somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেনীতে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্টের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জহিরুল হক মিলু

ফেনীতে ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্টের নামে কয়েকটি এনজিও পৌরবাসীর কাছ থেকে নির্ধারিত অর্থের চেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকায় পকেটভারী করছেন সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মকর্তা, একশ্রেণীর জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা। এ ছাড়া কোনো কোনো স্থানে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন এনজিও কর্মীরা।
ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা সূত্র জানায়, মডেল ট্যাক্স শিডিউল ২০০৩-এর আলোকে ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইউনিয়ন ও পৌরসভার আওতাভুক্ত ব্যক্তি মালিকানাধীন আবাসিক ভবন, ফার্ম, কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং দোকানমালিকদের উপযুক্ত ক্ষেত্রে করের আওতাভুক্ত করে ইউনিয়ন ও পৌরসভার আয় বৃদ্ধি এবং সঠিক জনসংখ্যা নিরূপণে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট জরিপ পরিচালনায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে আবেদন করা হয়। এর মধ্যে ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলায় ভিলেজ ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ভিডো), সোনাগাজীতে আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রুরাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং ছাগলনাইয়ায় হিড নামে এই তিনটি এনজিওকে হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট জরিপ পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীত করা হয়। এর পর ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে গত সেপ্টেম্বরে এ তিনটি এনজিওকে জেলার তিনটি উপজেলায় কাজের অনুমোদন দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনজিওগুলো তাদের প্রকল্প প্রস্তাবনায় কোনো সরকারি কিংবা দেশী-বিদেশী আর্থিক সহায়তা ছাড়াই গৃহগণনা, প্রতিটি হোল্ডিং চিহ্নিতকরণের সুবিধার্থে জাপানি গ্যালাভানাইজড শিটে কম্পিউটারাইজড স্ক্রিন প্রিন্টে নাম্বার প্লেট তৈরি ও প্রতিটি হোল্ডিংয়ে প্রতিস্থাপন করা, সার্ভে রিপোর্ট তৈরি এবং প্রতিটি হোল্ডিংয়ের জন্য একটি কর আদায় পাস বই সরবরাহের খরচ বাবদ জনগণের কাছ থেকে খানাপ্রতি (হোল্ডিং) ৫০ টাকা হারে আদায়ের কথা উল্লেখ করে।
দাগনভূঁঞা উপজেলায় হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট জরিপকাজে নিয়োজিত ভিলেজ ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ভিডো) প্রতিটি খানা থেকে ৮০ টাকা, সোনাগাজীতে আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রুরাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রতিটি খানা থেকে ১০০ টাকা এবং ছাগলনাইয়ায় এনজিও হিডও প্রায় একই হারে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে অবস্থাসম্পন্ন পরিবার ও প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকাও নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে প্রবাসী, ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন অবস্থাসম্পন্ন পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় কম দেখিয়ে তাদের করের বাইরে রাখা হচ্ছে।
এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে অনেক জায়গায় অ্যাসেসমেন্ট শেষে নাম্বার প্লেট না লাগিয়েই টাকা নিয়ে এনজিওর লোকজন উধাও হয়ে গেছে। আবার কোথাও টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জের ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আমির উদ্দিন দোলন জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় চার হাজার পরিবারের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে এনজিও আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রুরাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির লোকজন এখন লাপাত্তা। দাগনভূঁঞার রামনগর ইউনিয়নে এক-চতুর্থাংশ কাজ করার পর টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এনজিওর লোকদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়ার পর থেকে ওই ইউনিয়নের কাজ বন্ধ রয়েছে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বাহাদুর জানান। দাগনভূঁঞায় জরিপ কাজে নিয়োজিত ভিলেজ ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ভিডো) সাবেক উপজেলা সমন্বয়কারী মো. নিজাম উদ্দিন অভিযোগ করেন, প্রতিটি খানা ৮০ টাকা হারে ওই টাকার অর্ধেক (৪০ টাকা) তিনি এবং বাকি টাকা সংশ্লিষ্ট এনজিও নেবে এ শর্তে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তার ৪০ টাকা থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ম্যানেজ করার দায়িত্ব ছিল। কিন্তু একপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট এনজিওর লোকজন ইউপি চেয়ারম্যানদের খানাপ্রতি ২০ টাকায় ম্যানেজ করে অন্যায়ভাবে তার নিয়োগ বাতিল করে। প্রায় দেড় মাস কাজ করা সত্ত্বেও তাকে কোনো পারিশ্রমিক দেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এনজিও ভিডোর কার্যক্রম সমন্বয়কারী মো. নাসির উদ্দিন খানাপ্রতি ৮০ টাকা করে নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মাঠকর্মীদের বেতন, নাম্বার প্লেট তৈরি, কর আদায়ের বই ছাপানোসহ আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে তাদের ৪০ টাকা খরচ হয়। আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা এলাকায় কাজ করতে হলে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার ও রাজনৈতিক কর্মীদের ম্যানেজের পেছনে খরচ হয়। তিনি জানান, এলাকায় কাজ করতে হলে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।
এ বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখায় যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, হোল্ডিং অ্যাসেসমেন্ট জরিপে এনজিওগুলোর অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তাদের কানে এসেছে। সূত্রমতে, এনজিওগুলো তাদের প্রকল্প প্রস্তাবে প্রতিটি হোল্ডিংয়ের জন্য খরচ বাবদ জনগণের কাছ থেকে খানাপ্রতি (হোল্ডিং) ৫০ টাকা হারে আদায়ের কথা উল্লেখ করেছল। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এনজিওগুলোকে যখন অনুমোদনের চিঠি ইস্যু করা হয়, তখন ওই চিঠিতে ভুলক্রমে নির্দিষ্ট টাকার অঙ্ক উল্লেখ না করার সুযোগে এনজিওগুলো যে যার মতো করে টাকা আদায় করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×