somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডলারের দর ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১০ টাকা। এক ডলারের জন্য এখন ৮০ টাকার বেশি গুনতে হচ্ছে।

এক সপ্তাহেই টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২ টাকা।

বৃহস্পতিবার সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংক প্রতি ডলার বিক্রি করেছে ৮০ টাকায়। আর কিনেছে ৭৯ টাকা দরে। বেসরকারি উত্তরা ব্যাংক ৮০ টাকা ৪৫ পয়সায় ডলার বিক্রি করেছে। আর কিনেছে ৭৯ টাকা ৪৫ পয়সায়।

বিদেশি ব্যাংক এইচএসবিসি ৭৯ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে। আর বিক্রি করেছে ৮০ টাকা ৫০ পয়সায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক মনে করছেন।

উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সমস্যা। অর্থনীতিতে যে সব ক্ষেত্রে সংকট চলছে, তার মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাওয়া একটি।”

এ সংকট উত্তরণে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং সরকারের যে সব বৈদেশিক সাহায্য পাইপলাইনে আটকে আছে তা দ্রুত ছাড় করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া নিয়ে দেশের অর্থনীতিবিদদের মতো অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও উদ্বিগ্ন। তিনি বলছেন, ডলারের বিনিময় হার ৬৯ টাকায় বেঁধে রাখার চেষ্টা ভুল ছিল।

গত মাসে তিনি বলেছিলেন, “কিছুদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এর ফলে আমদানি ব্যয়ের পাশাপাশি রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। তবে মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে আমাদের (সরকার) একট সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।

“বেশ কিছু দিন আমরা ডলারের দাম ৬৯ টাকায় বেঁধে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। আমাদের ওই সিদ্ধান্তই ভুল ছিল। আমরা যদি তখন ওই ব্যবস্থা না নিতাম, তাহলে এখন ডলারের দাম হঠাৎ করে এতো বেশি বাড়তো না। আস্তে আস্তে বাড়তো। তখন সহনীয় মনে হতো।”

ডলারের দাম বাড়ায় সবচেয়ে খুশি হন যারা সেই তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনও ডলারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় উদ্বিগ্ন।

বৃহস্পতিবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিদিনই ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে ডলারের দাম ১০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে।”

“অনেকে মনে করতে পারেন আমরা লাভবান হচ্ছি। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে- এটা অর্থনীতির জন্য মোটেই ভালো নয়,” যোগ করেন তিনি।

ডলারের দাম বেশি হলে রপ্তানিকারকদের টাকার অংকে বেশি আয় হয়।

বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএফইডিএ) গত ১০ অক্টোবর জরুরি বৈঠক করে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। ওই বৈঠকের পর বিএএফইডিএ-এর চেয়ারম্যান ও জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আমিনুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আমদানি পর্যায়ে (এলসি বা ঋণপত্র খোলা) প্রতি ডলারের দর কোনো অবস্থাতেই ৭৬ টাকার বেশি হবে না। আর রেমিটেন্স ও রপ্তানির ক্ষেত্রে তা ৭৫ টাকার বেশি হবে না।

ডিলারদের ওই পদক্ষেপের পরও ডলারের বিনিময় হার বাড়তেই থাকে। এমনকি গত কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) বাড়ার পরও ডলারের দর কমেনি, উল্টো বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রতি ডলার ৭০ টাকা ৫৪ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। চলতি বছরের (২০১১ সাল) ৩০ জুন প্রতি ডলারের দর ছিল ৭৪ টাকা ২৩ পয়সা।

৩০ নভেম্বর ডলার বিক্রি হয়েছে ৭৬ টাকা ৮৫ পয়সায়।

গত ২ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৭৮ টাকায়।

দর নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও ব্যাংকগুলো কেন বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করছে- এ প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএএফইডিএর এক কর্মকর্তা বলেন, “আসলে ১০ অক্টোবরের বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ডলার কেনাবেচার ব্যবধান যাতে এক টাকার বেশি না হয়। ডলারের দর বেঁধে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”

টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার সমন্বয়ের জন্য ২০০৩ সালে দেশে ভাসমান মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা চালু হয়। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই ডলার কেনাবেচার দর ঠিক করে দিত। ব্যাংকগুলো ওই দরেই ডলার কেনাবেচা করতো।

কিন্তু ২০০৯ ও ২০১০ সালে ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে অলিখিত হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দুই বছর টাকার বিপরীতে প্রতি ডলার ৬৯ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হয়। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডলারের দাম আবার বাড়তে থাকে।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, “রপ্তানি আয়ে মোটামুটি প্রবৃদ্ধি হলেও রেমিটেন্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি খুব একট ভালো না। অন্যদিকে বৈদেশিক সাহায্যের প্রবাহও নিন্মমুখি। সে কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চাপের মুখে পড়েছে। আর রিজার্ভে চাপের কারণেই ডলারের দাম বাড়ছে।”

“যে করেই হোক রিজার্ভ বাড়াতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে হবে। রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে বৈদেশিক সাহায্য। তা নাহলে সংকট আরো বাড়তে পারে।”

আন্ডার ও অভার ইনভয়েসিংয়ের (আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশি-কম মূল্য দেখানো) মাধ্যমে ডলার পাচার হচ্ছে কি না- সে ব্যাপারে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এই উপদেষ্টা।

টাকার বিপরীতে ডলারের অব্যাহত দরবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি বাড়ার অন্যতম কারণ বলেও মনে করেন মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “টাকার বিপরীতে ডলারের দর বৃদ্ধি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমাদের অর্থনীতি আমদানিনির্ভর। ডলারের দর বাড়লে আমদানি খরচও বেশি পড়ে। বেড়ে যায় পণ্যমূল্য। বাড়ে মূল্যস্ফীতিও।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৯৩০ কোটি (৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন) ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেমিটেন্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশের কিছু বেশি। চার মাসে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

অন্যদিকে এই চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১০-১১ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিলো ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। আর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সর্বশেষ নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিলো ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে ধরা হলেও সরকারের এই লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে বলেই মনে করেন আজিজুল ইসলাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×