somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধ একাত্তর

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ফুলপাতা যে রকম সূর্যের দিকে মুখ ফেরায়, সে রকম কোনো
অজানা সৌরাকর্ষণে অতীতও ইতিহাসের আকাশে উদীয়মান
সূর্যের দিকে মুখ ফেরাবে বলে লড়াই করে।”

ভাল্টার বেনিয়ামিন (১৯৯২ : ২৪৬)



শত শত নদীবেষ্টিত ভূ-ভাগে প্রাচীন কৌম ও বঙ্গ-জন অধ্যুষিত বঙ্গ-জনপদ। বিচিত্র এর ভূ-প্রকৃতি, যা তার মানুষদের মানস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। সেই প্রকৃতি মনোহর আর দৃষ্টিনন্দন হলেও আচরণে অনেকটা প্রতিপ। দৃষ্টিসীমা সরলভাবে দিগন্তের সন্ধান পায় না। পথ-ঘাটও অসরল, আঁকা-বাঁকা। প্রলয়ঙ্কারী বন্যা এখানকার প্রায় প্রতিবছরের ঘটনা। নিত্য লড়াই চলে নদী আর তার পাড়ের মানুষদের মধ্যে। নদী ঘর ভাঙে, শস্য কেড়ে নেয়। সমুদ্র কূলে ওঠে গ্রাস করে সব কিছু। এমনিতর জল-স্থলে প্রতিপরে সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচেছে এই অঞ্চলের পরাক্রমশালী মানুষেরা। আর তাই লড়াই সংগ্রাম প্রতিবাদমুখরতা তাঁদের সংস্কার। আত্মবিস্মরণ বা অস্তিত্বকে ভোলার অবকাশ মেলেনি তাঁর। সভ্যতার বিকাশ বা বিকাশের উৎকর্ষতার বদৌলতে সেই প্রতিপসুলভ প্রকৃতিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও প্রতিপ বা শত্র“র নব রূপে প্রত্যাবর্তন রোধ করা যায়নি। প্রতিকূলতার চটুল চরিত্র ও নব মাত্রিকতায় পাল্টে গেছে যুদ্ধের প্রকৃতি। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, নয়া-উপনিবেশবাদ, বর্ণবাদ, উগ্র আগ্রাাসী জাতীয়তাবাদ, শোষণ সর্বস্ব, পুুঁজিবাদ, ধর্মান্ধতা প্রভৃতি তথাকথিত সভ্যতার ধারক মানুষদেরই সৃষ্টি, যে সৃষ্টির বিকাশ মানুষেরই চরম শত্র“রূপে। অন্যদিকে এই সব শত্র“র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে মুক্তিকামী বিশ্ববাসী প্রগতির অস্ত্র হিসেবে হৃদয়ে ধারণ করেছে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, উদার জাতীয়তাবাদের ধারণা, ধর্মনিরপে মানবতাবাদী মূল্যবোধ, এবং সমাজতন্ত্রের দর্শন। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে প্রগতির উপরোক্ত অস্ত্রসমূহই মূল শক্তি ও প্রেরণার যোগান দিয়েছিল।

প্রায় দুইশো বছর শাসন-শোষণ শেষে ১৯৪৭’র আগস্টে ভারত ও পাকিস্তান এ নামক দুই পৃথক রাষ্ট্রে ভাগ করে ভারতবর্ষ ত্যাগ করে ব্রিটিশরা। এর মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে দৃশ্যশোভন হয়ে ওঠে স্বাধীনতা নামক এক মাকাল ফল, যা আমরা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ হয়ে খেয়েছিলাম। বারশো মাইল দূরের পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে একমাত্র ধর্মের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনো মিলই ছিল না। এই তথাকথিত স্বাধীনতা ছিল মূলত পশ্চিম পাকিস্তানীদের স্বাধীনতা, পূর্ব পাকিস্তানকে অবাধ শোষণের স্বাধীনতা। পূর্ব পাকিস্তানকে একটি উপনিবেশ বিবেচনা করে পশ্চিমারা এদেশের মানুষকে রাষ্ট্রজীবনের সর্বেেত্র উপেতি ও বঞ্চিত রাখে। এভাবেই পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের ২৬০০ কোটি টাকা (১৯৪৭-৭০) পাচার হয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। আশা বা মোহভঙ্গের প্রথম বছর ১৯৪৮ সালে ভাষার উপর আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। এর প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দানের দাবিতে ঢাকায় এক গণবিােভের আয়োজন করা হয়। বিােভকারীদের উপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ কয়েকজন নিহত ও অনেকে আহত হন। ভাষার জন্য এই জীবন ও রক্তদানের মাধ্যমেই শুরু হয় এদেশবাসীর স্বাধিকার আদায়ের সুদীর্ঘ সংগ্রাম। এই সুদীর্ঘ সংগ্রামের পরিণত প্রকাশই ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধ।

পূর্বতন বছরগুলোতে সংগঠিত তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়া এদেশবাসীর মনস্তত্ত্বে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল, তা আরো করুণভাবে আত্মগত হয়েছে ১৯৭০-র ১২ নভেম্বর। ইতিহাসের এক প্রলয়ংকরী প্রাকৃতিক দুর্যোগে পূর্ববাংলার দণিাঞ্চল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সেদিন। সর্বনাশা ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দশ লাখ বাঙালির জীবন ছিনিয়ে নেয়। সর্বস্বান্ত হয় অসংখ্য মানুষ। অথচ এই বিরাট জাতীয় দুর্যোগে ইয়াহিয়া সরকার দুর্গত জনসাধারণের প্রতি নিষ্ঠুর উদাসীনতা প্রদর্শন করে।

এরপর ১৯৭০-র ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ৩১৩ আসনের মধ্যে পুর্ব পাকিস্তানের সদস্যসংখ্যা ছিল ১৬৯, এবং আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজয়ী হয়। ফলাফল বিবেচনায় কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করার কথা আওয়ামী লীগের। কিন্তু পাকিস্তান সরকার মতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। ১৯৭১-র ১ মার্চ রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদ স্থগিত ঘোষণা করলে রুখে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এরপর পরিস্থিতির পরম্পরায় আসে ঐতিহাসিক ৭মার্চ। রমনা-রেসকোর্সে বিশাল জনসমুদ্রের সম্মেলনে শেখ মুজিব গভীর আবেগ, নির্ভুল যুক্তি এবং ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনাপূর্ণ এক ভাষণ। এ ভাষণে অকুতোভয় নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন
“.... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

মূলত সেদিন থেকেই ‘স্বাধীনতা” শব্দটি এদেশবাসীর। অন্যদিকে পূর্ব-পাকিস্তানের জেগে ওঠা জনতার কণ্ঠরোধ করতে সামরিক জান্তা সিদ্ধান্ত নেয় চূড়ান্ত আঘাত হানার। এ ল্েয ফেব্র“য়ারি বা তার আগে থেকেই মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে লুকিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাপক সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম আনা হয়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র নিরপরাধ মানুষের উপর চলে মানবেতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। বর্বরোচিত এই হত্যালীলায় সোৎসাহে অংশগ্রহণ করে এদেশের বসবাসরত বিহারীদের একটি বড়ো অংশ এবং এদেশে জন্ম নেয়া কিছু বিশ্বাসঘাতক কুলাঙ্গার দালাল। প্রথমত তারা আক্রমণের ল্যবস্তু হিসেবে নিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যান্টনমেন্টসমূহ।
অনিশ্চিত ভবিষ্যত আর সম্ভাব্য মৃত্যু মেনে নিয়েও জনগণের জীবন রার্থে মহাহত্যাযজ্ঞের প্রথম প্রহরেই গ্রেপ্তার হন শেখ মুজিব। স্বাধীনতা হয়ে ওঠে সবার অভিন্ন ও একমাত্র ল্য। ২৬ মার্চ-ঢাকা এক ধ্বংসস্তূপের নগরী। এই ঘটনায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে শুরু হয অভাবনীয় প্রতিরোধ প্রক্রিয়া। ঢাকার রাজারবাগ ও পিলখানা এবং চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাকসেনারা এদেশীয় পুলিশ, ইপিআর, ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট’র সৈন্যদের নিরস্ত্র করে পাইকারি গণহত্যা চালালে সেই খবর অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দেশময়। আত্মরার ও দেশাত্মবোধের তাগিদে অধিকাংশ সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য প্রতিরোধ-সংগ্রামে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। সশস্ত্রবাহিনীর বিপ্তি বিদ্রোহের মধ্যে চট্টগ্রামস্থিত ৮-ইবি এবং ইপিআর বাহিনীর সসস্ত্র প্রতিরোধ একটি বিশেষ কারণে উল্লেখযোগ্য। এতে স্বল্পকালের জন্যে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র দখলে আসলে ২৬ মার্চ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা এম. এ. হান্নান এবং ২৭ মার্চ ৮-ইবির মেজার জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপে নরক হয়ে ওঠা বাংলার শহর-গ্রাম থেকে পাহাড়, জঙ্গল, নদী-নালা ডিঙিয়ে লাখ লাখ মানুষ বেরিয়ে পড়েন নিরাপত্তার খোঁজে। বেশিরভাগ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নেয় ভারতে। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের স্থানে স্থানে তাঁবু খাটিয়ে তৈরি করা হয় শরণার্থী শিবির। প্রথম দিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার বাংলাদেশী শরণার্থীদের ভার নিলেও পরবর্তীতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য শরণার্থী আশ্রয় নিতে থাকলে এর ভার নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সে সময় প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। নকশাল বিত জনবহুল পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অগণিত বিদেশী শরণার্থী বিশেষত সশস্ত্র বিদ্রোহীদের জন্যে উন্মুক্ত করা অসামান্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এেেত্র দ্ব্যর্থহীন ভূমিকা রাখেন তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। মুক্তিযুদ্ধের এ পর্বে অসামান্য ভূমিকা রাখেন সীমান্ত অতিক্রম করা আওয়ামী লীগ নেতা (সাধারণ সম্পাদক) তাজউদ্দিন আহমদ। প্রায় একক প্রচেষ্টায় তিনি সে সময় ভারতের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র সময় জুড়ে তিনি সমস্ত বিভ্রান্তি ও উপদলীয় কোন্দলের মধ্যে স্থির থেকে জাতিকে সঠিক নেতৃত্বে চালিত করার প্রয়াস রাখেন।

১৭ এপ্রিল ১৯৭১-য়ে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সম্মুখে প্রকাশ্য শপথ গ্রহণ করে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার। এই সংবাদ প্রচারিত হলে কলকাতার পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত এম. হোসেন আলী বাংলাদেশ পে যোগ দেন। এরও আগে ৬ এপ্রিল দিল্লীর পাক হাইকমিশনের কর্মকর্তা কে. এম. সাহাবুদ্দিন ও আমজাদুল হক বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য জানান। এভােেবই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ক্যানবেরা, কাঠমুন্ডু, ম্যানিলা, লন্ডনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দূতাবাসে বাঙালি কর্মকর্তা ও কর্মাচারীদের পাকিস্তান প ত্যাগ করেন। এইসব ঘটনাবলি মুক্তিযুদ্ধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। মুক্তিযুদ্ধের সপে আন্তর্জাতিক জনমত সংগঠনে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি লন্ডনে তাঁর সদর সফতর স্থাপন করে পৃথিবীর দেশে দেশে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরূপে ছুটে বেড়ান, যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের নাড়া দিয়েছিল। বিশ্ব জনমত আদায়ের ল্েয তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রধান শহরে নানা উপায়ে পাকিস্তানী নৃশংসতা তুলে ধরেন। ল্য হয়ে যায় একটিই, সেই নির্দিষ্ট ও দুর্নিবার ল্যÑ দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তি। ফলে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্যে মুক্তিবাহিনীতে যোগদানের অভিপ্রায়ে দলে দলে সীমান্ত অতিক্রম করতে থাকে মুক্তি পিয়াসী সবুজের দল।
৩০ এপ্রিল, ১৯৭১। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করার জন্যে ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ৯ মে তাঁদের হাতে ন্যস্ত করা হয় মুক্তিযুদ্ধে যোগদানেচ্ছু বাংলাদেশের তরুণদের প্রশিণ দানের দায়িত্ব। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ভারত একটি রেডিও ট্রান্সমিটার বরাদ্দ করলে ২৫ মে মুজিবনগর থেকে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের’ অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়। মুক্তি পাগল শব্দ সৈনিকদের নির্ভিক প্রচেষ্টায় এই বেতার-স¤প্রচার তার উদ্দীপনামূলক অনুষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে উজ্জীবিত করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও সমর্থনকারী সবাইকে। পাশাপাশি চিত্রসৈনিকেরাও তাঁদের শিল্পকর্মে পাকিস্তান শাসকদের ব্যঙ্গচিত্র উপস্থাপন করে জনমনে পাকিস্তানী শাসন সম্পর্কে তীব্র ঘৃণার সংক্রমণ ঘটাতে সম হন।

ঐতিহাসিক একাত্তরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সুগঠিত পাকসেনাদের বিপরীতে মুক্তিবাহিনী ছিল অনেকটা আগোছালো, অসংবদ্ধ। তবুও তাঁরা নিষ্ঠুর পাকসেনাদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষের প্রয়াস চালিয়েছিলেন। আশা ছিল, পৃথিবীর মানবতাবাদী সংস্থা ও বড়ো বড়ো সভ্য দেশগুলো এই অসম যুদ্ধ রোধে সচেষ্ট হবে। কিন্তু তা হয় নি। তাই মে মাসের মাঝামাঝি থেকে গেরিলাযুদ্ধের পথ বেছে নেয়া হয়। ১৩টি শিবিরে মে-জুন-জুলাই এই তিন মাস ধরে চলতে থাকে গেরিলা প্রশিণ। তাঁদের রণকৌশল- অতর্কিত আক্রমণে ছোটো ছোটো পাক সেনাদলকে পরাজিত করে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ছিনিয়ে নেয়া। জীবন বাজি রেখে এভাবেই চলতে থাকে এদেশবাসীর যুদ্ধ প্রক্রিয়া। ফলে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ পুনর্দখলের ফলে সৃষ্ট পাকিস্তানী শাসকদের আত্মপ্রসাদ ক্রমশ ম্লান হয়ে আসতে থাকে জুন মাসের শেষ দিকে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, আগস্ট একাত্তরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারতে ট্্েরনিং প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ছিল দশ হাজারেরও কম, যা পাক সেনাদের প্রতিপ হিসেবে নিতান্তই অপ্রতুল। এই অবস্থার পরিবর্তনের ল্েয সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে কুড়ি হাজার করে আরো ষাট হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনিং দেয়া হয় এবং বাংলাদেশ নিয়মিত বাহিনীর জন্যে গঠন করা হয় আরো নতুন তিনটি ব্যাটেলিয়ান। সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে চলমান অস্ত্রশস্ত্র সংকটের উন্নতি ঘটতে থাকে। ১৬ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ নৌ-কমান্ডো বাহিনীর পৃথিবীকে চমক লাগানো নৌবিধ্বংসী তৎপরতার অভাবনীয় সাফল্য মুক্তিযুদ্ধে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। ভারতের সহায়তায় ট্রেনিং প্রাপ্ত মাত্র ৩০০ জন নৌমুক্তিযোদ্ধা ১৫ আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে সর্বমোট ৫০,৮০০ টন জাহাজ নিমজ্জিত করেন, ৬৬,০৪০ টন জাহাজ তিগ্রস্ত করেন, এবং বেশ কিছুসংখ্যক নৌযান দখল করে নেন। এই দুঃসাহসিক অভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে পরিচিত।

প্রত্য তৎপরতার েেত্র তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা নভেম্বরের শুরুতে অনেক বেশি সক্রিয় ও আত্মবলে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। ল্য ও কৌশল সম্পর্কে যথোপযুক্ত পরিকল্পনার ভিত্তিতেই তাঁরা দখলদার সৈন্যদের চলাচল ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ হটাতে সম হন। এতে পাকিস্তানী বাহিনীর এদেশীয় সহযোগী রাজাকার বাহিনীর অপোকৃত দুর্বল ও সুবিধাবাদী অংশটি ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে থাকে, এবং এই অবস্থায় এই বাহিনী আয়তন বৃদ্ধির জন্যে দখলদার সামরিক শাসকরা জামায়াতে ইসলামী এবং বিহারী সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় গঠিত ‘আলবদর’ ও ‘আল শামস’ বাহিনীদ্বয়ের গোঁড়া সদস্যদের উপর অধিকতর নির্ভর করতে থাকে।

এই সকল নপুংসক রাজাকার স¤প্রদায় ছাড়াও পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে একতাবদ্ধ হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী মিযোবাহিনী। এই মঙ্গোল-প্রতিম চেহারার মিজোদের আবাস লুসাই পর্বতপ্রধান ভারতের মিযোরাম প্রদেশে। সরল স্বভাবের কিন্তু বিপথে চালিত এই মিযোদের কয়েকটি নিরাপদ ঘাঁটি ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে। এই ঘাঁটিগুলো পাকিস্তান ও চীনের দ্বারা প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে এমন পরিপূর্ণ হয়ে থাকত যে এই বৈরি ভূমিতে যে কোনো সম্ভাব্য ভারতীয় অনুপ্রবেশ তারা প্রতিরোধ করতে পারত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশস্থ পাকিস্তান প্যারা মিলিটারি ফোর্সেস-এর বেতনভূক্ত এই মিযোদের পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে মোতায়েন করা হয়। তারা চীনাদের দ্বারা গেরিলা যুদ্ধের প্রশিণ পেয়েছিল। তবুও পাক কর্তৃপ প্রতিটি পোস্টে মিযোদের পাশাপাশি বেলুচি, পাঠান ও পাঞ্জাবীদের ছোটো ছোটো ইউনিট রাখত এটা নিশ্চিত করার জন্যে যে তারা যেন সর্বশেষ লোক এবং সর্বশেষ রাউন্ড পর্যন্ত পাকিস্তানের স্বার্থে লড়াই করে।

এদিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ এলাকার জীবন্ত কিংবদন্তি কাদের সিদ্দিকী নবীন একদল সহকর্মী নিয়ে পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ পরিচালনায় এক বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টি করেন। টাইগার সিদ্দিকী নামে পরিচিত মাত্র ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ তাঁর অসাধারণ সাংগঠনিক দতা, আত্মবিশ্বাস, অভূতপূর্ব রণকৌশল এবং বিরল সামরিক প্রতিভাবলে গড়ে তোলেন সতেরো হাজার সুদ মুক্তিযোদ্ধা এবং সত্তর হাজার স্বেচ্ছাসেবকের এক বিরাট বাহিনী। ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ নামে খ্যাত এই দলটি কখনো অস্ত্র সাহায্য পাওয়ার আশায় বসে থাকেনি।
সর্বাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ও বহুগুণ শক্তিশালী পাক বাহিনীর উপর আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে অস্ত্র ছিনিয়ে এনে যুদ্ধে ব্যবহার করেছেন তাঁরা। এই বাহিনীর অসাধারণ রণনৈপুণ্যেই ডিসেম্বর মাসে মিত্রবাহিনী টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ মুক্ত এলাকা দিয়েই প্রথম ঢাকায় পৌঁছে।

আগস্ট মাসে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবের ফাঁসির ঘোষণা করেন ইয়াহিয়া। ইন্দিরা গান্ধীর প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হওয়ায় ইয়াহিয়া বিশ্ববাসীকে জানাতে বাধ্য হনÑশেখ মুজিব বেঁচে আছেন এবং কারাভ্যন্তরেই রয়েছেন। অন্যদিকে ১ কোটি শরণার্থীর ও মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য বঙ্গবাসীর যাবতীয় প্রয়োজনের যোগান দিতে গিয়ে মারাত্মক চাপের মুখে পড়ে ইন্দিরা সরকার। সংগঠিত এই সমস্যাবলির সমাধানকল্পে ইন্দিরা সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে মস্কো এবং ২৪ অক্টোবর থেকে তিন সপ্তাহের জন্যে বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও পশ্চিম জার্মানি ভ্রমণ করেন। কিন্তু বিশ্বনেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় কেমন ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে ভারতকেই প্রত্য যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেন। এভাবে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের শেষ ও চূড়ান্ত পর্যায়। ৩ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে পাকিস্তানী বিমানবাহিনী ভারতের ৭টি বিমান ঘাটিতে একযোগে হামলা চালালে অনিবার্য হয়ে যায় ভারতের সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতি। ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই পর্বের ২দিনের যুদ্ধেই বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এই সময় কূট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর বিশেষজ্ঞরা যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে যখন বুঝতে পারেন যে এই যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী, তখন নতুন ষড়যন্ত্রের প্রচেষ্টা চালাতে প্রয়াসী হন। এপ্রিল মাস থেকেই হোয়াইট হাউস পাকিস্তানকে অস্ত্র না দেয়ার বিবৃতি দিলেও, গোপনে এ প্রক্রিয়া সচল থাকে যুদ্ধের পুরোটা সময় জুড়ে।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫ডিসেম্বর বিশেষ উদ্যোগে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন ডাকে। সঙ্গে সঙ্গে এই অন্যায় অধিবেশনে ভেটো দেয় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন। পরদিন ৬ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের পে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেন ইন্দিয়া গান্ধী। এতে পাকিস্তানের সাথে ভারতের সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়, এবং ভারতে সকল প্রকার মার্কিন অর্থনৈতিক সহযোগিতাও বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যস্ত সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে আসলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত তার সমুচিত জবাব দেয়। ইতোমধ্যে রণাঙ্গণে শুরু হয়ে যায় পাকসেনাদের পলায়ন পর্ব। ৭ ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানীদের নিশ্চিত পরাজয়ের দিকে আগাতে থাকে যুদ্ধের পরিণতি।

১৯৭১-র মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন সরকারের বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকার পাশাপাশি স্মরণযোগ্য নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্বয়ারে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’র কথা। ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত এই কনসার্টে দর্শক ছিলেন ৪০ হাজার, এবং আয় হয়েছিল আড়াই লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের শিশুদের কাজে ব্যয় করার জন্যে জাতিসংঘের শিশু তহবিলে জমা দেয়া হয়। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানটি মার্কিন জনগণসহ বিশ্বাবাসীর সহানুভূতি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১০ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিনিয়র কমান্ডারদের অধীনে ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনীর এক যৌথ কমান্ড গড়ে তোলা হয়। যৌথ কমান্ডের পরিকল্পনা ছিল সম্ভাব্য বড়ো ঘাঁটিগুলোকে এড়িয়ে সর্বাপো কম য়তির মাধ্যমে ঢাকা দখল করা। এেেত্র এমন কৌশল অবলম্বন করা হয় যে, পাকিস্তানীরা ভুল করে ধারণা করেÑ চতুর্দিকে বিপুল শক্তি নিয়ে যৌথ কমান্ড এগিয়ে আসছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তানীপ সমগ্র দেশে তাদের সামরিক শক্তি ছড়িয়ে দেয়। এতে পাকিস্তানবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে। অবশ্যম্ভাবী পরাজয় বুঝতে পেরে পাকিস্তানী মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী মুক্তিবাহিনীর হাত থেকে রা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতরের যুদ্ধ বিরতির আবেদন জানায়। নিরাপত্তা পরিষদে যখন এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে ইয়াহিয়া জাতিসংঘকে জানান এ প্রস্তাব অনুমোদিত নয়। তাই তা নাকচ করা হোক। ইয়াহিয়ার এই মত পরিবর্তনে মার্কিন সপ্তম নৌবহর ছিল যুদ্ধ জয়ে আশার আলো। এই সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে চীন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি বিশ্বসংঘাতের আশঙ্কা দেখা দেয়।

ডিসেম্বর ১০ থেকে ডিসেম্বর ১৫, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্তিম লগ্ন। ততদিনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানীদের অবধারিত পরাজয়। এই আসন্ন পরাজয়ের কথা জেনেও পাকিস্তানী পশুরা ঘৃণ্য নৃশংসতা ও বিকৃত উল্লাসের সাথে হত্যা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কট্টরপন্থীদের সশস্ত্রবাহিনী ছিল ‘আলবদর’। গোস্টাপো স্টাইলের এই বাহিনী বিশিষ্ট বাংলাদেশীদের চিনিয়ে দেবার, ধরিয়ে দেবার এবং অবশেষে হত্যা করার ভার নেয়।
পাক মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নক্সার প্রণেতা। যাঁরা ধর্ম নিরপেতা, শোষণমুক্তি ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন তাঁরাই এই হত্যালীলার শিকার হয়েছেন। ‘জেনোসাইডের’ পাশাপাশি ‘এলিটোসাইডে’ অন্তর্ভুক্ত ছিলেনÑ বাংলাদেশের লেখক, সাংবাদিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী প্রমুখরা। ঢাকার এক বিরাট সংখ্যক বুদ্ধিজীবী ও উচ্চপদস্থ অফিসারদের গভর্নর হাউসে এক সভায় আমন্ত্রণ করে নির্বিচারে হত্যা করার একটি মহাপরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানীদের। পরবর্তীতে এই চক্রান্ত ফাঁস হয়ে যায়। বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে বাংলাদেশকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়াই ছিল ওদের এই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য।

একাত্তরের ইতিহাসে অত্যন্ত ঘটনাবহুল একটি দিন ১৪ ডিসেম্বর। ঢাকা শহর ও গুটিকয় ছোটো ছোটো এলাকা বাদে সারা দেশ তখন শত্র“ মুক্ত। আসন্ন যুদ্ধ ও সম্ভাব্য ধ্বংসের আশঙ্কায় থমথমে ঢাকা শহর। ঐদিনই ঢাকার গভর্নর হাউসের উপর আক্রমণ চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর ছয়টি মিগ ২১। এই ঘটনায় পাস্তিানের সর্বোচ্চ বেসামরিক প্রশাসন অর্থাৎ পরিষদ গভর্নর মালিক পদত্যাগ করেন। ইয়াহিয়া খানের চৈতন্যোদয় হয় সেদিন। ইস্টার্ন কমান্ডের সেনাপতি লে. জেনারেল নিয়াজীকে বার্তা পাঠানÑ পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের সহযোগীদের জীবনরার্থে যুদ্ধ বন্ধ করার সকল প্রয়োজনীয় পদপে নেয়ার। শর্তহীন আত্মসমর্পণের দিকে তাড়িত হয় পরাস্ত পরিশ্রান্ত ইস্টার্ন কমান্ড। ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভারত ও বাংলাদেশের মিলিত বাহিনী ঢাকা নগরীর উপকণ্ঠে সমবেত হয়। এরপর আসে ১৬ ডিসেম্বর। বাংলার ইতিহাসে এক হিরন্ময় মুহূর্ত।

১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ও ভারত-বাংলাদেশ যুগ্ম কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, বাংলাদেশ ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্র“প ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার, এবং ভারতের অপরাপর সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধিগণ ঢাকায় অবতরণ করেন। এর আধঘণ্টা পরেই ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের এক বিশাল হর্ষোৎফুল্ল জনতার উপস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ মিলিত বাহিনীর কাছে পাকিস্তানী সমরাধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজী বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল পাকিস্তানী বাহিনীর (৯৩,০০০) পে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বার করেন। জন্ম হয় একটি দেশের, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এখনো দেশ যুদ্ধ করে চলছে তার অভ্যন্তরীণ ও আভ্যন্তরীণ অপশক্তিসমূহের বিরুদ্ধে। কেননা, মুক্তির যেমন শেষ নেই, তেমনি মুক্তিযুদ্ধেরও শেষ হয়নি। ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ১২০০ বছরের স্থবিরতার শেষ ঘোষণা করেছে মাত্র।



সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×