somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ, ভারত, কে কার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে? (রিপোষ্ট)

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষে মানুষে যখন বন্ধুত্ব হয় তখন বন্ধুতার দাবীতে একজন অপরজনের কাছ থেকে সব ধরনের সাহায্য, সহযোগীতা আশা করে এবং ক্ষেত্র বিশেষে পেয়েও থাকে। অনেক সময় নিজের ক্ষতি করেও বন্ধুকে সহযোগীতা করতে হয়, এটাই বন্ধুত্বের দাবী। এর জন্য সহযোগীতা গ্রহণকারী বন্ধুকে সহযোগীতা প্রদানকারী বন্ধুর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকতে হয় না। বন্ধুত্বের ডিকশনারীতে কৃতজ্ঞতা শব্দটি নেই বরং আছে ভালবাসা। তারপরও বিবেকের টানে বন্ধু বন্ধুর কাছে কৃতজ্ঞ থাকে, তাতে দোষের কিছু নেই অথবা এখানে অন্যদের কিছু বলারও নেই।

দেশে দেশে বন্ধুত্বের ব্যাপারটি মানুষে মানুষে বন্ধুত্বের মতো নয়। এখানে বন্ধুত্ব তৈরী হয় পারস্পরিক সাধারন-স্বার্থগুলিকে বাস্তবায়নের লক্ষকে সামনে রেখে। নিছক বন্ধুত্ব রক্ষার স্বার্থে কখনো দেশের স্বার্থ ছাড় দেয়া হয় না। মানুষে মানুষে বন্ধুত্বের মতো এখানে কেউ কারো কাছে কৃতজ্ঞ থাকার প্রশ্ন আসেনা। নিজ দেশের স্বার্থ জনাঞ্জলি দিয়ে কখনো কোন রাষ্ট্র নায়ক বন্ধুদেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেন না। যদি করেন তবে বুঝতে হবে 'ডাল মে কুছ কালা হ্যায়'।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহযোগীতা তাই নিছক দয়া বা করুনা বা বন্ধুর জন্য নিঃস্বার্থ কোন আত্মত্যাগ নয়। এর পিছনে রয়েছে উভয় দেশের মানুষের সমান স্বার্থ। বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজন ছিল স্বাধীনতার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার, পাকিস্তানি শোষন-নিপিড়ন থেকে রক্ষা পাওয়ার অপরদিকে ভারতের প্রয়োজন ছিল চিরশত্রু, প্রতিদ্বন্দি প্রতিবেশী রাষ্ট্রটিকে সামরিক, রাজনৈতীক ও অর্থনৈতীক দিক দিয়ে দুর্বল করে দেয়া। ভারতের পূর্বপ্রান্তে পাকিস্তানের অবস্থান মানেই তা আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরাকে ভারতীয় অবকাঠামোতে ধরে রাখার ক্ষেত্রে অন্তরায়। ভারত এখন সেই শঙ্কামুক্ত। পূর্বাংশ নিয়ে ভারতের দূঃশ্চিন্তা দুর করে দিয়েছে বাংলাদেশের উদয়। সামরিক খাতে প্রতিবছর বিলিয়ন ডলারের সাশ্রয় হচ্ছে। আরো বিভিন্ন ভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারতকে উপকৃত করে চলেছে, যা সামরিক ও রাজনৈতীক বিশ্লেষকরা আরো ভালো ও বিস্তারিত বলতে পারবেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে, কৃতজ্ঞতাপাশে ভারত-বাংলাদেশ উভয়ই উভয়কে বেঁধেছে। এখানে বাংলাদেশকে শুধু একতরফা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যেতে হবে, ভারতকে উপরের আসনে বসিয়ে পূজা দিতে হবে, হীনমন্যতায় ভুগতে হবে, ভারতের অন্যায় কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করা যাবেনা এমনটি নয়।

তারপরও দেখা গেছে বাংলাদেশের মানুষ ভারতের প্রতি বিগত চল্লিশ বছর যাবৎ একতরফা কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে গেছে। ভারতের কোন অন্যায়েরই কখনো কোন জোরাল প্রতিবাদ ওঠেনি। ফারাক্কা, বেরুবাড়ী, তিনবিঘা, টিপাইমুখ ড্যাম, সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া, সীমান্তে মানুষ হত্যা, শান্তিবাহীনিকে মদত প্রদান, ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষকে অপদস্ত করা, ভারতীয় কুটনীতিকদের কর্তৃক বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা ইত্যদি বিষয় বাংলাদেশের মানুষ ধৈর্যের সাথে সহ্য করে গেছে, শুধু মাত্র কৃতজ্ঞতাবোধের কারণে। আর আমাদেরদেশের কিছু সংখ্যক মতলববাজ এইসুযোগে ভারতের পক্ষনিয়ে আমাদেরকে সবসময় কৃতজ্ঞ থাকার জন্য চোখরাঙানি দিয়ে চলেছে।

স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে এই বিষয়টি নতুন করে ভেবে দেখতে হবে। ভেবে দেখতে হবে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সম্পর্ক একতরফা কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ হয়ে চলতে পারে কিনা? ভেবে দেখতে হবে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিকাশের লক্ষে আমরা আর এই বোঝা বয়ে বেড়াতে রাজী অছি কিনা? মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া লক্ষ বাংলাদেশীর সাথে আমরা অবশ্যই শ্রদ্ধার সাথে চিরকাল স্মরণ করবো ভারতীয় সৈনিক যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের পাসে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছিলেন এবং জীবন দিয়েছিলেন। আমরা অবশ্যই স্মরণ করবো সেই সব ভারতীয় বীর যোদ্ধাদের এবং রাজনীতিক, কুটনীতিক, বুদ্ধিজীবীদের যারা তাদের বীরত্ব ও মেধা দ্বারা বাংলাদেশের বিজয়কে তরান্বিত করতে সাহায্য করেছেন। আমরা চিরদিন স্মরণ করবো পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার জনগনকে যারা প্রায় দেড়কোটি বাঙালি শরণার্থিকে পরম মমতায় আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। তারপরও আমাদের ভেবে দেখতে হবে, আমাদের এই কৃতজ্ঞতাবোধকে দেশের ও দেশের মানুষের স্বার্থকে ডিঙিয়ে যেতে দেওয়া কতটুকু সঠিক হবে।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×