somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশপ্রেমের দায়ভার

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই তো দেখা যাচ্ছে আমাদের seasonal দেশপ্রেম। আমি নিজের কথাই বলছি, ডিসেম্বর আসলেই বিজয়ের মাসে, মনে পড়ে আমাদের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের ত্যাগ-তিতীক্ষার কথা। সকালের খবরের কাগজে কোনও একটা কলামে দিনপঞ্জীর মত করে ডিসেম্বর মাসের বিজয়গাঁথা ছাপানো হয়। আমার বড়মেয়ে খবরের কাগজের লেখা ইতিহাস পড়ে আমার আব্বু অথবা আম্মুকে জিজ্ঞেস করে যুদ্ধের কথা। আমাকে জিজ্ঞেস করে, আম্মু যুদ্ধের সময় তুমি কোথায় ছিলে? ১৯৭১ মানে তার কাছে যুদ্ধ। আমার আব্বু এবং পরিবারের অনেকেই সেসময় সরাসরি স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন, তাই আমার মেয়ে আমার আব্বুর মুখ থেকেই যুদ্ধের গল্প শুনতে আগ্রহী। আমার যে ফুপাতো ভাইকে ১৪ বছর বয়সে হানাদার বাহিনী হত্যা করেছিল, তার নাম ও মৃত্যুর ঘটনা আমার মেয়ে জানে। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণদানের কারণেই আমার এই ফুপাতো ভাই আমার মেয়ের চোখে ব্রেইভ-হার্টের মেল গিবসনের মতই অনেক বড় একজন। জানিনা বেঁচে থাকলে ওনার সাথে আমাদের কতটুকু যোগাযোগ থাকতো, আমার মেয়ের প্রজন্ম পর্যন্ত ওনার পরিচিতি এতটা ব্যাপক হতো কীনা। জানিনা যেসব বাচ্চার পরিবারে ১৯৭১ এর সাথে এমন সরাসরি সংযোগ নেই তারা এতটা আবেগ এবং আগ্রহ নিয়ে ইতিহাস জানার জন্যে আকুল হয় কীনা। তবে এটা আমি নিশ্চিত, এখন আমার মেয়ে যা শুনছে আমার আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে, ততটুকু অন্ততঃ আমি তাকে বলতে পারতামনা। আমার জ্ঞান তো বইয়ের পাতায়। সেখান থেকে পড়ে বোঝালে সে কতটুকু আগ্রহী হতো কে জানে। গল্প বলার ঢং-ও আমার খুব একটা ভাল নয়।

যাহোক, ডিসেম্বর চলে গেলে শুরু হবে ফেব্রুয়ারীর তোড়জোর। ভাষা দিবস, শহীদ দিবসকে সামনে রেখে অনেক লেখালেখি, স্ম্বতিচারণ, বাংলা একাডেমী ঘুরে আসা, লাল-সাদা কম্বিনেশনে জামা কেনা, বাংলা বইপড়া এবং আলোচনা সমালোচনা। জাতি হিসেবে আমরা কী করছি, কোথায় ছিলাম, কিভাবে এই অর্জন আমাদের---নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। যারা পুরোনো প্রজন্ম হয়েও ভুলে যাচ্ছে, তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে। আমাদের ভাষা আসলে ইংরেজী কিংবা হিন্দি নয়। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। হুম, এটা মনে করিয়ে দেওয়া লাগছে, ইদানিং দেখতে পাই এই মনে করিয়ে দেওয়ার প্রজ্ঞাপন।

তারপর মার্চ। স্বাধীনতা দিবস। টিভিতে বিশেষ নাটক, স্বাধীনতা প্যারেড এর সরাসরি সম্প্রচার, ইত্যাদি দেখতে পাই। হয়তো টিভি চ্যানেলের এককোণায় তাদের লোগোর সাথে সাথে লাগানো থাকে আমাদের দেশের পতাকা। এইই তো? ও হ্যাঁ, মাঝে মাঝে কিছু মুক্তিযোদ্ধার জীবনযুদ্ধের খবর দেখা যায় পত্রিকার পাতায়, টিভিতেও। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর মেয়ের অপমানের প্রতিবাদ করার ফলশ্রুতিতে জীবন দিয়েছেন সন্ত্রাসীর হাতে- এমন খবর কিছুদিন পাতায়, স্ক্রীনে আলোড়ন তুলে বৈ কি। এমন কিছুদিন-কিছুদিন করে বহু খবরই একেকবছরে, একেকমাসে আলোড়ন তুলে, তারপর কী হয় জানিনা।

ভাগ্যিস এই দিবসগুলো ছিল!! মনে করিয়ে না-দিলে তো আমাদের কিছুই মনে পড়েনা! আমি খুব আবেগী একজন মানুষ। ঝোঁকের মাথায় অনেক কিছু করে বসি বলে অনেক সমালোচনাও শুনতে হয় প্রতিদিন। এই মাসগুলো আসলেই আমি খুব আবেগী হয়ে পড়ি। খবরের কাগজ পড়লেই আমার দেশের জন্যে “কিছু” করতে ইচ্ছে করে। কী করবো, কী করবো ভেবে ভেবে অনলাইন পত্রিকার বিভিন্ন কলামে ঘুরতে থাকি। বিভিন্ন উদ্যোগের আহ্বানে সাড়া দেই। একসময় দেখি খবরের সেই পাতাটা এক্সপায়ার করেছে, উদ্যোগগুলোও হারিয়ে গিয়েছে। আমার আবেগ নিয়ে আমিই বা কেন বসে থাকি? ফিরে যাই আবার প্রতিদিনকার ধান্দায়।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের খেলার সাপোর্ট-কে ইস্যু করে আবার আমাদের দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রসঙ্গ সামনে চলে আসে। প্রচন্ড আবেগী হয়ে পাকিস্তান-সাপোর্টারদের “পাকিস্তানী” বলে গালি দেই, এদের বিপক্ষে ফেইসবুকে খোলা পেইজ়ে লাইক দেই, দেখি সেখানে চলতে থাকে তুমুল গালাগালির গোলাগুলি। বয়স হয়েছে, এমন ঝড়-ঝাপ্টা থেকে আবার নিজেকে সরিয়ে নেই, কী হবে এসব করে?

গতকাল আমার স্কুলের এক বন্ধু আমাকে বলেছিলো, কী যে করোনা, এইসব লিখে সময় নষ্ট করে লাভ কী? আসলেই তো, লাভ কী? লাভ হচ্ছে সেসময়্টা প্রিয়জনের পেছনে দেওয়া, উপার্জনের পেছনে দৌড়ানো। একেকটা সরকারী ছুটির সাথে শুক্র-শনি কে ট্যাগ করে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করা, অফিস থেকে আগাম ছুটি নিয়ে হোটেলে রাশ হওয়ার আগেই আগাম বুকিং দিয়ে ফেলা।

খামাখা এইসব দিবস মনে রেখে seasonal আবেগী হয়ে কী ফায়দা? আমার বাবা যে আবেগ নিয়ে পরিবারের স্বার্থ, উপার্জনের ফায়দা পেছনে ফেলে রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেটা এখন অতীত। ইতিহাসের জীর্ণ পাতায় সে কাহিনী অলরেডী ঘোলা হয়ে গেছে। তবে আমি কেন অযথা লিখছি?

আবেগটা সাময়িক থাকাই ভালো, তাইনা? দেশপ্রেম থেকে অনেক কিছুই তো হচ্ছে দেখি চারপাশে। কিন্তু আমি এখন বুঝে গিয়েছি, এই সবই একটা সাময়িক প্যাটার্ণে চলে। আমার স্কুলের বন্ধু ব্যাপারটা আগে বুঝেছে, আমি বুঝলাম দেরীতে। তবুও, বেটার লেইট দ্যান নেভার!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×