somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেয়সী এবং জ্বীন

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসর্জন: ঢাবির শ্রদ্ধেয়া শিক্ষিকা রুমানা ম্যাডামের হতভাগা স্বামী হাসান ভাইয়্যার চরণ তলে . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . .
. . . . . . . . .
. . . . . . .
. . . . .
. .
.

ঘুমের ঘোরে এক অদ্ভূত নাকি সুরে জিকির করে আতর আলী। মাঝে মাঝে বিচিত্র ভঙ্গিতে লাফ দিয়ে উঠে; পরক্ষণেই আবার শুয়ে পড়ে। বাড়ীর সকলের ধারণা তাকে জ্বীনে ধরেছে। এ বাড়ীর কামলা সে। প্রতিবছরই সুদুর সুনামগঞ্জ থেকে কৃষিকাজ করার জন্য চলে আসে আতর আলী। কিন্তু বিগত কোনো বছরই সে ঘুমের ঘোরে এমন জিকির করে নি। একই ঘরের এক কিনারায় থাকে সে এবং অন্য এক কিনারায় থাকেন মসজিদের ইমাম সাব। বাড়ীর কর্তা কফিল চৌধুরী প্রায় সময় ইমাম সাবকে আতর আলীর জ্বীন তাড়ানো ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। কিন্তু ইমাম সাব তার কথা হেসে উড়িয়ে দেন।

দু'একদিন পর পর আতর আলী জিকির করতে করতে গভীর রাতে চলে যায় পুকুর পাড়ের জঙ্গলে। পুকুরের দু'পাশে ঝোপ-জঙ্গল এবং আরেক পাশে কবরস্থান। তাই সন্ধার পর ওদিকে ভয়ে কেউ পা বাড়ায় না তবে আতর আলীর যেন কোনো ভয়-ভীতি নেই। ইমাম সাব বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেন নি। তিনি ভাবেন, কিসের নেশায় সে ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে এতো রাতে চলে যায় জঙ্গলে? তিনি তার পিছু নেয়ার সিন্ধান্ত নেন। একদিন খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে তার পিছনে পিছনে বেরিয়ে পড়েন ইমাম সাব।

জঙ্গলে ঢুকে একটু পরই বেরিয়ে আসে আতর আলী। টর্চের ক্ষীণ আলোতে লতাগুল্মাদি আচ্ছন্ন কবরস্থানের পাশ দিয়ে ধানি জমির আইল ধরে সোজা দক্ষিণ দিকে যেতে থাকে। দূরত্ব বজায় রেখে ইমাম সাবও যেতে লাগলেন। কয়েকটি বাড়ী পেরিয়ে সে এখলাছ মেম্বারের বাড়ীতে ঢুকে পড়ে। পুরো বাড়ীটি বাঁশ ঝাড়, সুপারির বাগান আর ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা। বাড়ীর সামনে এবং পিছনে একটি করে পুকুর। গ্রামের রাস্তা থেকে ছোট একটি মেটে পথ পুকুরের ঘাট পর্যন্ত গিয়ে পশ্চিম দিকে বাক নিয়ে বাড়ীর উঠোনে গিয়ে শেষ হয়েছে। বিশাল উঠোনের পশ্বিম পাশে অবস্থিত বড় চৌচালা টিনের ঘরটিতে বাস করে মেম্বার।

কড়া নাড়তেই খুলে যায় দরজা। আতর আলী ঘরে ঢুকার খানিক পর হারিকেনের আলো কমে যায়। সুপারী বাগান থেকে বেরিয়ে ইমাম সাব ধীরে ধীরে চলে যান মেম্বারের ঘরের পাশে। অজানা শঙ্কায় তার গা কেঁপে উঠে! উত্তেজনায় ঢেউ খেলে যায় তার সারা গায়ে। ভিতরে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেন। ব্যাকুল হয়ে উপায় খুঁজতে থাকেন। সহসা তার চোখে পড়ে টিনের বেড়ার একটি ফোড় ভেদ করে হারিকেনের স্বল্প আলো বাইরে গড়িয়ে পড়ছে। বাম চোখ বন্ধ করে ডান চোখ ফোড়ে রেখে ভিতরে তাকানোর সাথে সাথে ইমাম সাবের পায়ের পাতা থেকে মাথা পর্যন্ত বিদুৎ খেলে যায়। গা দুলে দুলে উঠে।

কী জঘন্য কাণ্ড! মেম্বারের স্ত্রীর সাথে আতর আলী লীলা খেলায় লিপ্ত আর মেম্বার নিজে সহায়তা করছে! স্ত্রীর যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধির কলা-কৌশল প্রয়োগ করছে! ইমাম সাব যেন আর দাড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না, ধীর পায়ে পুকুরে গিয়ে অঞ্জলি ভরে কয়েকবার মাথায় পানি দিয়ে শান বাঁধানো ঘাটের সিড়িতে ধপাস করে বসে পড়েন। কিছুক্ষণ পর ঘাটলা পর্যন্ত আতর আলীকে এগিয়ে দিয়ে মেম্বার চলে যায় ঘরের দিকে আর আতর আলী গ্রামের রাস্তা ধরে যেতে থাকে চৌধুরী বাড়ীর দিকে। পেছনে পেছনে ইমাম সাবও।

আতর আলী ঘরে ঢুকে বিছানায় ইমাম সাবকে দেখতে না পেয়ে ঘাবড়ে যায়। চটজলদি টয়লেটের দিকে তাকিয়ে দেখে আলো নেই। তার মনে শঙ্কা জাগে তাহলে কি ইমাম সাব . . .। ওর ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে ইমাম সাব ঝড়ের বেগে ঘরে প্রবেশ করেন। বিছানায় বসতে বসতে বললেন, আতর আলী কোথায় গিয়েছিলে? ভীতু কণ্ঠে কাঁপা স্বরে সে বললো, হুজর আমি তো কিছু বলতে পারি না, জ্বীন আমাকে কোথায় নিয়েছিল! ক্ষুব্ধ ইমাম সাব তার মুখের কাছে হারিকেন ধরে চোখের ওপর তীক্ষ্ন দৃষ্টি রেখে ধমক দিয়ে বললেন, বল কোথায় গিয়েছিলে? আচমকা সে ইমাম সাবের পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতে থাকে।

মাথা নীচু করে আতর আলী বলতে থাকে, এ বছর চৌধুরী বাড়ীতে আসার পর থেকে মেম্বার সাব আমার সাথে অল্পদিনের মধ্যে সখ্যতা গড়ে তুলে। মাস দু'য়েক পূর্বে এক সন্ধ্যায় আমাকে চায়ের দোকান থেকে তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করে। কিভাবে তিনি শারিরীকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন এবং এ নিয়ে স্ত্রীর সাথে প্রায় রাতেই ঝগড়া-ঝাটি হয়। প্রিয়তমা স্ত্রী আর থাকতে চাচ্ছে না। তার অকৃত্রিম, অপার ভালোবাসা প্রাণ প্রিয় স্ত্রীকে আর ধরে রাখতে পারছে না এসব বলার পাশাপাশি এক পর্যায়ে আমাকে তার স্ত্রীর সাথে থাকার প্রস্তাব দেন। আতর আলীর কথা শুনতে শুনতে ফজরের আজান হয়ে যায়। ইমাম সাব চলে যান মসজিদে।

গ্রামের ছেলে-মেয়েরা আরবী পড়তে এসেছে মক্তবে। এসেছে মেম্বারের সুন্দরী কন্যা সামিয়াও। সে সুর করে আরবী পড়ছে আর ইমাম সাব অপলক নয়নে তার মায়াবী চেহারার দিকে তাকিয়ে আছেন। চমৎকার অঙ্গসৌষ্টব। কী সুন্দর চোখ। ঈগলের ঠোঁটের মত উন্নত নাসিকা। পাহাড়ের মতো ঢালু মসৃণ চিবুক। বরফের মতো শুভ্র চিকন চিকন দাঁত। দুধে-আলতা গায়ের রং। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে সামিয়া। এ বয়সেই তার দিকে তাকালে সহজে কেউ চোখ ফেরাতে পারে না। সে নাকি তার মায়েরই ডুপ্লিকেট। ওর মায়ের কথা ভাবতেই কষ্টে ইমাম সাবের বুক ভারী হয়ে উঠে। দু'একজনের পড়া নিয়ে মক্তব ছুটি দিয়ে দেন।

পৌষের এক সকালে সোরগোল শুনে পাড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে আসতে থাকে কফিল চৌধুরীর বাড়ীতে। পুকুরের এক কোণে টয়লেটের পাশে ইমাম সাবের লাশ দেখে সবাই হতভম্ব! কারো মুখে রা সরছে না। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে মেম্বার। মেম্বারকে দেখে কফিল চৌধুরী হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। মেম্বার কালবিলম্ব না করে ইমাম সাবের লাশ নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন। হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠেন, ইমাম সাবের তো ঘাড় মটকানো! সর্বনাশ বুকে-পিঠে তো জ্বীনের আঙ্গুলের ছাপ! নিশ্চয় ইমাম সাবকে জ্বীনে মেরেছে! মুহূর্তের মধ্যে রাষ্ট্র হয়ে যায় চৈতালপুর গ্রামের ইমাম সাবের ঘাড় মটকে দিয়েছে জ্বীন।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×