somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেবানন্দ, প্রেমের দেবদূত থেকে দেবদাস..চিরসবুজ প্রেমিক..প্রেমলীলার বাজিকর

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে গেছেন বলিউডের চিরসবুজ এক সিনে ব্যক্তিত্ব ‘দেব আনন্দ।’ তাকে সাদা-কালো পর্দায় আবিস্কার করা ‘কিনারে কিনারে চালে যায়ে….’ গানের চেয়ে আরো ভালোভাবে চেনা যায় তার সাহেবি ঢং আর ডায়ালগ বলার স্টাইলে।

তার জীবনটাই ছিলো ফিল্মের মতো রঙিন। সেখানে প্রেম এসেছে বহুবার বহু রঙে। সে প্রেম ফিল্মি প্রেমের মতোই তাকে রাঙিয়ে গেছে। সুরাইয়া, কল্পনা কার্তক, জিনাত আমান, পারভীন ববির মতো নায়িকারা তার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে। প্রায় পাঁচটি বছর ধরে বলিউডে টানা রাজত্ব ছিলো তার। কিন্তু যে সময়ে তিনি বলিউডে এসেছিলেন। মোটেও তার পথ সহজ ছিলোনা। রাজ কাপুর আর দীলীপ কুমারদের সময়টাকে অবশ্য নিজের সময় করে নিতে তার মোটেও কষ্ট হয়নি।

বলিউডে ঢোকার আগে চা বয়েছেন তিনি। কিন্তু জহুরী হীরা চেনেন। চোখে পড়ে যান পরিচালক প্রভাত তালকিসের। ‘হাম এক হ্যায়’ ছবিতে সুযোগ পান তিনি। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। আর প্রেম।

লাহোরের সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যের ওপর মাস্টার্স পাশ করেন তিনি।দেব আনন্দ নাম হলেও তাকে সবাই ডাকতো ‘দেব সাহেব’ নামে। কারণ তার চলনে ছিলো সাহেবী ঢং, সাদাসিদা কিন্তু কাজে দারুন মুন্সিয়ানা। ফিল্মি দুনিয়ায় গুরু দত্তের সঙ্গে বন্ধুত্বটা তাদের দুজনকে খ্যাতির শির্ষে এনেছিলো।

প্রখম প্রেম সুরাইয়া। ফিল্মের রঙিন নেশা লাগলো দচোখে। সদ্য যুবক। আর সুরাইয়ার ভরা যৌবন। একসঙ্গে অভিনয়। ছোঁয়া আর দূরত্বের ‍একটা পরিসর। সুযোগ। প্রেম আসি আসি করেও আসছিলো না। টান ঠিকই ছিলো। কিন্তু প্রেমের দেব তো বুকে ছুরি মেরে বসে নেই। তাকে সুযোগ দিলেন প্রেমে ডুব দেবার। সে প্রেমের পরিণতি এতোটাই ভয়াবহ ছিলো যে, সুরাইয়াকে সারাজীবন একা কাটাতে হয়েছে আর দেবকে…. সুরাইয়ার প্রতি নেশা কাটাতে একের পর এক নতুন প্রেমে পড়তে হয়েছে…স্থিরতা আসেনি..জীবনে কল্পনা কার্তিক বা মোনা সিং এসেছে তবুও না…তবে জিনাত আমান..একটা নতুন মোড় দিতে পেরেছিলো। রোমান্সিং উইথ লাইফ’। তার আত্মজীবনীর নাম এখানেই তিনি লিখেছেন তার রোমান্সের কথা একেবারে আকর্ষনীয় ভাষায়। সুরাইয়াকে পাবার জন্য তিনি শুরু থেকেই তার মতো হবার চেষ্টা করেছিলেন। সুরাইয়াকে পেতে তিনি নাকি সুরাইয়ার প্রিয় নায়ক গ্রেগরি পেকের অনুকরণ শুরু করেন আর সুরাইয়ার মন পাওয়ার সব চেষ্টা চালিয়ে যান। বিদ্যা ছবির ‘কিনারে কিনারে চালে যায়ে’ গানটির শুটিংয়ের সময় ঘটে এক দুর্ঘটনা। নৌকা যুবে যায়। ঠিক যেনো রবী ঠাকুরের নৌকাডুবি। সুরাইয়া বাঁচিয়ে দেব আনন্দ পেয়ে যান তার প্রেমের পুরস্কার। তাদের প্রেম জমে ওঠে। একের পর এক এ জুটির রাসায়নিক প্রেমের ছবি হিট হতে শুরু করে। সুরাইয়াকে ‍আপন করতে গিয়েই আটকে যান দেব। সেই চিরকালের সমস্যা। ধর্ম। বাধা হয়ে দাঁড়ালো প্রগতিশীলদের মাঝেও। প্রেম আলাদা হলো। দুভাগ হলো দুটি হৃদয়। আর দর্শক বঞ্চিত হলো এ জুটির রসায়ন থেকে। এরপরই ঝড় উঠলো দেবের জীবনে… অশোক কুমার ‘জিদ্দি’ ছবিতে তাকে সুযোগ দেন। জিদ্দি হিট করার পর আর কখনও দেবকে অভিনয় নিয়ে ভাবতে হয়নি। করেছে। ১৯৫১ সালে গুরু দত্তের পরিচালনায় ক্রাইম থ্রিলার বাজি ছবিটি তৈরি করেন দেব। এ ছবিতে নায়িকা হিসেবে আসেন কল্পনা কার্তিক যাকে সবাই মোনা সিং বলেই জানতো। এ জুটির আন্ধিয়া, ১৯৫৪ ফিল্ম, হাইজ ন.৪৪ ছবিগুলো হিট হয়। ট্যাক্সি ড্রাইভার ছবির শ্যুটিংয়ে কল্পনার প্রেমে পড়েন দেব। তিনি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এর পর কল্পনাকে বিয়ে করেন তিনি । কিছুটা স্থিরতা এলো। কিন্তু প্রথম প্রেমের জ্বালা ভুলতে দেবকে আরো অনেক প্রেমের নদীই সাঁতরাকত হলো…অনেক নায়িকা..সবার সঙ্গেই তার প্রেমের গুজব বের হতে শুরু করলো তার কতোটা সত্যি আর কতোটা বানোয়াট তা দেবের চিরসবুজ মনই জানে। এলো জিনাত আমান। ডুবে গেলেন দেব। প্রেমে-রূপে-কামে। অস্থির, নেশা। কিছুতেই জিনাতকে ভূলতে পারেন না। জিনাতও তেমনি। দেবকে নাচাতে শুরু করলেন। রূপের আগুনে পোড়াতে লাগলেন। শেষতক দেব প্রস্তাব দেবেন বলেই ঠিক করলেন। কিন্তু হঠাৎ মেঘ সরে গেলো। সত্য বেরিয়ে এলো আলোয়। দেব জানলেন..তার প্রতিদ্বন্দি রাজ কাপুর দখল করে রেখেছে জিনাতের হৃদয়। হায় জিনাত….. দেব আনন্দ এখন দেবদাস। মনের বয়স যে কমেনি। প্রেম কি বয়স ভেবে আসে? সুরাইয়া-জিনাতকে ভুলগত পারভীন ববি..হেমা মালিনি পর্যন্ত এসেছিলেন দেব। কিন্তু দেবের যে পাবর্তী গেছে চলে…দেব আনন্দ তো নয় তিনি যে চিরসবুজ দেবদাস।

বয়স যখন ৮৮ তখন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে অবসর কাটানোর সময় কারণ তার খ্যাতি, অর্থ সবই আছে। কিন্তু এ বয়সে এসেও তিনি কাজ করতেন। ছবি তৈরির কাজ করতেন। ভাবতেন বলিউডের বর্তমান অবস্থায় তার পুরোনো ছবিগুলো রিমেক করা নিয়ে। এতো কাজেও কিন্তু তার কোনো্ ক্লান্তি নেই। এমনই কাজপাগল আর কাজের প্রতি ছিলো তার ভালবাসা। এক জীবনে সব পেয়েছেন তিনি। পাওয়ার কিছু বাকি না থাকলেও তার মধ্যে ছিলো নতুন কিছু করার, সৃষ্টিশীল কিছু করার চেষ্টা। বড়ো কিছু আর সব সাধারণের চেয়ে অসাধারণ হবার চেষ্টাটার নামই দেব আনন্দ।

দেব আনন্দ তাঁর দীর্ঘ ৫০ বছর অভিনয় জীবনে বলিউডকে দিয়ে গেছেন একের পর এক সুপার-ডুপার হিট ছবি। উল্লেখ্য, জিঙ্গি, জাল, সি আই ডি, পেয়িং গেষ্ট, কালা পানির মতো কিছু ছবি। সুপার ডুপার হিট ছবি -হরে রাম হরে কৃষ্ণ। এই ছবি থেকে উঠে এসেছিলেন জিনাত আমান। বলিউডে চলার পথেই দেব সাহেব প্রতিষ্ঠা করলেন নিজের প্রডাক্শন হাউস। ‘নভকেতন‘। এই হাউস থেকেই গুরু দত্তর পরিচালনায় তৈরী হয়েছিলো বাম্পার হিট ছবি ‘বাজি’। এরপরের হিট ছবি রাজ কাপুরের ‘আওয়ারা’। ২০০১ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণে ভূষিত হয়েছেন দেবানন্দ। ২০০২ সালে ওনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার।

৩ ডিসেম্বর পৃথিবী ছেড়ে গেছেন বলিউডের চিরসবুজ অভিনেতা বলে খ্যাত দেব আনন্দ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। দেব আনন্দের বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। তবে এই বয়সেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে কয়েকদিন ধরে অসুস্থ বোধ করায় তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন। কিন্তু চিরসবুজ রোমান্টিক দেব আনন্দ পৃথিবীর মায়া ছেড়েই গেলেন।

শরৎচন্দ্রের দেবদাস আর বলিউডের দেব আনন্দ একই চরিত্র। পার্বতীরা হারিয়ে যায়..কিন্তু চিরসবুজ দেবদাসরা দেব আনন্দের পুরোনো সাদা-কালো গানই গেয়ে চলেন….. কিনারে কিনারে চালে যায়ে….’ বা দম মারো দম….
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×