somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আয়মান নাফিস
টটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটটট

১৯৭১ , জেড ফোর্সের মুক্তিযুদ্ধ : জিয়া-শাফায়াত-মইন-আমিনুলদের যুদ্ধ দিনের গল্প জানুন ছবি আর বর্ননায়........

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জেড ফোর্স
মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত ১ম নিয়মিত পদাতিক ব্রিগেড
ব্রিগেড কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের নামের আদ্যাক্ষর জেড দিয়ে যেটি নামাংকিত.........

অমর বীরত্ব বিচ্ছুরিত আর আত্নত্যাগ মহিম যেই ফোর্সটির যুদ্ধনামচায় কালের অমোচনীয় কালিতে লেখা রয়েছে কামালপুর বিওপি ,বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট আর নকশী অভিযানের মত বিখ্যাত সব যুদ্ধের রোমাঞ্চগাথা.......

১৯৭১ রৌমারি মুক্তাঞ্চলের স্মৃতির দেরাজে যেই ফোর্সটি ঘুমিয়ে আছে......

চিলমারী, ছাতক , কোদালকাটি , বকশীগজ্ঞ , গোয়াইনঘাট , টেংরাটিলা , বড়লেখার সময় তটে ছাপচিহ্ন রেখে গেছে যে বাহিনীটির স্বাধীনতা ক্ষুধার্ত যোদ্ধারা.........

আসুন সেই যুদ্ধ নামচার পাতা ওল্টাই , স্মৃতির দেরাজ খুলে জাগিয়ে তুলি সেইসব ফেলে আসা দিনকে , জমে থাকা ধুলো সরিয়ে দেই যুদ্ধ ময়দানের সময় তটে............


১ম সপ্তাহ , জুন , ১৯৭১............
কলকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত হলো :
নিয়মিত পদাতিক একটি ব্রিগেড তৈরি করা হবে প্রতিরোধ যুদ্ধকে জোরদার করার জন্য.........
উদ্দেশ্য – হিট অ্যান্ড রান গেরিলা ট্যাকটিকসের বদলে সুসংহত নিয়মিত বাহিনীর মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সরাসরি যুদ্ধে মোকাবেলা করা........
আর সে লক্ষ্যেই মেজর জিয়াউর রহমান এর উপর ন্যস্ত করা হয় ব্রিগেডটির অধিনায়কত্ব......

জুন ১০ তারিখে বৃহত্তর চট্রগ্রামের ১নং সেক্টরের অধিনায়কত্ব ক্যাপ্টেন রফিকের হাতে দিয়ে জিয়া চলে আসেন বাংলাদেশ সীমান্তবর্তি ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের পাদদেশে ঘন গহীন জংগলে তেলঢালায়.......
চারদিকে ছোট ছোট পাহাড়ে ঘেরা সাপ , বাঘ আর বুনো শুয়োরের আস্তানা শ্বাপদ সংকুল এই জংগলটিতেই স্থাপিত হয়েছিলো জেড ফোর্সের হেডকোয়ার্টার....

জিয়ার সংগে ছিলেন ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ এবং ক্যাপ্টেন সাদেক।
জিয়া আগে ভাগে চলে আসলেও রেখে এসেছিলেন তার ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টের অনেক সৈনিককে......
কিছুদিনের মধ্যে মেজর এ জে এম আমিনুল হক চট্রগ্রামের রামগড় থেকে ৮ম বেঙ্গলের বাকি সব সৈন্যকে নিয়ে হাজির হন তেলঢালায়......
কাছাকাছি সময়ে জুন ২৫ এর আগেই ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বর্তমানে ভোলা বিএনপির রাজনীতিবিদ) বনগাঁ থেকে ১ম বেঙ্গলকে নিয়ে যোগ দেন তেলঢালায়......
তবে তার আগে জুন ১৭ তারিখে মেজর শাফায়াত জামিল তার ৩য় বেঙ্গলের ১১০০ সৈন্য নিয়ে তেলঢালায় জেড ফোর্স হেড কোয়াটারে যোগ দেন ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের রায়গঞ্জ জংশন থেকে।

১৩ ই জুন কলকাতায় ৮ নং থিয়েটার রোর্ডে কর্নেল ওসমানীর সাথে দেখা করেন মেজর মইনুল হোসেন এবং ওসমানিকে অভিমত জানান যে সরাসরি সেট পিস যুদ্ধে যাওয়ার মত ট্রেইন্ড যোদ্ধা এবং পর্যাপ্ত যুদ্ধ উপকরণ এখন বেঙ্গল রেজিমেন্ট গুলোর কারো নেই.........
ওসমানি তার সংগে একমত হননি এবং জেড ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
ওসমানির নির্দেশ মোতাবেক মেজর মইন কলকাতা থেকে আসামের গৌহাটি হয়ে তেলঢালায় এসে যোগ দেন জেড ফোর্সে...

২০ জুন আনুষ্ঠানিক নিয়োগ সম্পন্ন হয় ব্রিগেড অধিনায়কত্বেরঃ
ব্রিগেড কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান.........

১ম, ৩য় এবং ৮ম ই বেঙ্গল – এই ৩ টি রেজিমেন্টকে ইন্টেগ্রেট করেই গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিখ্যাত প্রথম ব্রিগেড জেড ফোর্স...........

জেড ফোর্স অরগানোগ্রাম , ১৯৭১ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ

২৫ শে জুনের মধ্যে জেড ফোর্স বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর ১ম পদাতিক ব্রিগেড হিসেবে সুসংগঠিত হয়।
৭ ই জুলাই প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করে ১ম নিয়মিত পদাতিক বেংগল ব্রিগেডটিকে , সেপ্টেম্বরের শুরুতে যেটির নামকরন হয়"জেড ফোর্স"............

জুনের ২৫ তারিখ থেকেই শুরু হলো জেড ফোর্সের যুদ্ধ প্রশিক্ষন.....
জুলাই ২৮ তারিখ পর্যন্ত সেটি চলতে থাকে দুর্গম প্রতিকুল এক পরিবেশে যেমনটা জানা যায় ৩য় বেংগল সিও মেজর শাফায়াত জামিলের কাছ থেকে:

২৮ শে জুলাই পর্যন্ত তেলঢালায় সর্বাত্নক যুদ্ধের ট্রেনিং চলতে থাকে। প্রায় সারাদিন ট্রেনিং চলে। রাতে প্রচন্ড মশার কামড় আর শুয়োর , সাপ ইত্যাদির উৎপাতে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো আমাদের। বাংলাদেশের ভেতরে ঢোকার জন্য মনে মনে সবাই অস্থির হয়ে উঠছিলাম.......
১/ পাতা ৫৮

এ প্রসংগে ১ম বেংগল সিও মেজর মইন যেটি বলেছেন :

আমরা ছিলাম এক গহিন জংগলে যেখানে খাবার এবং রসদ সরবরাহ ছিলো অত্যন্ত দুরূহ। আমাদের অব্স্থান থেকে সবচাইতে নিকটবর্তী শহর ছিলো 'তুরা' যার দুরত্ব ছিলো প্রায় ৩০ কিলোমিটার।নিকটবর্তী গ্রামান্চ্ঞল ছিলো আমাদের খাদ্যক্রয়ের স্থান।অন্যান্য রসদপত্র ও সামগ্রী তুরা শহর থেকে সংগ্রহ করা হতো। এই অন্চ্ঞলে ভারতীয় 101 Communication Zone কমান্ড করতেন মেজর জেনারেল গুলবত সিং গিল................... সমস্ত বাধা বিপত্তির মধ্যেও গারো পাহাড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমরা প্রশিক্ষন পূর্ন উদ্যমে চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
২/পাতা ১৬৭

প্রসংগত জানাতে হয় : তেলঢালার দুর্গম পরিবেশে যে প্রতিকুলতা আর অসহনীয়তা মোকাবেলা করতে হয়েছে জেড ফোর্সকে তার কানাকড়িও সইতে হয়নি ত্রিপুরার মেলাঘরে অবস্থানরত খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্পটিকে...........
এমনকি অধিকাংশ সেক্টর কমান্ডারদের হেড কোয়ার্টার ছিলো সীমান্তবর্তি শহর গুলোতে.........

গুগল ম্যাপসে গিয়েই দেখে আসতে পারেন গারো পাহাড়টিকে :
ডানদিকের স্যাটেলাইট অপশনটিতে ক্লিক করুন
জায়গাটি এখনো আগের মতই দুর্গম রয়ে গেছে

যাইহোক , এবার যুদ্ধের গল্পে ফিরি.........

২৮ শে জুলাই ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর জিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন ৩ টি বিপদজনক অপারেশনের যার প্রতিটি ছিলো স্ট্রাটেজিকালী সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ন ৩ টি পজিশনে.........
যে যুদ্ধ গুলোর প্রতিটিতে ডাই হার্ড স্ট্যামিনা আর ডু অর ডাই আত্নপ্রতিজ্ঞার পরিচয় দিতে হয়েছিলো জেড ফোর্স যোদ্ধাদের..........

১ম টি ছিলো কামালপুর যুদ্ধ...........................

জুলাইয়ের ৩য় সপ্তাহে ১ম বেংগল ব্যাটালিয়ন কমান্ডার মেজর মইনুল হোসেন কে জিয়াউর রহমান জানালেন কামালপুর বিওপি তে হিট করতে হবে। মেজর মইন রাজী ছিলেননা। তার মতে কামালপুরের মত যথেষ্ট শক্তিশালী পাকিস্তানী ঘাটিতে সেটপিস যুদ্ধের মাধ্যমে আক্রমন করার সক্ষমতা জেড ফোর্সের নেই বা তার ব্যাটালিয়নের নেই।মেজর মইনের প্ল্যান ছিলো হিট অ্যান্ড রান গেরিলা পদ্ধতিতে পাকিস্তান ফোর্সকে দুর্বল এবং নাজেহাল করা।
কিন্তু জিয়া সিদ্ধান্ত পাল্টালেননা। এর মূল কারন হাইকমান্ডের নির্দেশ এবং ঘাঁটিটির স্ট্রাটেজিক গুরুত্ব।

মূলত জামালপুর , টাংগাইল এবং ঢাকার সংযোগ সড়কটির উপর ছিলো কামালপুর বিওপি.........
তাই ঢাকা অভিমুখে অগ্রসর হতে হলে কামালপুর বিওপি অবশ্যই দখল করতে হবে। কামালপুর বর্ডার আউটপোস্টটির অবস্থান দেখে নিতে পারেন এখানে : ইমেজ

এটি এতই শক্তিশালী ঘাঁটি যে এই ঘাঁটিতে সর্বমোট ৪ বার নিয়মিত বাহিনী পর্যায়ে সরাসরি সেটপিস যুদ্ধ হয়েছে.....
৩১ জুলাই/২২ অক্টোবর/১৪ নভেম্বর/২৪ নভেম্বর - ৪ডিসেম্বর
হিট অ্যান্ড রান হয়েছে মোট ২০ বার !
প্রথম গেরিলা হিট টি হয়েছিলো ১২ জুন ।
এখানেই ১৪ নভেম্বরের যুদ্ধে মর্টার শেলের আঘাতে পা হারিয়েছেন মেজর তাহের বীরউত্তম........
পুরো মুক্তিযুদ্ধে কামালপুর অভিযানে সর্বমোট ১৯৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন , আহত হয়েছেন অসংখ্য , অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর আইয়ুব সহ ২২০ জন সেনা নিহত হয়েছেন

বীরউত্তম থেকে বীর প্রতীক মিলিয়ে সর্বমোট ২৯ জন মুক্তিযোদ্ধা সাহসীকতা পদক পেয়েছেন কেবল কামালপুর যুদ্ধের জন্যই , মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এমন উদাহরন আর একটিও নেই..............

এতকিছুর পরও ডিসেম্বরের ৪ তারিখের আগে কামালপুর দখলে আসেনি!
সুতরাং ৩১ শে জুলাই জিয়ার নির্দেশে ১ম যে সেটপিস হিটটি হয়েছিলো রীতিমত "বাঘের ডেরায়" সেটি ছিলো অজানা ভয় , দুঃসাহসিকতা আর রোমান্চ্ঞ মিশ্রিত তা বলার অপেক্ষা রাখেনা.........

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওয়ার ম্যাপে বৃহত্তর টাংগাইল এবং ময়মনসিংহের দায়িত্বে ছিল মেজর জেনারেল জামশেদের ৩৬ অ্যাডহক ডিভিশন। ১৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলাকাটিতে ২ টি রাস্তা ছিলো ঢাকার দিকে মুক্তিবাহিনীর অগ্রসর হওয়ার। একটি হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ হয়ে , অন্যটি কামালপুর-জামালপুর দিয়ে।এটি আটকানোর দায়িত্বে ছিলো ব্রিগেডিয়ার কাদিরের পাক আর্মির ৯৩ ব্রিগেড- যার দুটি রেজিমেন্ট যথাক্রমে : ৩৩ পান্জ্ঞাব এবং ৩১ বালুচ।

৩৩ পান্জ্ঞাব অবস্থান নিয়েছিলো হালুয়াঘাটে আর ৩১ বালুচ অবস্থান নিয়েছিলো কামালপুর, নকশী আর বারোমারিতে। কামালপুরে ৩১ বালুচের সাথে ছিলো ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স আর আর ১ প্লাটুন রাজাকার। কামালপুর বিওপির সিও ছিলো ক্যাপটেন আহসান মালিক। প্রচুর শক্তিশালী অস্ত্র আর গোলাবারুদের পাশাপাশি ৮১ মি.মি. ৩ টি মর্টার ছিলো কামালপুর বিওপিতে।
৩/ পাতা ১৮১-১৮২

অন্যদিকে মেজর মইনের ১ম বেংগল ব্যাটালিয়নে সৈন্য ছিলো সর্বসাকুল্যে ৮৫০ জন। ৩১ জুলাই রাত ৩ টায় এই যুদ্ধ শুরু হয়। জেড ফোর্সের ১ম সম্মুখ সমর কামালপুর অপারেশনে জিয়াউর রহমান নিজে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধ সমন্বয় করার জন্য।
রাত ৩:০০ এর দিকে জিয়া এবং মেজর মইন ১ম বেংগল ব্যাটালিয়ন নিয়ে পাকিস্তান আর্মির ঘাঁটি থেকে প্রায় ১১০০-১২০০ গজ দুরে অবস্থান নেন।
সেদিনরাতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো।
পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক :

১. ক্যাপটেন মাহবুব শত্রু ঘাঁটির পেছনে অবস্থান নিলেন তার কোম্পানিসহ
২.ক্যাপ্টেন হাফিজ ও ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন ৬০০ গজ ইনসাইড এনিমি লাইন অগ্রসর হয়ে পাটক্ষেতে অবস্থান নিলেন
৩.মেজর মইন তার ওয়ারলেস অপারেটর এবং ফ্লা: লে: লিয়াকত সহ পাটক্ষেতে অবস্থান নিলেন
৪.টিলায় মেজর জিয়া হাল্কা কামান ও হেভী মেশিনগান সহ অবস্থান নিলেন
৫. কাট অফ পার্টি হিসেবে একটি বাহিনী কামালপুর-বকশীগন্জ্ঞ সড়কে মাইন পুতে রেখে কামালপুর-শ্রীবর্দি জংশন এবং উঠানীপাড়ায় অবস্থান নেন যাতে বকশীগন্জ্ঞ থেকে হঠাৎ কোন পাকিস্তানী রিইনফোর্সমেন্ট ৩১ জুলাই রাতে কামালপুরে আসতে না পারে।

জিয়ার অবস্থান থেকে কামানের গোলা বর্ষনের মাধ্যমেই যুদ্ধ শুরু হয়। রাত সাড়ে ৩ টায় ক্যাপটেন সালাউদ্দিন মমতাজ তার ২ প্লাটুন সৈন্য নিয়ে শত্রুঘাঁটিতে ঢুকে পড়েন। সেখানে তিনি বিওপির একদম কাছে গিয়ে মেগা ফোনে পাকিস্তানীদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন :
আভি তক ওয়াক্ত হ্যায় , শালালোক সারেন্ডার করো , নেহিত জিন্দা নেহী ছোড়েঙ্গা

সালাউদ্দিন মমতাজের অসীম সাহসে আর তার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনে পাকিস্তানীদের ১ম ডিফেন্স কর্ডন শেল প্রুফ বাংকারে ঢুকে পড়ে।
এ সময় সালাউদ্দিন মমতাজ আরও সাহসী হয়ে উঠে ২০-২৫ জনকে নিয়ে বিওপির কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকে পড়েন। দাড়িয়ে দাড়িয়েই তিনি কমান্ড করছিলেন। তার সহযোদ্ধারা তাকে নিরাপদ পজিশন নিতে বলেও লাভ হয়নি। হঠাৎ ই মেশিন গানের গুলি এসে ঢোকে তার মাথায়। মর্টারের গোলাও এসে পড়ে পাশে।
লুটিয়ে পড়েন এই "বীরউত্তম"...............
স্বাধীনতার সোনালী রোদের স্পর্শ তার পাওয়া হলোনা আর........
এক পর্যায়ে সেখানে আগ্নেয়াস্ত্রের পরিবর্তে হাতাহাতি আর বেয়নেট দিয়ে যুদ্ধ হয় বাংকারের ভেতরে।

শহীদ বীরউত্তম ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ

সালাউদ্দিন মমতাজ নিহত হবার খবর জানতে পেরে মেজর মইন ওয়ারলেসে ক্যাপ্টেন মাহবুবকে কমান্ড করেন পেছন থেকে আক্রমনের জন্য। কিন্তু ক্যাপ্টেন মাহবুবের সাড়া না পেয়ে তিনি ঝোপ ঝাড় গাছের আড়াল থেকে খোলা জায়গায় চলে আসেন যাতে ওয়ারলেস ভালোভাবে কাজ করতে পারে। দুর্ভাগ্য- সাথে সাথেই একঝাক মেশিনগানের গুলি এসে তার ওয়ারলেস অপারেটর শহীদ হন।এ সময় তার ওয়ারলেস সেটটিও অকেজো হয়ে যায়। মেজর মইন হতভম্ব হয়ে এসময় চিৎকার করে নির্দেশ দিতে থাকেন। খুব দ্রুত ভোরের আলো ফুটে ওঠে। এসময় তারা দেখতে পান চারদিকে হতাহতের ছড়াছড়ি। ক্যাপটেন হাফিজ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে আছেন। লে: মান্নানও আহত হয়েছিলেন।জিয়া এসময় উদ্ধারকাজে যোগ দেন। গোলাগুলি চলা অবস্থাতেই জিয়া , মইন , লিয়াকতরা মিলে হাফিজ , মান্নান সহ অন্য আহত যোদ্ধাদের উদ্ধার করে পিছু হটেন।

অন্যদিকে ২ টি ১২০ মি. মি. মর্টার আর বেশকিছু সেনা সহ বকশীগন্জ্ঞ থেকে কামালপুরের দিকে আসতে থাকা ৩ টি লরী উড়ে যায় কাট অফ পার্টির পুতে রাখা মাইনে। তাদের অ্যামবুশে ১০ জন পাকসেনা নিহত এবং ১০-১১ জন আহত হয়। ১ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন , ২/৩ জন আহত হন।

এ যুদ্ধে মোট ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন আর আহত হন ৫৭ জন যা মোটামুটি ১ম বেংগলের এক দশমাংশ........
কামালপুরের সেই যুদ্ধ ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের জন্য ছিলো নাইটমেয়ার।
তারা ধারনাই করতে পারেনি যে নাতিদীর্ঘ প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদেরকে নিয়ে জেড ফোর্স এত শক্ত কামড় দিতে পারে।

ক্যাপ্টেন হাফিজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতার দলিল পত্রের ১০ম খন্ডে জানিয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়েছিলো সে যুদ্ধে

শাফায়াত এবং মইন দুজনেই বলেছেন - টানা ৩ দিন পাকিস্তান আর্মির হেলিকপ্টার ঢাকা থেকে কামালপুর আসা যাওয়া করেছে কেবল পাকিস্তান আর্মির লাশ আর আহতদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য।

যুদ্ধের পর জেনারেল মানেকশ হেলিকপ্টারে করে জেড ফোর্স হেড কোয়ার্টারে আসেন আর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন :
" জেড ফোর্স শোড আপ রিয়াল টাইগার ক্যারেক্টার ! "
এমনকি এটাও বলেন যে তার ধারনাতেও ছিলোনা যে জেড ফোর্স এমন অপারেশনের সাহস রাখে.......


শহীদ সালাউদ্দিন মমতাজ স্মরনে কামালপুরে স্বাধীনতা সৌধ

৩১ বালুচ রেজিমেন্টকে এমন একটি আতংক সর্বোচ্চ দুঃস্বপ্ন উপহার দেয়ার পরও এ যু্দ্ধে হেরে যাবার কারন মূলত ৪ টি :

[১]
২৮ জুলাই সন্ধ্যায় রেকী করার সময় ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ , লে: মান্নান , সুবেদার আবদুল হাই , সুবেদার হাশেম , নায়েক শফি ভুলে কামালপুর বিওপির অবজার্ভেশন পোস্টে ঢুকে পড়েন এবং ২ জন পাকিস্তানী সেনার সামনে পড়ে যান। ২ জনকেই মেরে ফেললেও সেটাই বিপদ বাড়িয়ে দেয়। ৩১ বালুচ সতর্ক হয়ে যায়। এর জের ধরে ২৯ জুলাই স্বয়ং লে: জে: নিয়াজী কামালপুরে আসেন।বলাই বাহুল্য এর ফলে তারা সেনাসংখ্যা এবং গোলাবারুদ প্রচুর বাড়িয়েছিলো যা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মেজর মইন তীব্রভাবে টের পান।
[২]
ভারতীয় সেনাবাহিনী যে ওয়ারলেস সেট গুলো দিয়েছিলো জেড ফোর্সকে সেগুলো নিম্নমানের এবং ত্রুটিপূর্ন ছিলো বলে মেজর মইন জেনারেল মানেকশ কে অভিযোগ করেছিলেন। মেজর মইনের মতে ক্যাপ্টেন মাহবুবকে সময় মত ওয়ারলেসে কমান্ড করতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হতো এবং শত্রুপক্ষের ক্যাসুয়ালটি আরো বেশী হতো। অতি দরকারের সময় ওয়ারলেস কাজ না করা ছিলো খাঁড়ার উপর মড়ার ঘা।
[৩]
যুদ্ধের সেই সময়টায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো এবং আগের কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় পাটক্ষেতে ১ ফুট পানি জমে গিয়েছিলো। এ ধরনের যুদ্ধে ক্রলিং এবং কুইক মুভের যে প্রয়োজন হয় তার বিপরীতে এই ব্যাপারটাকে "ক্রুশাল লুজিং ফ্যাক্টর" হিসেবে বিবেচনা করেছেন মেজর মইন।
[৪]
কামালপুর যুদ্ধে ঘোর অন্ধকার আর মুষলধারে বৃষ্টির কারনে যু্দ্ধ প্রায় মিনিট ৩০ দেরীতে শুরু হয়। কিন্তু এদিকে জেড ফোর্সের প্রিএইচ আওয়ার বোমা গুলোও বিস্ফোরিত হতে থাকে । ফলে নিজেদের বোমাতেও ১ম বেংগল ধরাশায়ী হয়েছিলো সে রাতে।

কামালপুর যু্দ্ধের আহত-শ্রান্ত যোদ্ধাদের নিয়ে ফিরে আসলেন জিয়া এবং মইন।সেদিন ৩১ শে জুলাইতেই জিয়া মেজর শাফায়াত জামিলকে ৩য় বেংগল সহ পাঠান জেড ফোর্সের ২য় অপারেশনে........

এটিই ছিলো বাহাদুরাবাদ ফেরীঘাটের যুদ্ধ......................


ফুল রেসোলিউশন ইমেজ
১৯৭১ , জুলাই ৩১ , দুপুরবেলা যাত্রা শুরু করেন ৩য় বেঙ্গলের সৈন্যরা। বাম থেকে ৪র্থ কমান্ডার শাফায়েত জামিল,৫ম লেঃ নুরুন্নবী, ৭ম সুবেদার হাফিজ এবং তার পেছনে ক্যাপ্টেন আনোয়ার। লক্ষ্য বাহাদুরাবাদ ফেরীঘাট।

কামালপুরের শাহ কামাল (রাঃ) এর মাজারের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন শাফায়াত জামিল। এর পর ৩ টি ছোট বড় নদী আর কাদাপানিতে হেঁটে প্রায় ২৫ মাইল পেরিয়ে সবুজপুরে পৌছান। সেখান থেকে ১২ টি নৌকায় অপারেশন জোনে পৌছান।

ব্রহ্মপুত্র আর যমুনার সাথে যেখানে তিস্তা এসে মিশেছে তার বিপরীতে ব্রহ্মপুত্রের পুর্বপারে বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট যেখান থেকে চিলমারি বন্দর , কুড়িগ্রাম , উত্তরবঙ্গ আর ব্রহ্মপুত্রের ২ পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটিগুলোকে নিয়ন্ত্রন করা যায়।

১ লা আগস্ট ভোর রাত ৫টায় লেঃ নুরুন্নবির ডেল্টা কোম্পানি ১ম হিট করে। ডেল্টা কোম্পানিকে ব্যাকআপ দেয় লেঃ আনোয়ারের আলফা কোম্পানি। আক্রমনে ছিল মর্টার প্লাটুন আর স্বয়ং শাফায়াত জামিল তার ব্যাটালিয়ন হেডকোয়াটার নিয়ে অপারেশন ফ্রন্টে ছিলেন।

৩০ মিনিটের সেইযুদ্ধে ৩ টি বার্জ , ২ টি শান্টিং ইঞ্জিন ধ্বংস করা হল আর ২ টি বগিতে হেভী মেশিন গানের ব্রাশ ফায়ার করে বেশকিছু পাকসেনা আহত নিহত করা হল। এর ফলে বাহাদুরাবাদ ঘাট ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয় আর উত্তরবঙ্গের সাথে বাহাদুরাবাদ রেলরাউট ক্লোজ হয়ে যায়।
এই অপারেশনে জেতার পর ৩য় বেঙ্গল দেওয়ানগঞ্জ ষ্টেশন এবং সুগারমিল রেস্ট হাউজের পাকিস্তানি ঘাঁটিতে আক্রমণ করে সফল হন। পুরো অভিযানে সবুজপুরের মানুষ শাফায়াত জামিলের বাহিনীকে আপনজনের মত আতিথেয়তা দেয়। এর জের ধরে পরবর্তি সময়ে সবুজপুর গ্রামটিকে পাক বাহিনি প্রতিশোধ স্পৃহায় জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়, রক্তাক্ত ম্যাসাকার চালায়।

এরই মাঝে জেড ফোর্সের ৩য় অপারেশনে জিয়া আবার নিজে আবার সম্মুখ সমরে হাজির হন ৩ রা আগস্ট ভোর ৩ টা ৪৫ এ। অপারেশনটির দায়িত্ব ছিল ৮ম বেঙ্গলের উপর।

সেটি ছিলো নকশী বিওপির যুদ্ধ...........................

শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার এ যুদ্ধে পাকিস্তানিদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।মুক্তিযোদ্ধারা রান অ্যান্ড ক্রল করে বিওপির ৫০ গজের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলো। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের তীব্রতায় পাকিস্তানী সেনারা বিওপি ছেড়ে পাশ্ববর্তী ক্ষেতে পালিয়েছিলো।এ যুদ্ধে হেরে যাবার মূল কারন পাকবাহিনীর প্রচণ্ড মর্টার আক্রমণ। পাকআর্মির পুতে রাখা মাইনও আরেকটি কারন। আক্রমণে ছিল ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদের ব্রাভো কোম্পানি আর লেঃ মোদাসেরের ডেল্টা কোম্পানি।সুবেদার হাকিমের ইপিআর কোম্পানিটি ছিল কাট অফ পার্টি হিসেবে।ফায়ারিং কভার দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার মেজর আমিনুল হক।আর বিওপির পাশে শালবনে ফরোওয়ার্ড এরিয়া অ্যাসেম্বলী থেকে জিয়া ওয়ারলেস যোগাযোগের মাধ্যমে যুদ্ধ কোঅর্ডিনেট করছিলেন। সে যুদ্ধে মেশিনগানের গুলিতে ক্যাপ্টেন আমিন আহত হলে ব্রাভো কোম্পানি মনোবল হারায়। মোট ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সে যুদ্ধে শহীদ হন।ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে থাকলে মেজর আমিনুল হক ২ জন এন্সিও আর জেসিওকে সংগে নিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে হেভি মেশিনগানের ফায়ারিং এর ভেতর তাকে উদ্ধার করেন।

ফিরে আসি মেজর শাফায়াত জামিলের কাছে...............বাহাদুরাবাদ ঘাট আর দেওয়ানগঞ্জে যুদ্ধবিজয়ী ৩য় বেঙ্গল তেলঢালায় ফেরার পথে শাহ কামালের মাজারের পাশে একটি জিপ গাড়ীর পাশে মেজর জিয়াকে দুঃশ্চিন্তিত দেখতে পায়। ফিরতে দেরী দেখে জিয়া ধারনা করেছিলো ৩য় বেঙ্গল বাহাদুরাবাদ অপারেশনে হয়তো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। কিন্তু সাফায়াত জামিল দেওয়ানগঞ্জ অপারেশনের কথা জানিয়ে জিয়া কে বলেন এখন দেশের ভেতরে থেকে যুদ্ধ চালানো কোন ব্যাপারই না।
শুনে জিয়া হেসে ওঠেন , বলেনঃ
তাহলে তো একবার সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই হয়

এখানেই শুরু হয় জেড ফোর্স আর রৌমারির গল্প......................


ফুল রেসোলিউশন ইমেজ
রৌমারি হাইস্কুলের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছেন জেড ফোর্স অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান

৬ ই আগস্ট ৩য় বেঙ্গলের লেঃ নুরুন্নবির ডেল্টা কোম্পানিকে রৌমারি মুক্তাঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে পাকিস্তানী বাহিনী ৪ ঠা আগস্ট চর কোদাল কাটি নামক রৌমারির নিকটবর্তি স্থান দখল করে নেয়। বাহাদুরাবাদ এবং দেওয়ানগঞ্জ অপারেশনে দুঃসাহসিক সাফল্যের জন্যই ডেল্টা কোম্পানিকে রৌমারি ডিফেন্সের দায়িত্ব দেন জিয়া সাফায়াত জামিলের সুপারিশ ক্রমে।

৮ ই আগস্ট ফোর্স কমান্ডার জিয়ার নির্দেশে লেঃ নুরুন্নবি রৌমারির স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে নগর কমিটি তৈরি করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ১ম বেসামরিক প্রশাসন চালু করেন।

১১ ই আগস্ট মেজর জিয়া ভারতীয় মেজর জেনারেল গুলবত সিং গিলকে সংগে নিয়ে রৌমারি পরিদর্শনে আসেন তেলঢালা থেকে।

১৩ ই আগস্ট জিয়ার নির্দেশে লে: নুরুন্নবী রৌমারি হাইস্কুলে স্বাধীন বাংলাদেশের ১ম সেনানিবাস স্থাপন করেন। সেখানে সামরিক স্কুলও চালু করা হয় যেখান থেকে ১৮০০০-২০০০০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিয়েছে


ফুল রেসোলিউশন ইমেজ
অপারেশনে যাওয়ার আগে জিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি তদারকি করছেন

সেসময় জিয়া আর শাফায়াত একসাথে ঘুরে বেড়াতেন রৌমারী মুক্তান্চ্ঞলের আনাচে কানাচে মাতৃভূমির স্বাদ নেয়ার জন্য। তাদের ভেতরে দাগ কেটেছিলো স্বাধীকার-স্বাধীনতাকামী এদেশের মানুষের সুকঠিন প্রতিরোধ সংকল্প , মেরে মরবো যুদ্ধ ক্ষুধা.......
তেমনই দুটো ঘটনা জানুন শাফায়াত জামিলের কাছ থেকে............





ফুল রেসোলিউশন ইমেজ
চিলমারী , সেপ্টেম্বর ১৯৭১ , মেজর জিয়া , মেজর সাফায়াত জামিল , লে: নুরুন্নবী

এই রৌমারি থেকেই জিয়ার নির্দেশে বকশীগন্জ্ঞ , ছালিয়া পাড়া , কোদালকাটি যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। ক্যাপটেন হাফিজের মতে কোদালকাটি যুদ্ধে ৭০ জন পাকসেনা নিহত হয়।
কোদালকাটির সম্মুখ সমরে জিয়া নিজে উপস্থিত ছিলেন...........


ফুল রেসোলিউশন ইমেজ
রৌমারী , সেপ্টেম্বর , ১৯৭১, দেওয়ানগন্জ্ঞে একটি পাকিস্তানী ঘাঁটিতে সফল অপারেশনের পর মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে আসছে।

এ সময় জেড ফোর্সের মুক্তিযুদ্ধের উপর মার্কিন এনবিসি চ্যানেলের একটি দল রবার্ট রজার্সের নেতৃত্বে সারা বিশ্বে সাড়া জাগানো ২ টি প্রতিবেদন তৈরী করে:
A Country Made for Disaster এবং Dateline Bangladesh

ইউটিউবে মেজর জিয়ার একটি মুক্তিযু্দ্ধ চলাকালীন ইংরেজী সাক্ষাৎকার বহুল প্রচারিত। এটি সম্ভবত রবার্ট রজার্স জিয়ার যে সাক্ষাৎকার রৌমারিতে নিয়েছিলেন তারই খন্ডাংশ........চেক করে দেখতে পারেন

নুরুন্নবি সেখানে কাস্টমস অফিস , থানা , স্কুল এবং পোস্ট অফিসের কাজ শুরু করেছিলো। ১০ শয্যার ১ টি হাসপাতাল ও চালু করেছিলো।
চমকপ্রদ এই যে যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই জিয়া রৌমারী থেকে ১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে জমা দিয়েছিলেন.......

২১ শে আগস্ট জিয়া ক্যাপটেন অলি আহমেদকে সংগে নিয়ে পুনরায় রৌমারি আসেন এবং দিনক্ষন আলোচনা করেন কখন স্বাধীন বাংলাদেশের ১ম বেসামরিক প্রশাসন উদ্বোধন করা যায়.........

২৮ শে আগস্ট সকাল ৮ টায় মেজর জিয়াউর রহমান মুক্ত বাংলাদেশের ১ম পোস্ট অফিস উদ্বোধন করেন।


ফুল রেসোলিউশন ইমেজ
রৌমারি হাইস্কুলের সামনে মেজর জিয়াউর রহমান , ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার সাবিদ সিং , মেজর সাফায়াত জামিল এবং স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ

একে একে জিয়া থানা সদর , হাসপাতাল , স্কুল , আদালত , রাজস্ব ও অন্যান্য অফিস উদ্বোধন করেন।

সেদিন মেজর জিয়া সেখানে হাজার হাজার জনতার উদ্দেশ্য ভাষনে বলেন:
রৌমারির প্রতিটি নারী-পুরুষ আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে.........

জবাবে সমবেত জনতা গর্বভরা গর্জন আওয়াজে জিয়াকে অভিনন্দিত করেন :

জয় বাংলা , জয় জিয়া , জয় মুক্তিবাহিনী

আর এভাবেই মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে কালুর ঘাটের চির রোমাঞ্চকর "আমি মেজর জিয়া বলছি" কিংবদন্তির পর আরো একবার ভাগ্যের বরমাল্য পেলেন মেজর জিয়াউর রহমান বীরউত্তম !



তথ্যসূত্র :

১. মুক্তির জন্য যুদ্ধ , কর্নেল শাফায়াত জামিল বীরবিক্রম
২. এক জেনারেলের নীরব স্বাক্ষী , মেঃ জেঃ মইনুল হোসেন বীরবীক্রম
৩. উইটনেস টু সারেন্ডার , মেজর সিদ্দিক সালিক
৪. বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি : মুক্তিযু্দ্ধে রৌমারি , অজয় রায়
৫. মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট

সংবাদপত্র সংযুক্তি :
তোমাদের এই ঋণ শোধ হবেনা / দৈনিক প্রথম আলো
১. ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ বীরউত্তম এর পরিবারের সাক্ষাতকার
২. লে: আবদুল মান্নান বীরবীক্রম এর সাক্ষাৎকার
৩. আবদুল হক বীরপ্রতীক এর সাক্ষাৎকার
৪. জালাল আহমেদ বীরপ্রতীক এর পরিবারের সাক্ষাতকার
৫. এম এ মান্নান বীরবীক্রম এর সাক্ষাৎকার
৬. শামসুজ্জামান বীর উত্তম এর পরিবারের সাক্ষাৎকার

১-৩: কামালপুর বিওপির যোদ্ধা
৪-৬: নকশী বিওপির যোদ্ধা

দৈনিক সমকাল / লেঃ কঃ নুরুন্নবী খান বীর বীক্রমের সাক্ষাৎকার
দৈনিক ভোরের কাগজ / ডিসেম্বর ৪ , ২০০৯
দৈনিক আমার দেশ / ডিসেম্বর ১৫ , ২০০৯
দৈনিক ইত্তেফাক / মার্চ ২৬ , ২০১১

১৯৭১ , জেড ফোর্সের মুক্তিযুদ্ধ : জিয়া-শাফায়াত-মইন-আমিনুলদের যুদ্ধ দিনের গল্প জানুন ছবি আর বর্ননায়........

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৫৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×