somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূল্যবোধ

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ সিয়েরালিয়ন। অনেক বছর ধরে গৃহবিবাদে জড়িয়ে আছে । সেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে একটি দলের দ্বায়িত্বে আছেন বাংলাদেশের মেজর শরিফুল ইসলাম খোকন। সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে আবাস ভবনে ফিরে আসা রাতের পর আবার কাজে নেমে পড়া । এভাবেই চলছে । সেদিন ছিল ১৪ ডিসেম্বর। রাতে শুতে যাবার আগে মেজর শরিফূল ইসলাম তার ব্যাগে রাখা একটি ফটো এলবাম বের করলেন । সেখান থেকে এক বৃদ্ধের ছবির দিকে অপলক চেয়ে থাকলেন । ছবিটি তার প্রানপ্রিয় বাবার। আজ উনার মৃত্যু দিবস।

ব্যাগ থেকে আরো একটি জিনিস বের করলেন । পুরনো একটি পতাকা । বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা । ২৫ বছর আগের তৈরি করা পতাকা । আজও তার সবসময়ের সঙ্গী। যতবার সে পতাকাটি বের করে ততবার তার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়।

তখন ক্লাশ সিক্সে পড়ে । দুই দিন পরেই ১৬ ই ডিসেম্বর, বিজয় দিবস । তার সকল বন্ধুরা বিজয় দিবসে পতাকা কিনবে । সেই পতাকা গায়ে জড়িয়ে স্কুলের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যাবে । স্কুল থেকে বাসায় ফিরে কোন রকমে কাধেঁ ঝুলানো স্কুল ব্যাগটা রেখে মাকে ডাকতে ডাকতে মায়ের কাছে গিয়ে বলল -

''মা আব্বুকে আমাকে একটা আমাদের দেশের জাতীয় পতাকা কিনে দিতে বলবা ?''
- ''কেনরে বাবা ?''
''জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে স্কুলের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান যাব।''
- ''আচ্ছা তোর আব্বু আসলে বলবো। যা এখন হাত মুখ আয় খেতে বসবি''
''আব্বুকে ভাল করে বলবা কিন্তু!''
-''ঠিক আছে ভাল করেই বলবো।''

সারাটা দিন আর তার তর সইছে না কখন তার আব্বু বাড়িতে আসবে আর কখন তার মা কথাটা বলবে । অপেক্ষা করতে করতে একসময় যখন তার আব্বু বাড়িতে আসল তখন সে তার মায়ের কাছে গিয়ে পতাকা কিনার কথাটা মনে করিয়ে দিল । তার মা খাবার দেবার সময় এক ফাঁকে তার আব্বাকে বলল -

''দুই দিন পর বিজয় দিবস''
-''হমম (খেতে খেতে জবাব দিল)''
''আমাদের খোকন স্কুলের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যাবে''
-''হমম যাবে''
"খোকা বলছিল ওর বন্ধুরা সবাই মিলে জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে স্কুলে যাবে। তাই একটা জাতীয় পতাকা কিনে দিতে।''
তার বাবা কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে বললেন - ''ঠিক আছে কাল ব্যবস্থা করব''।

দরজার পাশে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে থাকা খোকা তার আব্বুর কথা শুনে খুব খুশি হল। রাতে সে খুব ভাল করে পড়াশুনা করল ।

পরদিন তার বাবা একটি প্যাকেট হাতে করে বাসায় আসল এবং খোকাকে ডেকে বলল এটা নিয়ে ঘরে যাও। খোকা ভাবল তার জন্য মনে হয় পতাকা কিনে নিয়ে এসছে। তাই সে খুশিমনে প্যাকেটটা নিয়ে ঘরে গেল কিন্তু প্যাকটটা খুলে তার মন খারাপ হয়ে গেল। এটাতো পতাকা নয়!! এতো কাপড়, একটা সবুজ আর একটা লাল । সে মুখ গোমড়া করে বসে রইল।

কিছুক্ষণ পর তারা বাবা তার কক্ষে এসে দেখল খোকা মুখ গোমড়া করে বসে আছে । তার বাবা খুব সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে খোকাকে বলল-
''আমার আব্বুটার মুখ গোমড়া কেন ?''
কোন কথা নাই খোকার মুখে । তার আব্বু আবার বলব-
''ও বুঝেছি ! আমি পতাকা কিনে আনিনি তাই ? ''
- ''তুমি এই কাপড় কিনে আনছ কিন্তু পতাকা আননি কেন ? (একটু রাগ দেখিয়ে)''
''ঠিক আছে পতাকা কিনে আনিনি এইজন্য সরি । আচ্ছা খোকন তুমি কি জান কিভাবে আমাদের পতাকা বানাতে হয় ?''
-''না''
''আমাদের জাতীয় পতাকার পরিমাপ ঠিকমত জান ?''
-''হমম! জানি। একদিন আমাদের স্যার ক্লাশে আমাদের বলেছে।''
"তাহলে চল আজ আমরা নিজেরাই আমাদের জাতীয় পতাকা বানাব।''
একথা শুনে খোকনের চেহারায় একটু হাসিখুশি ভাব আসল । তার বাবা বলল- '' যাও আম্মুর কাছ থেকে কাঁচি, রুলার নিয়ে এসো।" খোকন দৌড়ে গিয়ে সবকিছু নিয়ে আসল । তারপর তার বাবা কিভাবে কাপড় কাটতে হয় কিভাবে সেলাই করতে হয় সবকিছু খোকনকে দেখিয়ে দিল । তারপর বলল-" খোকন, তোমাদের স্কুলের অনুষ্ঠানে কি আমাকে নিবে তুমি ?"
-" আব্বু তুমি সত্যি যাবে !!!!"
"হমম যাব। তুমি খুব সুন্দর করে একটা জাতীয় পতাকা তৈরি কর আমি তোমার সাথে কাল তোমাদের স্কুলে যাব।''
এই বলে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল ।

খোকন অনেক সময় ধরে কয়েকবারের চেষ্টায় একটা পতাকা তৈরি করল । সেটা তার আব্বু আম্মুকে দেখাতে নিয়ে গেল ।
"আব্বু ! দেখ, আমি পতাকা তৈরি করে ফেলেছি !"
তার বাবা পতাকাটি হাতে নিয়ে ছড়িয়ে নিয়ে খুব ভাল করে দেখল আর হাসি মুখে বলল যে পতাকাটি খুব সুন্দর হয়েছে । তারপর পতাকাটি খোকনের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে খোকনকে কোলে বসিয়ে বলল-
"আমি পতাকা না কিনে কাপড় কিনে আনায় রাগ করেছিলে ?"
-"হুম"
"বাবা শোন, আমাদের দেশটা আগে স্বাধীন ছিলনা । পাকিস্তানিরা আমাদের শাসন করত। এইযে তুমি অনেক সময় ব্যয় করে অনেক চেষ্টার বিনিময়ে একটা পতাকা বানিয়েছ। তেমনি আমাদের দেশের স্বাধীনতাও কেউ এনে দেয়নি। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে অনেক কষ্টে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, পেয়েছি আমাদের এই জাতীয় পতাকা । কখনও এই পতাকার অসম্মান করোনা। এই পতাকাকে ভালবেসো, দেশকে ভালবেসো। কখনও দেশের অসম্মান করোনা ।"


চোখের কোন দিয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে পতাকার উপর । এ অশ্রু যেন আনন্দ বেদনার মিশ্র দ্রবনের এক জলন্ত সাক্ষী।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৫৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×