আজ ইত্তেফাকে প্রকাশিত ইত্তেফাক রিপোর্টার আবুল খায়ের - এর রিপোর্টটি সবার জন্য পেস্ট করলাম।
ভারতীয় প্রতারক বিএন সরকারের স্বীকারোক্তি
জাল টাকা ও প্রাচীন মুদ্রা কেনাবেচার নামে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সঙ্গে দুইজন সংসদ সদস্যসহ অন্তত একডজন প্রথম শ্রেণীর শিল্পপতি জড়িত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন ভারতীয় নাগরিক গ্রেফতারকৃত প্রতারক বিএন সরকার। এছাড়া সরকারি প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে চাকরিরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত বেশ কিছু কর্মকর্তা এই প্রতারণার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে বিএন সরকার তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করেছেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে বিএন সরকার বাংলাদেশে ৩৩ বছর যাবত্ জাল টাকা ও প্রাচীন মুদ্রা কেনাবেচার নামে প্রতারণা করে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার করেছেন। অনেককে কোটিপতি ও শিল্পপতি বানিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এই চাঞ্চল্যকর প্রতারণার কাহিনী শুনে ডিবির কর্মকর্তারা রীতিমত হতবিহ্বল। অভিজ্ঞ মহল মনে করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা আবার প্রমাণ করল তাদের অপরাধ দমনে অনুসন্ধান কাজ অনেক দুর্বল। কেননা খোদ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্য, শিল্পপতি ও এমপিসহ প্রভাবশালী মহলের বেশ কিছু ব্যক্তি এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তারা নিরাপদে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা করে আসছিল বলে বিএন সরকার স্বীকারও করেছেন।
গত ২৮ নভেম্বর বেইলি রোডস্থ অফিসার্স ক্লাব থেকে ডিবি পুলিশ ভারতীয় নাগরিক বিএন সরকার ও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এক ডিআইজিকে গ্রেফতার করে। ডিবি অফিসে কয়েক ঘণ্টা রাখার পর অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজিকে ছেড়ে দেয়া হয়। বিএন সরকারের দেয়া তথ্যানুযায়ী ডিবি পুলিশ পরদিন বাড্ডা এলাকা থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকার জাল নোট ও এক বোতল বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত পাবনা থেকে বাছেদ ও যাত্রাবাড়ী থেকে শাহীন নামে দুইজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এছাড়া আরও দুইজনকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গতকাল রবিবার শাহাবুদ্দিন নামে আরও একজনকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। বিএন সরকার ও তার সহযোগীদের গত শুক্রবার দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষ হয়। গত শনিবার ডিবি পুলিশ বিএন সরকার ও তার সহযোগীদের তৃতীয় দফা রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত শুনানির দিন ধার্য করে।
বিএন সরকার ডিবির কর্মকর্তাদের জানান, তার সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তা কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয়পত্র রয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তার পরিচয়ে বিএন সরকার এতকাল প্রতারণা করে আসছিলেন। নয়াদিল্লীতে তার পাচারকৃত টাকায় ২০ থেকে ২২ কোটি রূপি ব্যয়ে একটি বিলাস বহুল ভবন নির্মাণ করেছেন। সেই ভবনে ভারতীয় নায়ক নায়িকারা ভাড়া থাকেন। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান ভারতে থাকে। এদেশে প্রায় ৪ বছর আগে কুষ্টিয়ায় মুসলিম পরিবারের এক তরুণীকে বিয়ে করেন তিনি। তার পরিচয় দেয়া হয় মুসলমান এবং নাম মাসুদুর রহমান। বিয়ের পর বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছেন। ভারতে যাতায়াত রয়েছে নিয়মিত।
যেভাবে বিএন সরকার প্রতারণায় আসে
বিরেন্দ্রনাথ সরকার (বিএন সরকার) প্রথম জীবনে ভারতে আঞ্চলিক সিকিউরিটি গার্ডে চাকরিতে যোগদান করেন। কয়েক বছর চাকরির পর তিনি জাল টাকা ও প্রাচীন মুদ্রা কেনাবেচার নামে প্রতারণায় নামেন। ভারতে সুবিধা করতে না পেরে বিএন সরকার এক মামার সঙ্গে বাংলাদেশে আসেন। কুষ্টিয়ায় কিছুদিন বসবাস করেন। এরপর জাল টাকা ও প্রাচীন মুদ্রা কেনাবেচা প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগ দেন। ভারতে থাকাকালে বিএন সরকারের সঙ্গে এদেশের প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।
১৯৭৮ সাল থেকে এদেশে সীমানা পিলার ও ১৭৫৭ সালের হ্যান্ডসেক সম্বলিত মুদ্রা কেনাবেচার জন্য দেশব্যাপী একটি প্রতারক চক্র চষে বেড়ায়। কোটি কোটি টাকার প্রলোভন দিয়ে অনেক লোক সর্বশ্বান্ত হয়ে গেছে। প্রতারক চক্রের হাতে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছেন গুলশানের ব্যবসায়ী ওমর চৌধুরী। তাকে ২০০১ সালে কুষ্টিয়ায় প্রাচীন মুদ্রা ও সীমানা পিলার কেনার কথা বলে ঢাকা থেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। তার কাছ থেকে প্রতারক চক্র বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে গেছে বলে তার পরিবার জানায়।
এদিকে, প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত অনেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারক চক্রের ভাষ্য মতে, ব্রিটিশ আমলের সীমান্ত পিলারে ইউরেনিয়াম থাকে। এই ইউরেনিয়াম দিয়ে পারমাণবিক বোমা তৈরি করা হয়ে থাকে। এই পিলার ক্রেতা স্বয়ং মার্কিন দূতাবাস বলে প্রতারক চক্র প্রচার করে বিভিন্ন পেশার লোককে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। অনুরূপভাবে প্রাচীন মুদ্রা কেনার নামে প্রতারক চক্র একই প্রচার চালায়। কোটি কোটি টাকার বস্তা দেখানো হয়। আসলে সেগুলো জাল নোট। সর্বশেষ বিএন সরকারের তথ্যানুযায়ী এদেশে প্রথম শ্রেণীর এক শিল্পপতির কাছ থেকে প্রাচীন মুদ্রা কেনাবেচার নামে প্রতারণা করে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শিল্পপতি পেয়েছেন জাল নোট। এইভাবে তাদের প্রতারণা চলছে বলে বিএন সরকার জানান।
লিংক: চাঞ্চল্যকর প্রতারণায় জড়িত দুই এমপিসহ বহু শিল্পপতি