somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রংপুরের বাজারে রাক্ষুসে মাছ পিরানহা ।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রংপুর এসেছি মাস খানেক হল । এসেই হোটেলে থাকার পর্ব শুরু হল । তিন বেলা হোটেলে খাওয়া উহ্ জঘন্য । এভাবে দিন দশেক পার করলাম কোন মতে । মাঝখানে একদিন হরতাল ছিলো আধা বেলা, আ, লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আ, লীগের হরতাল। রাতে খাবার পরিবেশন করার সময় সহৃদয় ওয়েটার বলল, 'এই হরতালে ঔষধপত্র খাবার হোটেল সব বন্ধ থাকবে সকালে নাস্তা পাবেন না এখন রুমে যাবার সময় পাউরুটি কলা কিনে নিয়ে যাবেন' তাই করলাম । ভাগ্যিস আধাবেলা হরতাল ছিলো নাহলে দুপুরেও সম্ভবত একই মেন্যুর শ্মরনাপন্ন হতে হত । ঈদের আগের দিন জেনে গেলাম এক সপ্তাহ হোটেল বন্ধ থাকবে । রংপুর ত্যাগ করলাম । ঈদ কাটিয়ে এসেও দেখি ভাল হোটেল বন্ধ, বাধ্য হয়ে অখ্যাত হোটেলের খাবার আনাতে হল মেন্যু মুরগী ভূনা। প্রথমে গাঢ় ঝোল দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম, মুরগীর টুকরাটা বেশ ভালভাবে ভেজে রান্না করেছে । ঝোলটা বেশ সুস্বাদু হয়েছে, ভাবছিলাম এই হোটেলের খাবার আগে আনেনি কেন ? খাওয়ার শেষের পর্যায়ে যখন মাংসে কামড় দিলাম সব একেবারে ভেতর থেকে উগলে আসার যোগার হল মাংসটা কেন এত কড়া করে ভেজেছে তার মাজেজাটা এতক্ষনে বোঝা গেল মাংসটা ছিলো একেবারে পচা । পচা গন্ধটা দূর করাই ছিলো উদ্দেশ্য । ভাবলাম মাছ পচা হতে পারে, অনেকদিন ফ্রীজে রাখলে মাছে কিছুটা শুটকীর গন্ধ আসে, এটা সমস্যা নয় ভাবলাম পচা মাংস কোথায় পেল! আর এমন হোটেলও নয় যে ফ্রীজ আছে । এরপর যা জানলাম তা আরও মারাত্নক, এগুলো ডাষ্টবিনে ফেলে দেওয়ার উপোযোগী মরা মুরগী যা প্রায় পচে গেছে । একদল ব্যবসায়ী আছে যারা মরা মুরগী ফেলে না দিয়ে অল্প দামে এক ধরনের টোকাইদের কাছে বিক্রী করে। ওরা এগুলো ঐসব 'ওতেল দা ইতালীয়ানা' মার্কা হোটেলে বিক্রী করে ।( হোটেলের খাবারের মান দেখার জন্য এক জন সরকারী ইন্সপেক্টর থাকেন । ) এরপর শুরু হয়েছিলো প্রচন্ড পেটে ব্যাথা ভয় পেলাম আবার না ডায়রিয়া শুরু হয়ে যায় । এই দুর্বিপাক আর সহ্য হয়না ।আগেই ছোট মোটো একা থাকার জন্য একটা বাসা খুজতে লোক লাগিয়ে ছিলাম, আরও জোর তাগাদা দিলাম, আপাতত যেমন তেমন বাসা হলেও চলবে, তার পরও হোটেল নৈব নৈব চ । যেমন উদ্যোগ তেমন ফল, বাসা একটা পেয়ে উঠে গেলাম । এবার আরেক জ্বালা কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছেনা । কি আর করা স্ব উদ্যোগে স্ব পাক আহারের ব্যবস্থা চালু করলাম, ভাত, ডাল, আলু ভর্তা এগুলো আগেই কিছুকিছু পারতাম এই সিরিয়ালে ডিমের মামলেট ডিমের ভর্তা সীম ভর্তা এগুলোও আছে । প্রথম প্রথম ভাল লাগলেও অচিরেই একই আহারে অরুচি ধরে গেল কাহাতক আর একই খাবার বারবার খাওয়া যায় একটু রুচির পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ফলে গতকাল সাহস করে পালং শাক নিয়ে এলাম ফোনে রান্নার পদ্ধতি জানার জন্য ভাগ্নীকে কল দিলাম ও বললো, 'খুব সহজ প্রথমে শাক আর আলু সিদ্ধ করে, ওর মধ্যে দুধ কিসমিস তেজপাতা দিয়ে দেবা তারপর পেয়াজ দিয়ে বাগার দেবা' বুঝলাম দুষ্টুমী করছে । বললাম দাড়াও আমি এসে নেই কান ধরে তোমাকে চান দেখিয়ে ছাড়বো পালং শাক ভালই রান্না করলাম। এরপর এরপর যথারীতি সাহস আরও বাড়লো, আজ গেলাম মাছ কিনতে উদ্দেশ্য ওদেরকে দিয়েই মাছ কাটিয়ে যতদূর সম্ভব পরিষ্কার করিয়ে আনবো, আর বাসায় এনে ধুয়ে শুধু হলুদ আর লবন মাখিয়ে ভাজবো আর খাবো ভাজবো আর খাব । কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখি কি আর মাছ কিনবো আর খাবো উল্টো মাছই আমাকে ভেটকী দিয়ে গিলে খেতে আসছে । নেন আপনারাও একটুমাছের ভেটকী খান । এর পর আর মাছ কেনার সাহস হলোনা । পাঠক নিশ্চয়ই চিনেছেন । ডিসকভারি বা জিওগ্রাফিক চ্যানেলের বদৌলতে আমাজান নদীতে বসবাস কারী এই রাক্ষুসে মাছ । আমরা চিনলেও সরকারী লোকজন যাদের এগুলো দেখার কথা তারা এসব চেনেনা (আসলে তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব বিন্দু মাত্রও পালন করেনা অথচ রংপুর একটা বিভাগীয় শহর ) অসাধু মুরগীআলার মত অসাধু কিছু মাছ চাষী আছে যারা এই মাছগুলি সামুদ্রিক রূপচাদা মাছ হিসেবে চালায় । উত্তর বঙ্গ হচ্ছে মাছের আকালের দেশ এখানে মাছের প্রাচুর্য নেই । এদেশের সহজ সরল মানুষরা সামুদ্রিক মাছ ঠিকমত চেনে না, আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একধরনের মাছ চাষী এবং মাছ ব্যবসায়ী এই সহজ সরল মানুষ গুলির মাছ খাওয়ার প্রত্যাশার সাথে প্রতারনা করছে । অনেক আগে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট এবং মিরপুরের বাজারে পিরানহা মাছ উঠেছিলো তখন এগুলোকে নাম দেওয়া হয়েছিলো থাই রূপচাদা । ম্যজিষ্ট্রেট গিয়ে ধরাতে এখন মাছ ব্যবসায়ীরা এগুলি ঢাকার বাহিরে ছড়িয়ে দিয়েছে । এর থেকে উদ্ধার পাবার উপায় কি ?আমার মনে হয় বিক্রেতাদের না ধরে সরবরাহকারী এবং মাছের উৎস যেখান থেকে এগুলি আসছে সেখানে ধরতে হবে । তাহলে যদি এই রাক্ষুসে মাছের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় । রংপুর বাসী আপনারা হোটেলে বসে গাটের পয়সা খরচ করে রান্না করা রূপচাদা মাছ দিয়ে যদি রসনা পরিতৃপ্তি করার ইচ্ছা পোষন করেন তাইলে দুইবার ভাইব্বেন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৫১
১৯টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×