somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেক সাধনার আনন্দ অশ্রু

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি: ২০১১ বিশ্বকাপ ফুটবলের মঞ্চ।বাজছে উত্তর কোরিয়ার জাতীয় সঙ্গীত ।শত কোটি দর্শকের সামনে নিজের নিষিদ্ধ মাতৃভূমিকে তুলে ধরে কাঁদছেন খেলোয়াড় জং তায়ে সে।

প্রকৌশলী আনানেনকো কি মৃত্যু শয্যায় কেঁদেছিলেন? দেশের জন্য, মানবতার জন্য জীবন দিতে পেরে? সেই অশ্রুর কি কোন অলৌকিক, অপার্থিব সুখ ছিল?

১৯৮৬ সাল, ২৬ এপ্রিল। শতাব্দীর ভয়ংকরতম বিস্ফোরণ ঘটে চেরনোবিলের পরমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে । যে রাতে বিস্ফোরণ ঘটে, পরদিনে সকালে ১০০০ কিলোমিটার দূরে এক সুইডিশ পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে এলার্ম বেজে ওঠে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি জানান দেয়। তেজষ্ক্রিয় মেঘ বাষ্প ছড়িয়ে পড়তে থাকে ইউরোপ জুড়ে। আফগানিস্তানে দখলদার সোভিয়েত রাশিয়ার সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করা সেনাদের তুলে এনে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছিল। তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হেলিকপ্টারে করে বস্তার পর বস্তা বোরন ফেলা হয় দুর্ঘটনা স্থলে।


হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়।কিন্তু তারপর হাজার হাজার মানুষ জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে অদৃশ্য শত্রু তেজস্ক্রিয়তার দানবকে কুপোকাত করতে । সেই থেকে অদ্যবধি জনশূণ্য ভূতুড়ে নগরী প্রিপিয়াট । মাটির এক ফুট গভীর পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে গিয়েছে, সেই তেজস্ক্রিয় মৌলের অর্ধায়ু লক্ষ বছর হবার কারণে সেখানে মানুষে ফিরে যাবার আর পথ নেই। কিন্তু বন্ধ করতে হবে এই তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া, প্রাণঘাতী তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সরাতে হবে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখলেন বিস্ফোরণের পর সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় বর্জ্য অন্যান্য পদার্থের সাথে মিশে ১২০০ সে. তাপমাত্রার লাভা তৈরি করতে পারে, যেটা শীতলীকরণের জন্য রাখা বিশাল ভূগর্ভস্থ পানির ধারকের মাঝে পড়লে আরেকটি ভয়াবহ বিস্ফোরণে পুরো ইউরোপের অর্ধেক বাস অযোগ্য হয়ে পড়বে।

একটি ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় পানির মাঝে নেমে একটি মাত্র স্লুইস গেট খুলে দিয়ে পানি সরিয়ে দিতে হবে। দেশের জন্য আত্মঘাতী স্কোয়াড আহবান করা হল। এগিয়ে আসলেন প্রকৌশলী এলেস্কেই আনানেনকো, যিনি ভালভের অবস্থান জানতেন, সাথে সাহায্যকারী হিসেবে যোগ দিলেন ভ্যালেরি বেজপালভ, এবং অন্ধকারের মাঝে আলোর লন্ঠন ধরে সহায়তা করার জন্য বরিস বারানভ।বিধস্ত চুল্লির ছাদে প্রচন্ড তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সরাতে ব্যবহৃত দূর নিয়ন্ত্রিত রোবটও বসে যায়, ইলেক্ট্রনিক সার্কিট নষ্ট হয়ে যায় । অন্ধকার তেজস্ক্রিয় পানিতে নামা ডুবুরি প্রকৌশলী আনানেনকোর লন্ঠন নিভে যায়, অন্ধকারে পাইপ হাতড়ে হাতড়ে তারা সক্ষম হন ভালভ খুলে দিতে।

কিছু দিনের মাঝেই তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে মারা যান আনানেনকো এবং বেজপালভ। শারিরীকভাবে অক্ষম হয়ে যান বরিস বারানভ। সোভিয়েত রাশিয়া তাদের রাষ্ট্রীয় বীরের মর্যাদা দেয়।

নিষিদ্ধ মাতৃভূমি উত্তর কোরিয়ার ডাকসাইটে খেলোয়াড় জং তায়ে সে। নিষিদ্ধতার বেড়াজাল অতিক্রম করে অমানুষিক পরিশ্রম করে এশিয়া থেকে বাছাই পর্ব উত্তীর্ণ হয় তারা । তারপরেও মাথায় মহাশাস্তির হুমকি। খেলায় খারাপ করলেই নেমে আসবে রাষ্ট্রীয় অত্যাচার, জেল, জরিমানার খড়গ।


তারপরেও নিজের নিষিদ্ধ, নিন্দিত মাতৃভূমির বৈশ্বিক সম্মানের জন্য মেরুদন্ড সোজা রেখে লড়াই করলো জং তায়ে সের বাহিনী। মহাপরাক্রমশালী ব্রাজিলের সাথে মরীয়া হয়ে লড়ে গেল। তারপরেই হার, কারবাস আর শাস্তির দুঃস্বপ্ন। শত কোটি দর্শকের সামনে নিষিদ্ধ দেশকে মাথা উচু করে দাড় করিয়ে জাতীয় সঙ্গীত বাজাতে পারলে, জীবনে দেশ প্রেমের আর কিছু প্রয়োজন? সেই অশ্রুর কি কোন ভাষা থাকে? কোন কষ্ট থাকে? নাকি দেশের গর্বে আনন্দে চোখে পানি চলে আসাটা পাপ? নিজেকে উৎসর্গ করে আনন্দের জল ফেলাটা পাগলামি?

আমাদের দেশ প্রেমটা কি কিছু কাচা বাজার, অফিস দোকান, মুদি মসলা, ফোন ফ্যাক্স, বাস, রিক্সা, ব্যাঙ্ক, ব্যবসা, জাতীয়তাবাদ, চেতনা, ধর্ম, সংসার, স্বার্থের জালেই বন্দি থাকবে? দেশকে, নিজেকে গর্বিত করার লোভ কারো হয়না? অমানুষিক শ্রম, ধৈর্য দিয়ে রিক্সা চালক জয়নাল যখন হাসপাতাল করলেন, তাতেই বা তার কী স্বার্থ, লোভ ছিল?

আমাদের অবস্থানটা কোথায়? কে কত কম কষ্টে বেশি টাকা আয় করবে, ঘরে বসে বসে উপার্জন করবে, কে কত কম পড়ে বেশি ভাল করবে, সেটার প্রতিযোগিতা। কিন্তু শ্রমের প্রতিযোগিতা কই? নিজেকে উজাড় করে দেবার অপার্থিব আনন্দ কোথায়?

ক্রিকেট দলের ব্যর্থতায় যত কান্না তার প্রতিদানের নিজের কর্ম ক্ষেত্রে সংগ্রাম কোথায়? দেশ প্রেমটা আসলে কী, যদি কর্মই মানুষের ধর্ম না হয়? শুধু শুধু কী বোর্ড চেপে শত্রু নিধন আর প্রোফাইলে পতাকা চাপিয়ে, জাতীয় সঙ্গীত শুনেই দেশপ্রেমের কর্তব্য শেষ?

জাতীয় সঙ্গীত শুনে এদেশের মানুষ আবার কবে কাঁদবে? আবার কবে শ্রম, ত্যাগ, সময়, অর্থ, জীবন সাধনা দিয়ে সুখের অশ্রু কিনবে, সত্যিকারের দেশ প্রেমের স্বাদ নিবে? আবার কবে?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০২
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×