somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'হীরক রাজার দেশ'-এর কথা ও ৯/১১

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আফ্রিকায় হীরার কারবার শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে। তখন সবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করে ঘরে ফেরার পর সিয়েরা লিওনবাসী বুঝতে পারে যে তাদের দেশের বুকে ব্রিটিশরা লুটতরাজ চালাচ্ছে। সে সময় যে হীরার খনন শুধু সিয়েরা লিওনে সীমাবদ্ধ ছিল না ঠিকই, তবে আফ্রিকার বাকি দেশ ও সিয়েরা লিওনের হীরার মধ্যে একটা পার্থক্য ছিল। আফ্রিকার অন্যান্য দেশে হীরা পাওয়া যায় দেশের বিশেষ কিছু অংশে। আর সেখানে পশ্চিম আফ্রিকার এ দেশটিতে হীরা পাওয়া যায় তাদের ভূখণ্ডের বিভিন্ন অংশে। তাই সেখানে লুটতরাজ চালানো অনেক বেশি সহজ এবং সেই লুটের মূল্যও অনেক বেশি। ক্রমেই ৫০ থেকে ৬০-এর দশকে সিয়েরা লিওনের স্থায়ী বাসিন্দারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই হীরার খনন শুরু করে এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা শুরু করে। পুরো ভূখণ্ডটা 'ওপেন ফিল্ড' হওয়ার ফলে সেখানে নিরাপত্তা বা সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা ছিল প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। স্থানীয়দের এভাবে হীরার খনন থেকে বিরত রাখতে প্রথমে ব্রিটিশরা পুলিশ ব্যবহার করে, কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা ক্রমেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফেরত সৈনিকদের সহায়তায় যুদ্ধবিদ্যাটা রপ্ত করে ফেলে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেআইনি খনির কাজ বাড়তে থাকে। তা ছাড়া সিয়েরা লিওনের বাসিন্দারা তাদের হীরা লেবাননে পাচার করতে শুরু করে। আর লেবানন থেকে সরবরাহ হতে থাকে খননকাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি। এ ছাড়া হীরা পাচার হতে থাকে লাইবেরিয়াতেও। লাইবেরিয়ায় আইনকানুন শিথিল থাকায় সেখানে এই হীরার বেচাকেনা অত্যন্ত সহজ হতো। তারপর সেখান থেকেই সেই হীরা চলে যেতে থাকে আন্তর্জাতিক বাজারে।
ঠিক তখনই এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য এবং মূল্যবান হীরার বাজারে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক হীরা কম্পানি 'ডি বিয়ার্স' অ্যাঙ্গোলা এবং সিয়েরা লিওনের মতো পশ্চিম আফ্রিকার প্রায় সব দেশ থেকেই হীরা কিনতে শুরু করে। ওই কম্পানি বেশি মাত্রায় হীরা কিনে গোপনে তা জমাতে শুরু করে। এর ফলে বাজারে জোগানের পরিমাণ একদিকে যেমন কমতে থাকে অন্যদিকে চাহিদা ও দাম দুটোই বহু গুণ বাড়তে থাকে। ঘটনাক্রমে ঠিক এই সময়েই 'ডি বিয়ার্স' তার 'চিরন্তর হীরক' বা 'ডায়মন্ড ফরএভার' ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল। এর পর আফ্রিকাজুড়ে হীরার খনন করার চাহিদা বহুমাত্রায় বেড়ে যায়। চাহিদা এতটাই বেড়ে যায় যে ওই মহাদেশের বিভিন্ন দেশের স্বৈরাচারী নেতৃত্ব এবং বিদ্রোহীরা হীরার খনন অব্যাহত রাখার জন্য নিষ্ঠুরতম পন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধা করেনি। তারা স্থানীয়দের খনি থেকে দূরে রাখার জন্য নির্যাতন ও হত্যার মতো পন্থা বেছে নেয়। তাদের মধ্য থেকে অনেককে জোর করে 'বন্ডেড লেবার' বানিয়ে হীরা খোঁজার কাজ চালিয়ে যেতে থাকে, যাদের মধ্যে অনেকে ছিল শিশু ও মহিলা। বলাই বাহুল্য, সেসব শ্রমিক আজও চরম অমানবিক পরিস্থিতিতেও কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সেসব দেশের কথিত নেতারা ওই হীরা বিক্রি করে নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য কিনতে থাকের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। বেআইনি হীরার ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতাও বাড়তে থাকে। সেখানকার সরকার, বিদ্রোহী এবং গৃহযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত অংশ মিলে গোটা আফ্রিকায় এক অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করে। হীরাসর্বস্ব এলাকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রাজনৈতিক ও সামরিক অনিশ্চয়তা ইচ্ছে করে জিইয়ে রাখে দেশি-বিদেশি শক্তি। সিয়েরা লিওনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী রেভেলিউশন ইউনাইটেড ফ্রন্ট (আরইউএফ) বহু মানুষকে হত্যা করে এবং তাদের এই খননকাজে জোর করে ধরে রাখার জন্য তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতেও দ্বিধা করেনি। এত বছরে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা চার মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে! সে জন্যই এসব এলাকা থেকে আসা হীরাকে সবাই 'কনফ্লিক্ট ডায়মন্ড' বা 'ব্লাড ডায়মন্ড' নাম দিয়েছে। আর তাই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে সেখানকার সাধারণ মানুষের সামাজিক জীবন আজ কেন এত দুর্দশার শিকার হয়েছে। গোঁড়ার দিকে শুধু দ্বন্দ্ব জর্জরিত এলাকাতেই খনন হতো। কিন্তু ক্রমেই জাতি হত্যা এবং গণহত্যার ধারা শুরু হয়। হীরা খনি কবজা করার জন্য সেখানে গণহত্যা যেন এক প্রাত্যহিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষমতা এবং অর্থের লোভে উন্মাদ হয়ে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়। ১৯৬৮ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সিয়েরা লিওনে একের পর এক মন্ত্রীরা হিংসাত্মক পথে হীরার ব্যবসা চালিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ আয় করেন। ১৯৯১ সালে আরইউএফ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের হিংসাত্মক বিদ্রোহ শুরু করে এবং দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার সংকল্প থেকে সরে গিয়ে তারা নিজেরাই রক্তের বন্যা বইয়ে হীরার ব্যবসার মূল কারিগরে পরিণত হতে থাকে। হিসাব অনুযায়ী, এটুকু সময়েই নাকি সেখান থেকে ইউরোপে মোট ১২৫ মিলিয়ন ডলারের হীরা রপ্তানি হয়েছিল। আর সেই অর্থের বিনিময়ে আরইউএফ অনেক অস্ত্রশস্ত্র কেনে। ২০০১ সালের গোঁড়ার হিসাব অনুযায়ী, প্রায় এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ তখন গৃহহারা হয়েছিল এবং তাদের এই দুর্দশার কারণেই জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে সবার নিচে চলে যায় সিয়েরা লিওন।
শুধু সিয়েরা লিওন নয়, বলতে গেলে গোটা পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকাই এই রক্তাক্ত হীরা ইন্ডাস্ট্রির কবজায় চলে যায়! সিয়েরা লিওনে যে রক্তাক্ত হিংসা শুরু হয়, তা ক্রমেই লাইবেরিয়া, কঙ্গো এবং অ্যাঙ্গোলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে সব দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে এসে যায় অ্যাঙ্গোলা। ১৯৭৫ সালে অ্যাঙ্গোলা যখন পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায়, তখন থেকে সেখানে বিষাক্ত এক গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যা ২০০১ সাল পর্যন্ত চলে। যুক্তরাষ্ট্র তখন 'ন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য টোটাল ইনডিপেনডেন্স অব অ্যাঙ্গেলা'কে (ইউএআইটিএ) সমর্থন করে। এই গোষ্ঠী ছিল সেখানকার মূল বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং শীতলযুদ্ধের পুরো সময় তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অর্থ পায়। সেই অর্থকে সম্বল করে তারা সোভিয়েত রাশিয়া সমর্থিত গোষ্ঠী 'পপুলার মুভমেন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ অ্যাঙ্গোলা'র (এমপিএলএ) বিরুদ্ধে লড়তে থাকে আটের দশকের শেষ পর্যন্ত। ১৯৯২-১৯৯৮ পর্যন্ত ইউএনআইটিএ মোট ৩.৭২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের হীরা রপ্তানি করে। এতে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী পর্যন্ত আঁতকে ওঠে। এর পর জাতিসংঘ 'ইউনাইটেড নেশনস সিকিউরিটি কাউন্সিল রেজিলিউশন ১১৭৩' এবং 'ইউনাইটেড নেশনস সিকিউরিটি কাউন্সিল রেজিলিউশন ১১৭৬' নামের দুটো আইন পাস করে অ্যাঙ্গোলা থেকে হীরা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে বিদ্রোহীদের হিংসাত্মক পিপাসা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকার নিজে বেসরকারি খনি অঞ্চলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। কিন্তু তাতেও বিদ্রোহীদের বেআইনি হীরার ব্যবসা কোনো মতেই কমেনি। তারা তখন সুচতুর ভাবে গোপন পথে হীরা বিদেশে পাচার করতে শুরু করে। সেখানে ওই রক্তাক্ত হীরা অন্যান্য হীরার সঙ্গে মিশে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে চলে যেতে থাকে। আর ইউরোপ ও আমেরিকার হীরার খিদে তো সব সময় বেশি ছিলই। সেসব হীরা ইউরোপ ও আমেরিকার কম্পানিগুলো নিজেদের বাজারে বিক্রি করে। আফ্রিকার দুর্নীতি প্রবণ এবং অক্ষম এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলও এই নগ্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিল। নব্বইয়ের দশকের গোঁড়ার দিকে এই রক্তাক্ত হীরার ব্যবসা করে বিদ্রোহীরা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার রোজগার করে।

অমানবিক রক্তাক্ত শোষণের ইতিহাস
মূলত যেসব জায়গা থেকে এই অবৈধ হীরা পাচার করা হয়, সেগুলোর অধিকাংশই কিন্তু এখনো চরম দুর্দশায় ভুগছে। সেসব দেশের নেতৃত্বের অর্থ আর ক্ষমতার লোভকে পুঁজি করে একের পর এক বিদেশি হীরা কম্পানি সেখানে ব্যবসা করছে, কিন্তু আজও সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন। যেসব হীরা কম্পানি সেখানে রমরমা ব্যবসা করছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো 'পেট্রা ডায়মন্ড', 'ট্রান্স হেক্স অব সাউথ আফ্রিকা' এবং 'কাটোকা'। 'ডি বিয়ার্স'ও সেখানে ছিল, তারা দাবি করে, সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পর তারা সেখান থেকে চলে আসে। খনির কর্মীদের ওপর চরম শোষণের ফলে নিরাপত্তা পরিষদ অ্যাঙ্গোলার সঙ্গে হীরার কারবার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ঠিকই, কিন্তু তাদের সেই পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত ব্যর্থ। কারণ একের পর এক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অ্যাঙ্গোলার হীরার চোরাকারবার বন্ধ করার কোনো ইচ্ছেই নেই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর। তাই তো তারা 'নিয়ন্ত্রণের বাইরে' এলাকার অজুহাত দেখিয়ে চোরাকারবারের বিরুদ্ধে হাত গুটিয়ে বসে থেকে এক ধরনের ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছে বিদেশি হীরা ব্যবসায়ী কর্পোরেট হাউসগুলোকে। এর জন্য অবশ্য কর্পোরেট হাউসগুলোর আন্তর্জাতিক লবি এবং এই হীরার ক্রেতা দেশগুলোকেই 'সাধুবাদ' জানাতে হবে!
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সেখানকার রক্তাক্ত শোষণের ইতিহাস সত্যিই অমানবিক। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ব্লাড ডায়মন্ডের এই রক্তাক্ত বাস্তবতা আজও বিরাজমান। গত মাসে তো জিম্বাবুয়ে ২০০ মিলিয়ন ডলারের অবৈধ হীরা বিক্রি করে অপরাধমূলক কাজে সেই অর্থ ব্যবহার করেছে। সেই অর্থের অধিকাংশই ব্যবহৃত হয় নির্বাচনী উদ্দেশ্য সাধন বা অস্ত্র কেনার মতো কাজে। আজ সিয়েরা লিওনে গৃহহীনের সংখ্যা চার মিলিয়নেরও বেশি, লাইবেরিয়াতে ১.৫ মিলিয়ন এবং অ্যাঙ্গোলাতে ১.৭ মিলিয়ন। জোর করে তথাকথিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার মাসুল হিসেবে মাদক আর এইডসে আক্রান্ত সেসব দেশের শিশুরা।
এ তো গেল আফ্রিকার করুণ গাথা। রক্তাক্ত হীরার জন্য কিন্তু রক্তাক্ত আজ সারা বিশ্ব। আফগানিস্তান, পাকিস্তান আর ইরাকের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ। কিভাবে? নানা হৈচৈর মাঝে একটা কথা সবাই চেপে গেছে। ৯/১১-আক্রমণের অর্থায়ন হলো কিভাবে? খুব কম লোকই জানে যে পুরো অর্থই এসেছিল আফ্রিকা থেকে। আর সেটা সম্ভব হয়েছিল কারণ, লাখ লাখ পাশ্চাত্যবাসী হীরার কুৎসিত অন্ধকার দিকটা উপেক্ষা করে চকচকে দিকটার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ার জন্য, সেটাকে গত প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে মহিলাদের দেওয়ার মতো সব থেকে মূল্যবান 'উপহার' হীরা বা কনফ্লিক্ট ডায়মন্ড হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, যা এত দিনে 'ব্লাড ডায়মন্ড' বা 'রক্তাক্ত হীরা'র উপাধি অর্জন করেছে। ৯/১১-এর পর একাধিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। এমন কি জাতিসংঘের ক্রাইম রিপোর্টেও আছে যে আল-কায়দা লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রপতি চার্লস টেলরের সঙ্গে আফ্রিকান হীরা ব্যবসায় যোগ দিয়েছিল এবং সেখান থেকে আসা অর্থ দিয়েই সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ চালানো হতো। এসব অবৈধ হীরার ব্যবসা করে পাওয়া অর্থ দিয়ে আক্রমণ চালাত জঙ্গিরা। কারণ ওই হীরার বাজারমূল্য অনেক বেশি এবং হিসাব রাখা অত্যন্ত কঠিন। মার্কিনদের কাছে ৯/১১-এর দশম বার্ষিকী ছিল সত্যিই ব্যতিক্রম। এক দশকের প্রতীক্ষা সমাপ্ত হলো এবং মানতেই হবে যে ৯/১১-এর কারণ আজ 'মৃত'। এই ৯/১১ বার্ষিকীতে এই প্রথমবার মার্কিনরা 'তৃপ্তি' বোধ করল। কারণ তাদের প্রতিশোধ স্পৃহা এত দিনে পূর্ণ হয়েছে এবং বাকি বিশ্বের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য আবার একবার প্রমাণিত হয়েছে। তবে এই 'দুঃখের উৎসব' কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। হ্যাঁ, ৯/১১-এর মূল নায়ক হয়তো আজ মৃত, কিন্তু তাঁর তৈরি সন্ত্রাসবাদের ছক আজও সক্রিয়। ওসামা বিন লাদেনের হত্যায় কাজ মাত্র অর্ধসমাপ্ত হলো। কিন্তু যে অর্থায়নের ফলে ওসামা ৯/১১-এর আক্রমণ চালাতে পেরেছিলেন, সেই সেই অর্থব্যবস্থা আজও বিদ্যমান।
হীরার ব্যবসা অবৈধ নয়, কিন্তু এখানে নেই কোনো স্বচ্ছতা, নেই হীরাটা কোন পথে আফ্রিকা থেকে কিভাবে এসেছে_তা জানার ব্যবস্থা। এখানে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার। দেখা যায় নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাঞ্জানিয়া ও বতসোয়ানা তাদের হীরা খনি থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ব্যবহার করছে দেশের উন্নয়নে। বাতসোয়ানা আফ্রিকার মধ্যে দেখাচ্ছে কিভাবে খনির আয় স্বাস্থ্য, শিক্ষা আর পুনর্বাসনে ব্যবহার করা যায়। রক্তাক্ত হীরার ব্যবসা একটা স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘ ২০০৩ সাল থেকে কিমব্যারি প্রসেস সার্টিফিকেশন স্কিম (কেপিসিএস) চালু করে। তার পরও কেপিসিএস অবৈধ হীরা ব্যবসা বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট নয়।
আন্তর্জাতিক হীরা এবং খনি ফোরামগুলো যদি অনতিবিলম্বে হীরা নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের প্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব। কিন্তু তারা সেটা করতে চায় না বলেই এই ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফাই সন্ত্রাসবাদে বিনিয়োগ হয়। পাশ্চাত্যের লোভই তাই পরোক্ষভাবে তাদেরই সর্বনাশ করছে। আর আফ্রিকাকে রেখে দিচ্ছে চিরন্তন অন্ধকারে। এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী হীরা ও খনিজ ফোরামের হীরা চারপাশে প্রতারণা কমানো, এভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ, বাজার সিন্ডিকেট এবং উদ্দেশ্য সাধনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না হলে, হীরার লোভে যাচ্ছে সুযোগসন্ধানী মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা, তাদের প্রত্যক্ষ মদদে কিংবা পরোক্ষ ইন্ধনে তৈরি হচ্ছে স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র কিংবা বিদ্রোহী গ্রুপ, রক্তাক্ত হীরার অর্থের জন্য অনর্থক ঝরিয়ে যাচ্ছে নিজেদের রক্ত। আফ্রিকার যন্ত্রণা কেউ বুঝতে চায় না। এমনকি আমেরিকার সর্বোচ্চ পদে বসে থাকা আফ্রিকান-আমেরিকান রাষ্ট্রপতিও নন! তাঁর 'আমার পিতার স্বপ্ন' কি হয়ে গেছে শুধু স্বপ্ন! 'ইয়েস উই ক্যান' কি শুধু একটা নির্বাচনী স্লোগান, না বিশ্বকে বদলে দেওয়ার প্রত্যয়? মুনাফা সর্বস্ব মার্কিন কম্পানিগুলোর স্বার্থই যদি তাদের কাছে এত বড় হয়, তাহলে তাদের কাছে সাধারণ মার্কিনদের জীবনের মূল্য কতটা? সে হিসেবে আফ্রিকাবাসীর তথা বিশ্ববাসীর জীবনের মূল্যের কথা তো ছেড়েই যান। ভুলে গেলে চলবে না, বিদ্যমান ব্যবস্থায় পরিবর্তন না এলে রক্তাক্ত হীরার মাধ্যমে আবার রক্তে রঞ্জিত হতে পারে বিশ্ব।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×