somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচিরেই আমরা দেশে ভয়ঙ্কর অবস্থা দেখতে পাব - মঞ্জু : দল লাগবে না, সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে

২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, দেশে যে ধরনের গণবিস্ফোরণ ঘটতে যাচ্ছে, তা অতীতে আমরা কেউ দেখিনি। পাপ চরম পর্যায়ে গেলে আল্লাহর তরফ থেকেই গজব নেমে আসে। সামগ্রিকভাবে দেশে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অচিরেই আমরা এক ভয়ঙ্কর অবস্থা প্রত্যক্ষ করব। এজন্য কোনো দল লাগবে না। সাধারণ মানুষই রাস্তায় নেমে আসবে। অন্যায়-অত্যাচার আজ মাথার তিন হাত উপর পর্যন্ত উঠে গেছে। তিনি একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘মানুষের তরে মাটির এ পৃথিবী, দানবের তরে নহে’। আমাদের স্বৈরাচারী বলা হলেও আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকতে চাই। স্বৈরাচারী কখনও গণতন্ত্রী হতে পারবে না—এমন তো কথা নেই। গতকাল রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় পিরো-জপুরের নেছারাবাদ উপজেলা জেপির এক প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
নাজমুল ইসলাম সাইদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাসচিব সাদেক সিদ্দিকী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল হক বেবু, এজাজ আহমেদ মুক্তা, দফতর সম্পাদক এম সালাহউদ্দিন প্রমুখ।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, একটি উন্নয়নশীল দেশে কোনো সরকারের পক্ষেই বেশিদিন জনপ্রিয় থাকা সম্ভব হয় না। কারণ যারাই সরকারে যায়, তারা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের খুশি করার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, সুধীজনরা বলছেন, দেশ ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এখন দেশে রাজনীতি বলে কিছুই নেই, আছে শুধু লুটপাট। খালেদা জিয়া বলেছেন, পালাতে দেয়া হবে না। তিনি তো হাওয়ার ওপর ভর করে একথা বলেননি। আগে আমরা আইনের শাসনের কথা বলতাম; কিন্তু আজকাল অভিজ্ঞ আইনজীবীরা বলেন, উচ্চ আদালতে মুখ দেখে বিচারের রায় হয়। একথা শোনার পর আমরা আইনের শাসন চাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ এমন আইনের শাসন আমরা চাই না। এরকম ক্ষমতার দাপট আমরা বহুবার দেখেছি। চেয়ারে বসলে প্রায় সবাই ভদ্র আচরণ করতে ভুলে যায়।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে মানুষের নিরাপত্তা ও মান-সম্মান যেমন থাকতে হবে, তেমনি চিন্তা, কথা ও কাজের স্বাধীনতাও থাকতে হবে। তা না হলে পরাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার পার্থক্য কোথায়? তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির শাসনামলে চুরির ক্ষেত্রেও একটা সংকোচ ছিল। এখন সেটাও নেই। সর্বত্র এক ধরনের বেপরোয়া অবস্থা। লুটপাট এবং দাপটেরও একটা সীমা আছে। নতুন প্রজন্ম কিছুতেই এ অবস্থা গ্রহণ করবে না। যারা মানুষের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার করে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে, তারা বাস্তবে খুবই দুর্বলচিত্তের মানুষ। ক্ষমতাসীন দলের চাকর-বাকরদের কথায় আজ থানা-পুলিশ চলে। সংঘাত ছাড়া এই রাজনীতির কোনো সমাধান নেই। একটি স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে তার মতো চলতে দিতে হবে। প্রশাসনকে চলতে হবে আইন ও নীতি অনুযায়ী। অন্যায়-অত্যাচার আজ মাথার তিন হাত উপরে উঠে গেছে। তবে হতাশার কিছু নেই। এটারও সমাধান আসছে। বিশ্বজুড়েই এখন পরিবর্তনের হাওয়া চলছে।
জেপি চেয়ারম্যান প্রসঙ্গক্রমে বলেন, দেশে এখন নির্বাচন হওয়ার অবস্থা নেই। নির্মূলের চেষ্টা চলছে। গণতন্ত্রে এভাবে নির্মূলের সুযোগ নেই। নির্মূলের রাজনীতি করলে নির্মূল হতে হয়। এখন কে নির্মূল হবে সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে কারোরই দেশকে মগের মুল্লুক মনে করা উচিত নয়। দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্যই আমরা রাজনীতি করি। সুতরাং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি দানবের জন্য নয়, আমাদের জন্য। তিনি বলেন, দেশে এমন ঘটনাও ঘটছে যে, এনজিওর কাছ থেকে ৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৪ হাজার শোধ করতে না পারার কারণে ঋণগ্রহীতাকে স্ত্রী-সন্তানসহ ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ ঢাকার শেয়ারবাজারে ৬০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নেয়ার পরও তারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিচার হচ্ছে না। এই সমাজ ভাঙতেই হবে। যদিও আমাদের স্বৈরাচার বলা হয়, তবু আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকতে চাই। স্বৈরাচার কখনও গণতন্ত্রী হতে পারবে না—এমন তো কথা নেই!
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আমরা মহাজোটে আছি কি নেই, তা নিয়ে কথা হচ্ছে। গত নির্বাচনের আগে আমি বিদেশে ছিলাম। তখন একটা কাগজে ছাপা হয়েছিল, জেপি মহাজোটে আছে। আমরাও নির্বাচনের সময় বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সমর্থনে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের পর আজ পর্যন্ত সরকারের কেউ আমাদের কিছু জিজ্ঞেসও করেনি। তাহলে এই থাকা না থাকার কী অর্থ আছে! তবে আমাদের মধ্যে কোনো হতাশা নেই। কারণ আমরা কোনো কিছু পাওয়ার আশায় কাউকে সমর্থন দিইনি। জোট-মহাজোট হলো একটা নির্বাচনী কৌশল। নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্যই এ ধরনের জোট গড়া হয়। এটা দীর্ঘমেয়াদি কোনো বিষয় নয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনেও জোট হয়েছিল; কিন্তু নির্বাচনের পর সেটা অব্যাহত থাকেনি। কারণ প্রত্যেক দলেরই ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। সুতরাং মহাজোটে আছি কি নেই, এটা এখন আলোচ্য বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ এখন নিজেরাই পিটাপিটি করছে। সুতরাং এ অবস্থায় বাইরের লোকদের কিছু আশা করা যুক্তিসঙ্গত হবে না। তিনি বলেন, আমরা সংঘাতের রাজনীতি করি না; কিন্তু আক্রান্ত হলে কাউকে ছাড় দেবো না। আমরা যে মহাজোটে ছিলাম বা আছি, তার প্রমাণ কী? আমরা একলা আছি, একলাই থাকব। নেছারাবাদ তথা স্বরূপকাঠিতে এখন যা চলছে, অবিলম্বে তা বন্ধ করুন। নইলে জানও বাঁচাতে পারবেন না। এটা মগের মুল্লুক নয়। দেশের মানুষকে সম্মান ও সমীহ করে চলুন।
জেপি চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর আমি যখন মন্ত্রী হয়েছিলাম, তখন এরশাদ সাহেব বলেছিলেন, আমরা সরকারে আছি নাকি বিরোধী দলে আছি তা বুঝতে পারছি না। কারণ আমাদের একজন মন্ত্রিসভায় আছেন; কিন্তু এখন তো তার নিজের ভাই মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। তাহলে এখন জাতীয় পার্টির অবস্থান কী? সবাই জানেন যে, জাতীয় পার্টি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে। অথচ তিনি মানুষের সামনে গিয়ে দুই হাত উঁচু করে বলছেন, আমরা একা নির্বাচন করব। এটাও একটা ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা মনে করছেন, বিএনপি বা চারদলীয় জোট নির্বাচনে না গেলে মহাজোট থাকবে না। তখন বর্তমান মহাজোটের শরিকরা আলাদা নির্বাচন করবে। এটাই ষড়যন্ত্র। এরশাদ সাহেব গতানুগতিক রাজনীতি না বুঝলেও ক্ষমতার রাজনীতি অনেকের চেয়েই ভালো বোঝেন। তিনি মূলত পাওয়ার প্লেয়ার।
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী জনাব মঞ্জু বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কখনও আদর্শগত মিল হতে পারে না। কারণ বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্মই হয়েছিল আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করার জন্য। এই দুটি দল অনেকটা রিপাবলিকান পার্টির মতো, যাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সুসম্পর্ক থাকে। আর আওয়ামী লীগ হলো একটি সংগ্রামী রাজনৈতিক দল। সুতরাং আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আদর্শগত মিল হতে পারে না। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে কোনো রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকে আমরা জাতীয় পার্টি করিনি। আজ আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও একটি কথা প্রযোজ্য, তারা আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদে দল পরিচর্যা করা, দলীয়করণের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণকে প্রজা মনে করার দিন শেষ। পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই আগামীতে পথ চলতে হবে।
স্টাফ রিপোর্টার
ঢাকা, সোমবার ২৮ নভেম্বর ২০১১, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪১৮, ২ মহররম ১৪৩৩ হিজরী
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×