গোলাকার পৃথিবী। এ পৃথিবীর ভেতরেই যত্তসব কান্ড কারখানা। যাক, হ্যান্ডেল দিয়ে আমাদের আটকানো হলো। লোহার ডান্ডাটি খুলতে নাড়াছাড়া করলাম। বুঝলাম কোন লাভ নেই, আটকে গেছি। যাত্রা শুরু হলো। এটি চলছে। ভেতরে অন্ধকার। বিশাল পৃথিবীর ভেতরে আমরা ঘুরছি। দেখছি তারা, সৌরমন্ডল। উল্কার ছুটাছুটি। বাহ্ বেশ চমৎকার। মনে হলো, মহাশূন্যে ঘুরছি। কেউ কাউকে দেখছি না। পাচঁ মিনিট পর দেখলাম, সামনে বিশাল একটি লেখা ফুটে উঠেছে, তা হলো বি কেয়ারফুল। এরই সঙ্গে বেড়ে গেল যন্ত্রযানটির গতি। রকেটের গতি। আর গতির মাত্রা এতই বেশি যে মানুষের চিৎকার ছাড়া কিছুই শুনা যাচ্ছে না। লিটন আমার গলা জড়িয়ে ধরে কান্না। আমার অবস্থাও কাহিল। পড়তে শুরু করলাম কলেমা। মনে করলাম, আহারে এখনই বুঝি মরন এসে যাবে। নিজের উপর রাগ এলো, দেশের কথা মনে পড়লো। ভয়ে বেরিয়ে এলো কান্না। মাত্র কয়েক মিনিট। সাই করে যাত্রা শুরুর জায়গায় এসে যানটি যখন থামলো, তখন দেখলাম সামনের পেছনের সবাই চোখ মুচছে। লিটন ছিল একটু মোটাসোটা। সে আমাকে চিমটি দিয়ে বলল, সত্যিই বেচে আছি। আমি বললাম, তোমার গায়ে চিমটি দিয়ে দেখো, তবে বুঝতে পারবে। আমাদের যখন এ অবস্থা তখন পেছন থেকে পাকিস্তানী বন্ধু হুমায়রা ডেকে বললো, কিরে কেমন লাগছে ডিজনিল্যান্ড..।
স্পেস মাউন্টেনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার পর মনোরেলে চড়ে পৌছলাম ফ্যান্টাসিল্যান্ডে। প্রবেশ পথে লেখা আছে, ইটস এ স্মল ওয়ার্ল্ড। এখানে হুইল চেয়ারে বসেই পৌছলাম এক অজানা রাজ্যে। পাখি, পরিদের রাজ্য। কেউ উড়ছে, কেউ হাত নাড়ছে, কেউ শুভেচ্ছা জানাতে ব্যস্ত। নাচ করছে স্বল্প বসনার নারীরা। বহু দর্শক উপভোগ করছে নাচ। এখান থেকে বেরিয়ে ঢুকলাম হান্টেড ম্যানসনে। ঢুকার পর পরই বিকট শব্দে নিভে গেল লাইট। মনে মনে বললাম, এ আবার কোন যন্ত্রনা। সামনে এগুতে গিয়ে দেখলাম, ধুপ করে কাটা হাত..মাথা ধসে পড়লো। যত সব ভুতুড়ে কান্ড কারখানা, কেউ বুঝি গলা টিপে ধরলো। ভয়ংকর চেহারা মানুষ হঠাৎ করে সামনে এসে হাজির, ভয়ে পিছুতে গিয়ে দেখি গায়েব।
এরপর গেলাম জাঙ্গল ক্রুস দেখতে। গভীর অরণ্যের মধ্যে দিয়ে চলাকালে দেখলাম, হাতি, হরিন, ক্যাঙ্গারুর রাজত্ব। দেখলাম, এক শিকারী তীর ধনুক নিয়ে বসে আছে। এতই বাস্তবতার ছোয়া, যা না দেখে আসলে বুঝানো যাবে না। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে ফেরার সময় হয়ে গেলো। দিনভর ঘুরে বিকেলের দিকে সবাই ফিরে এলাম গাড়ীতে। যাত্রা হোটেলের দিকে..
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×