somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাত-পা বেঁধে দুরন্ত ষাঁড়ের সামনে দাঁড়ানো কতটা সমীচীন

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[এ মাসেই ১৪টি সিনেমা হলে মুক্তি পাবে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র ‘জোর’। মুক্তির জন্য প্রস্তুত আরো দুটি ছবি, ‘বদলা’ ও ‘সংগ্রাম’। হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে আরো ৯টি ছবি রয়েছে সেন্সরের অপোয়। এই ইস্যুতে সারা দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিও অনেক। পুরনো এই ইস্যু নিয়ে নতুন করে লিখেছেন দাউদ হোসাইন রনি]

সত্যি বলতে মূল ধারার চলচ্চিত্র ‘কিছু’ হচ্ছে না। প্রতি সপ্তাহেই আশা নিয়ে হলে যায় কিছু দর্শক, ফিরে আসে দ্বিগুণ নিরাশ হয়ে। দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ছবির উৎপাদনও কমে গেছে। দেখুন না, এ বছর মাত্র ৪৫টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। বছরে শতাধিক ছবি নির্মাণের রেকর্ড আছে যে ইন্ডাস্ট্রির, সেখানে এখন লগ্নিকারীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নতুন ছবি নির্মাণে সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা। হলের মালিকরাও হল ভেঙে নতুন ব্যবসা খুলে বসেছেন। মেধাশূন্যতা, পাইরেসি, রুচিহীনতাÑ; চারদিকে সিনেমাকেন্দ্রিক কেবলই দুঃসংবাদ। এত হতাশার বিপরীতে আমাদের জন্য একটাই পথ খোলা, সেটা হলো ঘুরে দাঁড়ানো। আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিও। সিদ্ধান্ত নিলাম, ভারতীয় ছবি এ দেশে চালাব। তাতে হল মালিকদের ঘরে অন্তত কিছু কাঁচা টাকা উঠবে। পুঁজিবাজার যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের কাছে আবেগের কোনো দাম নেই। ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’, যোগ্যতমই টিকে থাকবে। প্রতিযোগিতায় যেতে এখানকার কারোই আপত্তি থাকার কথা না। প্রতিযোগিতা হয় বাঘে-বাঘে। কিন্তু বাঘ-হরিণের অসম প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেওয়ার কী মানে থাকতে পারে! ১৬ কোটি জনগণের জন্য নির্মিত সিনেমা প্রতিযোগিতা করবে ৩০০ কোটি [উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দর্শক] দর্শকের সিনেমার সঙ্গে, এটা হয় নাকি! বিপরীত কথাও আছে, প্রতিযোগিতা থাকলে ভালো কিছু তৈরির সম্ভাবনা থাকে। ৪৫ বছর তো এই প্রতিযোগিতায় পড়তে হয়নি বাংলাদেশি সিনেমাকে, এতে কি এমন ‘রসগোল্লা’ বানিয়েছে ঢাকার নির্মাতারা? কথা সত্য, কিন্তু প্রতিযোগিতায় নামার জন্য যোগ্যতা তো থাকা চাই। বিগত ৪৫ বছর ধরে এফডিসিতে যেসব যন্ত্রপাতি আছে, এগুলো কেবল জাদুঘরেই মানায়। এসব আদিম ও অপ্রতুল যন্ত্রপাতি দিয়ে এখনো যারা সিনেমা বানানোর দুঃসাহস দেখায় [হোক সেটা অখাদ্য], তাদের স্যালুট করা উচিত। বিশ্বায়নের এ যুগে এখন তো প্রত্যেক সংস্কৃতিই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। আজ হোক কাল হোক প্রতিযোগিতায় আমাদের পড়তে হবেই। প্রতিযোগিতায় নামানোর আগে একটা সুযোগ অন্তত দেওয়া উচিত। এফডিসিকে বেসরকারিকরণ করা যেত। নামেই চলচ্চিত্রকে ইন্ডাস্ট্রি বলা হয়, অথচ এই খাতে কোনো ব্যাংক-ঋণ দেওয়া হয় না। বারবার অর্থ মন্ত্রণালয় কালো টাকা সাদা করার মিশন হাতে নেয়। অথচ একবারও বলা হয় না, চলচ্চিত্র একটা শিল্পমাধ্যম, যারা এই খাতে বিনিয়োগ করবেন তাঁদের লগ্নিকৃত অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হবে না। সবচেয়ে বড় কথা, আজ অবধি একটা ফিল্ম ইনস্টিটিউট তৈরি হলো না! এই সুবিধাগুলো দেওয়ার পর যদি ঢাকাই নির্মাতারা ব্যর্থ হতেন, তখন আমরা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। সে রকম কিছু না করে এভাবে হাত-পা বেঁধে দুরন্ত ষাঁড়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া কতটা সমীচীন?
হল মালিকদের কাছে সিনেমাটা কেবলই পণ্য। অনেকেই বলতে পারেন, ভারত থেকে চাল-ডাল-পেঁয়াজ আমদানি হতে পারে, সিনেমা হলে তি কী? কোনো তি নেই। সূক্ষ্ম একটা পার্থক্য আছে, ভারতীয় তেল-নুন খেলে আমাদের চেহারা সালমান খান-ঐশ্বরিয়া রাইয়ের মতো হয়ে যায় না, কিন্তু ভারতীয় সিনেমা দেখে তরুণ প্রজন্মš§ ফেসবুকে হিন্দিতে স্ট্যাটাস দেয়।
বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে কোনো চলচ্চিত্রই নির্মিত হয় না। হলিউড-বলিউডের সিনেমাই তাদের বিনোদনের মাধ্যম। তবে কি আমরাও চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ করে দিয়ে কেবলই দর্শক হয়ে যাব? শরীর থেকে ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ’ ট্যাগ খুলে এগিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের সিনেমাও হতে পারত অন্যতম সহায়ক শক্তি। আমদানি নয়, বরং উৎপাদনে মনোযোগী হলেই আমরা একধাপ এগিয়ে যেতে পারতাম।
ভারতীয় ছবির ব্যাপারে বিদ্বেষ নেই, কিন্তু নিজেদের ছবির যত্নœ নেওয়া উচিত। বিশ্বায়নের এ যুগে আমরা সব দেশের সিনেমাই দেখব। যার যেটা দেখা দরকার, স্যাটেলাইট বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সে কিন্তু সেটা দেখছেই। ঢাকার হলে নিয়মিতই হলিউডের সিনেমা মুক্তি পায়। এই ছবিগুলো কখনোই আমাদের দেশীয় ছবির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়নি। ৪৫ বছর আগে উপমহাদেশীয় ছবির আমদানি বন্ধ না হলে ভারতীয় ছবিও আজ আমাদের জন্য হুমকির কারণ হতো না। সে হিসেবে এত দিন ভারতীয় ছবির প্রদর্শনী বন্ধ থাকাটাই বরং আমাদের জন্য কাল হলো। ৪৫ বছর আগের ভারতীয় ছবির তুলনায় তখনকার বাংলা সিনেমা সমমানেরই ছিল। কিন্তু এখন? সবদিক থেকেই আমরা যোজন যোজন দূর পিছিয়ে। ‘যোগ্যতমই টিকে থাকবে’, এই নীতির বিচারে বাংলাদেশের ছবি তো এক ফুৎকারেই উড়ে যাবে। কথা হচ্ছে, ডারউইনের এই তত্ত্বের সামনে হঠাৎ করে বাংলাদেশের সিনেমাকেই কেন দাঁড়াতে হলো? শক্তিমত্তা, আয়তন, জনসংখ্যা সব ক্ষেত্রেই তো ভারত আমাদের তিন দিকে দাঁড়িয়ে। বাকি এক দিকে আছে বঙ্গোপসাগর। তো আমরা এখন কী করব? ‘আমরা যোগ্য নই’, এটা বিশ্বাস করে সদলবলে বঙ্গোপসাগরে আÍত্মাহুতি দেব, না প্রতিহত করব?

মূল লেখা এখানে Click This Link
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×