somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্বত্য শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি এবং কিছু প্রশ্ন

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পার্বত্য শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি এবং কিছু প্রশ্ন
ড. রাহমান নাসির উদ্দিন
আজ ২ ডিসেম্বর 'পার্বত্য চুক্তি'র, যা জনপ্রিয়ভাবে 'শান্তিচুক্তি' নামে বহুল পরিচিত ১৪ বছর পূর্তি। ১৯৯৭ সালের এই দিনে পাহাড়িদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি এবং রাষ্ট্রের (রাষ্ট্রের পক্ষে তৎকালীন সরকার) মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এটা বিশেষ স্বস্তিকর ও আরামদায়ক ব্যাপার হতো যদি এটাকে '১৪ বছর পূর্তি উৎসব' বলে লেখার প্রারম্ভনা করা যেত; কিন্তু অবস্থা ও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এটাকে উৎসবের নামাবরণে ঢাকা যাবে না। অধিকন্তু নিজেদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি ও পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং এর বাইরে যেভাবে প্রতিবাদ ও সমাবেশ-কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, সে বিবেচনায় এটাকে বরঞ্চ 'প্রতিবাদ দিবস' বলা যেতে পারে। রাষ্ট্র-চরিত্রের বিরুদ্ধে এবং পার্বত চুক্তিকেন্দ্রিক রাষ্ট্রীয় ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। প্রতিবছর ডিসেম্বরের ২ তারিখ এলে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবনে বিশেষ করে পাহাড়িদের জীবনে 'শান্তি' কতটা আছে কিংবা নেই তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করি এবং আমার ভাবনা-চিন্তাগুলোকে লেখায় প্রকাশ করি। দিবসকেন্দ্রিক এ লেখালেখিতে আমি কিছু জিজ্ঞাসা উপস্থাপন করি এবং এর মুখোমুখি দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। যেমন_রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণী এবং পাহাড়ি পলিটিক্যাল এলিটদের মধ্যে সংলাপ, দেনদরবার এবং দরকষাকষির মাধ্যমে স্বাক্ষরিত চুক্তি কি আদৌ পাহাড়ে শান্তি আনতে পারে? যে চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়ায় আপামর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আবেগ, আকাঙ্ক্ষা এবং নিত্যদিনের অভিজ্ঞতাকে অনুধাবন করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি, সে চুক্তির বাস্তবায়ন দিয়ে কি আদৌ শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব? যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত অধিকাংশ বাঙালি এখনো পাহাড়িদের বাংলাদেশের নাগরিক বলেই স্বীকার করে না, সেখানে চুক্তি করে কি শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব? যে পার্বত্য চট্টগ্রামের সিভিল এবং মিলিটারি প্রশাসন চিন্তা এবং চেতনায় পাহাড়িদের প্রতি একধরনের আধিপত্যবাদী মনোভাব পোষণ করে, সেখানে চুক্তি করে কি শান্তি আনা যাবে? যেখানে পাহাড়িদের মধ্যকার অনেক এলিট পলিটিশিয়ান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হয়ে, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে, সেখানে চুক্তি দিয়ে কি শান্তি আনা সম্ভব? যেখানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সত্যিকার অর্থে পাহাড়িদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং খোদ শান্তিচুক্তি নিয়ে রাজনীতি করে, সেখানে শান্তি স্থাপন করা কিভাবে সম্ভব? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা জরুরি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক পাহাড়িদের মধ্যে বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে গবেষণার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি সাধারণ পাহাড়িরাই (খুমি, ম্রো, খেয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, বম এবং চাক) পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান সংঘাত এবং সংঘর্ষের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের প্রত্যক্ষ ভোক্তা ও ভুক্তভোগী। শান্তিচুক্তি পূর্ববর্তী সময়ে পাহাড়িদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতির নেতৃত্ব ও শান্তিবাহিনীর সদস্যরা সেটেলার বাঙালির অত্যাচার এবং মিলিটারি অপারেশনের সরাসরি টার্গেট থাকলেও সাধারণ পাহাড়িরাই দীর্ঘমেয়াদে এ সংঘাত ও সংঘর্ষের মাসুল দিয়েছে তাদের নিত্যদিনের জীবন যাপনের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে। এমনকি চুক্তি-পরবর্তী সময়েও সাধারণ পাহাড়িরাই ভোগ করছে পাহাড়ি ও বাঙালির সেই দ্বন্দ্বের উত্তরাধিকার হিসেবে নানা রকমের তিরস্কার, অত্যাচার, অপমান ও নির্যাতন। সেখানে না থাকে শান্তিচুক্তি, না থাকে রাষ্ট্র, না থাকে সংহতি সমিতি বা জেএসএস। সেখানে থাকে সাধারণ পাহাড়ি আর এতদঞ্চলের সংঘাতময় উত্তরাধিকার। এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে কেবল চুক্তি করেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না_এ ভাবনা থেকেই আমি উলি্লখিত জিজ্ঞাসাগুলো হাজির করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে কেন শান্তি আসছে না, তা উপলব্ধির জন্য আমি নিম্নে দুটি বক্তব্য পেশ করছি।
সিমলিং বম নামের একজন পাহাড়ি আমাকে ২০০৮ সালের আগস্টে বলেছেন, 'শান্তি কেবল পাওয়া যাবে শান্তিচুক্তিতে। আমাদের জীবনে আসলে শান্তি বলে কিছু নেই। শান্তিচুক্তির আগে এবং পরে আমরা আমাদের জীবনের কোনো পরিবর্তন দেখি না। সরকার, পুলিশ, বিডিআর, মিলিটারির আচরণের মধ্যেও তো কোনো পরিবর্তন দেখি না। প্রশাসনের আচার-ব্যবহারেও কোনো পরিবর্তন নেই। শান্তিচুক্তি করার ফলে বাঙালিরা বরঞ্চ আরো গোসসা করেছেন। দিন নেই, রাত নেই খোঁচায়! অত্যাচারের পরিমাণ কেবল বেড়েছে। শান্তিচুক্তির পর কোনো ক্ষেত্রেই কোনো পরিবর্তন তো দেখলাম না। পরিবর্তন যদি কিছু হয়ে থাকে, সেটা হয়েছে রাষ্ট্রের কাছে আমাদের কিছু নেতার কিছুটা কদর বেড়েছে। আগে তাঁরা আমাদের লোক ছিল, এখন হয়েছে সরকারি লোক।' এ বক্তব্য থেকে যেটা অনুমিত হয়, সেটা হচ্ছে শান্তিচুক্তি আসলে সাধারণ পাহাড়িদের জীবনে সত্যিকার কোনো শান্তি বা ইতিবাচক পরিবর্তন আনেনি। যা এনেছে তা হচ্ছে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যকার দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের আরো অবনতি এবং পাহাড়ি নেতাদের সাধারণ পাহাড়িদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্নকরণ। এ প্রসঙ্গে একজন নন-সেটেলার বাঙালির বক্তব্য শোনা যাক। শাহ আলম নামক একজন মুদি দোকানদার ২০০৯ সালের এপ্রিলে আমাকে বলেছেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি কেমনে আসবে? আমরা কি মানুষ না? পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্ম নিয়েছি, এটাই কি আমাদের অপরাধ? পাহাড়িদের চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনভার দেওয়া হয়েছে। বাঙালিরা এখানে বসে বসে আঙুল চুষবে? পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশের বাইরে? আমরা কি বাংলাদেশের নাগরিক না? তাহলে আমরা এখানে দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক হিসেবে চিহ্নিত কেন? এখানে কোনো দিন শান্তি আসবে না? রাষ্ট্র যদি বাঙালিদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে, তাহলে এখানে শান্তি কি হাওয়া থেকে আসবে? আমার বাপ-দাদারা এখানে যুগ যুগ ধরে বসবাস করছেন। অথচ তাঁরা এখানে বহিরাগত। এটা তো কোনো বিচার না। আমরাও ছেড়ে দেব না।' নন-সেটেলার একজন বাঙালির এ মনোভাব ও আবেগকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এ দুটি বক্তব্য কেবল দুজন ব্যক্তির বক্তব্য নয়; এর ভেতর দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে দুটি ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের মনোভাবই প্রকাশিত হয়েছে। এ দুটি পরস্পরবিরোধী বক্তব্যই প্রমাণ করে, কেবল চুক্তি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
প্রতিবছর ডিসেম্বরের ২ তারিখ (১৯৯৭ সালের যেদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল) এলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান 'শান্তি'র হাল-হকিকত নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হয়, সংবাদপত্রে নিবন্ধ লেখা হয় এবং কোনো ধরনের গভীর গবেষণা ছাড়াই একটি সাধারণীকরণ মন্তব্য করা হয় যে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি নেই; কারণ ১৯৯৭ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন সরকারগুলো সম্পাদিত 'শান্তিচুক্তির শর্তগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করে নাই।' অতএব এটা একটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসে উপনীত হয়েছে যে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো শান্তি নেই এবং এ অশান্তির মূল কারণ হচ্ছে ১৯৯৭ সালের পর থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসা সরকারগুলো কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শর্তগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করা। অবশ্যই বিগত এক যুগেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতায় আমরা ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর মধ্যে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা লক্ষ করিনি। সে অর্থে 'শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়াই পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তির কারণ'_এটা বলার পেছনে একটি যৌক্তিকতা দাঁড় করানো যায়। কিন্তু কেবল শান্তিচুক্তির শর্তগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলেই পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তির অরণ্যোদ্যান হয়ে উঠবে_এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কেননা পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি থাকা বা না থাকাটা কেবল একটা একটা শর্ত ধরে চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে না। বরঞ্চ পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অধিকাংশই নির্ভর করছে পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যকার বিরাজমান ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দ্বৈরথের দূরত্ব কতখানি কমল এবং একত্রে বসবাস করার মানসিকতার কতটুকু পরিবর্তন হলো এবং সর্বোপরি পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদী একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় একত্রে বসবাস করার মনস্তাত্তি্বক প্রস্তুতির ওপর। কিন্তু বিষয়টি শব্দের পর শব্দ বসিয়ে লিখে দেওয়া যত সহজ, বাস্তবতা এবং বাস্তবায়ন তত সহজ নয়। শান্তিচুক্তির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে এখানেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি প্রতিষ্ঠার পুরো ব্যাপারটাকে শুরু থেকেই দেখা হয়েছে দুটি বিবদমান প্রতিপক্ষের_জনসংহতি সমিতির গেরিলা শাখা শান্তিবাহিনী এবং রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী-সশস্ত্র সংঘাত হিসেবে। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, চুক্তি করার মধ্য দিয়ে শান্তিবাহিনীর গেরিলারা অস্ত্রসমর্পণ করলে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেই সব লেটা চুকে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আর কোনো সংঘাত বা সংকট থাকবে না। এটা যে কতটা অপরিপক্ব চিন্তা ছিল, তা চুক্তি-পরবর্তী সময়ে উন্মোচিত হয়েছে। বিশেষ করে, পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত সাধারণ পাহাড়িরা তাদের প্রতিদিনকার জীবন যাপনের ভেতর দিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ে কতটা শান্তি এসেছে! শান্তিচুক্তির মাধ্যমে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বের কিছু কদর বেড়েছে রাষ্ট্রের কাছে, রাষ্ট্রীয় কিছু সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে এবং নেতৃস্থানীয় লোকদের মধ্যে কিছু পদ ও পজিশন এসেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্র পেয়েছে দেশের মানুষের হাততালি এবং কিছু আন্তর্জাতিক বাহবা। যে সরকার বাষ্ট্রের পক্ষে এ চুক্তি করেছিল, সে সরকার নিয়েছে কিছু রাজনৈতিক কৃতিত্ব। কিন্তু সাধারণ পাহাড়িদের জীবনে আদৌ কোনো শান্তি আসেনি। একজন পাহাড়ি আমাকে দুঃখ করে বলেছিলেন, 'শান্তিচুক্তি পাহাড়িদের জীবনে কেবল অশান্তিই এনেছে। জেএসএস পাহাড়িদের একটা সর্বজনীন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ছিল। সেটা এখন আর নেই। ইউপিডিএফ করে পাহাড়িদের নেতৃত্ব এবং প্রতিনিধিত্ব বিভক্ত হয়েছে। বেড়েছে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অনাস্থা। বাঙালিদের সঙ্গে যতটুকু বা যৎকিঞ্চিত স্বাভাবিক ও সহযোগিতার সম্পর্ক ছিল, সেটাও নষ্ট হয়েছে। বিরোধ ও অবিশ্বাস আরো প্রকটতর হয়েছে। এ সব কিছুই মূলত শান্তিচুক্তির নগদ ফল।'
এ রকম অসংখ্য অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি আমি পেশ করতে পারি, যার ভেতর দিয়ে পাহাড়ে শান্তি কতটা আছে বা নেই কিংবা শান্তিচুক্তি কতটা শান্তি কিংবা অশান্তি এনেছে তার একটা স্বরূপ পাওয়া যাবে। মূলত পাহাড়িদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতায় রাষ্ট্রের বেপরোয়া প্রবেশ তাদের বুঝিয়ে দেয় তারা 'মানুষ' নয়, 'পাহাড়ি'। এই নিষ্ঠুর বাস্তবতার ভেতর দিয়েই পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান শান্তির (নাকি অশান্তির!) স্বরূপ উপলব্ধি করা প্রয়োজন। পাহাড়ি পলিটিক্যাল এলিটদের সঙ্গে রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠীর যোগাযোগ, দাবি-দাওয়ার যোগ কিংবা বিয়োগ বিশ্লেষণ করে 'পাহাড়িদের জীবনের শান্তির উপস্থিতি' কোনোভাবেই উপলব্ধি করা যাবে না। এটা মনে রাখা জরুরি যে বহুবিধ এবং বহুমাত্রিক রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্তি্বক সমস্যার কোনো সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য এবং সবার-গ্রাহ্য একটা সন্তোষজনক সমাধান ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে কথিত শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কিংবা শান্তি প্রতিষ্ঠা আদৌ সম্ভব নয়। এটাও মনে রাখা জরুরি যে শান্তি একটি আপেক্ষিক ব্যাপার এবং এর রূপ-রস-গন্ধ একেকজনের কাছে একেক রকম। কিন্তু সার্বিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যতটা না প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতা, তার চেয়ে অধিক প্রয়োজন নৈতিকতা বোঝাপড়া। কেননা চুক্তি কেবল মেনে নেওয়ার ব্যাপার নয়, মনে নেওয়ারও ব্যাপার।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠী গবেষক

সূত্র: কালের কণ্ঠ, Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×