somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সায়েন্স ফিকশন : লেভেল টেন

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাথাটা স্থির করার চেষ্টা করছে রিচি। এত বড় ভুলটা কিভাবে করলো সে? তার এই একটা ভুলের ফল হতে পারে লাখ লাখ লোকের মৃত্যুর কারণ। এত বড় দায়িত্ব তার উপর অনেক ভরসা করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে এই ভুলটা করেই ফেললো। রোবটটা যে তার পাঞ্চ কার্ডটা পাতলা আয়রণ সেফ ভেঙে নিয়ে যেতে পারে এটা সে ভাবতেই পারেনি। মাত্র পাঁচ মিনিটেই অঘটনটা ঘটে গেলো। এখন সিকিউরিটি কোডটা যদি একবার ভেঙে ফেলতে পারে তাহলেই ঘটে যাবে রোবটবিদ্রোহ। কাপা হাতে ফোনটা পকেট থেকে বের করে একটা নাম্বার ডায়াল করে কানে ঠেকালো রিচি। ডায়াল টোন শোনা যাচ্ছে। কিন্তু অপরপাশে কোন সাড়া নেই। হঠাৎ পেছনে কোন কিছুর অস্তিত্ব টের পেয়ে দ্রুতবেগে পেছনে ঘুরলো রিচি। সাথে সাথেই পেটে একটা প্রচন্ড আঘাত অনুভব করলো সে। ফোনটা হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল পাশের ড্রেনে। চোখ ঝাপসা হবার আগে সে দেখতে পেলো একটা রোবটের বিধ্বংসী ক্রুর রোবটিক হাসি।

চোখ বন্ধ করা অবস্থায়ই বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করার সাথে সাথেই ধুপ করে একটা আওয়াজ শুনলো তানভীর। তারপরই অপরপাশ ডেড। ফোনটা চোখের সামনে এনে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখলো রিচি ফোন করেছিলো। রিচি তার রিসার্চ পার্টনার। প্রফেসর জামানের সাথে ওরা কাজ করছে রোবট নিয়ে। দেশের ইন্ডাস্ট্রীর মূল শ্রমিক এখন রোবটেরা। মানুষরা শুধুই ডিসিশন মেকার। রোবট পরিচালনার জন্য কিছু ক্লাস্টার প্যাক ইউজ করা হয়। সেগুলোতে ইনস্ট্রাকশন দিলেই রোবটেরা সেই ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী কাজ করতে থাকে। রিচি আর তানভীর কাজ করছে রোবটের মধ্যে সেলফ ডিসিশন মেকিং এলগরিদম এপ্লাই করা আর এই ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে একটা ডায়নামিক নেটওয়ার্ক তৈরী করার জন্য। এটা করতে পারলে মানুষের উপর চাপ আরো কমে আসবে। ইন্ডাস্ট্রীর প্রয়োজন মত রোবটরা নিজেরাই ডিসিশন নিতে পারবে আর সেটা ছড়িয়ে দিতে পারবে অন্য রোবটগুলোর মধ্যে। তবে এই ক্ষমতা থাকবে হাতে গোনা কয়েকটা রোবটের মধ্যে খুব সীমিত পরিমাণে। ইতিমধ্যে তারা খুব শক্তিশালী একটা এলগরিদম বের করে ফেলেছে। তবে এটার পুরোটা কোন রোবটের মধ্যে এপ্লাই করার সাহস করেনি। করলে রোবটের ক্ষমতা হবে মানুষের চেয়ে অনেক গুন বেশী। তাই পুরো প্রোগ্রামটাকে বিশটা লেভেলে ভাগ করে ফেলেছে সে আর রিচি মিলে। সাধারণ শ্রমিক শ্রেণীর রোবটদের প্রোগ্রামের লেভেল থাকবে এক থেকে সাতের মধ্যে। আট থেকে দশ থাকবে ডিসিশন মেকার রোবটদের। বাকী দশ থাকবে রিজার্ভড। এগুলো ডেন্জার লেভেল। প্রতি লেভেলের জন্য আলাদা চিপ তৈরি করে রাখা হয়েছে ল্যাব স্টোরেজে। অনেক সিকিউরড এই স্টোরেজে ঢোকার জন্য লাগে একটা পাঞ্চকার্ড আর রেটিনা স্ক্যান। তিনটে পাঞ্চকার্ড তানভীর, রিচি আর প্রফেসর জামানের গলায় লকেটের মত ঝোলানো থাকে। রোবটগুলোর প্রোগ্রাম এমনভাবে করা হয়েছে যাতে এরা কোন মানুষের শরীর স্পর্শ করতে না পারে। ল্যাবের মালপত্র টানাটানির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে টেন লেভেলের চিপযুক্ত একটা রোবট। এটা তেমন কোন ইন্সট্রাকশন ছাড়াই কাজ করতে পারে। তবে এর প্রধান বাগ হচ্ছে, এটা যে কোন ইলেকট্রনিক সিস্টেম খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলতে পারে। এই পাওয়ারটা মাঝেমাঝে বিপদজনক হয়ে যায় তাদের জন্য। কারণ পুরো ল্যাবের সিকিউরিটি সিস্টেম চলে ইলেকট্রনিক সিস্টেমে। এই সিস্টেম যদি রোবটটা ধরে ফেলে তাহলে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হবে। তাই এক ঘন্টা পর পর এটার মেমোরী রিসেট করে দেয়া হয়। এই সমস্যার সমাধান নিয়ে তার আর রিচির বসার কথা আগামীকাল।

এই মাঝরাতে রিচির রহস্যজনক ফোনকল ভাবিয়ে তুললো তানভীরকে। রিচি অনেক মেধাবী আর মিষ্টি একটা মেয়ে। চোখে মুখে প্রবল ব্যক্তিত্বের ছাপ। সারা জীবনে সে এই একটা মেয়েকেই দেখেছে যার কথায় কোন ন্যাকামীর ছাপ নেই। সুদর্শন আর মেধাবী হবার কারণে এখন পর্যন্ত অনেক মেয়ের হৃদয়ই দুর্বল করেছে তানভীর। কিন্তু এই প্রথম মনে হয় তানভীর নিজে কারো জন্য দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সেটা তানভীর ফিল করে মাঝে মাঝে। কিন্তু আচার আচরণে প্রকাশ করেনা। তবু এই মাঝরাতে এই রহস্যময় ফোনকলটা একটু ধাক্কা দেয় তানভীরকে। কল ব্যাক করে তানভীর। কিন্তু ফোন ডেড। কি হতে পারে এর মানে? কোন অঘটন? নাহ, একটা খোজ নিতেই হয়। ল্যাবে ফোন করলো তানভীর। ডেড। নাহ, বের হতেই হয় তাহলে। বিছানা থেকে নেমে কাপড় পরে গাড়ী নিয়ে ল্যাবের দিকে রওনা হলো তানভীর।

ল্যাবের সামনে রিচিকে পড়ে থাকতে দেখে অজানা এক আশংকায় কেপে উঠলো তানভীরের বুক। ব্যাপার কি? কি হয়েছে? গাড়ী থেকে নেমে অচেতন রিচিকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ীতে বসালো তানভীর। পালস আছে। তার মানে বেচে আছে। চোখে মুখে পানি ছিটানোর পর রিচির জ্ঞান ফিরলো। রওনা হলো হাসপাতালের দিকে। রাস্তায় ধীরে ধীরে তানভীরকে সব খুলে বললো রিচি।

পাঞ্চকার্ডটা গলায় ঝুলিয়ে রাখতে ভাল লাগছিলো না বলে আয়রন সেফে রেখেছিলো সে। লেভেল টেন রোবটটার মেমোরী রিসেট করার কথা রিচি ভুলে গিয়েছিলো। অতিরিক্ত দশ মিনিটের মাথায় রোবটটা স্টোরেজের সিস্টেম ধরে ফেলে। তারপর আয়রন সেফ ভেঙে পাঞ্চকার্ডটা নিয়ে নেয় রোবটটা। তখনই রিচি বুঝতে পারে সে কি ভুল করেছে। দৌড়ে পালিয়ে আসে সে। ফোন করে তানভীরকে। তখনই তার উপর হামলা করে রোবটটা। রেটিনা স্ক্যানের ব্যাপারটা এখনো রোবটটা ধরতে পারেনি। তাই এ যাত্রা রিচি বেচে গেছে। কিন্তু সময় যত বাড়বে ততই বিপদজনক হয়ে যাবে রোবটটা। তার ক্ষমতা ধীরে ধীরে সে নিজেই বাড়াবে। তখন স্টোরেজ ভেঙে চিপগুলো দখলে নিয়ে নেবে। সেই চিপগুলো যখন ছড়িয়ে যাবে অন্য রোবটগুলোর মাঝে, তখনই বাজবে বিপদের ঘন্টা। রোবটদের ক্ষমতা রিকার্সিভ ভাবে বাড়তে থাকবে। একটা রোবট তার ক্ষমতা আরেকটা রোবটকে দিতে পারবে। নতুন ক্ষমতা পেয়ে সেই রোবট নিজেই নিজের চিপটা আপগ্রেড করতে পারবে। সব রোবটের মধ্যে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়বে লেভেল টেনের চিপ। সেগুলো ধীরে ধীরে আপগ্রেড হবে লেভেল ইলাভেন, টুয়েলভে। তখন শুরু হবে রোবট বিদ্রোহ। রোবটের উপর থেকে মানুষের কন্ট্রোল চলে যাবে। রোবটরা দখলে নিয়ে নেবে পৃথিবীকে। শুরু করবে হত্যাকান্ড। তাই যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আটকাতে হবে লেভেল টেনকে। হাতে সময় খুব অল্প। দুশ্চিন্তায় ঘামতে শুরু করেছে তানভীর। হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো। একটা চল্লিশ বাজে। আর বেশী সময় নেই। বড়জোড় এক ঘন্টা লাগবে রোবটটার স্টোরেজ ভাঙতে। এরই মধ্যে যা করার করতে হবে। প্রচন্ড বেগে গাড়ী ঘোরালো তানভীর। ড্রাইভ করতে শুরু করলো ল্যাবের দিকে।

দ্বিতীয় পর্ব



এই সায়েন্স ফিকশনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ডক্টর;) নিশাচর ভবঘুরেরউনার মধ্যে মারমার কাটকাট সম্পাদক হবার সম্ভাবনা প্রচুর। উৎসর্গপত্রে উনার সাথেই আছেন দুজন যারা সবসময় আমাকে অনেক উৎসাহ দেন। তারা হলেন লুল কবি ডক্টর ;)নীরব দা এবং লুল সম্রাট ডক্টর;) রিয়েল ডেমোন
সবাই লুলামীতে পিএইচডি।[/sb

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:৪৬
২৮টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×