somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'কেপলার-২২বি' বাসযোগ্য এক নতুন পৃথিবী !!

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর মতোই একটি গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ছয়শ’ আলোকবর্ষ দূরে ‘কেপলার ২২বি’ নামের গ্রহটি পৃথিবীর মতোই বাসযোগ্য বলে ধারণা করছেন তারা।কেপলার-২২বি সৌরজগতের বাইরের একটি গ্রহ যা ২০১১ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে নানা বৈশিষ্ট্যে এই গ্রহটি পৃথিবীর মতো এবং মনুষ্যবাসের উপযোগী। এর অবস্থান পৃথিবী থেকে ছয়শত আলোকবর্ষ দূরে। গ্রহটি স্বীয় সূর্যকে (নক্ষত্র) প্রদক্ষিণ করতে ২৯০ দিন সময় নেয়। ৫ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ পরিচালনার সাথে জড়িত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই গ্রহটি আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার দাবি, এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্রহগুলোর মধ্যে ‘কেপলার ২২বি’ নামের ওই গ্রহটির সঙ্গেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে। এ গ্রহে প্রাণের উদ্ভব ঘটতে পারে বলেও গবেষকদের ধারণা। আর তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে এতোদিন কেপলার ২২বি-এর গ্রহবাসীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি কেনো?



কেপলার ২২বি’ গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় প্রায় আড়াইগুন বড়। আরো কাছাকাছি হিসেব হলো পৃথিবীর তুলনায় এটি ২.৪ গুণ বড়। এ গ্রহটিকে ঘিরে কি ভাবছেন গবেষকরা? গবেষকরা এ গ্রহটিকে ভাবছেন ‘নতুন পৃথিবী’ যেখানে মানুষের জন্য ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে।



গবেষকরা বলছেন, ‘নতুন পৃথিবী’তে রয়েছে আমাদের পৃথিবীর মতোই মহাসাগর আর মহাদেশ। মানুষের জন্য এ পৃথিবীটাই হতে পারে ভবিষ্যতের আবাসস্থল। এ গ্রহপৃষ্ঠে রয়েছে প্রাণের সম্ভাবনা এমনকি কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণীর খোঁজ পাওয়াও এখানে বিচিত্র নয়।

২০০৯ এ কেপলার ২২বি গ্রহটি নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজরে আসে। তখন থেকেই এ গ্রহটি বিষয়ে তথ্য পেতে গবেষণা করে গেছেন তারা। এরপর নাসার গবেষকরা কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ থেকে দুই বছর ধরে এ বিষয়ে ডেটা জমা করতে শুরু করেন। গবেষকরা জানতে পারেন, একটি সূর্য সদৃশ বড়ো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তন করছে গ্রহটি। কেবল তাই নয়, এ গ্রহটির অবস্থানও তার নক্ষত্রমণ্ডলের গোল্ডিলক জোন বা বাসযোগ্য অঞ্চলে। ২ বছর টানা গবেষণা করে তারপর এ গ্রহটি বিষয়ে মুখ খুললেন তারা। তুড়ি বাজিয়ে বিজ্ঞানীরা বললেন, পাওয়া গেছে পৃথিবীর ‘জমজ’।



গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীতে যেমন নানা ধরণের মানুষের দেখা পাওয়া যায় এ বিশ্বব্রমাণ্ডও তেমনি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। এখানেও মানুষের মতো হয়তো অনেকেই বাস করছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের এ তত্ত্বে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, আর তা হচ্ছে, এখনো মানুষ ভিনগ্রহবাসী বা এলিয়েনের সন্ধান মেলেনি কেনো? গবেষকরা বলছেন, খুব শিগগিরই এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে। কেপলার ২২ বি হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর দেবে।

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অনুসন্ধান গবেষণায় কেপলার ২২বি’র আবিষ্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ৫ ডিসেম্বর সোমবার নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ পরিচালনার সাথে জড়িত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহটি আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। ৬০০ আলোকবর্ষ দূরের এ গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ গ্রহটি তৈরি হয়েছে কি দিয়ে বা এটি এখন কোন অবস্থায় আছে সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু বলেননি তারা। তবে, এর গঠণ দেখে তারা ধারণা করছেন প্রাণ উপযোগী পরিবেশ ইতোমধ্যে সেখানে তৈরি হয়ে গেছে।



জীবনের অস্তিত্ব আছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত না হলেও অপার সম্ভাবনার কথা তারা জানিয়েছেন। গবেষকদের ভাষ্য, কেপলার ২২বি-তে প্রাণ ধারনের শর্ত পূরণে যে পরিস্থিতি দরকার তার সবগুলোই উপস্থিত রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ‘এ গ্রহের পরিবেশ প্রাণ ধারনের উপযুক্ত’। এখানেই হয়তো প্রাণের খোঁজ মিলবে। এমনকি এ গ্রহটি মানুষের ভবিষ্যৎ আবাসস্থলও হতে পারে বলেই গবেষকদের আশা।

গবেষকরা বলছেন, আমাদের সৌরজগতের বাইরে বিভিন্ন নক্ষত্রকে ঘিরে প্রদক্ষিণরত ৬শ’রও বেশি গ্রহ এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেছে। এ গ্রহগুলোর মধ্যে উপরিপৃষ্ঠে তরল পানি থাকার মতো সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে কেপলার ২২বি গ্রহটি। আর প্রাণের উদ্ভবের জন্য তরল পানির উপস্থিতি সবচেয়ে জরুরি বলেই গবেষকরা মনে করছেন। গবেষকরা ধারণা করছেন কেপলার ২২বিতে কেবল পানি নয় সেখানে পৃথিবীর মতোই পানি ভর্তি সাগর-মহাসাগর রয়েছে।



আয়তনে গ্রহটি পৃথিবীর ২ দশমিক ৪ গুণ বড়। পৃথিবীর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের বসন্তকালের তাপমাত্রার মতোই গ্রহটির তাপমাত্রা আর গ্রহটির রংও পৃথিবীর মতোই নীল। আমাদের সৌরজগতে পৃথিবীর অবস্থান সূর্য থেকে যে দূরত্বে কেপলার ২২বি গ্রহটি তার সূর্য থেকে এর মাত্র ১৫ শতাংশ কম দূরত্বে অবস্থান করছে। সৌরজগতে পৃথিবীর অবস্থানের এলাকাটি ‘বাসযোগ্য অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত। কেপলার ২২বি’র অবস্থানও তার সৌরজগতের বাসযোগ্য অঞ্চলে। গ্রহটি তার সূর্যকে প্রদক্ষিণে ২৯০ দিন সময় নেয় আর পৃথিবীর ক্ষেত্রে তা ৩৬৫ দিন ৪ ঘন্টা।

গ্রহটি যে নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সেটি লাইরা এবং সাইজানাস নক্ষত্রপুঞ্জের এলাকায় অবস্থিত। এ নক্ষত্রটি আমাদের সূর্য থেকে ২৫ শতাংশ ছোটো এবং অনুজ্জ্বল। এ নক্ষত্রটিকে কেন্দ্র করে আরো দুটি নক্ষত্র ঘুরছে যা সৌরমণ্ডলের মঙ্গল এবং বুধ-এর মতোই আচরণ করে।

গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ।
যুক্তরাষ্ট্রের সান জোন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী নাটালিয়া বাটালহা জানিয়েছেন, আমরা পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য একটি গ্রহ খুঁজে পেয়েছি। কেপলার ২২বি গ্রহটি পৃথিবীর মতো কঠিন নাকি নেপচুনের মতো গ্যাসীয় তা এখনো জানা না গেলেও বিষয়টি নিয়ে গবেষণা অব্যাহত আছে। তবে সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।

এখন পর্যন্ত ৫৪ টি গ্রহ পেয়েছেন কেপলার মহাকাশ গবেষক দল। এ ৫৪ টি গ্রহের মধ্যে কেপলার ২২বি গ্রহটিকে বাসযোগ্য গ্রহে বলে নিশ্চিত করলেন তারা।

কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহটির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে এর নামাকরণ করা হয় “কেপলার-২২বি”।এ গ্রহটির নাম নিয়ে প্রযুক্তিবিশ্বে হৈচৈ উঠেছে। এতো সুন্দর একটা আবিষ্কার আবার পৃথিবীর মতো একটা বাসযোগ্য গ্রহের নাম কেনো খটমটে ‘কেপলার ২২বি’ হবে? প্রযুক্তি বিশ্লেষক, সৌখিন জ্যোর্তিবিদসহ প্রযুক্তি মহলে এমন সুন্দর গ্রহের জন্য সুন্দর একটি নাম দেবার জোর তাগিদ তৈরি হচ্ছে।

সূত্র : বি ডি নিউজ ২৪.কম , উইকিপিডিয়া।


সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×