somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্যারোডি বিষয়ক

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘আমাদের পরবর্তী পাঠক সংখ্যার বিষয় প্যারোডি। পাঠক/পাঠিকারা ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, বিজ্ঞাপন, গান, নাটক, সিনেমা ইত্যাদির প্যারোডি করে পাঠান....’- নিয়মিত যে দৈনিক পত্রিকাটি বাসায় রাখা হয়, ঐ দৈনিকের পাঠকদের পাঠানো লেখা নিয়ে সাপ্তাহিক আয়োজনের পাতায় এরকম একটা ঘোষণা পড়ে বাসনা জেগে উঠলো। আমি আবার লেখালেখি-অন্তপ্রাণ। তবে, অবশ্যই বাস্তবতা-বিবর্জিত নই। সাহিত্য-পাতা বা ঈদ সংখ্যায় আমি যে একদমই বাঞ্ছিত নই, আমার জন্য অ-বাঞ্ছিত এ সত্যটি কষ্ট হলেও মেনে নিই। কিন্তু তাতে আমার মনোবাঞ্ছনা ও উৎসাহের খামতি হয় না। দৈনিকের পাঠক-মেলা থেকে শুরু করে খ্যাত-অখ্যাত সাপ্তাহিক-মাসিক পত্রিকার বিশেষ পাঠক সংখ্যাগুলোতে আমি নিয়মিত প্রদায়ক। অর্থাৎ কালি-কলম, খাম-ডাকটিকিট খরচ করে আমি নিয়মিত ঐসব সংখ্যার জন্য লেখা ‘প্রদান’ করি। যদিও ঐ সব পত্রিকা-কর্তৃপক্ষ ‘গ্রহণে’র প্রমাণ দেন বেশ অনিয়মিত। তবুও, ৬৭টি লেখা পাঠানোর বিপরীতে ৩ টি ছাপার হরফে দেখার পরও আমি হতোদ্যম হই না। উদ্যমী রবার্ট ব্র“সের গল্পটা আমি প্রতি সপ্তাহেই দুই বার করে পড়ি। যাই হোক, প্যারোডি লেখার জন্য আমার প্রাণ আই-ঢাই করে উঠলো। সিদ্ধান্ত নিলাম, ‘মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার’ - প্যারোডি করব তো ‘সিনেমা’র-ই। জানা-অজানা হিন্দি ছবি তো বটেই, হলিউডি ‘টারমিনেটর’ পর্যন্ত এফডিসিতে এসে প্যারোডি হয়ে গেল, তাহলে আমার আর কি দোষ? ‘দশজনে করে যাহা, আমিও করিব তাহা’। প্যারোডির জন্য বিশ্বখ্যাত সিনেমা ‘টাইটানিক’কেই বেছে নিলাম। নদীমাতৃক বাংলাদেশে বাস্তবতার ছোঁয়ায় জীবনঘনিষ্ঠ প্যারোডি অর্থাৎ ‘রিমেক’ হিসেবে লঞ্চডুবি ঘটাবো ঠিক করলাম। ডুবোচরে ঘষা খেয়ে পতনোন্মুখ জলযান থেকে পিছলে পড়ে প্রাণ যাওয়ার পর নায়কের দেহ নদীর জলে ভাসতে থাকবে, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক - ‘প্রেমের মরা জলে ডোবে নাআআ’। বাংলার ‘কেট উইনস্লেট’ কে মহানুভব কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সাদা-কালো অথবা রঙিন ছাগল পাইয়ে দিব কিনা, যখন চিন্তা করছি, তখনই মনে পড়লো ঘোষণার পরবর্তী অংশ- ‘.... অবশ্যই মূল লেখা এবং আপনার প্যারোডি করা লেখা একসঙ্গে পাঠাতে হবে..’- ‘মূল লেখা’ মানে কি চিত্রনাট্যের পান্ডুলিপি? ‘টাইটানিক’-এর সিডি-ডিভিডি চাইলেও পাইরেটেড কয়েক কপি নীলক্ষেত মোড় থেকে যোগাড় করা যায়, কিন্তু পান্ডুলিপি যোগাড় করতে হলে তো আমাকে ক্যামেরন সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ, সাক্ষাৎ ইত্যাদি মিলে হিসাব করে দেখলাম, সব কাজ শেষ করে লেখা জমা দেয়ার সর্বশেষ তারিখের মধ্যে দেশে প্রত্যাবর্তন অসম্ভবই বটে।
সুতরাং, ঐ পরিকল্পনা বাদ দিয়ে সম্ভাব্য হিসেবে বাংলা ছবির কথা যখন চিন্তা করছি, এ সময় এক ঘনিষ্ঠ শুভাকাঙ্খী পিঠে চাটি মেরে বললেন, ‘বে-আক্কেল, তারা পাঠকদের সাথে একটুখানি রঙ্গ করেছে, আর তুমি তাকেই সিরিয়াসলি নিয়েছ? সিনেমার পান্ডুলিপি প্রকাশ করলে ঐ দৈনিকের কয় সংখ্যা ছাপাতে হবে, সে হিসাব আছে?’
আমি সঠিক হিসাব করতে ব্যর্থ হলাম। সিনেমার সাথে সাথে নাটক, উপন্যাসেরও আকার-আয়তনের কথা চিন্তা করে পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদকের প্রকৃত রগড় বুঝতে পারলাম। ছোট গল্পের কথা মাথায় এলো, কিন্তু রবীঠাকুরের ছোট গল্পের সাইজও যে সা¤প্রতিককালে ঈদসংখ্যাগুলোতে ছাপা হওয়া উপন্যাসগুলোর সম-আয়তনের। গানেও তো সমস্যা। সুর সংযোজন না করে কিভাবে গানের প্যারোডি করবো, তা ভেবে ব্যাকুল হলেও সমস্যার কোন কূল-কিনারা করতে পারলাম না। ‘এক পায়ে নুপুর তোমার, অন্য পা খালি’ - এটাকে না হয় বানালাম - ‘সামনে করি স্তুতি তোমার, পিছে দেই গালি’। কিন্তু, সবাই যদি মূল গানটা না শুনে থাকেন, তারা কিভাবে প্যারোডি গাইবেন? মালিক-কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই পত্রিকার সাথে মূল গানের এক কপি করে সিডি দিয়ে দেবে না!
বিজ্ঞাপনের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি অধুনা এর ‘মূল লেখা’ বলতে কিছু নেই। আইডিয়া যা, তা থাকে নির্মাতার মাথায়, কিছুই নেই খাতায়। নির্মাতাদের নাটকের মতোই তাদের বিজ্ঞাপনও ‘ইনস্ট্যান্ট’। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যা মনে আসবে, তাতেই তৈরী হয়ে যাবে নাটক-বিজ্ঞাপন। অবশেষে তাই প্যারোডির সবচেয়ে সহজ রাস্তাটি ধরলাম- ‘কবিতা’। ‘কবিতা’ বলতেই মাথায় চট করে চলে এলো জাতীয় কবির রচনাটি। তবে, এটাকে কবিতা বলে, না ছড়া, তা নিয়ে আবার দ্বন্দ্বে পড়লাম। বাসায় বাংলা-টু-বাংলা অভিধান খুঁজে পেলাম না যে সংজ্ঞাটা দেখে নেব। শেষে নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিলাম, এই বিষয়ে গবেষণা করা তো আমার কাজ না। বিভাগীয় সম্পাদক ছড়া অংশে ছাপাবেন না কবিতা অংশে, তার মর্জি। আমি বানালাম-
‘কান না দিয়ে মায়ের হাঁকাহাঁকি
সবার পরে বিছানা ছেড়ে উঠবো আমি ডাকি।
সূয্যি জাগার অনেক পরে উঠবো আমি জেগে
দুপুর কখন গড়িয়ে গেল!- মা বলবেন রেগে।
বলবো হেসে, আলসে আমি, ঘুমিয়ে না হয় থাকি
সূয্যি মাথার উপর এলেই উঠতে হবে নাকি?
আমি যদি না জাগি মা, দিন তো কেটে যাবে।
সূয্যি কখন আটকে ছিল, কার জন্যে, কবে?’
নিজস্ব সাহিত্য সৃষ্টিতে বিমোহিত হয়ে ‘একালের শিশুর সাধ’ বা ‘অলস আমি’ নাম দিয়ে এটাই পাঠিয়ে দেব স্থির করলাম। কিন্তু এখন আরেক সমস্যা মাথাচাড়া দিল। কোন ক্লাসে এই কবিতাটি পড়েছিলাম মনে পড়ছে না। ধরা যাক, প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর বইয়ে কবিতাটি পাওয়া গেল, ‘মূল লেখা’ পাঠাবো কিভাবে, বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে এর সাথে দিয়ে দেব? নাকি বইটার ভেতর আমার লেখাটি ভরে কুরিয়ার করে দেব? ধু-র , এইসব সংবাদপত্র কেন যে পাঠকদের সাথে এরকম রঙ্গ করে? কোন কিছুই পরিষ্কার করে উল্লেখ করে না। সৃষ্টির অপচয়-আশংকায় উদ্বিগ্ন আমি সংবাদপত্র ও তার সম্পাদকের মুন্ডুপাত করতে লাগলাম।

২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×