somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কঙ্গোর ধর্ষণের শিকার নারীরা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চান—চান নিরাপদ জীবন। কিন্তু সেই জীবনের নিশ্চয়তা কে দেবে?

২৯ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Video Link
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে বিদেশি কোনো নারী পা রাখলেই অদ্ভুত এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন। তিনি দেখবেন নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে রেখেছেন, অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছেন। আর দেশটির সাধারণ নারীরা কেমন আছেন, তা জানাতে একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। সেখানে প্রতি ঘণ্টায় ৪৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। এ কারণে এরই মধ্যে কঙ্গো ‘ধর্ষণের রাজধানী’ হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছে।
কঙ্গোতে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করেছেন পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্র-নির্মাতা ফিয়োনা লয়েদ ডেভিস। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিতই তিনি সিএনএনে লিখছেন। সে লেখাতেই উঠে এসেছে কঙ্গোর নারীদের ভয়ংকর অবস্থার কথা। তিনি বলেন, সেখানকার নারীরা এমনই দুরবস্থার মধ্যে আছেন যে বাড়িতে থাকলে তাঁদের না খেয়ে থাকতে হয়। কিন্তু খাবার বা কাজের সন্ধানে বাইরে বের হলে তাঁরা ধর্ষণের শিকার হন।

ফিয়োনা লয়েদ ডেভিস বলেন, এক সপ্তাহ ধরে কঙ্গোয় একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্নভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন নারীরা। সেসব ঘটনায় বেড়েছে বর্বরতা আর নিষ্ঠুরতা। রাইফেলের বেয়নেট, বন্দুক ও লাঠি দিয়ে মেরে, ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে নারীদের—প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত।
২০০৩ সালে কঙ্গোয় সংঘাত বন্ধে একটি শান্তিচুক্তি সই হয়। এর ফলে সেখানে সংঘর্ষ থেমেছে কিন্তু থামেনি ধর্ষণ। থামেনি নারীদের বেঁচে থাকার লড়াই। ফিয়োনা লয়েদ ডেভিস বলেন, তিনি দীর্ঘদিন সেখানে কাজ করছেন। আর এ সময় অনেক নারীই নিখোঁজ হয়েছেন। বনে কাজ বা খাবারের সন্ধানে বের হয়ে তাঁরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এখন বর্বরতা আরও বেড়েছে। ধর্ষকেরা এখন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।
কঙ্গোর বহু নারীই কীভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, সে ব্যাপারে মুখ খুলছেন। তাঁদের কেউ কেউ বলেন, একবার নয় বহুবার, বারবার তাঁরা এই বর্বরতার শিকার হন। অনেকে তিনবার-চারবারও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কখনো কখনো দুজন সৈন্য দ্বারা, কখনো আবার ১০-২০ জন তাঁদের ওপর নির্যাতন করেছে। কিশোরী, এমনকি শিশুরাও বাদ পড়ছে না এ বর্বরতা থেকে।
চিকিত্সক মাকওয়েজ বুকাভুর পাঞ্জি হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার নারীদের চিকিত্সা করছেন। এদের মধ্যে একজনের বয়স তিন বছর। ওই ঘটনার পর থেকে শিশুটি যেন বোবা হয়ে গেছে। নার্সরা জানান, দুর্বৃত্তরা তাকে ও তার মাকে ধর্ষণ করে। সে সময় দুই বোনকে মেরেও ফেলা হয়।
তবে ধর্ষণের শিকার হয়েও যাঁরা টিকে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন, তাঁদের একজন মাসিকা কাতসুভা। তাঁর কর্মকাণ্ড হয়তো অন্যকে উত্সাহিত করতে পারে। তাঁকে ও তাঁর দুই কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। স্বামীকে তাঁর সামনেই মেরে ফেলা হয়। ধর্ষণের শিকার দুই মেয়ে রাচেল ও ইয়েভেতকে ছেড়ে গেছে তাঁদের স্বামীরা। এরপর তিনি তাঁর মেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য লড়াই শুরু করেন। লেক কিভু এলাকার ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রে এখন ১৭০ জন নারী আছেন। তাঁরা তাঁকে মামা মাসিকা বলে ডাকেন।
গত ১০ বছরে মামা মাসিকা ছয় হাজার নারীকে পুনর্বাসিত করেছেন। এসব নারী পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। মাসিকা তাঁদের কাছে মায়ের মতো। মাসিকা তাঁদের একটি সুন্দর ভবিষ্যত্ উপহার দিতে চান। কিন্তু তিনি জানেন, বাস্তবতা অনেক কঠিন। মাসিকা এসব নারীর মাঠে গিয়ে শারীরিক পরিশ্রম করানোর বদলে অন্যভাবে শিক্ষিত করে তুলতে চান।
তবে মাসিকা জানেন না, কবে এই ধর্ষণ বন্ধ হবে। তাঁর মতো জানেন না অন্যরাও। প্রতিদিনের বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা থেকে কবে রক্ষা পাবেন কঙ্গোর নারীরা। কবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ পড়বে দিনের পর দিন ঘটে চলা এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের দিকে। কঙ্গোর ধর্ষণের শিকার নারীরা স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চান—চান নিরাপদ জীবন। কিন্তু সেই জীবনের নিশ্চয়তা কে দেবে?
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×