somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঃঃঃ অধ্যাপক কবীর চৌধুরী আর নেই ঃঃঃ

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রেখে গেলেন মুক্তচিন্তা, অসাম্প্রদায়িকতার চেতনাদীপ্ত অসামান্য এক কর্মময় জীবনের দৃষ্টান্ত। ৮৮ পেরিয়েও যিনি দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করতেন, ‘মৃত্যু নিয়ে আমি ভাবি না।’
ঘুমের মধ্যেই শান্তির এক মহা প্রস্থানের পথে চলে গেলেন কবীর চৌধুরী। তাঁর পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীর নয়াপল্টনে নিজ বাসভবনে আজ মঙ্গলবার ভোররাতের কোনো একসময় তাঁর মৃত্যু হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
কবীর চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন।
বর্ণাঢ্য এক কর্মমুখর জীবনের অধিকারী কবীর চৌধুরীর জন্ম ১৯২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাঁর আদি বাড়ি নোয়াখালী জেলার চাটখিলে। তাঁর বাবা আবদুল হালিম চৌধুরী ও মা আফিয়া বেগম ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের দিয়েছেন উদার ও মুক্তচিন্তার এক পারিবারিক পরিমণ্ডল। সেখান থেকেই বেড়ে উঠেছেন তিনি, তাঁর ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, বোন ফেরদৌসী মজুমদারের মতো বাংলাদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বরা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুর আগেই কবীর চৌধুরী তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী করণীয় বিষয়ে কিছু শেষ ইচ্ছার কথা লিখে রেখেছিলেন। তাঁর শেষকৃত্য নিয়ে কোনো ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন হোক, তা তিনি চাননি। তাঁর সেই ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কবীর চৌধুরীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হচ্ছে না। তবে তিনি চেয়েছিলেন শেষবারের মতো তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যেতে। সেই ইচ্ছাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে আজ তাঁকে দাফন করা হবে।
আজীবন অসামান্য মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন কবীর চৌধুরী। সব কিছুকে চিন্তা করেছেন বুদ্ধি, যুক্তি আর মানবতার মানদণ্ডে। ১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৪০ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৪৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম এবং পরের বছর একই বিষয়ে এমএতেও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেন তিনি। অসম্ভব মেধাবী এই মানুষটিকে সম্মান জানাতে ১৯৯৮ সালে তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক করা হয়।
পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন কবীর চৌধুরী। পরে রাজশাহী সরকারি কলেজ, ঢাকা কলেজ, বরিশালের বিএম কলেজ ও ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর তিনি প্রথম জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সুপারিশ করেন উদার ও অসাম্প্রদায়িক শিক্ষাব্যবস্থা চালুর।
আমৃত্যু কবীর চৌধুরী নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন শিক্ষা, সাহিত্য ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার সামাজিক আন্দোলনে। একাত্তরের যুদ্ধে ভাইসহ স্বজন, বন্ধু-পরিজন হারিয়েছেন। দেখেছেন ওই সময়ে মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ, এ দেশীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ। তাই স্বাধীন দেশে তিনি সোচ্চার হয়েছেন ওই সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে। নব্বইয়ের দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে সমমনাদের নিয়ে গঠন করেছেন ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’।
তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ছয় সঙ্গী (১৯৬৪); প্রাচীন ইংরেজি কাব্যসাহিত্য (১৯৮০); আধুনিক মার্কিন সাহিত্য (১৯৮০); শেক্সপিয়র থেকে ডিলান টমাস (১৯৮১); সাহিত্যকোষ (১৯৮৪); ইউরোপের দশ নাট্যকার (১৯৮৫); সাহিত্য সমালোচনা ও নন্দনতত্ত্ব পরিভাষা (১৯৮৫); শেক্সপিয়র ও তাঁর মানুষেরা (১৯৮৫); অ্যাবসার্ড নাটক (১৯৮৫); স্তঁদাল থেকে প্রুস্ত (১৯৮৫); পুশকিন ও অন্যান্য (১৯৮৭); শেক্সপিয়র ও গ্লোবথিয়েটার (১৯৮৭); অভিব্যক্তিবাদী নাটক (১৯৮৭); প্রসঙ্গ নাটক (১৯৮৯); ফরাসি নাটকের কথা (১৯৯০); অসমাপ্ত মুক্তিসংগ্রাম ও অন্যান্য (১৯৯১); প্রবন্ধ সংগ্রহ (১৯৯২); নজরুল দর্শন (১৯৯২); বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তবুদ্ধির চর্চা (১৯৯২); স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় (১৯৯৪); ছোটদের ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস (১৯৯৪); (১৯৯৪); ছবি কথা সুর (১৯৯৫)।
অধ্যাপক কবীর চৌধুরী তাঁর জীবদ্দশায় অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ১৯৯১ সালে একুশে পদক ভূষিত হন। স্বাধীনতা পদক লাভ করেন ১৯৯৭ সালে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সম্মাননাগুলো হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের স্বর্ণপদক (১৯৬৮), হাবীব ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, লেখক সংঘ পুরস্কার (১৯৬৯), ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭০), রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সম্মাননা পদক (১৯৭৩), মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৮৬), ভারতের উইলিয়াম কেরি স্বর্ণপদক (১৯৯৪), বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৪), সুফী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৮), শহীদ সোহরাওয়ার্দী জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৯), কবি জসীমউদ্দীন পুরস্কার (১৯৯৯), বিশ্ব বাঙালি সম্মেলন পুরস্কার (২০০১), ওয়ার্ল্ড পোয়েট্রি গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড (২০০৪), নাগরিক নাট্যাঙ্গন সম্মাননা (২০০৫), বিশ্ব নাটক দিবস সম্মাননা (২০০৬) প্রভৃতি।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×