somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয় দিবস ২০১১

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমগ্র জাতি বিজয় ৪০ তম বিজয় দিবস পালন করলো মহা আবেগীয় উদ্দীপনায়। ধ্বনিত হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। সরকার-বিরোধী দল বলল, করা হবে। বিরোধী দলীয় নেত্রী তো যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে নিজের অবস্থান বেশ কয়েকটি জনসভায় বলেছেন।

প্রতিটি বিজয় দিবস এলেই ধ্বনিত হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথাটি। ৪০ বছর গেলো, কিন্তু হলো না। জনতার সাথে গুটগুটি খেলে অভ্যস্ত সরকার গুলোর কি দায় পড়েছে এত বড় একটা বিষয়ে সুরাহা করে ফেলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটানোর সুযোগ বন্ধ করা। এ বিষয়ে স্লোগানগুলোর কি ভবিষ্যত হবে তার কি চিন্তা নাই ওদের? ওরা এত বোকা ছিল না কোন কালে। থাকলে এতটা বছর লাগে!!

তবে দেখা যাচ্ছে জোরালোভাবে শুরু হয়েছে। দেশের জন্য সু সংবাদ। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে। এ বিচারের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে। দারুণ কথা। আমরা কলঙ্কমুক্ত হতে চাই। যেসব দোষ করি নাই, সেগুলোর কলঙ্ক আমাদের বইতে হবে কেন!!

যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনের পদ্মা সেতু দুর্নীতি পুরা জাতিকে বিশ্বের কাছে কলঙ্কিত করেছে। বিশ্বব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছে সাহায্য। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে আপামর জনতা। তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, মানব বন্ধন হয়েছে অহরহ। নাহ আমরা কলঙ্কমুক্ত হওয়ার কোন সুযোগ পায়নি। কার্যালয় পরিবর্তন হয়েছে, ঠিকই মন্ত্রী রয়ে গেছেন আবুল হোসেন। আবুলের কিছু হইলো না, জাতি হিসাবে আমরাই আবুল হয়ে রইলাম।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ফুল দেওয়া নিয়ে কাল চলল অনেক স্থানে মারামারি। আওয়ামীলীগ না বিএনপি কে আগে ফুল দেবে। লক্ষীপুরে ফুল দিয়ে বাসায় ফেরার পথে বিএনপির এক নেতাকে খুন করলো প্রতিপক্ষরা। লক্ষীপুরে এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা না থাকতে পারে খুনীদের। কেননা সেখানে হত্যা করে ফাসির রায় হলে সমস্যা নেই। রাষ্ট্রপতি থেকে মাফ পাওয়া যায়। এ মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতা তো তাদের জন্য!! যদি দেশ স্বাধীন না হতো তবে কি তারা এমন রাষ্ট্রপতি পেতো যিনি এভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে মাফ করে দিতেন?

জাতি হিসাবে আমাদের স্মৃতি শক্তি খুব দুর্বল। আমরা সহজে ভুলে যাই। উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা আবু তাহেরের ছেলে এ এইচ এম বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি। লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার রায়ে ২০০৩ সালে আদালত বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

এই ধরণের স্বাধীনতার জন্যই কি এতটা ত্যাগ করলেন মুক্তিযোদ্ধারা। দুই লক্ষ মা-বোন হারালেন ইজ্জত? এরকম স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য??

আচ্ছা ওসব থাক। রাজনৈতিক দেউলিপনায় দেশের তরুণ সমাজ প্রোফাইলে লিখে বসে, আই হ্যাট পলিটিক্স। এটাতো রাজনৈতিক দলগুলোর চরম অপমান। এ ব্যাপারটা তারা বুঝবেন কবে?


কাল বিজয় দিবসে বহদ্দারহাটের ওপর দিয়ে আসছিলাম। পতাকা নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাস দেখেছি। ভাল লেগেছে। তবে সবচেয়ে ভাল লাগল যে ঘটনা বলছি।

বহদ্দারহাট জাংশন ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। বিশাল কর্মযজ্ঞ। বড় বড় কুপিকল, লোহার টাওয়ার,নানা প্রকারের ইঞ্জিন দিয়ে ভরা এলাকাটি। যন্ত্র দিয়ে মাটি গর্ত করার কাজ চলছে। গর্ত করা হচ্ছে যে জায়গটায় তার পাশে বড় একটা ইঞ্জিন রাখা। সেখানে মোটর দিয়ে ঘুরানো হচ্ছে বেল্ট। আর সেটা দিয়ে উঠানামা করছে মাটি ছিদ্র করার যন্ত্রটি। কিছুক্ষণ পর ওপরে উঠছে। সজোরে নিচে নামছে। এ ঘটনাটিই বার বার হচ্ছে। এজন্য ইঞ্জিনের মেশিনটায় একটা স্টিয়ারিং ধরে আছে এক শ্রমিক। সে সেটা নাড়াচড়া করছে। ইঞ্জিনের একপাশে একটা ছোট বিবর্ণ লাল সবুজের পতাকা পত পত করে উড়ছে। যেহারে বালু ওড়াওড়ি করছে তাতে ওরকম বিবর্ণ হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

খেয়াল করলাম মুগ্ধ হয়ে পতাকাটার দিকে চেয়ে আছে অভ্যস্ত হাতে কাজ করতে থাকা শ্রমিকটি। ব্যাপারটা এত্ত ভাল লাগল। অনেক বেশি ভাল।

আসলে ওরা আমাদের মত কুচকাওয়াজ দেখে, গার্লফেন্ড নিয়ে কনসার্টে গিয়ে মাতোয়ারা হয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করে না। কার আগে কে ফুল দেবে এ নিয়ে মারামারি করতে যায় না। কিংবা অনুষ্ঠানে হুড়াহুড়ি লাগে না টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিতে। বড় পর্দায় ছবি দেখে ওদের এ বিজয়ের দিনটি কাটে না। ওরা কাজের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে।

আসার পথে বার বার একটা প্রশ্ন মনে আসছিলো, আচ্ছা ওদের এ পালনটা কি বিজয় উদযাপন না? আমরা যারা স্টেডিয়ামে, কনসার্টে, বিজয় র‌্যালিতে, ফেসবুকে, ব্লগে বিজয় পালন করছি তারাতো সেভাবে করছে না! কিন্তু তারা তো দেশগঠনে কাজ করছে। হয়ত এ প্রজেক্ট নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে কিংবা হয়নি। সেটা নিয়ে তো তাদের বাড়তি লাভের সুযোগ নেই। তারা কাজ করে যাচ্ছে। মুগ্ধ নয়নে পতাকার দিকে চেয়ে থাকার ব্যাপারটা ছাড়া আর কিছুই করতে দেখলাম না। তাদেরটা কি বিজয় উদযাপন না?

আচ্ছা বিজয় দিবসে আমাদের আবেগটাকে আমরা সারা বছর ধরে রাখতে পারি না!! কাজে লাগাতে পারি না দেশ গঠনে সে আবেগ!!! ইশ যদি পারতাম। তাহলে হয়ত আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাড়ানো জাতিগুলোর একটা হতে পারতাম। ইনশাল্লাহ একদিন পারবো। ইনশাল্লাহ আমরা পারবো।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×