somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মিথ্যা হতে যাচ্ছে

২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক মাস ধরে শোনা যাচ্ছে, প্রায় এক শ বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত জার্মান ইহুদি বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের (১৮৭৯-১৯৫৫) আপেক্ষিক তত্ত্ব নাকি ভুল প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। কারণ আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে কোনো কিছুর গতিবেগ আলোর গতিবেগের চেয়ে অধিক হতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে কিছু বৈজ্ঞানিক দাবি করছেন, নিউট্রিনো (Neutrino) নামক মৌলকণিকার গতিবেগ হতে পারে আলোর চেয়ে সামান্য বেশি। যদি এটা আরো পরীক্ষার মাধ্যমে সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তবে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তাকে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছিল মাইকেলসন মার্লির বিখ্যাত পরীক্ষাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে। এক সময় মনে করা হতো, বিশ্ব পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে এমন কিছু দ্বারা; যা বহন করে আলোক, বিদ্যুৎ ও চৌম্বক তরঙ্গ।

এই এমন কিছুকে বিজ্ঞানীরা বলতেন ইথার। কিন্তু ইথারের ধারণা সত্য হলে আলোর গতিবেগ সব ক্ষেত্রে এক হতে পারে না। বিভিন্ন দিক থেকে আলোর গতিবেগ নির্ণীত হলে তাতে ধরা পড়ত পার্থক্য। কিন্তু মাইকেলসন মার্লির পরীক্ষা থেকে দেখা যায়, এরকম পার্থক্য ঘটছে না। আলোর গতিবেগ সব দিক থেকে হচ্ছে সমান। আইনস্টাইন তার আপেক্ষিক তত্ত্বে চান এর কারণ ব্যাখ্যা করতে। এটা করতে গিয়ে বাতিল হয়ে যায় ইথারের ধারণা। আপেক্ষিক তত্ত্বে বলা হয়, আলোর গতিবেগ সর্বত্র সমান হতে বাধ্য। এটা দেখানো হয় বিশেষ গাণিতিক সূত্রের দ্বারা। আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে আসে বস্তুর আপেক্ষিক জড় মানের (Relative Mass) ধারণা। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে জে টমসন (J J Thomson) পরীক্ষার মাধ্যমে দেখতে পান, মৌলবস্তুকণিকা ইলেকট্রনের গতিবেগ বাড়ার সাথে সাথে তার জড়মান বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ তার গতিবেগ বাড়াতে হলে প্রয়োজন হয় আরো অধিক পরিমাণ বলের। এই বলের বৃদ্ধির পরিমাণ বিজ্ঞানী নিউটনের দেয়া সূত্র অনুসারে করা যায় না।

আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে দেখান, তার আপেক্ষিক তত্ত্বের সাহায্যে এই জড়মান বৃদ্ধির হিসাব সম্ভব। তিনি প্রদান করেন তার বিখ্যাত জড় ও তেজের মধ্যকার সমভরতার (Equivalence of Mass and Energy) ধারণা। এই ধারণা অনুসারে জড়বস্তুকে ভাবা যায় তেজের একটি ঘনীভূত সুপ্ত রূপ। আইনস্টাইনের এই ধারণা থেকে আসে পরমাণু বোমা তৈরির ভিত্তি। আমাদের দেশে রূপপুরে যে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হতে যাচ্ছে, তাতে ইউরেনিয়াম পরমাণু ভেঙে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন হবে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে প্রাপ্ত সূত্র অনুসরণ করে। পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বকে বিশেষভাবে গ্রহণীয় করে তোলে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত অনুরোধে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট পরমাণু বোমা নির্মাণের জন্য প্রদান করেন বিপুল অর্থ। আইনস্টাইন ব্যক্তিগতভাবে এক সময় ছিলেন বিশেষভাবে শান্তিবাদী ও যুদ্ধের বিরোধী। কিন্তু তারই ইচ্ছায় উদ্ভব হতে পেরেছে পরমাণু বোমার মতো জনবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের উদ্ভব। আপেক্ষিক তত্ত্ব, তত্ত্ব হিসেবে ভুল প্রমাণিত হলেও তার প্রদত্ত জড় ও তেজের সমভরতার হিসাব টিকে যাবে বলেই মনে হয়। আমরা বলেছি, আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে জড়বস্তুকে মনে করা যায় তেজের (Energy) ঘনীভূত রূপ মাত্র। কিন্তু এই ধারণাকে অনেকে স্বীকার করতে চাননি। বিষয়টি নিয়ে থেকেছে বিতর্ক। মৌলকণিকাদের (Elementary Particles) দু’টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়- ফার্মিয়ন (Fermion) ও বোসন (Bosons)। ফার্মিয়ন নামটা এসেছে বিখ্যাত ইতালিয়ান বৈজ্ঞানিক এনডিকো ফার্মির নাম থেকে। অন্য দিকে বোসন নামটি এসেছে বাঙালি বৈজ্ঞানিক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর (১৮৯৪-১৯৭৪) নাম থেকে; যিনি এক সময় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক। বোসন কণিকারা অনুসরণ করে বসু- আইনস্টাইন প্রদত্ত সংখ্যাতত্ত্বের সূত্র। ফার্মিয়ন কণিকা অনুসরণ করে ফার্মি প্রদত্ত সংখ্যাতত্ত্ব (Statistics)। এই দুই সংখ্যাতত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য আছে। ফার্মিয়নদের সংখ্যা যেভাবে ঠিক থাকে বোসনদের সংখ্যা সব অবস্থায় সেভাবে ঠিক থাকে না। ফার্মিয়নদের মধ্যে পড়ে ইলেকট্রন, প্রোটনের মতো মৌলকণিকা। পক্ষান্তরে বোসনের মধ্যে পড়ে আলোর কণিকা (ফোটন) এবং কিছু মেশন নামক কণিকা।

অর্থাৎ পদার্থ বিজ্ঞানে আছে নানা জটিলতা। ১৯৬০ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থবিদ জি পি টমসন (G P Thomso) ব্রিটেনে বিজ্ঞান সমিতির এক সভায় বলেন, জড়বস্তুকে কেবলই তেজের একটা সুপ্ত অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা সঙ্গত নয়। অর্থাৎ ১৯৬০-এর দশকে আইনস্টাইনের ধারণা নিয়ে উঠতে পেরেছিল প্রশ্ন। আমি ব্যক্তিগতভাবে পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট নই। তাই এ ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করতে পারি না। কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞানের অনেক ধারণা যুক্ত হয়ে পড়েছে দর্শনের সাথে; যা ভাবায় আমাদের মতো মানুষকেও। মানুষ জন্মায়, বেড়ে ওঠে, বৃদ্ধ হয়; মারা যায়। সময়ের ধারণা মানুষের মধ্যে বিশেষভাবে সৃষ্টি হতে পেরেছে জন্ম-মৃত্যুকে ঘিরেই। আমরা আমাদের জীবনে যেসব ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করি তাদের সাজায় সময়ের ভিত্তিতে। ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ধারণা আমাদের জীবনের ধারণার সাথে, বেঁচে থাকার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে গ্রোথিত। অন্য দিকে বস্তুদের আমরা সাজাই স্থানে, নির্দিষ্ট দূরত্বে। এভাবেই গড়ে ওঠে আমাদের ব্যবহারিক জীবনের স্থান-কালের ধারণা। আপেক্ষিক তত্ত্বে স্থান-কালকে দেখা হয় একত্রে। স্থান ছাড়া কালের অস্তিত্ব নেই। আবার কাল ছাড়াও স্থানের অস্তিত্ব নেই।

আপেক্ষিক তত্ত্বের স্থান-কালের ধারণা আমাদের ব্যবহারিক জীবনের স্থান-কালের ধারণার সাথে খাপ খেতে চায় না। তার জ্যামিতি হলো যথেষ্ট জটিল। ইউক্লিডের জ্যামিতি থেকে যা হলো ভিন্ন। ইউক্লিডের জ্যামিতিতে সরল রেখার অস্তিত্ব আছে। কিন্তু আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের জ্যামিতির মাপে সরল রেখার অস্তিত্ব নেই। সব রেখাই কোনো না কোনোভাবে বাঁকা। যা বুঝতে হলে গ্রহণ করতে হয় বার্নার্ড রিম্যানের (Bernhard Riemann) জ্যামিতিকে। আমরা শুনেছি, নিউট্রিনোর (Neutrino) গতি আলোর কণার (Photon) গতির চেয়ে বেশি হতে পারে। এ কথা প্রমাণিত হলে নাকি প্রমাণিত হবে সময় নেগেটিভ হতে পারে, এই ধারণ। কিন্তু সময় কি কখনো নেগেটিভ হতে পারে? সময় নেগেটিভ হলে, সে ক্ষেত্রে বৃদ্ধ হতে থাকবে যুবক; যুবক হতে থাকবে কিশোর; কিশোর হতে থাকবে শিশু; আর শেষে শিশু প্রবিষ্ট হবে মাতৃগর্ভে। কী বিচিত্র সব ধারণা। যা আমাদের সবাইকে বিস্মিত না করে পারে না। আর তাই বিজ্ঞানীসমাজে কেবল নয়, সবার মধ্যেই উঠছে বিশেষ আলোচনা। কিন্তু জগৎটা কেবলই অঙ্কের হিসাব নয়। অঙ্কের হিসাবের সীমাবদ্ধতা আছে। কেউ বিশ বছরে তিন হাত লম্বা হলে, চল্লিশ বছরে ছয় হাত লম্বা হয়ে যায় না। বাস্তব জগৎ অনুসরণ করে তার নিজের নিয়ম, যা অঙ্কের হিসাবনির্ভর নয়। বিশুদ্ধ পদার্থ বিজ্ঞান খুব বেশি গণিতের হিসাবনির্ভর। আর এই গণিতের হিসাব থেকে এমন অনেক ধারণা আসে, যা আমাদের মনে জাগায় বিরাট বিস্ময়। যেমনটি জাগাচ্ছে আমাদের মনে সমপ্রতি।

[সূত্রঃ নয়া দিগন্ত, ২১/১১/১১]
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×