১৪ দল সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয়ের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল ও বিদ্রোহী জাহাঙ্গীর আলমের ‘বিরুদ্ধ তৎপরতাকে’ দুষছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম।
Published : 07 Jul 2013, 03:37 PM
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গাছা ইউনিয়নের সাবেক এ চেয়ারম্যানের অভিযোগ, “মান্নানের টেলিভিশন প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য অনুসারীদের নির্দেশ দেন সাংসদ রাসেল ও জাহাঙ্গীর।”
অবশ্য দুজনই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দলের সিদ্ধান্তের বিপরীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর মেয়র পদে প্রার্থী হলেও দলের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
শনিবার নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৮ দলীয় প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে এক লাখের বেশি ভোটে পরাজিত হয় ১৪ দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খান। ফল ঘোষণার পর থেকেই পরাজয়ের কারণ নিয়ে শুরু হয় নানা ধরনের কানাঘুষা।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের শক্ত অবস্থান সাবেক টঙ্গী পৌরসভা ও গাছা ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রগুলিতে আজমত উল্লার পরাজয় দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যেও বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, “পরাজয়ের একমাত্র কারণ দলের মধ্যে অন্তর্কলহ। রাসেল ও জাহাঙ্গীরের কর্মী বাহিনী সব ভোট মান্নানকে দিয়ে দিয়েছে।”
“সব এলাকাতেই ওরা মান্নানকে ভোট দিয়েছে। তা না হলে আজমত উল্লা ভাই মান্নানের চেয়ে অন্তত এক লাখ ভোট বেশি পেতো।”
প্রায় তিন দশক ধরে গাছায় ইউনিয়ন নির্বাচনে বরাবরই আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করে আসছে। টঙ্গীতে গত ১৭ বছরে পরপর তিনবার পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আজমত উল্লা খান। গত তিনটি সংসদ নির্বাচনেও এ এলাকা থেকে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার সাংসদ থাকাকালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর তার ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
টঙ্গীর ১৩৩টা কেন্দ্রের মধ্যে ১০০টিতেই হেরেছে আমজত উল্লার দোয়াত-কলম, গাছার ৪৬টা কেন্দ্রের মধ্যে হেরেছেন ৪১টিতে। পূবাইলে ২১টা কেন্দ্রের মধ্যে ১০টিতে হেরেছেন।
সিরাজের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সাংসদ রাসেল বলেন, ‘সবাই আসলে ল্যাঙ মারতে চায়।’
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কোন জায়গার ভোট পাইছে বলেন? আমার এলাকার চেয়ে অন্য এমপিদের এলাকায়তো আরো কম ভোট পাইছে। একা কেন রাসেলের কথা বলা হচ্ছে।”
“কেউ বলতে পারবে না, এমপি সাহেব ভোট দিতে নিষেধ করছে বা অন্য প্রার্থীকে ভোট দিতে বলছে। এতো খাটলাম... তারপরও এই কথা!”
জাহাঙ্গীরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমাকে যারা ভোট দিতো, তাদের মধ্যে দলীয় নেতাকর্মী আছে। আমার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন আছে। অন্য দলের অনেক সমর্থকও আছে।
জেলা আওয়ামী লীগের অন্য এক নেতার কথায়ও আজমত উল্লা খান ও রাসেলের মধ্যে বিরোধের প্রসঙ্গটি এসেছে।
গাজীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা বার কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি ওয়াজ উদ্দিন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরাজয়ের অন্যতম কারণ দলের অসংগঠিত অবস্থা। দল সংগঠিত থাকলে কোনভাবেই গাজীপুরে আওয়ামী লীগকে হারানো যেত না।“
টঙ্গীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “অনেকদিন পদে থাকলে কিছু মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক বিষয় তৈরি হয়। যাদের মধ্যে এটা তৈরি হয়েছে, সেই ক্ষোভ মিটিয়ে তাদেরকে নির্বাচনে নামানো যায়নি।”