somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয়ের ৪০ তম বছরের এই বিজয়ের মাসে একজন খগেন্দ্রনাথ মন্ডলের চলে যাওয়া!

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাইটে ঢুকেই চোখে পড়ল হাসমত ভাইয়ের এই লেখাটি। উনি লেখাটি লিখেছেন আজকের প্রথম আলোর একটি সংবাদ থেকে। সংবাদটি এসেছে একজন দেশপ্রেমিক কে নিয়ে, আর তিনি আমাদের সাতক্ষীরার, সুতরাং তাকে একটু হলেও সম্মান জানাতে আমার এই লেখা। একটু হলেও বললাম এই জন্য যে আমরা দিনে দিনে যোগ্যকে তার উপযুক্ত সম্মান দিতেও কার্পন্য করি, আর অযোগ্যকে বানিয়ে ফেলি মাথার মুকুট।

একজন খগেন্দ্রনাথ মন্ডল নিতান্তই একজন গ্রামের মানুষ। তিনি তথাকথিত কোন জাতীয় নেতা নন, না কোন বড় সুশীল সমাজীয় ব্যক্তিও নন তিনি। লেখক কবিও না। তার আত্নহনন তেমন কেউ জানবে না এটাই স্বাভাবিক। তিনি তো ঢাক ঢোল পিটিয়ে অনশন করতে যাননি, দাবী আদায় হোক বা না হোক অনশনের মঞ্চ থেকে উঠে আসেননি। আমরন অনশন করবেন বলে অনশন স্থলে পানীয় পান করেননি। তিনি নিরবে প্রতিবাদ করলেন আমাদের এ ঘুনে ধরা সমাজের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে দূর্নীতি, দেশপ্রেমহীনতার যে বৃক্ষ বেড়ে উঠছে তার সঙ্গে না পেরে। এ রাষ্ট্রযন্ত্র পারল না একজন দেশপ্রেমিকের মনের আকুতি মেটাতে।

বাংলাদেশ এবছর উদযাপন করছে বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি। মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের স্বপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় ক্ষ্যন্ত দিয়ে বিদায় নিলেন খগেন্দ্রনাথ। হোক না সেটা ছোট পরিসরে। এ এক বড় অভিমানী বিদায়, দেশপ্রেমিকরা তো একটু বেশীই আবেগী হন। আবেগী না হলে তিনি তো দেশের আর দশজন নেতা পাতিনেতার মত নিজের পকেট ভরার চেষ্টা করতেন, চেষ্টা করতেন গ্রামের উন্নয়নের চেষ্টার চেয়ে গ্রামের মানুষের পকেট কাটতে। তা না করে ব্যতক্রম মানুষটি করতে চেয়েছিলেন গ্রামের উন্নয়ন, ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না জেনে বিদায় নিলেন পৃথিবী থেকে। জুটাপেটা করে গেলেন তথাকথিত নেতা নেত্রীদের।

একজন খগেন্দ্রনাথের উন্নয়নের চাওয়া কি খুব বেশী? একজন খগেন্দ্রনাথের ওয়ার্ডের জনপ্রত্যাশা কি খুব বেশী? রাষ্ট্র প্রতিবছর যে পরিমান টাকা অপচয় করে তা দিয়েই দেশের সকল খগেন্দ্রনাথের দাবী পূরন অসম্ভব নয়। প্রথম আলোর জনপ্রত্যাশা পূরনে ব্যর্থ হওয়ায় ইউপি সদস্যের আত্মহত্যা! শিরোনামের সংবাদ পড়ে জানা যায় জনসেবা করার জন্যই জনগণ তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারছিলেন না তিনি। এ নিয়ে দুঃখবোধ, হতাশা ও ক্ষোভ থেকে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন তিনি। আর আমাদের বড় বড় নেতা নেত্রীরা কি করেন? বার বার বছরের পর বছর ব্যর্থ হয়েও, জনগনের প্রত্যাশা পূরন না করতে পেরেও কোন লজ্জা পান না। সংবাদের নীচে একজন মন্তব্য করেছেন এমন “এদেশে মানুষের মধ্যে এখনো যে কতটা দায়িত্ববোধ ও দায়বদ্ধতা বেচে আছে সেটা ভেবে এক দিক থেকে যেমন গর্ব বোধ হলো তেমনি হতাশায় মুষড়ে পড়তে হয় যে একজন ‘সামান্য’ ইউপি সদস্যের মানসে যে দায়িত্ববোধ ও আত্মমর্যাদাবোধ কাজ করেছে তার ছিটেফোটাও যদি আমাদের বড় বড় (?) নেতা-নেত্রীদের থাকত তবে এই দেশ কতদুল-ই না এগিয়ে যেতে পারত! সর্বোপরি মি: মন্ডলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তার শোকাচ্ছন্ন পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। তার এই আত্মহত্যা যদি আমাদের বিবেকহীন নেতা-নেত্রীদের মধ্যে কিছুমাত্র চেতনার সৃস্টি করতে পারত !”

আত্মহত্যা সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু তিনি কি আত্মহত্যা করেছেন নাকি আত্মাহুতি দিয়ে প্রতিবাদ করে গেছেন দেশের, সমাজের সকল অনিয়ম, দূর্নীতি, অদক্ষতার বিরুদ্ধে? নিজের বিবেক এবং সীমাবদ্ধতার কাছে পরাজীত এই সৈনিকের এ ছাড়া উপায় কি ছিল? তিনি তো কোন রাজনৈতিক দল করেন না। তবে কেন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা তার কথা শুনবে, তার দাবী কেন পূরন করবে? হয়ত তার উপর অন্যায় কোন চাপ ছিল যা তার নৈতিকতা তাকে বাঁধা দিয়েছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে নৈতিকতার যুদ্ধে পরাজিত হতে চান নি বলেই তিনি আত্মহনন করেছেন। তিনি সত্যিই পরাজিত হননি, পরাজিত হয়েছে দেশের সমাজ, রাষ্ট্রযন্ত্র, নেতা নেত্রীরা।

তার থেকে কি কোন শিক্ষা নিবেন আমাদের দেশের নেতা নেত্রীরা?

খগেন্দ্রনাথকে স্যালুট

(লেখাটি হোম সাতক্ষীরা থেকে নেওয়া)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×