somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

কোথাও আলো কোথাও অন্ধকার

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হয় তো তুমি আজকে সন্ধ্যায়
দেখছো এক স্বপ্ন অদ্ভুত
যখন তুমি নিজেকে আয়নায়
দেখলে, তাকে ভাবলে দেবদূত ।
( ম্যাক্স জেকব-এর স্বপ্ন )

অনেকদিন আমার সাথে গুল্লুর দেখা হয় না । প্রিয় মুখ গুলো কিছুদিন পর পর না দেখলে ভালো লাগে না । আমি অস্থির হয়ে উঠি । সেদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ আমি গুল্লুর ম্যাসে গিয়ে উপস্থিত । গুল্লু আমাকে দেখে মহা খুশি । আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- আরে- বিখ্যাত রাজীব নূর আমার ম্যাসে !

আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম- গুল্লু সাহেব আজ আপনার গল্প শুনতে এলাম । গুল্লু বলল অবশ্যই গল্প শোনাবো । আজ সারারাত গল্প হবে । রাতে রান্না হবে খিচুরী আর ভূনা মাংস । তার আগে নূর ভাই আপনাকে একটা কবিতা শোনাবো । আমি বললাম শোনাও । গুল্লু সুন্দর উচ্চারণে আবৃত্তি করলো- " ভাবিব না আমি কিছু, বলিব না মুখে কোনও কথা,/ আত্মায় বাজিবে শুধু সীমাহীন প্রেমের সংগীত ।/ আর আমি যাব দূরে, বহু দূরে- যাযাবর যথা,/ প্রকৃতির কোলে- সুখী, যেন এক নারীর সহিত । আমি বললাম, সুন্দর ফরাসি প্রেমের কবিতা । কবির নাম হচ্ছে- আর্তুর র‍্যাবো আর কবিতার নাম হচ্ছে- অনুভব । এই কবির জন্ম-১৮৫৪ সালে এবং কবি মারা যান সম্ভবত ১৮৯১ সালে । তিনি ফরাসি সাহিত্যে 'প্রতীকীবাদী আন্দোলনের অন্যতম পিরোধা ছিলেন । আমার কথা শেষ হতেই তাকিয়ে দেখি গুল্ল আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে !

আমি সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে বললাম- গুল্লু শুনলাম সুন্দরবনে গিয়েছিলে । গুল্লু বলল- সুন্দরবন যাইনি । সুন্দরবনের কাছে একটা গ্রামে গিয়েছিলাম । আপনাকে আজ সেই গল্পই বলব । গুল্লু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আরাম করে বসল । গুল্লুর শুরু করলো তার গল্প, আসুন তার ভাষাতেই গল্পটা শুনি- অনেকদিন ঢাকার বাইরে যাই না । আমার বন্ধু জুবায়ের ফোন করে বলল- রেডী হও বিকালের বাসে গ্রামে যাচ্ছি । পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই হঠাৎ চলে গেলাম বন্ধু জুবায়ের এর সাথে বাগেরহাট তার গ্রামের বাড়ি । যেতে সময় লাগল দশ ঘন্টা । একেবারে অজপাড়া গা । বিদ্যুৎ নেই । বিকেল তিনটায় রওনা দিয়ে রাত দু'টায় গিয়ে পৌছালাম । ভয়াবহ শীত আর কুয়াশা ।

গুল্লু খুব সুন্দর করে কথা বলে । কথা বলার সময় খুব বেশী হাত নাড়ে । গল্প বলার সময় তাকে খুব অস্থির দেখায় । গুল্লু আমার দিকে সিগারেটের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিয়ে আবার তার গল্প শুরু করলো । নূর ভাই, পরের দিন বিকেলে কি হলো শুনুন- বিশাল ধানক্ষেত । এক মাথায় দাড়ালে আর এক মাথা দেখা যায় না । আমি ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে ধানক্ষেতের মধ্যে হাঁটতে শুরু করি । জুবায়েরকে সাথে নিই নি । সাথে নিই নি কারন, গাধা গ্রামের রাস্তায়ও টাই কোট-প্যান্ট ছাড়া বের হয় না । সন্ধ্যার আগে আগে বেশ কিছু ছবি তুলে ফেলি । হঠাৎ স্পষ্ট শুনলাম- একটি মেয়ে বলছে আমার ছবি তুলে দিবেন না ? খুব মিষ্টি গলা ! কিন্তু আমার কলিজা কেঁপে উঠলো । পাশে তাকিয়ে দেখি- একটি মেয়ে ! শাড়ি পরা । মাথার এক আকাশ চুল খোলা । কপালে টিপ ছিল কিনা ঠিক মনে করতে পারছি না, রাগ করবেন না নূর ভাই । মেয়েটির শাড়ির আচলখানা ধানক্ষেতের উপর বিছানো । সন্ধ্যার আবছা আলোয় আমি মেয়েটিকে ভালো করে দেখতে চেষ্টা করলাম । আমি বললাম, দুঃখিত এই আলোতে ছবি তোলা যাবে না । পরে একদিন তুলে দিবো । মেয়েটি ছোট করে বলল- আচ্ছা । মেয়েটি গেলে ডান দিকে আমি গেলাম বাম দিকে ।

গুল্লু বলল- রাজীব নূর ভাই এখন আমরা ২০ মিনিটের জন্য ব্রেক নিবো । রাতের খাবার শেষ করে আবার শুরু করবো । আমাদের বুয়া'র হাতের রান্না খুব ভালো । আমরা খুব তৃপ্তি করে খেলাম । গুল্লু আবার তার গল্প শুরু করল - নূর দা, লক্ষ্য করেছেন চা আর সিগারেট ছাড়া গল্প জমেই না । যাই হোক, শুনুন পরের দিন কি হলো- সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি, একটা মেয়ে আমার পাশে বসে আছে । আমার বালিশের কাছ থেকে গতরাতে পড়া ম্যাগাজিনটা নিয়ে পড়ছে । আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখি, গতকালের ধানক্ষেতের মেয়েটি । তখন ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি ! মেয়েটির গালে হাত রাখতেই মেয়েটি দূরে সরে গিয়ে বলল- আপনি স্বপ্ন দেখছেন না । আমি এই ধরনীর একজন মানবী । আমি লজ্জা পেয়ে একটু হাসলাম আর তখন জুবায়ের এসে বলল- এই মেয়ের নাম লিলি, আমাদের প্রতিবেশী । এখন গুল্লু সাহেব ঘুম থেকে উঠেন আমি বাজারে গেলাম মোবাইল চার্জ দিতে । জুবায়ের চলে গেল ।

বেসিন থাকতেও আমি পুকুর পাড়ে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করলাম হাত মুখ ধুয়ে নিলাম । ঘরে ঢুকে দেখি লিলি খুব সুন্দর করে টেবিলে নাস্তা সাজিয়েছে । আমি নাস্তা খেতে খেতে বললাম- আমার নাম গুল্লু । আমি একজন ফোটোগ্রাফার । মেয়েটি বলল আমার নাম লিলি । আমি একজন বেশ্যা । লিলির কথা শুনে আমি হঠাৎ করে একটা বড় ধাক্কা খেলাম । মেয়েটির গলার স্বর শুনেই বুঝতে পেরেছি সে মিথ্যা বলেনি । রাজীব দা, আপনি বিশ্বাস করুন তখন আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল । আমি এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকি । এত সুন্দর চোখ, মাথা ভর্তি চুল, কি সুন্দর করে শাড়ি পরেছে । ঠোঁটে কত যত্ন করে লিপস্টিক দিয়েছে । মেয়েটির মুখে কোনো পাপ দেখা যায় না ।

গুল্লু হঠাৎ করে একদম চুপ হয়ে গেল । আমি গুল্লুর দিকে তাকিয়ে বললাম- লিলি দেখতে কি হিমির মতন ? আমি বললাম, তারপর কি ? নাকি গল্প শেষ ? গুল্লু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলতে শুরু করলো- লিলি, দুবাই যায় বেড়াতে, তারপর কিছু লোক...বাধ্য করে । এই তো.... । নূর ভাই, তারপর আমি লিলির সম্পর্কে অনেক কিছু জানি । সেইগুলো আমি আর আপনাকে কিচ্ছু বলব না । আমি বললাম- আর বলতে হবে না । শুধু বলো, লিলিকে কি কোনো কবিতা শুনিয়েছিলে ? গুল্লু বলল, হুম একটা কবিতা শুনিয়েছি । কবিতাটি ছিল এই রকম- "তোমার অতীত জেনে আমি নই ঈর্ষিত,প্রেয়সী,/ বরং আমার তাতে ভালোবাসা, মুগ্ধতাই বাড়ে,/ আর বুঝি কী উদার তোমার হৃদয়, মহীয়সী,/ কোমলে-কঠোরে মেশা কী অদম্য প্রেম সে আঁধারে !/ তোমার মোহিনী কান্না- কী অমূল্য সেই পুরস্কার !/তার চেয়ে বেশি আমি ভালোবাসি। ভুলে যাও তারে।/ গোপন কথার ফাকে অন্তত হাসো একটিবার,/ বিশ্বস্ত সঙ্গীর বুকে জেগে ওঠো তুমি পুর্নবার ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×