somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট এক অভিজ্ঞতা

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের চারপাশের ছোট খাট অনেক ঘটনাই আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। সেরকম একটি ঘটনা এখন লেখতে বসলাম।


তখন কলেজ এ সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। ক্লাশ শেষে একদিন কলেজ গেইট এর সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে চা খাচ্ছি আমরা কয়েকজন। সেই সময় একটা ছোট ছেলে সামনে এসে বলল : "ভাইয়া দুইটা টাকা দেন।"


ছেলেটাকে প্রতিদিন ই দেখি। সবার কাছে টাকা চায় খাবার কিনে খাবে বলে। আজও তাই করছে। কিন্তু আজ তার মিনতিটা কেমন যেন অন্যরকম। তাই মনে চাইল এতটু দেখি কি করে। টাকা হাতে পাবার পর সে জোরে দিল এক দৌড়। এরকম দৌড়ে কৌতূহল আরো বেড়ে গেল।


পিছনে পিছনে গিয়ে দেখি, সদ্য প্রাপ্ত টাকার সাথে পকেটে থাকা টাকার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে দোকান থেকে একটা পাউরুটি কিনল, আর পাশের হোটেল থেকে একটা গ্লাস এ পানি নিল। এর পর হাটা শুরু করল। হাটতে হাটতে একটু দূরের একটা গাছ তলায় গেল। সেই গাছের নিচে এক মহিলা বসা ছিল তার কোলে ৭-৮ মাসের এক বাচ্চা আর পাশে ছিল ৩-৪ বছরের আরেকটা মেয়ে।


ছেলেটাকে দেখে মহিলাটার চোখ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। ছেলেটা পানি আর রুটিটা মাটিতে নামিয়ে রেখে মায়ের কোল থেকে ছোট বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আর ৩-৪ বছরের সেই বোন টাকে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে খেলতে বসল। আর মা টা রুটিটা পানিতে ভিজিয়ে খেতে লাগল।


শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম, মা আর বাচ্চাগুলোকে। ছেলেটা ছোট বানটাকে নিয়ে খেলা করতেছে, আদর করতেছে, হাসানোর চেষ্টা করতেছে। গায়ের ধূলো ঝেরে দিচ্ছে, নাক পরিষ্কার করে দিচ্ছে। এসব করার সময় ওর চোখে মুখে যে মমতার ছবি ফুটে উঠেছিল তা কলমে প্রকাশ করার ক্ষমতা মনে হয় আল্লাহ আমকে দেন নাই। আর মা টা একাগ্রচিত্তে ছেলের উপার্জন করা খাবার খাচ্ছে। অবশ্য পুরোটা খেতে পারে নাই্। কিছুটা পলিথিনের কাগজে করে রেখে দিল হয়তো পরে খাওয়ার জন্য। মায়ের খাওয়া শেষ হতেই ছেলেটা বোনদ্বয়কে আবার মায়ের সুনিরাপদ আশ্রয়ে রেখে আবার দৌড় দিল, আবার শুরু হল তার টাকা চাওয়া, জীবনযুদ্ধ।



এই ছেলেটার জীবনের অতিক্ষুদ্র কিছু সময়ের চিত্র থেকে আমার মনে হয়, ওর এই কষ্টের জীবন যাপনের মাঝে এমন কিছু আছে যা কি না আমদের মাঝেও নেই।


# এত ছোট বয়সেই নিজের পরিবারের খেয়াল রাখা। কেন সে টাকা চাইতে যায়? তার মা তো আছেই। কিন্তু ও যায়। মা না-খাওয়া দেখে মায়ের জন্য খাবার নিয়ে যায়। অথচ আমাদের সভ্য সমাজে কত মানুষ আছে যাদের সেইরকম কোন অভাব না থাকা স্বত্তেও মায়ের খেয়াল রাখে না। সেই দিকটা চিন্তা করলে আমরা ওর চেয়ে অধম।


# ছোট বোনকে নিয়ে খেলা করার সময় ওর যে আন্তরিকতা, ভালবাসা সেরকম হয়ত আমাদের অনেকেরই নেই। যান্ত্রিক জীবনের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আমরা অনেক সময়ই নিজেদের ছাড়া পরিবারের অন্য কারো খোঁজ খবর ভালমত নিতে পারি না। নিজের ছোট ভাইবোনদের ঠিক মত সময় দিতে পারি না। তাদের সাথে নিজের অজান্তেই দূরত্ব সুষ্টি হচ্ছে।


# পরিবারের দ্বায়িত্ব নেয়া। আমরা অনেক সময়ই পরিবারটা বাব-মা কিভাবে চালাচ্ছে তা নিয়ে চিন্তা করি না। যথেষ্ট পরিমান বড় হওয়ার পরও নিজেদের খরচটা নিজে চালানো নিয়ে সচেতন না। হয়তো মনের কোনে একটা তাড়না থাকে। কিন্তু জোড়ালো ভাবে চেষ্টা করিনা।



হয়তো বলবেন যে, ওদের সাথে আমাদের তুলনা হয়না, অথবা বলবেন ওর বাপ মায়ের দোষ, খাওয়াইতে পারবে না জন্ম দিছে ক্যান, অথবা বলবেন যে, ও নিছক জান বাঁচানোর জন্যই এসব করছে, হতে পারে সবগুওলা কথাই ঠিক কিন্তু ওদের কাছ থেকে আমরা যদি আমাদের অপূর্ণতাগুলো পূরণ করতে পারি তাহলে অসুবিধা কোথায়।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×