(১)
নাচে বসন্ত বটের পাতায়
দখিন হাওয়ায় মৃদু ঝিরি ঝিরি
দেয় দোল সে ভেতরে, হৃদয় মাতায়
অপরূপা চির মনোহরী।।
চারপাশে ছড়ায় সে সূচী স্নিগ্ধতা
আমি লিখি শুধু তারই কবিতা,
আমার বর্ণালী জীবন খাতায়
ভরে আছে লেখায় বন্দনা তার-ই।।
সে যে ভারি সুন্দরী চির চঞ্চলা
কল্যাণী সুভাষিণী অনুপমা বালা
তিলোত্তমা সে, নেচে গেয়ে যায়
অলক্ষ্যে করে সে হৃদয় চুরি।।
(২)
ফাগুন এলো আগুন নিয়ে শিমুল কৃষ্ণচূঁড়ায়
বাতাবী ফুল মাতাল হয়ে মধুর সুবাস ছড়ায়
ঐ এলো ঐ এলো বসন্ত
মুগ্ধ হওয়ার দিলো সে মন্ত্র।।
আমের মুকুল দিলো উঁকি
লাজুক বধূ রাঙামূখী;
অশোক পলাশ লাল শাড়িতে
সাজলো ভীষণ সোহাগ পেতে
প্রজাপতি চুমোয় চুমোয় প্রণয় পরাগ জড়ায়।
ঐ এলো ঐ এলো বসন্ত
প্রেমিক হওয়ার দিলো সে মন্ত্র।।
কোকিলেরা পাতার ফাঁকে গায় বিরহী গান
চির প্রেমিক যে জন, শুধু ভরায় যে তার প্রাণ
এমন দিনে কে ভাই একা!
পাওনি হৃদয় সাথীর দেখা?
হারালে কে দূর অজানায়
তাই কি ও’ গান হৃদয় বীণায়
সপ্ত সুরে বেজে উঠে রাগ বিরহী গড়ায়?
ঐ এলো ঐ এলো বসন্ত
উদাস হওয়ার দিলো সে মন্ত্র।।
(৩)
ফাগুনের ফুল কলি ইশারায় বারে বারে ডাকে
বলে কবি বেঁধে রাখো কবিতায় আমাকে।।
লাল শাড়ি গায়ে পড়ে হাসে শিমুল
অপরূপা ফুল নারী কালো বোটা চুল।
কোকিলের এ মন উড়ে গেঁয়ো পথ বাঁকে।।
ওখানে কে জ্বালে আলো পলাশ বনে!
কৃষ্ণচুঁড়া হাসে আপন মনে
ঘুম ভেঙে জেগে উঠে ভীরু কাঞ্চন
বসন্ত বাতাসে ভাসে মৃদু গুঞ্জন
অশোক মাদার লাজে লালে মুখ আঁকে।।
হলদে শাড়িতে ওরা বিয়ের কনে
সোনালুরা সেজেছে বনে বনে।
বাতাবির ফুল মালা খোঁপায় জুড়ে
বধূয়া এলো আজ বাসার ঘরে।
জোড়া বর সাজে কারা শাল-পিয়ালের শাখে।।
(৪)
আমার ফাগুন মন তোমায় ডাকে
কৃষ্ণচুঁড়া ফুলে সোনালু শাখে
পলাশ শিমুল কাঞ্চন ফুল
সুরে গানে কবিতায় চায় তোমাকে।।
বাতাবির ফুল সখি সজনে মুকুল
দখিনা হাওয়ায় দোলে তোলে হিল্লোল।
ইঙ্গিতে বলে যায় নীরব থেকে
প্রণয় মমতা দিয়ে রাখবো ঢেকে।।
তুমি এলে কবিতায় আসবে জোয়ার
তুলবে গানের বীণা সুরে ঝঙ্কার।
হৃদয় রাণী জানি, আসবে জানি
মহাকবি হতে আমি চাই তোমাকে।।
শুক্রবার, ১১ জানুয়ারি ২০০৮। পাঠানটোলা, ধামরাই।
(৫)
দোল দোলে ফাগুন মাটির কোলে
নীল-সাদা-লাল আগুন হলুদ ফুলে।
সবুজ ফসল হাসে কোমল মাঠে
হৃদয় সরোবরে কমল ফোটে।
কার হাসি হাসে এ ফসল ফুলে!!
বন-পাহাড় অন্ধকার সাগর গভীরে
বসন্ত এসেছে ভূবন জুড়ে।
চোখে যতো দেখি হৃদয় খোলে।।
৩ এপ্রিল ২০০২, ধামরাই।
(৬)
বহে বসন্ত হাওয়া ঝিরি ঝিরি....
রাঙিয়ে দিয়ে যায় মন, ও’ সুন্দরী।।
তার কণ্ঠহার বাতাবির ফুল, খোঁপাতে সজনে মুকুল।
দু’পায়ে কাঞ্চনের মল, অঙে তার শিমুল শাড়ি।
কৃষ্ণচুঁড়ার কাঁকনে সাজলো সে বলিহারি!!
রূপ যে তার মুগ্ধ করা, মন করে পাগল পারা।
আমারে দেয় ইশারা; ও’ ফাগুনের আগুন নারী।
প্রণয়ের সুখ অনলে, সাধ জাগে পুড়ে মরি।।
শুক্রবার, ১৬ মার্চ ২০০৭, ধামরাই।