somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সাথী বাই বউ ( বাল্যকালের ঘটনা )

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ছোট বেলায় ইনফেন্ট শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে আমার শিক্ষা জীবন শুরু করি । বর্তমানের মত কেজি ১ বা কেজি ২ এর পর ক্লাস ওয়ান পড়ার ল্যাঠা ছিলোনা । আবার এখনকার মত শিশুর ওজনের চেয়ে বইয়ের ব্যগের ওজন বেশী ছিলোনা । ইনফেন্ট থেকে সোজা ওয়ানে । তখন লেখাপড়া কি জিনিষ তাই বুঝতাম না ভাবতাম বাসায়তো খেলার সঙ্গী সাথী কম তাই সবাই বোধহয় স্কুলে যায় খেলাধুলা করতে । আমাদেরকে একটা ঘরে বেঞ্চে বসিয়ে একজন দাড়িওয়ালা লোক গল্প বলতো পরে জেনেছিলাম ওনাকে স্যার বলতে হয় । কতদিন যে স্যারের দাড়ি ধরে টেনেছি তার ইয়ত্তা নেই । স্যারকে কতদিন হাত মুটি করে কিল দেখিয়েছি মনে নেই । স্যার কখনো রেগেছেন বা বকেছেন বা মেরেছেন মনে পড়েনা শুধু মনে পড়ে স্যারের প্রশ্রয় সুলভ হাসি । এভাবেই স্কুলে যেতে যেতে কবে যেন লেখাপড়া শিখে উঠেছি বুঝতে পারিনি । হইচই করতে করতে যখন বড় ক্লাশের পাশ দিয়ে দৌড়াতাম তখন ক্লাশের ভিতর থেকে হিশশ্ শব্দ আসতো হইচই না করার জন্য আমি ভাবতাম ওরা খেলেনা কেন ? কি বোকা ! স্কুল থেকে ফিরে এসেও খেলার কমতি নেই । সন্ধ্যা হলেই চোখ ঢুলু ঢুলু ঘুমে কাতর হয়ে পড়তাম । মা বলতেন পড়তে বস্, না পড়লে রাতে খেতে দেবোনা, রাতে হয়তো ইলিশ মাছ ভাজা হয়েছে আর নয়তো মরগী রান্না হয়েছে যেটার পেটে ছোট ছোট লোভনীয় ডিম ছিলো । এত কিছুর লোভ কিছুতেই ঘুমকে নির্বাসনে পাঠাতে পারতো না ।পড়তে বসে ঢুলতেই থাকতাম । একসময় মা খেতে দিতেন মানে আসলে খাইয়ে দিতেন নাহলে খাবার অর্ধেক মাটিতে পড়তো ( একবার মনে আছে মা, খেতে দিয়ে কি কাজে যেন কাছ থেকে সরে গেছেন । আমার পাতে ডাল ঢেলে দিয়ে ভাত চটকে দিয়েছিলেন আমি নিজ হাতে খাচ্ছিলাম । ওটাকে আরও সুস্বাদু করার জন্য ওর মধ্যে ঢেলে নিলাম সর ভর্তি দুধ, তারপর খেতে ভাল না লাগায় ওর মধ্যে নিলাম মাছের ঝোল, তারপরও ভাল না লাগায় আর কি নেওয়া যায় ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কানটা গরম হয়ে গেল । ঘটনা আর কিছুইনা কখন আমার অজান্তে মা এসে ঘটনা দেখে আমার কান মুচড়ে দিয়েছেন । ) মাকে জিজ্ঞেস করতাম মা লেখাপড়া করে কি হবে ? মা বলতেন উচু ক্লাসে ওঠার জন্য লেখাপড়া করতে হবে । ব্যপারটা না বুঝে কিছুক্ষন ভেবে মাকে বললাম মা, আমিতো এখনই উচু ক্লাসে পড়ি । মা জিজ্ঞাসু নেত্রে হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন কিরকম ? আমি বললাম আমিতো এখনই বেঞ্চে বসলে মাটি নাগাল পাইনা শুনে মার হাসির বাধ ভেঙ্গে গেল পেট চেপে ধরে হাসতে লাগলেন সাথে বড় আপুদেরও হাসির বন্যা ছুটলো । আমি ভ্যাবাচেকা হয়ে ভ্যা করে কেঁদে দিলাম লজ্জায় আর অপমানে । এর পর আমাকে থামানোর জন্য শুরু হল আদর আর চুমুর বন্যা । এভাবে হেসে খেলে বছর পেড়িয়ে গেল । ক্লাস ওয়ানে উঠলাম স্যার বললেন বোর্ডে বুক লিষ্ট লিখে দিচ্ছি আগামী কাল সেই অনুযায়ী সবাই বই নিয়ে আসবে । বিষয়টা আমি কিছুই বুঝলাম না বুকলিষ্ট আবার কি জিনিষ । যাই হোক স্যার লিখলেন " আমার সাথী বাই বোর্ড " ( তখন বোর্ড কর্ত্বৃক প্রনীত আমার সাথী বইটি ক্লাস ওয়ানে পড়ানো হত পরে বোধহয় সবুজ সাথী প্রনীত হয় ) স্যার 'ড' এর উপর রেফটা এমন ভাবে লিখেছেন যে আমার মনে হল ওটা 'উ' তাই আমি লিখলাম, "আমার সাথী বাই বউ " এরপর বাসায় এসে মাকে দেখাতে আবার পড়লাম হাসির হুল্লোরের ভিতর । মা বললেন, যা পছন্দ মত সাথী নিয়ে আয় তোর বউ বানিয়ে দেই বড় আপুরাতো এমনিতেই নাচুনী বুড়ী এবার পড়লো ঢোলের বারি । আমাদের পিচ্চিদের দলের এক একটা মেয়েকে এক একদিন ধরে এনে বলতো এইনে তোর বউ এখন থেকে ওকে বোগল দাবা করে স্কুলে নিয়ে যাবি । আর পিচ্চি মেয়েগুলোও ছিলো খুব রাজী । এ ব্যপারটি বহুদিন হাসির খোরাক হয়ে ছিলো । আজ সেই স্নেহবান শ্রদ্ধেয় স্যারের কথা মনে পড়ে যিনি দাড়ি টানার অত্যাচার হাসিমুখে সয়েছেন স্যার নিশ্চয়ই আমাকে মাফ করেছেন আজকে ভাবতে গিয়ে কিছুতেই কান্না থামানো যাচ্ছেনা বার বার চোখ ভিজে যাচ্ছে আজকে স্যারকে পেলে স্যারের পায়ে চুমু খেয়ে স্যারকে সম্মান জানাতাম । শেষটুকু ঝাপসা চোখে লিখলাম ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থী ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০৪
১১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি বললে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৭

তুমি বললে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

খুব তৃষ্ণার্ত, তুমি তৃষ্ণা মিটালে
খুব ক্ষুধার্ত, তুমি খাইয়ে দিলে।
শ্রমে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত দেহে তুমি
ঠান্ডা জলে মুছে দিলে, ঊর্মি
বাতাস বইবে, শীতল হবে হৃদয়
ঘুম ঘুম চোখে পাবে অভয়।
তোমার আলপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×