somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেতিবাচকতা এবং ভাষার ব্যবহার

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আমার দ্বারা কি বিসিএস সম্ভব? প্রিলিতে যে কঠিন প্রশ্ন আসে! আবার প্রাইভেট জবে তো অনেক স্মার্ট হতে হয়, প্রচুর ইংলিশ জানতে হয়, আমিতো কিছুই পারিনা! আমার দ্বারা কিছুই হবে না’- কথা গুলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া একজন হতাশাগ্রস্থ ছাত্রের। পারিনা, পারবনা, হবেনা, সম্ভব না ইত্যাদি হাজারো নেতিবাচক শব্দের ব্যাবহার আমরা প্রায় শুনে থাকি। খুব সহজেই কি কি পারি না এর লিষ্ট আমরা করতে পারি, কিন্তু কি কি পারি তা বলতে গেলে থেমে যাই। মাথার মধ্যে এই যে নেতিবাচকতা, সে স¤পর্কেই আজকের এই লেখা।

নেতিবাচক চিন্তা বিভিন্নভাবে আমাদের ক্ষতি করে। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচকতা মারাত্বক হুমকি। বিষন্নতা, চাপ, এনগজাইটি, অপারগতা, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, কাজকর্মে অনীহা, নিজের স¤পর্কে খারাপ বা নিচু ধারনা, নিজেকে ছোট মনে হওয়া, হীনমন্যতায় ভোগা ইত্যাদি নানা রকম মানসিক অসুস্থতার অন্যতম কারণ মনের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া এই নিরব ঘাতক নেতিবাচকতা।

কিভাবে ডেভলাপ করে এটা? ছোটবেলায় পরিবার বা স্কুলে নিজের সম্মন্ধে নেতিবাচক কমেন্ট বা মুল্যায়ন, পর্যাপ্ত পরিমান প্রশংসা বা স্বীকৃতির অভাব ইত্যাদি কারণে আমাদের মধ্যে নেতিবাচকতার তৈরি হয়। আমাদের সমাজে, বিশেষকরে বাবা-মাদের মধ্যে নেতিবাচক মুল্যায়ন খুব বেশি দেখা যায়। আমার এক ছাত্রের মা ২০ টির মধ্যে ২ টি শব্দের বানান ভুল করার কারণে তার ৭ বছরের ছেলেকে অনেক বকাঝকা করল। অথচ সে যে ১৮ টি জটিল বানান পারল, তার জন্য একটি বারের জন্যও তাকে কোন প্রশংসা করলনা। ছোট্ট এই শিশুটির নিজের সম্মন্ধে কি ধারনা হবে?

মনোবিজ্ঞানীদের মতে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ মানসিক স্বাস্থের জন্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক মুল্যায়নের অনুপাত হওয়া উচিৎ ৫:১। অর্থাৎ প্রতিটি ১ টি নেতিবাচকতার বিপরীতে অন্তত ৫ টি ভালো মুল্যায়ন দরকার।

নেতিবাচক চিন্তার অন্যতম উৎস হল নেতিবাচক ভাষার ব্যাবহার। যার কথায় যত নেতিবাচক শব্দ, তার মধ্যে তত বেশি নেতিবাচকতা দেখা যায়। কিভাবে? নেতিবাচক শব্দের মাধ্যমে কোন কাজকে ব্যাখ্যা করলে সেটি অনেক বেশি কষ্টকর বা চাপমুলক মনে হবে। যেমন-কোন কাজকে আমরা যদি 'কঠিন' বা 'অসহনীয়' না বলে বলি 'চ্যালেনজিং' বা 'পরীক্ষা' তাহলে কাজটি নিঃসন্দেহে অতটা কঠিন লাগবেনা যতটা আমরা ভাবছিলাম। 'আমার দ্বারা এটা সম্ভব না', বা 'আমি কখনই এটা করতে পারবনা' ইত্যাদি বাক্য ব্যাবহারে বিফলতার সম্ভনাকেই বাড়িয়ে দেয়। নেতিবাচকভাবে না বলে বরং প্রশ্ন করা যেতে পারে। দুটি বাক্যের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করুনঃ 'আমি কখনই এটা করতে পারব না'
এবং 'আমি এটা কিভাবে করব?' কোনটি বেশি আশাব্যাঞ্জক?

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন আমাদের ব্যাবহৃত শব্দ এবং ভাষা আমাদের অভিজ্ঞতাকে রাঙিয়ে তোলে।

নিজের সাথে নিজের যে কথোপকথন তার মধ্যে নেতিবাচকতা থাকলে ভালো করার সম্ভাবনা কমে যায়। বিষন্নতা বা চাপ কমাতে সেলফ টক অনেক বেশি অবদান রাখে। হ্যা বোধক চিন্তা এবং কথা আমাদেরকে অনেক সাহায্য করবে নেতিবাচকতার চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে। সমষ্ঠিগতভাবেও আমরা প্রায় নেতিবাচক শব্দ ব্যাবহার করি। যেমন- আমরা অবহেলিত জাতি, তৃতীয় বিশ্ব , অলস বাঙ্গালী, আমাদের দ্বারা কখনই উন্নতি হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

নিজেই নিজেকে অবহেলিত না ভাবলে অন্যরা অবহেলা করার সুযোগ কি পাবে?

নেতিবাচকতা দূর করব কিভাবে? আপনার ব্যাবহৃত শব্দ এবং ভাষার প্রতি খেয়াল রাখুন। যখনই কোন নেতিবাচক চিন্তা আসে তা পরিক্ষা করে দেখুন, আদৌ তা সত্য কিনা যা আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একটি ডায়েরিতে লিখতেও পারেন দিনে কতবার এবং কতরকম নেতিবাচক চিন্তা আসছে। এরপর, ধীরে ধীরে এসব নেতিবাচকতাকে ইতিবাচক শব্দ, ভাষা এবং মুল্যায়নের মাধ্যমে দূর করার প্রয়াস চালাতে পারেন। যাদের মাথায় প্রতিনিয়ত নেতিবাচক চিন্তা আসছে, এর থেকে বের হতে কষ্ট হচ্ছে তারা একজন কাউন্সেলিং বা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর সহযোগিতা নিতে পারেন।



সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৩০
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×