somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাকুরীর পুলসিরাত!! :-B :-B B:-) :( :((

৩০ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফাহিম ব্যাটা অনেক বেশি গবেষণা করিতেছে আজকাল।তাহার অবশ্য বই খাতার প্রয়োজন হয় না,রকিং চেয়ারে বসিয়া দোল খাইতে খাইতেই নাকি তাহার গবেষণা কর্ম সম্পন্ন হইয়া যায়।আমিও যে তাহার চেয়ে কোন অংশে কম নই তাহা বুঝাইবার জন্য আমিও একখানা গবেষণা শুরু করিয়াছি। গবেষণা কর্ম ভালভাবে পারও করিয়াছি কিছুদিন।আমার গবেষণার বিষয় হইল 'জব মার্কেট' মানে চাকুরী সংক্রান্ত মার্কেট।গবেষণাও হইবে সাথে সাথে চাকুরীর খবর টবরও হইবে।

গবেষণা করিতে যাইয়া আমার পুরাপুরি টাস্কি খাইবার উপক্রম।কারণটাও বলিতেছি।আমাদেরই এক বন্ধু,হাসিব।ব্যাটা আমার চেয়ে তিন-চার বছরের বড় হইলেও তাহার সাথে আমার আর ফাহিমের বন্ধুর মতই সম্পর্ক।বেচারা এস এস সি পাশ করিবার আগেই তাহার চারদিকে হাজার হাজার চাকুরী গড়াগড়ি খাইতে দেখিয়াছিল। সে বেশ আশান্বিত হইয়া আগাইয়া গিয়া দেখিল,সবই ঠিক আছে।মাঝখানে পুলসিরাতের মত বাঁধা রহিয়াছে।সেই বাঁধাখানি অতিক্রম করিলেই ব্যাস,কেল্লা ফতেহ।পুলসিরাতখানি হইল এসএসসি পরঈক্ষা। পরীক্ষাতে কোনমতে উৎরাইতে পারিলেই হইলো।চাকুরী তখন কত করিবে?পুলসিরাত পার হওয়ার আশায় এসএসসি পরীক্ষাখানী দিল মহাউৎসাহে।পাসও করিল।কিন্তু এরপর দেখিল চাকুরীদাতা গ্রুপের কাউকে আর সামনে দেখা যাইতেছে না।চাকুরীর খবর তো আরো মাইলখানেক দূরের কথা। রাগের চোটে হাসিব বেচারা চাহিয়াছিল পড়ালেখা ছাড়িয়া দিতে।দিতও।কিন্তু দুইচারি খানি পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখিয়া তাহার মাথায় এই কথাটা জোরদারভাবে ঢুকিল যে,এইচএসসি পাশ করা আর সোনার চামচে করিয়া খাবার খাওয়া একি কথা।চাকুরীর অভাব নাই।বেচারার সংগ্রাম আবার শুরু হইল।দুই বছর চেষ্টা সাধনা করিয়া করিয়া যখন এইচএসসিটা পাশ করিয়াই ফেলিল।তখন দেখিল,আগেরবারের চাকুররীগুলোর মত এইবার উধাও হয় নাই বটে,সোনার চামচের কথাও ঠিক আছে,কিন্তু সেই চামচ কেবল বহন করিবার জন্যই।মানে হাভাতে পিয়ন,ড্রাইভার ছাড়া অন্য কোন পোস্ট দেখা যাইতেছে না।ইহাতে স্বর্ণ-রৌপ্যের চামচ,বর্তন অনেক কিছুই বহঅন করিতে পারিবে,স্পর্শ করিতে পারিবে,কিন্তু ব্যাবহার করা বারণ।নিজের করিয়া লওয়া তো হারামই।মেজায তখন তাহার খারাপের তুঙ্গে।লেখাপড়ার কাঁথা-কম্বল সব পোড়াইয়া দিবার জন্য ম্যাচবাত্তি নিয়া প্রস্তুত।এমন সময় আবার ভাবিল,দেখিল,খুঁজিল এবং পাইল।পাইলো ইহা যে,এরপরে মাত্র একখানি ধাপ পার হইলেই সে গ্রাজুয়েট।তখন তাহকে চাজুরী না দিলে চাকুরীগুলো করিবে কোন গরু? হ্যাঁ,সে এইভাবেই ভাবিল।সুতরাং কাঁথা-কম্বল আগের জায়গায় গোছাইয়া রাখিয়া আদাপানি খাইয়া কাছা বাঁধিয়া আবার লাগিল।ডিগ্রী না পড়িয়া বেচারা অনার্সই পড়িল,একটু এ্যাডভান্স থাকিবার জন্য।এইবার তাহকে ঠেকাইবে কে?কিন্তু সময়ে যে এত বরকত হইতে পারে,৪টি বছর যে বাড়িয়া যে ৬/৭ বছর হইতে পারে,ইহা সম্পর্কে তাহার পূর্বে ধারণা ছিল না।কিন্তু এইবারে স্বচক্ষে দেখিল।লাগিলই না হয় ছয় বছর,মিষ্টির জন্য কিছু অনাসৃষ্টি কিছুতো সহ্য করিতেই হয়।

সে যাহাই হউক।এইবারে তাহাকে উঁচু পোস্টগুলিতে না বসাইয়াতো কোন উপায় নাই-ই।যেইদিন রেজাল্ট বাহির হইলো বাজার হইতে সবগুলি পত্রিকার একখানা করিয়া কিনিল।একখানা খাতাও কিনিল।আজিকে সে তাহার প্রাপ্য চাকুরীর খবরগুলি টুকিয়া রাখিবে।কাল হইতেই এপ্লাই শুরু হইবে।হাসিব মনে মনে হাসে আর গোঁফে তা দেয়।জীবনে চাকুরী চান্দু অনেক ভোগাইয়াছে।
এইবার আমকে চাকুরী দিতে দিতে তোমরা হয়রান হইবে।

কিন্তু পত্রিকা দেখিতে দেখিতে তাহার হাসিখানা মিলাইয়া গেল।অনার্স পাশ করা গ্রাজুয়েটদের জন্য তেমন কিছুই নাই।অনার্সের সাথে সাথে তারা অন্যান্য কারিগরি শিক্ষা চায়।তা না হইলেও অন্তত এমএটা তো চায়-ই।হঠাৎ করিয়া তাহার নজর পড়িল 'পাত্র চাই' সংবাদগুলোর উপর।মেজায খারাপ করিয়া দীর্ঘ ২৪ বছরের ঐতিহ্য ভাঙ্গিয়া ইহাই পড়া শুরু করিল।দেখিল মাগার সেইখানেও চান্সের বড় খরা চলিতেছে।সবাই চায় উচ্চশিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী/চাকুরে। তাহার মত পোড়াকপালকে কেহই চায় না।

তাহার এই অবস্থা দেখিয়াই আমি জাতির জন্য,বেচারা হাসিবের সাহায্যের জন্য,আর সত্য বলিতে নিজের ভবিষ্যতের জন্যই এই গবেষণা করিতে বসিয়াছিলাম।কিন্তু দেখিলাম অবস্থা যথেষ্ট পরিমাণে সঙ্গীন।চারিপাশে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নাই।

কি করিব ভাবিতেছিলাম,এমন সময়ই হাসিব আসিল।আমি দেখিলাম আমার গবেষণার ফলাফল তাহাকে খুব বেশি সাহায্য করিতে পারিবে না,বরং আরো উল্টা-পালয়া কিছু তথ্য দেওয়া আছে।যেমন-এমএ পাশ,সেই সাথে তিন বছরের অভিজ্ঞতা।কিন্তু বয়স হইতে হইবে ২৫-২৬ এর মাঝখানে।এইসব
দেখিলে তাহার মন ভাঙ্গিতে পারে।ফলে তাহাকে লইয়া হাটা ধরিলাম, ফাহিমের বাড়ির দিকে।

সব শুনিয়া ফাহিম বলিল।এই এমএ পাশ করিয়াও কিছু হইবে না।
ইহা শুনিয়া আমার অনুভূতির তেমন কোন পার্থক্য হইল না।কিন্তু বুঝিলাম হাসিব বেচারার অন্তরটা ভাঙ্গিয়া গুড়া গুড়া হইয়া গিয়াছে।এখন আছে পাউ্ডার হইবার অপেক্ষায়।অনেক কষ্টে ঢোক গিলিয়া সে সওয়াল করিতে পারিল,কেন?
ফাহিম জিজ্ঞাসা করিল,কাজের ক্ষেত্রে তোমার কোন এক্সপেরিয়েন্স আছে,আই মিন কোন অভিজ্ঞতা?
কোন কাজের অভিজ্ঞতা?হাসিব বেচারা চিহিঁচিহিঁ কন্ঠে জিজ্ঞাসা করিল।
যেই চাকরী পাইতে চাও বা করিতে চাও সেই কাজের অভিজ্ঞতা।
অভিজ্ঞতা জোগাড় করিব কোথা হইতে?পড়াশোনাই তো শেষ করিতে পারিলাম না।
তোমার এইসব নির্মল,নির্দোষ প্যানপ্যানানী শুনিবার মত টাইম বা ধৈর্য কোনটাই চাকুরীদাতা মহাজনদের নাই।সুতরাং বিনা দ্বিধায় তুমি বোল্ড আউট।
তাহা হইলে আমি কি যোগ্য নই?
তুমি যোগ্য ,ইহা ঠিক আছে। তবে তোমার চাইতে অনেক যোগ্যতর, যোগ্যতমও রহিয়াছে সেইখানে।
সুতরাং যোগ্য হইলেই তুমি চাকুরী পাইবে তোমার সেই আশায় গুড়ে ধুলাবালি।
তাহা হইলে কি আমি সারাজীবন বেকার থাকিব?
বুদ্ধি থাকিলে থাকিবে না।
কেমন?
পড়াশুনা যতটুকু করিবে তাহার চাইতে বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ লইতে শুরু কর।আর টাকা জমানো শুরু কর।
মানে?!
আরে বাবা,বেসরকারী চাকুরী পাওয়া যায় এইসব আত্মীয়-স্বজনের সূত্র ধরিয়াই। আর সরকারী চাকুরীতে লাগিবে নগদ নারায়ণ।
সেই ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা?
তখন তাহা না হইলেও চলিবে।
পড়ালেখাও যে শেষ হয় নাই?
ঐ ক্ষেত্রে তাহাও শিথিলযোগ্য।
এইটা ছাড়া কোন পথ নাই?
আছে,তবে তাহা শতকরা ১০ ভাগের চাইতে বেশি হইবে না কোন মতেই। আর সেইগুলির জন্যই তোমাকে বলিলাম,এমএ,অভিজ্ঞতা আরো হাজারো বিষয় দক্ষ হওয়া ইত্যাদি লাগিবে।
তাহা হইলে তো ৯০ ভাগই চাকুরীতে পয়লা হইতেই দুর্নীতি।
হ্যাঁ,দুর্নীতির মাধ্যমেই ঢুকিবে,সারা জীবন দুর্নীতির মাধ্যমে চলিয়া টাকা কামাইবে,দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করিবে।আর মাঝে মাঝে সেমিনারে গিয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলা ফাটাইবে।
তাহা হইলে এখন কী করিব?
যা বলিলাম তাহাই।
এই অবস্থা পাল্টানো যায় না?
এইবার ফাহিম ক্ষেপিয়া উঠিল।বলিল,এতই যদি পাল্টাবার,বদলাইবার সাধ থাকে, তাহা হইলে আমকে ক্ষমতায় বসাইয়া দাও। পাল্টাইয়া দেই।
বেচারা হাসিব।আর প্রশ্ন করিবার সাহস তাহার হইল না।আমি ফাহিমের কথা ভাবিতে থাকিলাম,কবে আমাদের দেশে একজন মাহাথিরের জন্ম হইবে, দেশটাকে পালটাইবে। আর তা ইতিবাচকভাবেই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×