somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবান্ন এসেছে দ্বারে

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নবান্ন এসেছে দ্বারে
জেগেছে প্রাণ বাংলার ঘরে।


কিন্তু সত্যিই কি নবান্নের আগমনে আগের মতো প্রাণ জাগে বাংলার ঘরে ঘরে ? প্রশ্নটার উত্তর খুঁজছি ইট-পাথরের বদ্ধ দেয়ালে বসে। ইচ্ছে করে ঘুরে আসি বাংলার পথ-ঘাট-প্রান্তর ধরে। দেখে আসি কেমন করে জেগেছে ওরা নবান্নের আগমনে। খুঁজে আসি আমার ফেলে আসা অতীতকে। সেখানে আমার মা-চাচী-দাদীদের নবান্নের ব্যস্ত দিনগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে আসি আর একবার। যদি ছিঁটেফোটাও পাওয়া যায় সেই পিঠে-পায়েস-পুলির গন্ধমাখা দিনগুলোর রেশ!

কিন্তু আমার ইচ্ছেগুলো হুটোপুটি খেয়ে থমকে যায় চার দেয়ালে মাঝে। সেখানে নবান্ন কোথায় ? নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধমাখা পিঠে-পায়েসের অস্তিত্ব সেখান থেকে সুদূর পরাহত। অথচ এটা অগ্রহায়ন মাস। নতুন ধানের সুধাগন্ধে কৃষকের আঙিনা ভরপুর। কিষাণ বধূর ফুরসত নেই এতটুকু। একদিকে ধানা কাটা-মাড়াই, অন্যদিকে সিদ্ধ করে শুকিয়ে গোলায় তোলা। এরই মধ্যে নতুন চালে তৈরী পিঠা-পুলি খাবার সময়ও যে যায় যায় ! কোনটা রেখে কোনটা করবে কিষাণ বধূ? তাই তো দেখতাম এমন নবান্নের মৌসুমে মা-চাচীদের ব্যস্ততা বেড়ে যেত বহুগুণে। ধান মাড়াই এর জন্য ঘরে-বাইরে বাড়তি কাজের মানুষ রাখা হতো। পুরুষরা সাহায্য করত ধান কাটা আর মাড়াই এ। অন্যদিকে মহিলারা সাহায্য করত ধান সিদ্ধ করা থেকে শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে।

আজ গ্রাম বাংলার এই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নবান্ন তার মৌলিক রূপ হারিয়ে ফেলেছে। আগে যেমন একটা জমির ধান কাটার জন্য সারা দিনমানের হিসেবে কয়েকজন কামলা নেয়া হতো। এখন আর তার দরকার পড়েনা। ধান কাটার মেশিন সেই স্থান দখল করে নিয়েছে। কাজেই সারি বেঁধে কৃষকের ধান কাটার দৃশ্য আজ আর সচরাচর চোখে পড়েনা। ধান কাটার পর বোঝা বেঁধে মাথায় করে সেই ধান বাড়ি নিয়ে যেত কৃষক। উঠোনে মধ্যরাত অবধি গরু দিয়ে মাড়াই চলত সেই ধানের। আজ সেই দৃশ্যও বিলীন। ধান মাড়াই মেশিনে মুহূর্তেই হয়ে যায় ধান মাড়াই। কাজেই চাঁদনী রাতে থরো থরো শীতের কাঁপুনি উপেক্ষা করে উঠোনে বসে গরু দিয়ে ধান মাড়াই এর দৃশ্য দেখা আজ আর হয়ে উঠেনা অনেকের। অগ্রহায়নের ভরা মৌসুমে কৃষকের আঙিনায় যদি এই দৃশ্যপটগুলো না থাকে তাহলে সেখানে নবান্নের আগমনে নতুন করে প্রাণ জাগে কি করে সে হিসেব আজ আমার কাছে বড় বেশী গরমিলে মনে হয়।

যাদের শৈশব কেটেছে বাংলার কোন এক গ্রামে এবং যারা আমার মতো শহরের ইট-পাথরের দেয়ালে বন্দী হয়ে সেই শৈশবকে খোঁজে ফিরেন, তারাই কেবল বুঝবেন কেন আমি আজ এই লেখার অবতারণা করলাম। গ্রাম থেকে দূরে থাকি বলেই বোধহয় আমার শৈশবের গ্রামীণ জীবনটা আজও বড় বেশী জীবন্ত হয়ে আছে আমার ভিতর। তখন গ্রামে অগ্রহায়ন মাস আসত উৎসবমুখর আমেজ নিয়ে। এখনও আমার চোখের সামনে ভাসছে সেইসব দিনগুলো। মাড়াই এর পর রাতের বেলা উঠোনে ধানের বিশাল এক স্তূপ জমে যেত। সেই ধানের মিষ্টি গন্ধে চারপাশ মৌ মৌ করত। চাঁদের বাঁধভাঙা রূপালি আলো সোনালী ধানের উপর পড়ে অদ্ভূত এক মোহময় দৃশ্যপট তৈরী করত। আজও চোখ বুজলে সেই দৃশ্যপট চোখের সামনে ভেসে উঠে। অন্যদিকে উঠোনের কোণে বড় চুলায় কড়াই বসিয়ে ধান সিদ্ধ করার কাজ চলত। ক্রমে ছোট হয়ে আসত সোনালী ধানের স্তূপ। পাশেই তৈরী হতো সিদ্ধ করা ধানের নতুন আর একটি স্তূপ।। রাত প্রায় শেষের দিকে শেষ হয়ে আসত ধান সিদ্ধ করার কাজ। সকালে রোদ উঠার সাথে সাথে সেই ধান ছড়িয়ে দেয়া হতো উঠোনে।

যেদিন বাড়িতে পিঠা তৈরী হতো কিংবা মুড়ি ভাজা হতো সেদিন যেন আর এক উৎসব। বাড়ির সবাই একইদিনে এগুলো করার প্রস্তুতি নিত। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর শুরু হতো মুড়ি ভাজা কিংবা পিঠা তৈরীর কাজ। একে একে সবারগুলো করতে করতে রাত প্রায় শেষ হয়ে যেত। পাশাপাশি চলত কত গল্প ! আমরা ছোটরা বসে থাকতে থাকতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়তাম। পিঠা বানানো শেষ হলে আম্মা আমাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন পিঠা খাওয়ার জন্য। আমরা ঘুম থেকে উঠে পিঠা খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়তাম। পরদিন সকালে পিঠা-পুলির নাস্তা জমে উঠত সবার সাথে।

ব্যস্ত জীবনের বর্তমান দৃশ্যপট থেকে সেই দিনগুলো আজ অতীত হয়ে গেছে। সেই গ্রামও আজ অনেক দূরের গন্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মা-চাচী-দাদীদেরও কেউ আর বেঁচে নেই। বেঁচে আছে শুধু স্মৃতি, থাকবেও চিরদিন। তাই আজ নবান্নের আগমনে সেই স্মৃতির জাবর কাটছি আমি একা একা। ইচ্ছেপাখি বার বার উড়ে যেতে চাইছে দূরে বহুদূরে, সেইসব দিনগুলোতে। কিন্তু সোনার খাঁচার সেইসব দিনগুলো কি আদৌ ফিরে পাওয়া সম্ভব ? আজকের নবান্নের আগমনে আমার গ্রাম বাংলা কি আগের মতো জেগে উঠেছে ?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×