somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কখন যে ভালবেসেছি তোমাকে !! (পর্ব ০১)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনুশেখার বাবার যে আমাকে চড় মেড়ে বসবেন আমি ভাবি নি । চড়টা খাওয়ার জন্য আমি প্রস্তুতও ছিলাম না । ব্যালেন্স হারিয়ে সোজা গিয়ে পড়লাম সোফার কাছে । মাথার মধ্যে কেমন জানি ঝিমঝিম করে উঠল । অনুশেখা একটু দুরে দারিয়ে ছিল । ও নিজেও ভাবতে পারে নি যে ওর বাবা আমাকে এভাবে চড় মাড়বেন ।
“বাবা ওকে মেরো না প্লিজ”
উঠে দাড়াতে দাড়াতে আমি অনুশেখার দিকে তাকালাম ।
ওর চোখে পানি ! আমার জন্য !
আমার মত একটা প্রতারকের জন্য ওর চোখে পানি !
অনুশেখার বাবা ওর দিকে তাকিয়ে বলল “তুই চুপ থাক। তুই এতো বোকা হলি কিভাবে ? আর জোচ্চরটার জন্য তোর মায়া লাগছে কেন?”
অনুশেখা তখনও আমার দিকে তাকিয়ে । ওর চোখ দিয়ে দেখলাম পানি গড়িয়ে পড়ল । মেয়ে এই কান্ড দেখে ওর বাবা বিরক্ত হলেন । ওর বাবা এবার আমার দিকে চোখ ফেরালেন ।
“বল হারামজাদা আর কি নিয়েছিস আমার মেয়ে কাছ থেকে?”
আমি কিছু বলার আগেই অনুশেখা বলল বাবা “ও আর কিছু নেয় নি । নেকলেসটা ও নিয়েছিল ও নিজেই ফেরত্ দিয়েছে । বাবা ও আর কিছু নেয় নি । বাবা প্লিজ ওকে আর মেরো না।”
ওর বাবা আবার ওর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলেন ।
আর আমি হলাম বিশ্মিত । সত্যি তো আমার জন্য ওর কেন মায়া লাগছে !
এই মেয়েটা আসলেই এতো বোকা হল কিভাবে? সব কিছু জানার পরও অনুশেখার মনে আমার জন্য মায়া রয়েছে ভালবাসা রয়েছে মেয়েটা আসলেই বোকা ।
শুধু বোকা না বোকার চুড়ান্ত । হঠাত্ আমি লক্ষ্য করলাম আমার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে । পানি পড়ছে অনুশেখার বাবার চড়ের জন্য না । অনুশেখার জন্য ।
তাহলে আমিও কি ওর মত বোকা হয়ে গেলাম?
আমার মত প্রতারকও কি তাহলে কাউকে ভালবাসতে পারে??
অনুশেখার বাবা আমাকে পুলিশে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু অনুশেখার জন্য দিতে পারল না । ওদের বাসা থেকে বের হয়ে হাটছি, মনকে বোঝালাম যে পিছন ফিরে তাকাবো না কিছুতেই ।
কিন্তু না তাকিয়ে পারলাম না । পিছন ফিরে যা দেখবো ভেবেছিলাম তাই হল ।
অনুশেখা দাড়িয়ে আছে । একদম গেটার কাছেই । মনের মধ্যে আবার সেই অচেনা অনুভূতি হল ।
এটার নামই কি ভালবাসা?
আমি হাটতে থাকি আবার ।
আরো একবার তাকাই পিছনে । সে তখনও দাড়িয়ে ।
কয়দিন আগেও আমার জীবনটা কেমন ছিল ! অন্য রকম । মেয়েদের কে পটিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নেওয়াই ছিল আমার কাজ । আর কেন জানি মেয়েগুলা পটেও যেত খুব তাড়াতাড়ি । আর একবার পটে গেলে মেয়েগুলার কাছে আমি হয়ে যেতাম দেবতা । যা বলতাম তাই বিশ্বাস করতো কোন কিছু না ভেবে ।
একবার একটা মেয়ে সাথে পরিচয় হয় ফোনে । মেয়েটার নাম ছিল দিয়া । বড় লোকের মেয়ে । যে আমাকে দিয়া নম্বরটা দিয়েছিল সে বলেছিল যে ওর কাছে একটা N97 আছে । আমার টার্গেট ছিল এই N97 গায়েব করবো । যেদিন ওর সাথে দেখা হয় সেদিনই সুযোগটা চলে আসে । KFC তে দেখা করি । দিয়ে চোখ মুখ দেখে আমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারছিলাম যে আমাকে ওর পছন্দ হয়েছে । ওর সাথে কথা বলছি এমন সময় আমার ফোনে একটা ফোন আসে । আগে থেকে ঠিক করা ছিল । হ্যালো বলি কিছুক্ষন কথা বলি খুব সিরিয়াস ভাবে তারপর ওহ্ সিট বলে রেখে দিই ।
দিয়া বলে “কি হয়েছে?”
“আমার একটা জরুরী ফোন ছিল এটা । মোবাইলে ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে । তুমি একটু বসো ব্যালেন্সটা রিচার্য করে নিয়ে আসি।“
দিয়া টোপ গিলে ফেলল । বলে “আমার ফোন দিয়ে কল কর ।“
আমি প্রথমে নিতে চাই না । পরে নেই । KFC মধ্যে ভীড় ছিল । ওকে বলি তুমি অর্দার দাও । আমি একটু নিড়িবিলি কথা বলে আসছি । তারপর ওখান থেকেই হাওয়া । জানি না ও আমার জন্য কতক্ষন অপেক্ষা করেছিল । আমি একজনে সাথে খুব বেশি সময় ধরে থাকতাম না । যত তাড়াতাড়ি কেটে পড়া যায় ।
কিন্তু অনুশেখার বেলায় সব কিছু অলটপালট হয়ে গেল । আমার কিছু ইনফর্মার আছে । তাদের কাছ থেকেই আমি ওর খবর পাই । কদিন ওকে ফলো করি । খোজ খবর নিয়ে জানতে পারি যে অনুশেখার মন অসম্ভব নরম । আমি যতখানি দেখলাম ওর কাছ থেকে খালি হাতে কেউ ফেরত্ যায় নি । আমি এই সুযোগটা নিলাম । একদিন অনুশেখা ওর ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছে ।
আমি আমার প্লান মত কাজ করা আরাম্ভ করলাম । ও যখন আমার কাছে চলে এসেছে তখন আমি একটা আইসক্রিম কিনে সবে একটা কামড় দিয়েছি অমনি একটা টোকাই এসে আমার প্যান্ট টান দিল । আগে থেকে টোকাইটা কে ঠিক করা ছিল ।
“স্যার দেন স্যার।“
একটু হেসে আমি আমি আইসক্রিমটা দিয়ে দিলাম । ঠিক তখনই কোথ্থেকে যেন আরে একদল টোকাই এসে হাজির । এগুলোও ঠিক করাই ছিল । সবাই কেই কিনে দিতে হল । আমি জানি অনুশেখা আমাকে দেখছে । শুধু ও আরো অনেকেই আমাকে দেখছে । যে দেখে দেখুক । এবার হল আসল পার্ট । ওদের আইসক্রিমের দাম দিয়ে আমি এবার আমার জন্য আরো একটা আইসক্রিম কিনতে গেলাম । টাকা দেওয়ার সময় এমন একটা ভাব করলাম যেন আমার কাছে আর টাকা নাই । আইসক্রিম ওয়ালাকে আইসক্রিমটা ফেরত্ দিয়ে বললাম
“সরি ভাই আর টাকা নাই আমার কাছে।“
তারপর হাটা দিলাম । একটু সন্দেহ ছিল তবুও ভরসা ছিল যে কাজ হবে । কাজ না হলে অবশ্য আরো অন্য ভাবে ট্রাই করতে হত । কিন্তু কাজ হল । একটু পরেই অনুশেখা আমাকে থামার জন্য ডাকদিল । পিছন ফিরে দেখি ও আমার দিকে এগিয়ে আসছে । হাতে দুটো আইসক্রিম
(চলবে)
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×