কথাগুলো আমার একান্তই নিজস্ব। বলার বা শোনার কেউ নেই বলে হয়ত ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করছি। কি করে যাচ্ছে আমার দিনগুলো!
অনেক old fashioned আমি। পছন্দের মানুষটি বলতেন, আমি শরতের গল্পের নায়িকাদের যুগের মানসিকতা সম্পন্ন। আধুনিকতা বিবর্জিত। মানসিকতা পরিবর্নের প্রথম ধাপ হিসাবে বাহ্যিক পরিবর্তনকে সঙ্গী করলাম। যদি আয়নাতে নিজের মুখ চিনতে না পারলে মানসিকতাও বদলাতে পারি। যদি একটু আধুনিক হতে পারি। তাই, আজ আজন্ম লালিত কেশ রাশি বিসর্জন দিলাম। ছোট বেলায় যখন এপি ১৫ কেশ তেলের বিজ্ঞাপনে একটা পুতুলের চুল অনেকে ধরে নিয়ে যেতে দেখতাম, তখন থেকে মনে হত, যদি এমন একটা সময় আসে যখন আমার চুলের ভার এমনি করে মানুষ বইবে। ক্লাশ ২ তে যখন পড়তাম, বাবা দুষ্টুমী করে বলত এখনই তো ২ জনের ধরে নিয়ে যাবার মত বড় হয়ে গেছে।
কালের সাথে ভালবাসার মত বস্তুর সংখ্যা বড়ল, বাড়ল মানুষের সংখ্যাও। তাদের ভালবাসতে গিয়ে ছোট বেলার ভালবাসা চুলগুলোর যত্ন করা একরকম ছেড়েই দিয়েছিলাম। তাই তারাও আমাকে ছেড়ে যাওয়া শুরু করেছিল। তবু যা ছিল মন্দ ছিলনা হয়ত, কিন্তু আজ তার বিসর্জন দিলাম। গত ৩ দিন যখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম চুল কেটে ফেলব, মন খারাপ হচ্ছিল খুব। আজ কেটে ফেলার পর একটুও কষ্ট হচ্ছে না কেন যেন। মনে হচ্ছিল চুল কাটার সময় হয়ত আত্মা বেড়িয়ে যাবে কষ্টে। খুব মনে পড়ল, একবার এক মামাতো বোনকে বলেছিলাম চুলের আগা গুলো একটু ছেটে দিতে। ও প্রায় ৩ ইঞ্চি পরিমান চুল কেটে ফেলেছিল। মনে পরে কি কান্নাটাই না কেদেছিলাম। ওকে তো প্রায় খুন করতে গিয়েছিলাম। আমার এত শখের চুল। অথচ কোথায়, কেটে ফেলার সময় এতটুকুও ব্যথা অনুভূত হয়নি তো! শুধু আয়নায় নিজেকে অচেনা লাগছে। সে তো অনেক দিন ধরেই লাগে। আর একটু না হয় অন্য রকম লাগল!
হঠাৎ মনে হল এভাবেই ভাল লাগার বস্তুগুলো সব একসময় হারিয়ে যাবে। আমি হারিয়ে যাবো এই নশ্বর পৃথিবী থেকে। তাহলে এই ভাল লাগার, এই ভালবাসার কি অর্থ আছে? ভাললাগা, ভালবাসাগুলোকে সাথে নিয়ে বাচি, আর তাদের ছাড়া বাচি, সময় তো কেটে যাবেই। কিচ্ছু থেমে থাকবে না তো! তাহলে কেন এত কষ্ট হয় না পাওয়া জিনিসগুলোর জন্য? চুল কেটে philosopher হয়ে গেলাম নাকি ভাবছি। এত ছোট চুলে কেমন হাস্যকর লাগছে আমাকে।