আমদের হাফিজউদ্দিন-
যিনি ভালবাসার জন্য আজো লড়াই করছেন। নিজের প্রিয়তমাকে খুজে ফিরছেন চারপাশে। একটি বার মিলিত হওয়ার জন্য অধীর ভাবে বসে থাকেন এখনো কবরের পাশে।
পঞ্চগড়ের হাফিজউদ্দিনের কাছে শাহজাহান মাথা নুয়ে পড়তেন যদি বেঁচে থাকতেন।
এটি শুধুই আবেগের কথা সত্যিকারের ভালবাসার কথা যা এখন আপনারা পড়বেন।
প্রবল প্রতাপশালী একজন সম্রাট শাহজাহান। নিজের স্ত্রীকে ভালবেসে দেশের সব সম্পদ ধ্বংস করে,হাজার হাজার শ্রমিকের আঙুল কেটে, রাজ্যে দুর্ভিক্ষ নামিয়ে তৈরি করেন আশ্চর্য্য নির্দশন 'তাজমহল'।
কিন্তু আপনি কি জানেন-
১. মমতাজ ছিল শাহজাহান এর ৭ বউয়ের মাঝে ৪ নাম্বার.
২. শাহজাহান মমতাজ এর আগের স্বামীকে খুন করে মমতাজ কে বিয়ে করেন।
৩.মমতাজ এর মৃত্যুর পর শাহজাহান বিয়ে করে মমতাজ এর আপন বোনকে।
ভালবাসার বহুরুপীতা আমরা দেখতে পাই ইতিহাস থেকে। তখন মাঝে মাঝে তাজমহলটাকে শুধুই একটা প্রাসাদ মনে হয়,ভালবাসা নয় এটি শুধু শাহজাহান নিজেকে দেখানোর জন্য তৈরি করেছিলেন ধারণা হয়!
সত্যিকারের ভালবাসা এখন শুধু আমরা বইয়ের পাতায় খুজে পাই। গল্প উপন্যাস কেই আমরা ভালবাসা প্রকাশের জন্য মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখনো আমাদের চারপাশে মনের চোখে খুজলে PURE LOVE পাওয়া যায়।
বিয়ের ১৯ বছরের মাথায় স্ত্রী বিয়োগে কাতর হাফিজউদ্দিন দীর্ঘ ২৭ বছর নির্জন গোরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে জীবিত লাশ হয়ে সহাবস্থানের চেষ্টায় রত ছিলেন। এমন বিরল ঘটনা পৃথিবীতে সম্ভবত এটিই প্রথম। ভালোবাসার জন্য জীবন্ত লাশ হয়ে নির্জন গোরস্থানে স্ত্রীর কবরের কাছে সময় কাটানোর কঠিন এ ব্রত সম্রাট শাহজাহানের ভালোবাসার নিদর্শনকেও হার মানিয়েছে।
শেষ রাতে দুজনে মিষ্টি খেয়ে ছিলেন। কিন্তু সকালেই স্ত্রী উনার হাটুতে মাথা রেখে চলে যান।
দীর্ঘ ২৭ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে কাটিয়েছেন তিনি। পারিবারিক চাপে স্ত্রীর কবর ছাড়লেও বাড়িতে ফেরেননি। গত ৬ বছর থেকে বাড়ির বাইরে কবরের আদলে তৈরি করা ঘরে অবস্থান করছেন। স্ত্রীর আত্মার সান্নিধ্য লাভের আশায় পার্থিব জগতের আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস আর চাওয়া-পাওয়া ত্যাগ করেছেন তিনি। সহধর্মিনীর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার বেদনাবিধুর অমলিন স্মৃতিকে ধরে রাখতেই তার এই আত্মত্যাগ। ভালোবাসার এই ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বাকপুর গ্রামের মৃত বরকত আলী মিয়ার পুত্র হাফিজউদ্দিন (৮১) এখনও সাধনায় আছেন স্ত্রীর আত্মার সান্নিধ্যের আশায়।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের ২বছর পর পারিবারিক ব্যবস্থায় বাড়ির পাশেই বিয়ে করেন। কনে ৬ বছরের শুকুরী বিবিকে। বিয়ের পর ৭/৮ বছর স্ত্রী শুকুরী ছিলেন হাফিজউদ্দিনের মা সূর্য্য বানু বিবি’র সঙ্গে। এরপর ১৯৫৬ সালের দিকে দু’জনের সংসার শুরু হয়। প্রেম-ভালোবাসা আর আবেগমথিত রোমান্টিক জগতে অবগাহন করে হংস-মিথুনের আনন্দেই কেটে যাচ্ছিল হাফিজ-শুকুরীর সংসার জীবন।
কিন্তু এই চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেন নি হাফিজউদ্দিন।
ওই সময়ে হাফিজ বিলাপ করেছেন- ‘গত রাতে বিবি আমার সঙ্গে ছিল, কথা বলেছে, আজ কেন নেই। কোথায় গেল তার আত্মা?’
পীরের দরগায় ৪১ দিন কবরের ভেতরে আর ১বছর ভাত না খেয়ে শুধু দুধ-কলা খেয়ে কাটিয়েছেন। একপর্যায়ে ১৯৭১ সালে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালের দিকে হাফিজউদ্দিন নিজগ্রামে ফিরে আসেন। ওই সময়ের অগ্রহায়ণ মাসের ২ তারিখ হাফিজউদ্দিন স্ত্রীর কবরের পাশে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত একটানা ২৭ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে ছাপরা ঘর তুলে বসবাস করেন হাফিজউদ্দিন। ওই দীর্ঘ সময়ে বনজঙ্গলে ঘেরা নির্জন কবরস্থানে বাঘ, সাপসহ হিংস্র জীবজন্তুর ভয়ভীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তার ভালোবাসার কাছে পরাজিত হয়েছে। অথবা বলা যায়, ওইসব দুর্যোগও সসম্ভ্রম সম্মানে এড়িয়ে গেছে এই পাগল প্রেমিককে। বিরক্ত করেনি আত্মমগ্ন এই ঋষিকে।
আমাদের কবি গুরু বা নজরুল যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হইত তাজমহল নয় হাফিজ-শুকুরীর প্রেম নিয়ে কবিতা লেখতেন।
২০০৬ সালে পারিবারিক চাপে শুকুরীর সমাধী ছেড়ে আসতে হয়েছে হাফিজকে। তবে আত্মীয়-স্বজনদের অনুরোধ আর চাপে কবরস্থান ছাড়লেও বাড়িতে ফেরেননি। বাড়ির বাইরে কবরের আদলে তৈরি করা ঘরে বর্তমানে অবস্থান করছেন হাফিজউদ্দিন। ওই কবরেই তাকে সমাহিত করার কথা বলে রেখেছেন স্বজনদেরকে।
‘শুকুরী আমার ভালোবাসা, আমার হৃদয়। আমাকে একা রেখে সে চলে গেছে। কিন্তু আমি তাকে ছেড়ে থাকতে পারব না।
নিজের যা সম্পদ তা সব তিনি দান করে গিয়েছেন শুধু সবার কাছে একটিই কামনা'' সবার দোয়া-যেন আবার শুকুরীর সাথে মিলিত হতে পারেন।
এমন প্রেম কাহিণী নিয়ে আমরা গর্বীত।অনুপ্রেরণা নিয়ে সত্যিকারের ভালবাসায় সর্মপিত হতে চাই।
খবরের বিস্তারিত জানুন- ভালবাসা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২০