somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জাপান যাওয়া...৩

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যাংকক থেকে প্রায় ৬ ঘন্টার পথ, ঘুম ঘুম চোখে জাপানের নারিতা বিমান বন্দরে নামলাম। বিমান বন্দরের বাইরে বের হওয়ার পর পরই আমাদের মাঘ মাসের শীতের মতো শীত শরীরকে কাহিল করে তুললো। এত ঠান্ডা জানতাম না! বাংলাদেশ থেকে যারাই গেছেন তাদের প্রায় সবারই একই অবস্থা। ঠান্ডা সহ্য করেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ীতে উঠলাম। গাড়ী আগে থেকেই প্রস্তত ছিল। আমাদের পেছন পেছন দেখলাম পাকিস্তানী কয়েকজন ললনাসহ ১২ জনের গ্রুপ, শ্রীলংকা, মালদ্বীপের গ্রুপও আসছে। কেউ আমাদের গাড়ীতে উঠলেও অন্যদের জন্য আরও গাড়ী প্রস্তত ছিল। যাত্রা টোকিওর পথে। গাড়ীর ভেতরে আমাদের স্বাগত জানাল দু'গাইড। জাপানে আসার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করলো তাদের ভাষন। আমরা এখন কোথায় যাবো, কি প্রোগ্রাম হাবিজাবি সব। টানা প্রায় ঘন্টাখানেক জার্নির পর পৌছলাম বিলাস বহুল পাচঁ তারকা হোটেল গিনজা দা ইছিতে। যার রুমের চাবি, অনুষ্ঠান সূচি এবং খরচের জন্য ৭৫ হাজার ইয়েন দিল। হঠাৎ করে নগদ টাকা পেয়ে কেমন জানি শিহরিত হলাম। বুঝলাম, এ ধরনের প্রোগ্রামে টাকাও দেয়া হয়! বলল, এগুলো আমাদের পকেট খরচ।
পকেটে হাত খরচ পেয়ে বেজায় খুশি। আপাতত কোন কাজ নেই। হোটেলের ১৩ তলায় রুমে ফিরে দিলাম ঘুম। বিকেল নাগাদ হাটতে বের হলাম। তারেককে বললাম, রাতের টোকিওটা এক নজর দেখে নিবো। সন্ধ্যা হতে হতে নেমে পড়লাম রাস্তায়। হোটেলের পাশ দিয়ে যাওয়া গিনজা রোড দেখে চোখ ধাধিয়ে গেল। রাস্তার দু'পাশের দামি নজর কাড়া সব সৌন্দর্য। যে টাইলস আর গ্লাসের ব্যবহার তাতে মনে হয়েছে জাপানীরা আসলে বুদ্ধিমান জাতি।পরিচিত হলাম, এক জাপানী সাংবাদিকের সাথে। কাজ করেন এনএইচকেতে। বললেন, জাপানের গিনজা রোড বিক্রি করলে পুরো নিউইয়র্ক শহর কেনা যাবে! আরও কতদুর হাটলাম। রাত নামার সাথে সাথে দেখলাম জাপানের রেষ্টুরেন্টগুলো বেশ সক্রিয় হয়ে উঠছে। ভীড় বাড়ছে রেষ্টুরেন্টে, কোনটা ফাকা নেই। দু'ফুট অন্তর অন্তর রেষ্টুরেন্ট। কৌতুহল মেঠাতে ঢুকে গেলাম একটিতে। বললাম, আমরা ছাত্র, বাংলাদেশ থেকে এসেছি। রেষ্টুরেন্ট দেখতে ঢুকলাম। তারা সাদরে আমন্ত্রন জানালো। বিনয়ী জাতি মাথা নিচু করে স্বাগত জানিয়ে বললো কিছু প্রয়োজন হলে যেন জানায়। দেখলাম, তারা ভাত খায় তবে প্লেইটে নয়, ছোট্ট একটি কাপে, পানি পান করে কাপ পরিমান। তবে বিয়ার নিচ্ছে আমাদের একটি জাগ এর সমান। অর্থাৎ আমরা যেভাবে পানি পান করি তারা করে বিয়ার। নানা রকমের হুইস্কি বেশ জনপ্রিয়। রাত বাড়ার সাথে সাথে দেখলাম, ফাকা রাস্তায় অনেকে ঢুলছে। পুলিশ কাউকে কাউকে ধরে তুলে দিচ্ছে, রাস্তা পার করে দিচ্ছে। জাপানী সাংবাদিক বললো, এটাই এখানকার নিয়ম। রাতের খাবার রেস্টুরেন্টে সেরে ঘরে শুধু ঘুমানোর কাজ। ফিরে এলাম হোটেলে। ততক্ষনে ক্ষিধেয় পেটের অবস্থা কাহিল। শুয়রের গোসতের ভয়ে নিজেকে ভেজিটেরিয়ান হিসেবে জাহির করতে গিয়ে ধরা খেয়ে বসে আছি। তারা আমাদের প্রোফাইল দেখে খাবার সরবরাহ দিতে গিয়ে দেখলাম..কি সব লতা-পাতায় ভর্ত্তি আমার খাবার বাসন। আর অন্যদিকে চিংডি আর গোস খাচ্ছে তারেক। নিজেকে গালি দিতে ইচ্ছে হলো। তারেককে বললাম, তোমার ওখানে শুয়র দিয়েছে। জিজ্ঞেস করে দেখো। বোটানিকো শব্দের অর্থ শুয়র। তাই যখনই খাবার নিতে যায়, সাবধান করে দিতে হয়, ইসলাম..নো বোটানিকো।
পরদিন সকাল ৯টায় প্রোগ্রাম। তাই রাত ১২টার দিকে শুতে গেলাম। এক নজর দেখে নি টিভি। যা দেখলাম তাতে মনে হলো..অনেক চ্যানেল আছে যাতে পর্নো দেখায়..তবে স্পর্শকাতর স্থানগুলো ঝাপসা করে দেয়া। অনেকগুলো চ্যানেল টিপতে টিপতে কখন যে ঘুম চলে এলো জানি না। সকালে তারেকের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল। দেখলাম ৮ টা বেজে গেছে, এ মুহুর্ত্তে ব্রেক ফাস্ট না সারলে পরে আর পাওয়া যাবে না..অতএব দৌড়..
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৫৭
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×