somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষ খাবেন?

২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিষ খাবেন?
নাজমুল হুদা


(১)
আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, বিষ খাবেন? আপনার চোখ আকাশে ওঠার সম্ভাবনা নেই যদিও কিন্তু আপনি বিব্রত হবেন। তা নয়তো বিরক্ত হবেন। এমন মানবজন্ম বহু সাধনায় একবারই পেয়েছেন তা কি বিষের মতো নোংরা বস্তু খেয়ে ধ্বংস করতে পারেন? যারা নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য বিষপান করে, তারা শুধুমাত্র স্বপ্নভঙ্গ আর আবেগের বশবর্তী হয়েই করে। কেউ আবার চরম বিরক্ত হবার কারণেই বিষপান করে। সুতরাং আপনি প্লিজ বিরক্ত হবেন না যদি প্রশ্ন করি, বিষ খাবেন?
(২)
রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা পান করছিলাম। আমার বরাবরই কফি প্রিয়। তবু এ এক বিলাসী বদোভ্যাস; ফুটপাতের চায়ের প্রতি অসাধারণ দুর্বলতা। এটি মোড়ের একটি দোকান।
সবে চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়েছি অমনি আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা। স্বাস্থ্য আর রূপ-সচেতন আমার বন্ধুটি আমাকে দেখেই দাঁড়ালো।
- কি খবর তোমার?
- খবর কি আর আমার কাছে থাকে? খবর তো পত্রিকায়। পত্রিকা পড়িনি অনেক দিন। হাঃহাঃহাঃ নির্মল-অট্টহাসি বিনিময়। দোকানদারকে আরেকটি চা দিতে বললাম। বন্ধু খুব ক্ষেপে গেলো।
- তুমি এসব রাস্তার চা খাও?
- হ্যাঁ, খাইতো।
- জানো, এসব কি খাচ্ছো?
- নাহ্‌।
- বিষ! বিষ!! বিষ খাচ্ছো। নির্ভেজাল বিষ।
- চা-য়ে আবার বিষ আসলো কোত্থেকে?
- চা-য়ে বিষ! তুমি জানো না, এই চায়ের পাতা মিডল ইস্ট আর বাইরের কান্ট্রিগুলো থেকে যতো ডেডবডি আসে সেগুলির সাথে আসে। ডেডবডিতে চা-পাতা দেয় যাতে ডেডবডি না পচে। আর ওইসব পাতা দিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন দোকানে চা বানিয়ে বেচে। মানুষ জানে না এইসব। না জেনেই এসব খায়। তুমি এই চা কিভাবে খাও!
চরম বোকা বোকা লাগছে নিজেকে। কি করি? ডেডবডি! চা-পাতা! দোকানদারের দিকে তাকালাম। দোকানদারই কথা বললো-
- না, মামা, সমস্যা নাই। এই পাতা আমি দোকান থেকে প্যাকেট করে কিনে আনছি। এইটা ভালো পাতি।
- বলছে মিয়া আপনেরে! যে দোকান থেকে কিনছেন ওরাইতো এইসব পাতি ডেডবডি থেকে নেয়।
- এখন হেরা যদি নেয়, আমরা কি করবো? এই পাতি খাইয়া কারো কোনো সমস্যাইতো হয় না। কেউ তো কোনোদিন মরে নাই।
ঠিকতো, ঠিকতো। আমি তো রোজই এই চা খাই। কই আমি তো মরি নি। আমার বন্ধুর নাকমুখে তখনো বাষ্প উদগীরিত হচ্ছে। পরিস্থিতি শান্ত করা দরকার।
- তুমি তাহলে বিস্কুট খাও। এগুলো তো কৌটার ভেতর থাকে। না হয় কেক খাও।
- তোমার খালি বাজে দিকে চোখ যায়। ফল খাইতে পার না।
- চায়ের তৃষ্ণা কি ফলে মিটবে?
- ব্রিটিশরা তোমাদেরকে এই চায়ের গোলাম বানিয়ে গেলো, ছাড়তে পারলা না! ফল খাও। ফলে প্রচুর ভিটামিন থাকে।
কি ফল খাবো?
- কি ফল খাবা মানে? কলা খাও।
- কলা খাবে কিভাবে! কলা তো কাঁচা থাকতে গাছ থেকে কাঁচা কাটার পরে ইথিলিন আর কি কি এসিড দিয়ে পাকায়। দ্যাখো না, ওপরে টকটকে হলুদ ভেতরে শক্ত। এসব এসিড খেলে তো ক্যান্স্যার হবে। ইদানীং আমও এভাবে পাকায়। তার ওপর, না পচার জন্য ফলের ওপর ফরমালিন স্প্রে করে দেয়। আগে আম-কাঁঠাল পাকলে গন্ধে চারদিকে অসংখ্য ময়লার মাছি ভোঁ ভোঁ করতো। এখন আর আম, আঙ্গুর, কলার ওপরে মশামাছি বসে না। কীটপতঙ্গই যেখানে এসব খায় না। মানুষ কি করে খাবে? আমার বন্ধু ততোক্ষণে দুটো কলা নিয়ে একটায় অর্ধেক কামড় বসিয়েছে। ভরা মুখে দ্বিতীয় কলাটি চালান করে দিয়ে মাথার ওপর দিয়ে কলার খোসা ছুঁড়ে দিয়েছে।
- এসিডের কথা বলে কি লাভ?
- আমি, তো কেমিক্যালের কথা বললাম!
- যা-ই-হোক, একই কথা। এগুলোও এসিড। এসিড কোথায় নাই বলো? কমলা খাবা? এতে এসবায়বিক এসিড আছে। আপেলে আছে মেলিক এসিড। তেঁতুল-আমলকি-পেয়ারায় আছে টারটারিক এসিড, লেবুতে সাইট্রিক এসিড, দুধে ল্যাকটিক এসিড আছে। ডালের মধ্যে আছে প্রোটিন যার প্রধান উপাদান অ্যামাইনো এসিড, আর সরিষার তেলে আছে ইরোমিক এসিড, সূর্যমুখি তেলে আছে লিনোলিক এসিড। আর মানুষ নিজেই তো একটা ছোটোখাটো এসিড ফ্যাক্টরি, মানুষের পাকস্থলিতে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড আছে। তাহলে ফল খেতে সমস্যা কোথায়? তাছাড়া ওপরের অংশে এসিডের স্প্রে থাকলে ধুয়ে খাও।
- এগুলি তো জৈব এসিড। এগুলি মানুষের জন্য উপকারী। ফলের ওপর তো রাসায়নিক এসিডের স্প্রে থাকে। তুমি কি জৈব এসিড আর রাসায়নিক শিল্পে উৎপাদিত এসিডের মধ্যেকার পার্থক্য জানো না?
-দেখো, আমাকে অতোসব বুঝিয়ো না। এসিড এসিড-ই। ক্ষতিকারক হলে সবই ক্ষতিকারক আর উপকারী হলে সবই উপকারী-আমি এটাই বুঝি।
আমার তো এমন কথা শুনে একেবারে আক্কেলগুডুম!
(৩)
কষ্ট লাগে বেশ। মধুমাসে ফলের গন্ধের পাশাপাশি মাছির উৎপাত থাকবে সারাক্ষণ। তা-না; রাসায়নিক পদার্থের জ্বালায় ফল কিনতে ইচ্ছে করে না। মনে হয়, সবই বিষমিশ্রিত। ভালো খাবার কিনতে গিয়ে মনের অজান্তে বিষ কিনে আনন্দিত হয়ে বাড়ি ফিরছি।
শিক্ষায়-শিল্পে-সম্পদে আমরা অনেক এগিয়েছি। পিছিয়েছি নৈতিক দিকে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে গাছে থাকতে থাকতেই ফল মালিক রাসায়নিক পদার্থ স্প্রে করে ফল পাকায় কৃত্রিম উপায়ে। খুচরো বিক্রেতারাও ফরমালিন মিশিয়ে রাখে পচন রোধ করার জন্য। আমরা যারা আমজনতা-জামজনতা-কাঁঠাল জনতা(!) তারাই কিনছি ফল আর বিষ, বিষ মিশ্রিত ফল। আমরা নিরূপায়।
মাঝেমাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তোড়জোড় দেখা যায়। এতে বাজারে কিছু ভালো ফল আসে। দামও থাকে আকাশছোঁয়া। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরদারি ও বাজার দর্শন শেষ হতে-না-হতেই বাজার ভরে যায় রাসায়নিক ফলে! ফলাফল, বিষ! না খেয়ে উপায় কী? উপায় একটি আছে অবশ্য, তা হলো ফল খাওযা ছেড়ে দেয়া!!
(৪)
আরেক দফা বাড়লো বাসভাড়া। বাড়বে সমান্তরালে নিত্যপ্রয়োজনীয় যাবতীয় পণ্যের দাম। বাড়বে হয়তো বাড়ি ভাড়াও। বাড়বে না বেতন এবং কাজের সুযোগসুবিধা। মানুষ বাঁচতে চায়। তাই অবধারিতভাবেই বাড়বে নানাবিধ অপরাধ। ভয়ংকর, বাসঅযোগ্য শহরটি আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। মানুষ বাঁচতে চায়, বাঁচার তাগিদে বিপন্ন অস্তিত্ব রক্ষা করতে অন্যের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তা বিপন্ন করবে কতিপয় মানুষ।
মূল্য বাড়ে। বাড়ে না জীবনযাত্রার মান। অধোপতিত জীবন আরো অধোপাতে যায় লঙ্কার রাজা বাদশাহদের স্বেচ্ছা অন্ধত্বের কারণে। উন্নয়ন ও সজ্জায় পিছিয়ে পড়া চট্টগ্রাম তাই যেনো আমাদের উন্নয়ন কান্ডারীদের চক্ষুশূল। ঢাকা ঢাকা পড়ে যায় বিলাস-সজ্জায়, চট্টগ্রাম পড়ে থাকে অবহেলিত গন্ডগ্রামের মতোই। শুধু ঢাকার সমান্তরালে তাল মিলিয়ে একই হারে বাড়ে বাসের ভাড়া। নাকি এ সরকারের পরিবহন মালিক তোষণ নীতি। তাদের গোলা ভরবে জনগণের টাকায় সরকার তাই চায়? মুষ্ঠিমেয় কিছু পরিবহন মালিককে বড়োলোক করে দিয়ে সর্বস্বান্ত এক বিশাল জনগোষ্ঠীর নিকটবর্তী কি হতে পারবে জনবান্ধব, গণতন্ত্রপ্রেমী সরকার? এমনিতেই লোডশেডিং, পানির অভাব, কর্মসংস্থানের অভাব, বাসাবাড়ির অভাব, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, উচ্চ পণ্যমূল্য, শেয়ার বাজার লুটপাট, এমএলএম কোম্পানির দৌরাত্ম্য, স্থানীয় সন্ত্রাস, বেকারত্ব বৃদ্ধি, বাসে ঠাসাঠাসি চলাচল, ট্রাফিক জ্যাম-ইত্যাকার নানা সমস্যায় জর্জরিত জনগণের প্রাণ ওষ্ঠাগত, তার ওপর সরকারের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কী পরিমাণ শান্তির সুবাতাস বয়ে আনতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। সম্মানিত জনপ্রতিনিধিগণ কি এ বোধ ধারণে সক্ষম?
(৫)
নীল আকাশ বড়ো ভালো লাগে। আকাশের কাছে যাই। খোলা আকাশের কাছে যাই। বিশাল আকাশ খোলাই থাকে। উম্মুক্ত নীলে রোদের কী প্রতাপ! ঘাষের কাছে যাই। বিলীনপ্রায় ঘাষের ভূমিতে বসি। মাথায় মেঘ ভর্তি খোলা আকাশ। মেঘের গর্জন শুনি। ভাবতে ভালো লাগে স্বচ্ছল এক সুন্দর দেশের কথা। ভাবতে ভাবতে মাথার চুল খালি হতে চলেছে। বাদাম কিনি। হাসতে হাসতে বলি, বাদামঅলাকেই বলি, সে বাদাম মাপে, তাকেই বলি, ‘ভাইরে, আর পারি না। সবদিকে ঝামেলা, ভেজাল আর অভাব।’
বাদাম দিয়ে টাকা পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে দার্শনিকের মতো গম্ভীরভাবে বাদামঅলা বলে, ‘ঝামেলা নিয়েই জীবন, অভাব আছে বইলাই ঝামেলা আছে। এই জন্য জীবনে অনেক সুখ। যারা ভেজাল করে, ঝামেলা বাঁধায় তারা সবথেকে বেশি সুখে থাকে।’
আমি হা করে বসে থাকি না; বাদাম চিবোই। এই করে কাটিয়েছে জীবন পূর্বপুরুষ; আমিও সেভাবেই কাটাচ্ছি। উত্তর পুরুষের জীবনও কি এভাবেই যাবে?
হতাশ হয়ে পড়েছেন? ভাবছেন, আর না। জীবনের লেনদেন মিটিয়ে দেবেন বিষপান করে? না, তা করবেন না। একজন মানুষ স্বার্থপরের মতো অনেকের দুঃখ বাড়াবেন না। জীবন আপনাকে নিয়ে খেলছে। সুতরাং হতাশ না হয়ে দেখুন, জীবন আপনাকে নিয়ে কতোটা খেলতে পারে। এ দেখাটুকুও কি উপভোগ্য নয়?
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×