somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংসার (ইহা একটি রম্য গল্প, অথবা জীবনের গল্প)

২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহু চিন্তা করিয়া আলম সাহেব ঠিক করিলেন, আর শহরে থাকা নয়। রিটায়ার্ডের এই অলস জীবনে তিনি রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছেন। শহরে পরিচিত মুখের কোন কমতি নেই। কিন্তু সেই সকল মুখদর্শনে মনের তৃপ্তি না আসিয়া বরং বিরক্তির উদ্রেক হয়। যাহা হোক। তিনি যখন সকাল বেলার নাস্তার টেবিলে বসিয়া এই প্রস্তাবনা করিলেন, তখনই সেখানে শোরগোল শুরু হইলো। সকল পারিবারিক সদস্য (তিনি বাদে) এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান লইলো। তাহার গিন্নী, যিনি সদ্য পঞ্চাশ পেরিয়েছেন। তিনই মুখের ভাঁজগুলোকে আরো কুঞ্চিত করিয়া আলম সাহেবের দিকে অগ্নিচক্ষু ক্ষেপন করিলেন। তাহার রক্তচক্ষুর মাঝে কিঞ্চিত দুঃচিন্তাও দেখা দিলো। আলম সাহেবের দিকে ভালোভাবে তাকাইয়া, মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষন খুজিতে লাগিলেন। মনে করিতে চেষ্টা করিলেন, তাহার শ্বশুরপক্ষের কেউ পাগল ছিলো কিনা!
অবশেষে মুখ খুলিলেন গিন্নী,
-তোমার যেতে ইচ্ছে হয়, যাও। আমাদের টানাটানি করোনা। সারাজীবন ঝামেলা তৈরী করেছ। এই বয়সেও করছো। তুমি গেলেই বরং একটু শান্তিতে থাকতে পারবো।
- মা, আপনিওতো বাবার সাথে যেতে পারেন। বাবাকে এই বয়সে একা ছাড়া কি ঠিক হবে?
বড় বৌমার কথায় যেনো বাজ পড়িলো। এমন ভাব করিয়া আলম সাহেবের গিন্নী চুপ করিয়া রইলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই তাঁর বিমূঢ়ভাব দূর হইলো। চিরায়ত যে বিষ তাহার মুখে সর্বদাই প্রস্তুত থাকে তাহা উগরাউয়া দিয়া বলিলেন,
-কেনো বউ? আমাকে আর সহ্য হয়না? তোমার বাপের টাকায়তো আর খাইনা। দুবেলা খাচ্ছি। তাও ছেলের সংসারে। তাতে দুবেলা ভাতের সাথে যে পরিমান খোটা দিচ্ছো, আমার শেষে বদহজম হয় কি!
বউ আর কি বলিবে! মাথা নিছু করিয়া বসিয়া থাকিলো। যদিও সেও ছাড়িবার পাত্রী নয়। কেহ কথা শুনাইয়া দিয়া যাবে, আর সে চুপ থাকিবে তাহা অবাস্তব। কিন্তু আলম সাহেবের সামনে সে সংযত হইয়া রহিলো। সংসারের এই ভালো মানুষটিকে গিন্নী মা ছাড়া সবাই শ্রদ্ধা করে।
আলম সাহেব অবাক চোখে এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করিলেন। আর ভাবিলেন, " বয়স তাহার অর্ধাঙ্গীনির রুপ-লাবন্য কাড়িয়া কইয়াছে বটে, কিন্তু মুখের বিষটুকু কাড়িয়া লইতে পারেনাই। উহা যথাস্থানেই রহিয়াছে।"
নাহ। আর নয়। এবার তিনি দৃঢ় সংকল্প করিলেন, যাবার বেলা এসেছে। তিনি একাই গ্রামাবিমুখে যাত্রা করিবেন। এবং , শুভস্য শীগ্রম!
গ্রামের বাড়িতে আসিয়া আলম সাহেব প্রথমেই প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিলেন। আহা! কি পিওর বাতাস! শহরে কোটি টাকায়ও এই শান্তি কেনা যাবেনা। আত্মীয়স্বজন, যাদের সাথে এতোদিন শুধু যোগাযোগের কোন সুযোগ হয়নি। ফলে দুরত্ব সমানুপাতিক হারে বাড়িতেছিলো, কিঞ্চিত আশঙ্কা দেখা দিচ্ছিল। তিনি যদি এইবারে না আসিয়া, একেবারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া আসিতেন। তাহারা তাকে নামেই চিনিতো। হাবুল চাচাকে ডাকিয়া যখন বলিলেন, চাচা আমি আলম! চাচাজান তখন অবাক হইয়া তাকাইয়া থাকিলেন। অথচ বাল্যকালে এই চাচার সহিত সমস্ত খেলা খেলিতেন। চাচা-ভাতিজা সম্পর্ক হইলেও, তাহারা সমবয়সী। এখন দুইজনে পাশাপাশি দাঁড়াইলে আলম সাহেবকে হাবুলের চাইতে বছর দশেকের বড় মনে হইবে।
যাহা হোক। গ্রামের বাড়িতে আলম সাহেবের দিনকাল ভালোই কাটিতে লাগিলো। গ্রামে সবকিছুই পর্যাপ্ত রহিয়াছে বলিয়া সকলে দাবী করিলেও, তিনি কয়েকটি বস্তুর অভাব অনূভব করিতে লাগিলেন। তাহার একটি হইলো, দৈনিক পত্রিকা। এতবছরের জীবনে এই বস্তুটি তাহার জীবনে একটি অবিচ্চেদ্য অংশ হিসেবে ছিলো। প্রত্যূষে পত্রিকা পড়িয়া অতঃপর নাস্তার টেবিলে বসিতেন। অবসরের পর, বাসায় দুটো পত্রিকা রাখা হইতো। সারাদিন সেগুলো নিয়াই গবেষনা চলিতো। এহেন দরকারী বস্তু যদি না মিলে, তবে কার ভালো লাগে! বাড়িতে তাহার ফুটফরমায়েশ খাটার জন্য একখানা বালকের বন্দোবস্ত ছিলো। দারুন চটপটে বালক। পানি আনিতে বলিলে, খাবারের আয়োজন করিতে বসে! তাহাকে ডাকিয়া দশটি টাকা হাতে ধরাইয়া দিয়া বাজার হইতে পত্রিকা কিনাইয়া আনিতে বভলিলেন। বালক হরিন শাবকের মতো লাফাইতে লাফাইতে গেলো। এবং ঘন্টাখানেক অতিক্রান্ত করিয়া,পথিমধ্যে যতগুলো বিনোদনের মাধ্যম ছিলো। তাহা উপভোগ করিয়া আসিয়া, আলম সাহেবের হাতে যে পত্রিকাখানা ধরাইয়া দিলো। আলম সাহেবের মত শান্ত মানুষেরও মেজাজ হারাইলো। তিনি বালকের কান মলিয়া দিলেন। বালক তাহাকে একটি দিনকয়েক আগের পুরানো পত্রিকা আনিয়া দিয়াছে!
দিনকতক এভাবে পার হইলো। তারপরই আসল বিপত্তি শুরু হইলো! যে পিছুটান এড়াইয়া বাড়িতে আসিয়া রহিয়াছেন, সেই জন সুতোয় টান দিয়াছেন! এখন কোথা যান! পরিবারের সকলেই যখন এই বুড়ো উপদ্রব হইতে উদ্ধার পাইয়া নিশ্চিন্তে দিনাতিপাত করিতেছে, তখন একজনের এ সুখ দীর্ঘস্থায়ী হইলোনা! তিনি কথা বলিবার লোক খুজিয়া পাননা! এতোবছর যার সঙ্গে সুখেদুঃখে ছিলেন তাঁর অনুপস্থিতি গিণ্ণীর মনে ভীষন বাজিলো। তিনি চিঠি লিখিয়া জানাইয়া দিলেন (পাঠক পড়ুন,হুমকি দিলেন) আলম সাহেব তাহার পত্রপাঠ মাত্র যেনো আর দেরী না করেন। অতিসত্বর পুর্বস্থানে ফিরিয়া আসেন। না ফিরিলে তিনি বিষপানে জীবনদান করিবেন। পত্রপাঠ শেষে আলম সাহেব মৃদু হাসিতে লাগিলেন। তাহার হৃদয়ে নব প্রেমের কলি ফুটিলো। তিনি সকলকে ডাকিয়া বিদায় লইলেন। অতিসত্বর ব্যাগ গুছাইয়া ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করিলেন। ব্যাগ ছাড়াও সঙ্গে তিনি আরেকটি বস্তু বহন করিলেন! সেই মুর্খ বালক! ইহাকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়িয়া তুলিতে জীবনের বাকী অংশ অতিবাহিত করার দৃঢ় সংকল্প লইলেন।
বাসায় ঢুকিয়া একটু বিশ্রাম লইবার অবকাশ মিলিলোনা। বালক সম্পর্কে গিন্নীর বাক্যবাণে অস্থির হইয়া গেলেন। গিণ্ণী তাহাকে নির্বুদ্ধিতার ফলস্বরুপ পুর্বকালের মত কিছু বিষাক্ত কথা শোনাইয়া দিলেন। আলম সাহেব সোফায় বসিয়া পা নাচাইতে নাচাইতে ভাবিলেন, "যাহার মুখে এতো বিষ! বিষে তাহার কি বিষক্রিয়া হইবে!"
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:৩৩
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দিশ হারা

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২

তোয়াত্তন আ`‌রে কেন লা‌গে?
গম লা‌গে না হম লা‌গে?
রাই‌ক্কো আ‌রে হোন ভা‌গে
ফেট ফু‌রে না রাগ জা‌গে?

তোয়া‌রে আত্তন গম লা‌গে
ছটফড়াই আর ডর জাগে
ছেত গরি হইলজা ফাড়ি
হইবানি হোন মর আগে।

হোন হতার হোন ইশারা
ন'বুঝি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাদ্য পন্যের মান নিয়ন্ত্রন

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১২

মশলা প্রস্তুতকারী কিছু ভারতীয় সংস্থার মশলায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়া গিয়েছে।সম্প্রতি এমনই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেন্টার ফর ফুড সেফটি’। সংস্থা জানিয়েছে, ভারতীয় বাজারে জনপ্রিয় বেশ কিছু সংস্থার মশলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×