মায়ের সাথে কবি নজরুলের ব্যবহার দুঃখজনক
(এই লেখাটি রিপোষ্ট করা হয়েছে। আমার কাছে কবি নজরুলের জীবনের অজানা এক দিক তাই সবার সাথে শেয়ার করছি।)
বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময় প্রতিভা আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।আমরা জানি, তার সারাটা জীবন ছিল বন্ধনহীন। এলোমেলো আর খামখেয়ালীতে ভরা। হুট করে বিয়ে থেকে নিয়ে নির্বাক হওয়া পর্যন্ত তিনি কত কিছুই না করেছেন। এসব কারণে কতো আঘাত পেয়েছেন তিনি, তবু সহ্য করেছেন বারবার। সে আঘাত ছিল নানা দিক থেকে তির্যক আর কটুক্তিতে ভরা। তৎকালের হিন্দু মুসলমানের আঘাত, সাহিত্যিকদের আঘাত, দুঃখ দারিদ্রের আঘাত, দায় দেনার লজ্জা, এই এত কিছুর পরও তার সৃষ্টি ও সাহিত্য আমাদেরকে শুধু অবাক নয়, হতবাক করে দেয়।
তবু তার জীবনের কিছু দিক আছে যা আজো অজানা। অনেকে নান চেষ্টা করেও এর কোনো সুরাহা করতে পারেনি কেউ। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশী অজানা হচ্ছে মায়ের সাথে তার অভিমান।
যেখানেতে দেখি যাহা
মা- এর মতন আহা
একটি কথা এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই।
ছিনু খোকা এতটুকু,
একটুতে ছোট বুক
যখন ভাঙিয়া যেতো, মা-ই সে তখন
বুকে করে নিশিদিন
আরাম-বিরামহীন
দোলা দিয়ে শুধাতেন, কি হলো খোকন?’
আয় তবে ভাইবোন
আয় সবে আয় শোন
গাই গান, পদধুলি শিরে লয়ে মা’র
মা’র বড় কেউ নাই
কেউ নাই কেউ নাই।
নতি করি বল সবে ‘মা আমার! মা আমার!’
মাকে নিয়ে ছোটদের জন্য এমন ছড়া লিখেছেন যে কবি নজরুল, তিনি কীভাবে মায়ের সাথে এমন আচরণ করতে পারেন, ভেবে আজো অনেকে বিস্মিত হন। কাজী নজরুল ইসলাম সিয়ারসোল স্কুলে থাকাকালে ১৯১৭ সালে লাহোর হয়ে নৌশেরাতে চলে যান বাঙালীর পল্টনে সৈনিকরূপে।
১৯১৯ সালের শেষের দিকে পল্টন ভেঙে দেওয়ার কয়েক মাস আগে সাত দিনের ছুটি পেয়ে তিনি তার গ্রাম চুরুলিয়ায় গিয়েছিলেন। ১৯২০ সালে পল্টন ভেঙে দেওয়ার পর তিনি কলকাতায় কয়েকদিন থেকে আবার চুরুলিয়ায় যান। গ্রামে গিয়ে তিনি নিজের বাড়ীতে সাত আট দিন ছিলেন। ঠিক এ সময়ে মায়ের সাথে কোন এক ব্যাপারে অভিমান করে বসেন কবি নজরুল ইসলাম।
এর পরপরই তিনি চুরুলিয়া ছেড়ে কলকাতায় চলে এলেন। এই যে এলেন, আর কোনদিন তিনি তার গ্রামে যাননি, যাননি মায়ের কাছে। এমনকি মায়ের মৃত্যুর পরও না। হুগলী জেলে বন্দী থাকাকালে যখন তিনি অনশন শুরু করেন, তখন তার অনশন এর খবর পেয়ে তার মা ছুটে আসেন চুরুলিয়া থেকে। ছেলের অনশন ভাঙাতে মায়ের আকুলতা স্পর্শ করা তো দূরের কথা, মায়ের সাথে তিনি দেখাও করলেন না। এক বুক দুঃখ নিয়ে খালি হাতে ফিরে আসেন নজরুলের দুর্ভাগা জননী।
কবির অন্যতম বন্ধু মুজাফফর আহমদের ভাষায়, ১৯২১ সালে কবি যখন আমার সাথে তালতলার একটি বাসায় থাকতেন, তখন একদিন তার বড় ভাই কাজী সাহেবজান ও তার চাচা প্রখ্যাত কাজী বজলে করীম সেই বাড়ীতে এলেন। তারা দুজন মিলে নজরুলকে তার বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য কত অনুনয় আর সাধাসাধি করলেন, কিন্তু অভিমানী নজরুল তখনও গেলেন না নিজের গ্রামে।
কিন্তু কি রহস্য ছিল এর পেছনে?
নজরুল সম্পর্কিত যত বই ও গবেষণাপত্র পড়েছি, এ থেকে অনুমান করা যায় যে, হয়ত মুসলমান সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নজরুলের বিদ্রোহ, সৈনিক ক্যাম্পে যোগদান, হিন্দু মেয়ে বিয়ে করাসহ এমন কিছু ব্যাপারে তার গ্রামবাসী তার পরিবারকে নানা ভাবে হেনস্তা করতো।
এসব লাঞ্চনা ও কটুক্তির কারণে তার মা হয়তো প্রকাশ্যে ছেলেকে তেমন সমর্থন ও স্নেহ করতে পারেননি।
তাছাড়া ছোটবেলায় নজরুলের দৌরাত্মে ও চঞ্চলতায় তার গ্রামবাসী অতিষ্ঠ থাকতো এবং পরবর্তীতে তার কৈশোরে নানা কর্মকান্ডে অনেকে বিরক্ত হতো। এ কারণেই কিন্তু নজরুল কাউকে কিছু না বলে একদিন গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছিলেন এবং এরপর বর্ধমান জেলার মাথরুণ হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। এত বছর পর গ্রামে ফিরে স্বজনদের ব্যবহার আর মায়ের কোন এক কথা কিংবা ব্যবহার যা আজো অজানা- এসব হয়তো প্রচন্ড জেদী তরুণ নজরুলকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। মায়ের কাছে এমন ব্যবহার হয়তো তিনি পাননি, যা তিনি চেয়েছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম এর ছেলে কাজী সব্যসাচীর মৃত্যু হয় ১৯৭৯ সালের ২রা মার্চে। তাকে এর কয়েকদিন আগে মায়ের সাথে কবির অভিমান নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন কলকাতার ড. সুশীল কুমার গুপ্ত। কবির ছেলে তাকে বলেছিলেন, গ্রামের রক্ষণশীল পরিবেশ মূলত কবিকে গ্রাম ও স্বজন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। নজরুলের এমন আরও কিছু কার্যকলাপ রয়েছে যা সহজে এভাবে বুঝা যায় না।
তবে ১৯৪২ সালে কবি যে অজানা রোগে ভুগে নির্বাক হয়ে কাটিয়ে দিলেন তার বাকী জীবনটা, এ রোগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অনেকগুলো কারণ আমি সংগ্রহ করছি। কিন্তু মায়ের সাথে কবির এমন অপ্রত্যাশিত আচরণের সাথেও যে তার ব্যাধির যোগসূত্র থাকতে পারে, তা নিয়ে কেউ ভাবেন নি।
কারণ মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার এমন এক অভিশাপ, যার প্রতিফল দুনিয়াতে ভোগ করতেই হয়। এ ছাড়া বাকী সব পাপের পরিণাম পরকালে শোধ করবেন স্রষ্টা। কবির নির্বাক ব্যাধির পেছনে এ অভিমানের কার্যকারিতা কিন্তু তাই একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মত নয়। সেইসাথে তার অমূল্য ও বিস্ময়কর প্রতিভা ও কর্মযজ্ঞও কিন্তু তুচ্ছ করা চলবে না। মানুষ হিসেবে কেউ কিন্তু ভুলের উর্ধ্বে নয়।
ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক
বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুরসি নাশিন
সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে
তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ
১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে
সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।
কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।
ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।
যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন
বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!
যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।
কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!
ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন