somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিনদেশী সহযোদ্ধা

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ তার বিজয়ের ৪০ বছর এ পা রাখছে।আমি নিজেও ৪০ এ পা রাখছি।জন্মে একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।আমরা কয়জন আর ফিলিস্তিনিদের কথা ভাবি।একটা স্বাধীন দেশের জন্য কত বছর সংগ্রাম করছে। আমরা ভাগ্যবান যে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা আজ পৃথিবীর মানচিত্রে একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে নিজেদের জায়গা করে নিতে পেরেছি।লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ।হাজার হাজার মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ কে।
১৬ ই ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ ৪০ বছরে আমরা ৭১ এর যুদ্ধাপরাধী ঘাতক দালাল রাজাকারদের বিচার করতে পারিনি।এ লজ্জার হাত থেকে কবে মুক্তি পাব জানিনা। এই বিষয় এ আজ লিখব না।আজ একটা অন্যরকম ভাবনা লিখছি। বাংলার কৃষক মজুর আপামর জনগন প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বলেই পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।বিদেশী শক্তি যেমন অসহযোগীটা করেছে তেমনি বন্ধুবেশি রাষ্ট্রের সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। একদিকে পাক হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে আমার দেশের রাজাকার আলবদর আল শামস বাহিনি। ঠিক তেমনি বহু বিদেশি আমাদের বিভিন্ন ভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে।আমি তাদের আমার সস্রদ্ধ সালাম জানাই।
বাংলাদেশ এবং আমরা দেশবাসী তাদের কি দিতে পেরেছি।আমরা এই প্রজন্ম কজন তাদের চিনি বা জানি।আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান ।তারপর ও যেটুকু জেনেছি শুনেছি পরেছি তা থেকে বুঝেছি আমাদের উচিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে বা যারা যত টুকু সহযোগিতা করেছে তাদের যোগ্য মর্যাদা দেয়া।
জর্জ হেরিসন( George Harisson)
বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মের সাথে জর্জ হারিসন নামটি পরিছিত।১৯৭১ এর মার্চ ২৬ এর পর পাক হানাদার বাহিনী সারাদেশ এ যে যুদ্ধ গণহত্যা খুন ধর্ষণ রাহাজানির রাজত্ব শুরু করে তাতে দেশ টি পরিনত হয় একটি ধ্বংস স্তূপ এ। সীমান্তের ওপারে ইন্ডিয়া তে আশ্রয় নেয় লাখ লাখ মানুষ ।স্বীকৃতি আর সহযোগিতার আশায় বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে অন্যান্য রাষ্ট্রের দিকে ।দুনিয়া খ্যাত বিটলসের অন্যতম সদস্য জর্জ হারিসন কে বলা হত কোয়অ্যাট বিটল ।৬০ এর দশকে দুনিয়াজোড়া যে বিদ্রোহ আর অস্থিরতা তরুণদের মাঝে দেখা দিয়েছিল বি্টলসরা ছিল তার ই প্রতিনিধি। সঙ্গীত দিয়ে পুরো একটা প্রজন্ম কে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল তারা। পরবর্তীতে ভাঙ্গন ধরে দলের ভেতর।হারিসন একক ভাবে কেরিয়ার গড়ার কথা ভাবছিল।সেই মুহূর্তে বন্ধু রবি শঙ্কর এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ কে সহযোগিতা করার দিকে হাত বাড়ান হারিসন। কনসার্ট এর মুল পরিকল্পনা রবি শঙ্কর এর ছিল।দল আগে ভেঙ্গে গেলেও হারিসন সহ শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ করেন।সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছিলেন ড্রামার রিংগ স্টার।বিল প্রিসটন লিওন রাসেল ও সঙ্গে ছিলেন।
হারিসন ছাড়াও বব ডিলান এরিক ক্লিপটন রাজি হন।১৯৭১ সালের ১লা আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক এর ম্যাডইসন ইস্কয়ার গার্ডেন এ অনুষ্ঠিত হয় “দ্যা কনসার্ট ফর বাংলাদেশ” । এই কনসার্ট এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর বহু মানুষ প্রথম জেনেছিল বাংলাদেশ এর নাম এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা। অনুষ্ঠান শুরু হয় রবি শঙ্কর আর ওস্তাদ আলি আকবর খান এর যুগল বন্দী দিয়ে।তবলায় ছিলেন আল্লারাখা। এরিক ক্লিপটন এর গীটার আর বব ডিলান এর বিখ্যাত গান ব্লয়িং ইন দি উইন্ড মানুষ আজীবন মনে রাখবে। কনসার্ট এর শেষ পরিবেশনা ছিল হারিসন এর অবিস্মরণীয় গান বাংলাদেশ । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কালীন সংকটের চেহারা আই গানের ভেতর দিয়ে হারিসন লাখো মানুষ কে দেখিয়েছিলেন।আই মি মাইন হারিসন এর একটি বিটলস এর জন্য লেখা গান। এই নাম এ হারিসন এর আত্মজীবনী। সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কথা লেখা আছে। রবি শঙ্কর হারিসন ভেবেছিলেন কনসার্ট থেকে ২৫ হাজার ডলার তোলা যাবে বাংলাদেশ এর উদবাস্ত দের জন্য। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি শুধু টিকেট থেকে আয় হয়েছিল আড়াই লাখ ডলার। এছাড়া অ্যালবাম কনসার্ট দিয়ে তৈরি ফিল্ম বিক্রি করে আরও অর্থ আয় হয়।বাংলাদেশ কে হারিসন মনে রেখেছিলেন।আর তাই ১৯৮২ সাল এ মার্কিন এক টিভি অনুষ্ঠান এ হারিসন বাংলাদেশের শিশুদের জন্য কয়েক লাখ ডলার এর চেক দিয়েছিলেন।
আজ আমার লজ্জা লাগছে ভিনদেশী এই শিল্পী এই সহযোগী বন্ধুর কথা আমরা বাংলাদেশীরা বা বাংলাদেশ মনে রাখিনি। রাষ্ট্রীয় ভাবে সম্মান জানানো দূরে থাক আমরা এই মানুষ টিকে আমাদের দেশ এ কোনদিন আমন্ত্রন ও যানাইনি।অথচ আমাদের জাতির কঠিন সময় এ এই মানুষটি আজ থেকে ৪০ বছর আগে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে গানের মাধ্যমে শিল্পী বন্ধুদের নিয়া বাংলাদেশ কে তুলে ধরেছিল। রাষ্ট্র মনে রাখুক বাংলাদেশের মানুষের অন্তরে আজীবন থাকবে একটি নাম জর্জ হেরিসন(George Harisson )..
৫৮ বছর বয়স এ হারিসন কান্সার এ আক্রান্ত হয়ে ২০০১ সালের নভেম্বর ৩০ এ মারা যান।
হারিসন,বব ডিলআন ,এরিক ক্লিপটন ,রবি সঙ্কর,আলি আকবর খান,আল্লারাখা সবার নাম বাংলাদেশিদের অন্তরে লিখা থাকবে, যেভাবে লাখ লাখ শহীদের নাম লিখা আছে আমাদের অন্তরে।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×